ক্লিয়োপাত্রা। মিশরের কিংবদন্তী রানি। সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী এবং ক্ষমতার অধিকারী। ক্লিয়োপাত্রাকে নিয়ে গল্প, সাহিত্য, সিনেমার কোনও অভাব নেই। প্রাচীন যুগের ভাস্কর্য, চিত্র দেখে এত দিনে সবাই মোটামুটি জেনে গেছেন ক্লিয়োপাত্রার চেহারা কেমন ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক খননকার্যের দৌলতে আমরা জানতে পারতে পারি ঠিক কেমন সুগন্ধী ব্যবহার করতেন উনি।
শোনা যায় রসায়ন শাস্ত্রে বিশেষ পটু ছিলেন ক্লিয়োপাত্রা । তিনি মনে করতেন সুগন্ধী শুধু মাত্র রূপচর্চার উপাদান নয়, অন্যকে প্রলুব্ধ এবং প্ররোচিত করার অন্যতম সামগ্রী হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। তাই তিনি নাকি রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে প্রথম বার দেখা করতে যাওয়ার আগে তার জাহাজের পালে সুগন্ধী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, যাতে অ্যান্টনি তাঁকে দেখার আগেই, তাঁর সুগন্ধে মোহিত হয়ে পড়েন। পরবর্তী কালে অ্যান্টনি নাকি জাহাজ পাড়ে লাগের বহু আগে থেকেই ক্লিয়োপাত্রার গায়ের সুগন্ধ পেয়ে যেতেন। ক্লিয়োপাত্রার নিজের নাকি একটি সুগন্ধীর ফ্যাক্টরি ছিল, যেখানে তিনি নিজেই নানা রকম সুগন্ধী তৈরি করতেন।
‘ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই’-এর গবেষক রবার্ট লিটম্যান এবং জে সিলভারস্টেন বহু বছর ধরেই প্রাচীন যুগের সুগন্ধী, বিশেষ করে ক্লিয়োপাত্রার সুগন্ধী নিয়ে গবেষণা করছেন। ‘তেল টিমাই’ খননকার্যের সময় তাঁরা জানতে পারেন যে মিশরের থিমুয়ে শহর (৪৫০০ খৃষ্টপূর্ব)-এ সুগন্ধী তৈরি হত। মেনডেসিয়ান ও মেটোপিয়ান, এই দুই ধরনের সুগন্ধী তখনকার মহিলারা ব্যবহার করতেন। খননের ফলে জানা গেছে প্রাক রোমান এবং রোমান শাসনকালে কাচ এবং ক্লে বোতলে পাওয়া যেত সুগন্ধী। অ্যাম্ফোরা নামক কিছু বোতলে ২০০০ বছরের পুরনো এমন কিছু সামগ্রীর অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে যা দিয়ে একটা সময় এখানে সুগন্ধী তৈরি হত। এই তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে যে এই সমস্ত সামগ্রী দিয়েই ক্লিওপেট্রার সুগন্ধীও তৈরি হত।
ক্লিয়োপাত্রার সুগন্ধীর নতুন রূপ
এত যুগ পরে অ্যাম্ফোরায় পাওয়া তরলের গন্ধ পাওয়া সম্ভব নয়। কেমিক্যাল পরীক্ষা করে তাও জানা গেছে, কোন ধরনের সামগ্রী দিয়ে তরলটি তৈরি করা হয়েছে। সেই সমস্ত উপাদান এবং গ্রিক বই, পুঁথি ঘেঁটে আরও কিছু উপাদান মিশিয়ে নতুন সুগন্ধী তৈরি করেছেন গবেষকরা। তবে তা ক্লিয়োপাত্রার সুগন্ধী কি না নিশ্চিতভাবে বলা এখনই সম্ভব নয়। মাইরিয়া-র (এক ধরনের কিশমিশ যা আরব ও আফ্রিকায় পাওয়া যায়) সঙ্গে অলিভ অয়েল, দারচিনি, এলাচ মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ সুগন্ধী। আজ কাল যে ধরনের সুগন্ধী পাওয়া যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘন ও চটচটে এই তরল পদার্থটি। তবে মাস্কি, স্পাইসি গন্ধটি একেবারেই অন্য রকম। আজকের পারফিউমগুলোর তুলায় এর গন্ধ অনেকক্ষণ স্থায়ী থাকবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। লিটমান সুগন্ধীটিকে ‘প্রাচীন মিশরের শ্যানেল ৫’ বলেও নাম দিয়েছেন। ২০০০ বছর আগের গন্ধ শুঁকতে পেরে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তাঁরা।
আরও গবেষণা প্রয়োজন
প্রাচীন মিশরের সুগন্ধী তৈরিতে সফল হলেও তা ক্লিয়োপাত্রার পারফিউম কি না, সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ তিনি তো সাধারণ মানুষ ছিলেন না, তাই মনে করা হচ্ছে যে সেই সময় আমজনতা যেমন সুগন্ধী ব্যবহার করতেন, তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা হবে ক্লিয়োপাত্রার পারফিউম। পারফিউমার ম্যান্ডি অ্যাটেল, যিনি মামি নিয়ে গবেষণা করছেন জানিয়েছেন যে, ক্লিয়োপাত্রা নিজেই নিজের সুগন্ধী বানাতেন। সে যাই হোক, আপাতত এই আবিষ্কারেই খুশি গবেষকরা।