2009 সালের কথা। বসন্তে দোলের ঠিক কয়েকদিন আগে গেলাম ব্যাঙ্গালোরে। যে কোনও নতুন কাজের আগে খুব ভয় করে।
আপনাকে এই জানা : শেকড়ের ডানা আর ডানার শেকড় : মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাতের অন্ধকারে ব্যাঙ্গালোরের রাজপথে সাদা সাদা ভেপার ল্যাম্পের আলোয় ড্রাইভার আমাকে এম জি রোডের আশেপাশে থাকা সারি সারি কলোনিয়াল বাড়ি দেখাচ্ছে- কোনওটা রাজভবন তো কোনওটা হাই কোর্ট – আর আমি ভয়ে কাঁপছি! যদি ড্রাইভার বদমাইশি করে আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়। আবার একই সঙ্গে মনকে স্বান্তনা দিচ্ছি – ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত হিন্দি সিনেমা দেখে মাথায় এই আজগুবি গল্পই খুব সহজে আসে। রাজপথের চওড়া রাস্তা ক্রমে ছোট হল আর মূল শহর থেকে একটু দূরে বানেরঘাট্টায় হোটেলে পৌঁছোলাম রাত সাড়ে দশটায়। সেই প্রথম একা হোটেলে থাকা।
অজানাকে সামনা সামনি দেখার ভয়। এই ভয়টা ভয়ের তবে আনন্দেরও।
ছোট্ট ছিমছাম হোটেল – তাও একা একা খাবার জায়গায় খেতে বসার অভ্যাস হয়নি তখনও। ঘরেই অর্ডার করলাম সবচেয়ে চেনা খাবার চিকেন বিরিয়ানি। কিন্তু এক বাটি ঝোল সহযোগে কারি পাতা সম্বৃদ্ধ যে খাবার এল- তাকেও যে বিরিয়ানি বলে তা আমার আনাড়ি মন তখনও জানত না। এক এক করে বাড়ির সবাইকে ফোনে খবর দিলাম যে ভয়ের কিছুই নেই- কিন্তু আসল ভয়টা আমিই পাচ্ছিলাম। অজানাকে সামনা সামনি দেখার ভয়। এই ভয়টা ভয়ের তবে আনন্দেরও। এখনও যখনই কোনও অজানা পথে হাঁটি ভেতরে ভেতরে প্রবল উত্তেজনা হলেও মাঝে মাঝে ভয় পাই। আর এই পরস্পর বিরোধী মনের ভাবাটাই হয়তো আমাকে এখনও ছুটিয়ে বেড়ায়। (Column)

এখনকার মতো ফেসবুক, ইন্স্টাগ্রাম, স্মার্টফোন তো ছিলই না- ছিল না হোয়াটসঅ্যাপও। খালি জানতাম হোটেলের খুব কাছেই কথালয়া। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে হোটেলের রিসেপশানিস্টের বোঝানো পথের ভরসায় দিব্যি পৌঁছে গেলাম এক মিষ্টি সেই ছোটবেলার রূপকথার বইয়ের মতো বাগান দেওয়া বাড়িতে। দোতলা বাড়ির সামনের বারান্দার মাথাটা কুঁড়েঘরের মতো – বাড়ির দেওয়ালে লতা পাতা মানুষ পাখি – কত কিছুর আঁকিবুকি। একতলায় অফিসে নাম লিখিয়ে জড়তা কাটিয়ে উঠলাম দোতলায়। লম্বা এক হল – ভেসে আসছে দক্ষিণভারতীয় ধূপের গন্ধ। মাটিতে ফরাস পাতা। আমার মতোই অনেকে একে একে এসে বসছে। তাদের কথায় বুঝলাম আমি একাই, যে ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা নই। তাতে আরও নিজেকে খাপছাড়া মনে হতে লাগল।
