ভারসাম্যহীন, কক্ষ্যবিচ্যুত
আকাশের তারাগুলি ভারসাম্যহীন, কক্ষ্যবিচ্যুত জেগে আছে অন্ধকারের মিনারেট ঠায় চেয়ে আছে ধূসর শহরতলির দিকে। কোনওদিন, কোনও কোনও দিন, এমনই ধূসরতা আমার বুকের ভেতর তোমার রঙিন জলছবিকে অবগুণ্ঠিত করেছিল। তবু অন্ধকারের মিনারেট ঠায় জেগে আছে শহরতলির গভীরতর আঁধারের কাছে।
তুমি কাছাকাছি কোথাও নেই রাত্রির সংলগ্ন নৈঃশব্দ্যে তাই আমি একা একা বারান্দায় পায়চারি করেছি একাকী, রাত্রি জেগে প্রত্যক্ষ করেছি তারাদের কক্ষ্যচ্যূত ভারসাম্যহীনতা। অবগুণ্ঠিত নিরেট জলছবি ভাসতে ভাসতে হারিয়ে গেছে স্মৃতির জোয়ারে। যেমন বন্দর ছেড়ে, জাহাজ অনেক দূরে চলে গেলে দৃষ্টির বলয় থেকে হারিয়ে যায়।
এই অন্ধকারে আমি একা রাত জেগে অনুভব করেছি রাত্রে তোমার অনুপস্থিতিজনিত হৃৎপিণ্ড মোচড়ানো ব্যথা। আমি তাই অন্ধকারের সমুদ্রে কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছি তোমাকে লেখা অসংখ্য চিঠি, তোমাকে উৎসর্গ করা অজস্র কবিতা। অন্ধকারের মিনারেটগুলো সেই মস্তিষ্কভ্রংশ রোমাঞ্চের সাক্ষী হয়ে জেগে আছে– এই রাত্রির শূন্যতায় তুমি অনুপস্থিত বলে আকাশের তারাগুলি ফুটে আছে ভারসাম্যহীন, কক্ষ্যবিচ্যুত।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
কেউ কথা বলছে না
শুধু টিপ্ টিপ্ করে, টিপ্ টিপ্ করে
আমার অনুভবের চৌহদ্দিতে বৃষ্টি
কখন শেষ হবে অন্ধকার?
আকাশের কালো মেঘ যেন
গর্জন করে বলছে “আমি সমুদ্র”
কেউ কথা বলছে না
রাত্রির ফুটপাতে শুধু টিপ্ টিপ্
টিপ্ টিপ্ করে বৃষ্টি।
এই গা গুলানো অন্ধকারের ব্যারাম
কবে আমার রক্তকণিকা থেকে দূরীভূত হবে?
কবে বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জলভরা শব্দরা
অন্ধকারের কালো উত্তরীয় ছেড়ে
জ্যোৎস্নার আলোয় চিকচিক করে জ্বলবে?
যে ধূসর উপনিবেশ চিমনির ধোঁয়ায় কালো হয়ে আছে
যে কৃষ্ণবর্ণ সৌন্দর্য্য বাতাসের গোঙানিতে
ক্ষুধা আর অবহেলার কথা প্রকাশ করছে,
সে কবে মুক্তির সম্ভাবনাকে ছুঁতে পারবে?
যে স্বেদ আর রক্তবিন্দুগুলি,
পাষাণহৃদয় কলকাতাকে
রাঙিয়ে তুলেছে ক্ষোভে আর হতাশায়
কবে তার অবিকল প্রতিমূর্তি
দেওয়ালের স্টেনসিলে ফুটে উঠবে?
এখন রাত্রি গভীরতর হয়ে
জলপ্রপাত সময়কে ঢেকে দিয়েছে
কালো ধোঁয়ার মখমলপরা অন্ধকারে
বৃষ্টির শব্দরা নগ্নভাবে আঘাত করছে স্নায়ুতন্ত্রে
আমার অনুভবের চৌহদ্দি জুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
মধ্যরাতের ফুটপাতে উপঢৌকন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আমার অন্ধকারে প্লাবিত অস্তিত্বে
বৃষ্টির অন্তহীন শূন্যতা আরো একটি
নিষ্ফল, ক্ষয়িষ্ণু সকালের সন্দেশ
বহন করে আনছে।
*ছবি সৌজন্য: Pexels
সৌগত চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬১ সালে কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিধ্যলয়ের ইতিহাসের সাম্মানিক স্নাতক। কবিতা ও সাহিত্য ছাড়াও তাঁর প্রধান আকর্ষণ সঙ্গীত। রয়াল স্কুল অফ মিউজিক, লণ্ডন থেকে বেহালাবাদক হিসেবে গ্রেড ৫, ৬ ও ৭ পাস করেছেন। সাংবাদিকতার সূত্রে অমৃতবাজার পত্রিকার লেখক ছিলেন। তপন সিংহ-এর অন্তর্ধান ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসাবে কাজ করেন। নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত অনিল চট্টোপাধ্যায় বিষয়ক তথ্যচিত্রেও সহকারি হিসাবে কাজ করেন। পরবর্তীকালে একটি স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে চাকুরীজীবি। নিয়মিত লেখালেখি করেন বেশ কিছু প্রথম সারির বাংলা পত্রিকায়। সৌগত চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র।