আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বেজায় ফ্রেশ লাগছে আপনার। মনে হচ্ছে সারা পৃথিবীটাই জয় করে নেবেন। সারা দিনটা একেবারে হেসে খেলে কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু পর দিনের ছবিটা একেবারেই আলাদা। বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে দূর! কিছুই তো করে উঠতে পারলাম না। এরকম জীবনের কোনও মানে হয়! আসলে আত্মবিশ্বাস, আত্মমর্যাদাবোধের সঙ্গে আমাদের একটা অদ্ভুত সম্পর্ক আছে। এই নিজেকে মনে হয় দারুণ কনফিডেন্ট, আবার পরক্ষণে নিজেকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলি আমরা। বয়ঃসন্ধি থেকে বড় হওয়ার পর্যায় এরকম নানা ঘটনা ঘটে যা আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ কখনও বাড়িয়ে দেয়, কখনও আবার কমিয়ে দেয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অবশ্য কিছুটা হলেও নিজেদের ভালবাসতে শুরু করি। ভাল-মন্দ, দোষ-গুন মিলিয়ে যে ‘আমি’টা তার সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলি।
তবে জানলে অবাক হবেন, মনোবৈজ্ঞানিকরা মনে করেন জীবনের একটা নির্দিষ্ট পর্যায় আমাদের সকলের আত্মবিশ্বাস একেবারে তুঙ্গে থাকে। ‘সাইকোলজিকাল বুলেটিন’-এর একটা রিপোর্টে সেই কথাই দাবী করছে। ১৯১টি গবেষণায় পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। বয়সের সঙ্গে আত্মবিশ্বাস কীভাবে পাল্টায় তা দেখার জন্যেই এই গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে সারা জীবন আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদাবোধ ওঠা-নামা করে। তবে সাধারণত বয়সের সঙ্গে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। কিছু অদ্ভুত তথ্য যা এই গবেষণা থেকে উঠে এসেছে:
● ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ বাড়ে না। এক জায়গায় থিতু হয়ে যায়।
● কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করার সঙ্গে খুব দ্রুত গতিতে আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে।
● বয়ঃসন্ধিতে আত্মবিশ্বাস এক জায়গায় থেমে থাকে ঠিকই কিন্তু কমে যায় না।
তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য কিন্তু অন্য কথা বলছে। গবেষণা করে দেখা গেছে, একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস সর্বাধিক স্তরে এসে পৌঁছয় ৬০ বছর বয়সে! জানি বেজায় অবাক হচ্ছেন, কিন্তু এটাই সত্যি। আর শুধু তাই নয় ৭০ বছর পর্যন্ত তা একেবারে তুঙ্গে থাকে। ৭০ বছরের পর তা অল্পস্বল্প কমতে পারে। তবে এমনও অনেক মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে যাঁরা ৯০ বছর বয়সেও প্রবল আত্মবিশ্বাসী।
অর্থাৎ বয়স হয়ে গেছে বলে কিন্তু আর আক্ষেপ করতে পারবেন না। যাঁরা এখনও নিজেদের অল্প বয়সের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, তাঁদের কাছে এই তথ্য কিন্তু নতুন ভাবে বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারে। অনেকেই মনে করেন যে ২০ থেকে ৩০—এই বয়সটাই সবচেয়ে উপভোগ্য, এই বয়সেই আত্মবিশ্বাস সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু এই গবেষণা পুরোপুরি এই সব ধারণাকে নির্মূল করে দিয়েছে। বয়স বাড়ার প্লাস পয়েন্ট যদি এই হয়, তা হলে নিশ্চিত কেউ আর বয়স বাড়া নিয়ে আফশোস করতে পারবেন না।
বয়স বাড়ার সঙ্গে আসলে মানুষ অনেক বেশি পরিণত হয়। জীবনের নানা ওঠাপড়া তাঁকে অভিজ্ঞ করে, সমৃদ্ধ করে। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ভালবাসতে শেখায়। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছে আর নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ থাকে না, অন্যকে খুশি করার প্রয়োজন বোধ হয় না। কে কী ভাবল বা কে কী বলল, এই জাতীয় বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতেও ইচ্ছে করে না। এরই ফলস্বরূপ আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। নিজের কোনও অক্ষমতা চোখে পড়ে না আর। মনে হয় ভালই তো গোটা জীবনটা কাটিয়ে ফেললাম। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে, মনের উপরও তার প্রভাবও পড়ে। এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। তাই না?