গীতা রামানুজম গল্প বলেন, গল্প লেখেন আর গল্প বলা শেখান। সারা বছর ধরে কথালয়ায় চলে গল্প বলা শেখানোর কর্মশালা।
সেই জড়তা, সেই খাপছাড়া ভাব কাটিয়ে আমাকে আপন করে নিলেন গীতা রামানুজম। কথালয়া যাঁর সন্তান। মুম্বইয়ে বড় হওয়া তামিল মহিলা। ইতিহাসের ছাত্রী। এক সময়ে পড়াতেন ঋষি ভ্যালি স্কুলে। ইতিহাস পড়াতে গিয়ে বোঝেনো পড়ার বইয়ের বাইরে গল্প বলা কত জরুরি – যার মধ্যে দিয়ে অনায়াসে জানানো যায় কত কী! তাই ব্যাঙ্গালোরের এক ছোট বাড়ি ভাড়া করে শুরু করেন কথালয়া। গীতা রামানুজম গল্প বলেন, গল্প লেখেন আর গল্প বলা শেখান। সারা বছর ধরে কথালয়ায় চলে গল্প বলা শেখানোর কর্মশালা।
জড়তা কাটিয়ে বড় হল ঘরে গিয়ে, একে একে আমরা নিজেদের পরিচয় দিলাম- শুরু হল দশ দিনের গল্প বলতে শেখার পাঠ। সকালে তিন ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টার টিফিন তারপর আরও দু’ঘণ্টা – স্কুলের মতো।
প্রথমদিন আমাদের দেওয়া হল ছোট ছোট বুকমার্কের মতো এক একটা সরু ফালি কাগজ আর রং পেন্সিল। কোনও অক্ষর না লিখে এমন এক ছবি আঁকতে হবে যা দেখে যে কেউ বুঝে যাবে কী গল্প। সে সময়ে আমি বেহুলা বলে এক সিরিয়ালের কার্যনির্বাহী প্রযোজক ছিলাম। কথা চলছিল সিরিয়ালটি হিন্দিতেও হওয়ার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অনেকের মনে হয় বাংলার এই গল্প অন্য ভারতীয় ভাষায় কেউ বুঝতে পারবে না! আমারও কিছুটা সেই বিশ্বাস ছিল! সে সময় আবার কলকাতার অফিসে কাজ চলছে সেই সিরিয়ালের প্রোমো কেমন হবে? কেমন হবে পোস্টার।
চোখের সামনে ভেসে উঠল মরা স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে নিয়ে বাংলার গ্রাম ছেড়ে এক মেয়ে চলেছে নদী পথে। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর, সোহাগের সব চিহ্ন নিয়ে বাংলার গ্রাম ছেড়ে অজানা স্বর্গে পাড়ি দিয়েছে সে!
তাই গল্প বলতে সবার আগে বেহুলার কথাই মনে পড়ে গেল। ভাবতে বসলাম বেহুলার জীবনের সবচেয়ে আলাদা দিক কোনটা? কী তাকে আলাদা করেছে? চোখের সামনে ভেসে উঠল মরা স্বামী লক্ষ্মীন্দরকে নিয়ে বাংলার গ্রাম ছেড়ে এক মেয়ে চলেছে নদী পথে। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর, সোহাগের সব চিহ্ন নিয়ে বাংলার গ্রাম ছেড়ে অজানা স্বর্গে পাড়ি দিয়েছে সে! বেহুলার এই একা পাড়ি দেওয়া, ভয়কে জয় করাটাও তো একটা অ্যাডভেঞ্চার। হতে পারে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে স্বামী হারানোটাই তার জীবনে সবচেয়ে বড় ভয় ছিল! কিন্তু ভয়কে মোকাবিলা করেছিল সে। অন্ধকার থেকে আলোর এই যাত্রাপথে পদে পদে বিপদ এসেছিল! তবু সে থামেনি। কখনও বুদ্ধি আর কখনও বা সাহস দিয়ে এক মেয়ের ভয়কে জয় করার এই গল্প বেহুলা। আঁকতে সময় লাগল না বেশি। আসলে এটাই গল্পের মেরুদন্ড চিনতে শেখার শিক্ষা। কত কম কথায়, স্বল্প পরিসরে এক নিমেষে – এক পলকে এক গল্পকে লোকের মনে পৌঁছে দেওয়া যায়।
সে সময় আবার কলকাতার অফিসে কাজ চলছে সেই সিরিয়ালের প্রোমো কেমন হবে? কেমন হবে পোস্টার।
আঁকার পর শুরু হল এক মজার খেলা। নিজের আঁকা ছবির গল্প বলা যাবে না। বলতে হবে পাশের জনের ছবি দেখে যে সেটা কী গল্প। ছবি যে এঁকেছে তার আঁকার সঙ্গে গল্প যে ব্যাখ্যা করছে – তা কতটা কাছাকাছি – তার থেকেই বোঝা যাবে গল্পকারের কাছে তার নিজের গল্প কতটা স্পষ্ট। টেলিভিশনে প্রায় পনেরো ষোলো বছর হয়ে গেল – এখনও মনে রেখেছি গল্প বলার এই মূল শর্ত। আমি দেখলাম বাংলার গ্রাম কেউ জানুক না জানুক, বেহুলাকে কেউ চিনুক না চিনুক এক নারী এক শব দিয়ে একার যাত্রা চিনে নিতে আমার পাশের জনের কোনও অসুবিধে হল না। কিছু কিছু গল্প সঠিক ব্যাখ্যা বেরোল কিছুর নয় – কিন্তু কোনও ব্যাখ্যাই আসলে বেঠিক নয়। সব বেঠিক ব্যাখ্যা জন্ম দিল এক নতুন গল্পের। এক সঙ্গে কম করে কুড়ি পঁচিশটা গল্প শুনে আমরা হাসলাম, কষ্ট পেলাম আর বন্ধু হলাম।

সামনের দশটা দিনে আরও কত মজার ক্লাস হল কী বলব। একদিন হল পুরো শরীর দিয়ে বোঝানোর ক্লাস। বোঝা গেল আমাদের কত জড়তা। সেই দলে আমরা সবাই মেয়ে ছিলাম। সবার বয়সই কম বেশি তিরিশের আশেপাশে। গীতা ম্যাম বললেন নিজেকে আইসক্রিম ভেবে গলে গলে পড়ো! দেখা গেল কিছুতেই আমরা গলতে পারছি না! লোকে কী ভাববে ভেবে! কিন্তু কথক হতে গেলে নিজের ঊর্ধে উঠে লজ্জা ঘেন্না প্রেম ভয় – সব কিছুকে মেলে ধরতে হয়- লোকে কী ভাববে তাই নিয়ে বসে থাকলে হয়তো কোনও সাহসী গল্পই জন্ম নিত না! একদিন আমাদের ক্লাস হল কথা না বলে হাত পা নেড়ে আর আহ উহ মানে A E I O U ব্যবহার করে গল্প বলতে হবে। একটা দড়িকে সাপ ভেবে ভয় পেয়ে বন্ধুকে বলতে হবে – এদিকে এসে আমায় বাঁচাও – আর বন্ধু এসে দেখাবে – দেখে রজ্জুকে সর্পভ্রম! ওই দিনটা আমাদের জড়তা অনেকটা কেটে গেছে! আহ ই উ করে আমরা সবাই হেসে গড়াগড়ি পেড়েছিলাম।
একটা দড়িকে সাপ ভেবে ভয় পেয়ে বন্ধুকে বলতে হবে – এদিকে এসে আমায় বাঁচাও – আর বন্ধু এসে দেখাবে – দেখে রজ্জুকে সর্পভ্রম!
সবথেকে অবাক হয়েছিলাম এক চোখ বন্ধ করে গল্প বলার ক্লাসে। গীতা ম্যাম সেই ক্লাস নেননি, নিয়েছিল ওঁর মেয়ে স্ফটিকা। সদ্য সে লন্ডন স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাশ করে এসেছে। আমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করে দিল। একজনকে বসিয়ে দিল চেয়ারে চোখ বেঁধে। অন্যদলের সামনে একটা ফোটো। যে দেখতে পাচ্ছে তাকে চোখ বন্ধ করা মানুষটির হাত পা স্পর্শ করে বোঝাতে হবে ছবিটি কীসের! কোনও কথা বলা যাবে না, দেখা যাবে না – খালি স্পর্শের মধ্যে দিয়ে বর্ণনা করা! এও কী সম্ভব! চোখের সামনে কিন্তু সেই অসম্ভবকেও সম্ভব হতে দেখেছিলাম। দেখলাম এক একটা ইন্দ্রীয় ছেঁটে ফেললেও মানুষ কত সৃজনশীল ভাবে তার ভাব প্রকাশ করতে পারে। অভাব আমাদের যেন আরও বেশি করে সংযোগ স্থাপন করতে শিখিয়েছিল। এই সংযোগ স্থাপনেরই এক দিন বড় অদ্ভুত ছিল। দিনটা ছিল নিজের সঙ্গে নিজের সংযোগের।

প্রথমে বলা হল, ভাবতে যে আমার প্রিয় কেউ পাহাড়ের খাদে দাঁড়িয়ে আছে – সূর্য ডুবছে। এক ফোঁটা না নড়ে আমায় তাকে জোরে ডাকতে হবে! দেখা গেল অধিকাংশই জোরে ডাকতে পারছে না। স্ফটিকা বলল, ভারতে মেয়েরা ছোটবেলা থেকে আস্তে আস্তে কথা বলার সহবত শিখতে শিখতে নাকি জোরে, মুখ হাঁ করে চেঁচিয়ে কথা সচারাচর বলতে পারে না! নিজেকে খুব স্বাধীন স্বাবলম্বী ভাবলেও দেখা গেল আমিও তাঁদেরই দলে। স্ফটিকা আমাদের গাইড করতে থাকল- আমরা সজোরে শেষে যখন চিৎকার করতে পারলাম দেখলাম চোখ ফেটে জল বেরোচ্ছে। মনে হল সেই প্রিয় জন যে পাহাড়ের খাদে দাঁড়িয়ে আছে, যাকে টেনে হিঁচড়ে জোরে চিৎকার করে কাছে টেনে আনলাম আমি সে যেন আর কেউ নয়- হারিয়ে যাওয়া আমি। তাকেই যেন উদ্ধার করলাম! নিজেকেই নিজে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালাম। কান্না বা নিজেকে জানার শেষ এখানেই ছিল না। গীতা ম্যাম বললেন- নিজেকে তিন সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ভাবতে। সাড়ে তিন বছরে, চার বছরে সেই খেলনা নিয়ে যেভাবে খেলতাম সেই ভাবে আপনমনে খেলতে হবে। ভুলে যেতে হবে সামনে কেউ বসে আছে। অনেকেই সাবলীল ভাবে খেলল, খেলনা বাটি কম – ছেলেদের মতোই দৌড় ঝাঁপ, পিঠ্ঠুর মতো এক খেলা লাগোরি, চোর চোর আরও কত কী! দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল ছোটোবেলায় ফিরে গেছি!

আমাদের দলে একটি মেয়ে ছিল, বয়স তিরিশের কোঠায়। খুব অল্প বয়সেই হেডমিসস্ট্রেস হয়েছে সে। খুবই গম্ভীর। কাঁধে ল্যাপটপ, হাতে মোবাইল। গীতা ম্যাম যখন তাকে এই সব যন্ত্রপাতি বাইরে রেখে ক্লাসে আসতে বললেন- সে খুব বিপর্যস্ত বোধ করছিল। বলল, লিখে না রাখলে সে মনে রাখতে পারবে না! ম্যাম বললেন- এই সময়ে আমরা যা যা করছি তাতে লেখার কোনও প্রয়োজন নেই- process টা enjoy করতে হবে! সে বলল- এই ছেলেবেলার খেলনা নিয়ে না খেললেই কি নয়? আমাদের দলে সেই মেয়েটিই একটু আলাদা আলাদা থাকত! কাজ ছাড়া কথা বলত না। দলে কোনও কাজ করতে দিলে সে খুব একটা এগিয়ে এসে সাহায্য করত না। ফলে তার যে কদিনে কোনও বন্ধু হয়েছিল এমনও নয়। সে যখন বলল, এই সব বাচ্চাদের খেলায় সে যোগ দেবে না- গীতা ম্যামের মুখের ওপর এই কথা রুক্ষ ভাবে বলায়- সবাই একটু বিরক্ত হয়েছিল। কিন্তু ম্যাম বিরক্ত হলেন না। শান্ত ভাবে বললেন- ঠিক আছে কোনও অসুবিধে নেই কিন্তু কারণ জানতে পারি? অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলল- সে ছোটবেলা থেকে কখনও কিছু খেলেনি। এই কথাটায় আমরা সবাই অবাক। সেও বিব্রত। গীতা ম্যাম কারণ জানতে চাইলে সে খুব আস্তে আস্তে ফিরে গেল নিজের ছোটবেলায়। তামিল পরিবারের বড় মেয়ে, বাবা সরকারি চাকুরে। পিঠোপিঠি অনেক ভাইবোন। বাবার চিন্তা চার ছেলে মেয়েকে মানুষ করবেন কী করে? মায়ের চিন্তা বড় মেয়ে কালো! ছোটবেলায় বাবা তাকে বলেছিল – বড় দিদি যা করবে তাই দেখে ভাইবোনেরা শিখবে। সে ছিল দামাল দস্যি। বাবার কথায় ছোট ভাই বোনেদের চোখে আদর্শ হতে চেয়ে সে শান্ত হয়ে গেল। ভাই বোন সামলানোই তার তখন কাজ হয়ে গেল।
কিন্তু ম্যাম বিরক্ত হলেন না। শান্ত ভাবে বললেন- ঠিক আছে কোনও অসুবিধে নেই কিন্তু কারণ জানতে পারি? অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলল- সে ছোটবেলা থেকে কখনও কিছু খেলেনি।
মা বলেছিল – শোনো একে তো তুমি কালো তার ওপরে রোগা- দেখতে কালো কাকের মতো। এই চেহারা দেখে কেউ ভালোবাসবে না তোমায়! তার চেয়ে নিজের গুণের দিকে নজর দাও। বাড়িতে নিজের প্রয়োজনীয়তা বাড়াও। তাহলে লোকের ভালোবাসা পাবে। এ কথা বলে, মেয়েটি হাঁপিয়ে উঠল! আমার বুকের কাছটাও কেমন দুঃখে দলা পাকিয়ে গেল। গীতা ম্যাম শান্ত হয়ে মেয়েটিকে আগলালেন- দেখলাম সে ম্যামকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ম্যাম আমাদের বললেন- যাও তোমরা ওর সঙ্গে ওর পছন্দমতো খেলা খেল। আমরা জনা কুড়ি মধ্য তিরিশের মহিলা বাচ্চাদের মতো মেতে উঠলাম চোর চোর খেলায়। শাড়ির আঁচল, ওড়না, উঠে যাওয়া টপ বা ব্রায়ের স্ট্যাপের তোয়াক্কা না করে। মনে হল – আমরাও ওর সঙ্গে নিষেধের গণ্ডী পেরিয়ে ফিরে গেলাম ছোটোবেলায়- সাহসী হলাম। নির্ভার হলাম।
এরপর আমার খেলার পালা। কী খেললাম, কেন খেললাম আর তার পর কী হল – গল্পের সুতো গড়িয়ে যাবে পরের পর্বে ।
অলংকরণ – মধুজা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছাত্রী ইতিহাসের আর চাকরি গণমাধ্যমে। তাতে কী! নেশা কিন্তু আঁকা এবং লেখা। বিশেষত নকশা। নোটবুক ভর্তি তার প্রতিটি ছবিই গল্প বলে চলে। গুছিয়ে বসে বা দফতরের মিটিংয়ের ফাঁকে - রং কাগজ এবং কলম সবসময় মজুত।