গত কয়েকদিন ধরেই নভেল করোনাভাইরাস সমস্ত খবরের কাগজ এবং চ্যানেলের শিরোনামে। এই চ্যালেঞ্জের মুখে সাধারণ মানুষের কী করণীয়, কী কী করলে সংক্রমণ এড়িয়ে চলা যাবে, এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে সর্বত্রই। তবু, সচেতনতাই যেহেতু এক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার, শুরুতেই আর একবার বলে রাখি এই পরিস্থিতিতে সাধারণের কী কী করণীয়।
(১) সাবান আর পরিস্কার জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান না থাকলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। দেখা গেছে করোনাভাইরাসকে ১ মিনিটের মধ্যে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যায় যদি হাত বা অন্য কোনও স্থানে ৬২-৭১% অ্যালকোহল বা ০.৫% হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বা সাধারণ ব্লিচিং এজেন্ট যাতে ০.১% সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ব্যবহার করা যায়।
(২) হাত পরিস্কার না করে চোখ-মুখ-নাকে হাত দেওয়া অনুচিত।
(৩) হাঁচি কাশি পেলে রুমাল বা টিসু পেপার ব্যবহার করুন এবং একবার ব্যবহারের পরে রুমাল হলে ভালো করে সাবান জলে ধুয়ে নিতে হবে, টিসু পেপার হলে ফেলে দিন।
(৪) নাক মুখ ঢাকা মাস্ক ব্যবহার করুন। অসুস্থ রোগীদের কাছে যাওয়া পরিহার করুন।
(৫) প্রতিদিনের অবশ্য ব্যবহার্য জিনিসগুলি বারবার পরিস্কার করতে হবে, জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
(৬) নিজের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষ্মণ দেখা গেলে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমণ রয়েছে, তখন সেই ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সধ্যে সংক্রমণ ঘটার যে transmission chain সেটাকে কেটে দেওয়া। এটা সফলভাবে করতে পারলে এখন যে ২য় পর্যায়ে রোগের অবস্থান সেখানে আটকে রাখা যাবে। এটা সফলভাবে না করতে পারলে প্রবেশ করবে ৩য় ধাপে বা স্তরে – অর্থাৎ রোগ তখন আর ব্যক্তির মাঝে আটকে নেই, সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনাভাইরাসের R(0) 2.3-2.5। অর্থাৎ একজন করোনা আক্রান্ত প্রায় ৩ জনকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে – নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়। অনিয়ন্ত্রিত হলে যে সংখ্যাটা কত হবে তা অনুমান সাপেক্ষ। সে এক দুঃস্বপ্নময় ভয়ঙ্কর অবস্থা! এজন্য এখনই এই কঠোর সতর্কতা একান্ত জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।
কেন ঘটবে এরকম? এ রহস্যও লুকিয়ে রয়েছে ভাইরাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাঝে। আক্রান্ত রোগির একবার কাশি থেকে ৩,০০০ জলীয় ছোট বিন্দু তৈরি হয়। এই বিন্দুগুলো অন্য মানুষ, জামাকাপড় বা চারপাশের যেকোন তল বা উপরিস্তরে জমে যায়। এ প্রমাণও আছে আক্রান্তের মলে ভাইরাস বেশি দিন ধরে থাকতে পারে। ঠিক কতদিন COVID-19 মানুষের শরীরে থাকতে পারে এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। এটা দেখা গেছে কোন শক্ত উপরিস্তরে এ ভাইরাস কার্ডবোর্ড বা তামার পাত্রের চেয়ে বেশিদিন বাঁচে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিউটস অব হেলথ-এর বিজ্ঞানী নিলৎজে ভ্যান ডোরমালেন (Neeltje van Doremalen) তাঁর প্রকাশিত-হবার-মুখে একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন – কাশির পরে নির্গত জলকণার মধ্যে থাকা ভাইরাস ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে বেঁচে থাকতে পারে। সেসব জলকণার আকার ১-১৫ মাইক্রোমিটার (মানুষের চুলের চেয়ে ৩০গুণ কম চওড়া) স্থির বাতাসে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বাতাসে আলোড়িত হলে এই জলীয় বিন্দুগুলো আরও তাড়াতাড়ি উপরিস্তরে ঘাঁটি গাড়ে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও জানেনা ঠিক কিভাবে মানুষের দেহের ভেতরে কোষের সাথে এই ভাইরাস জোড় বাঁধে এবং সংক্রমণ শুরু করে। জানেনা সংক্রমণ নিয়েও কীভাবে একজন মানুষ একেবারেই কোনও উপসর্গহীন অবস্থায় থাকতে পারে, আবার একজন মরে যায়। যদিও মনে রাখা দরকার যারা মারা গেছে তাদের এক বড় সংখ্যক বার্ধক্য, টিবি, ডায়াবেটিস বা অন্য কোন ধরনের অসুখে যা শরীরের ইমিউনিটিকে দুর্বল করে দেয় সেরকম অসুখে ভুগছিল। কিন্তু য়ুহানের রিপোর্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে বড়ো সংখ্যক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে মাল্টি অরগ্যান ফেইলিওরের ফলে।
সমাজের যে অংশের মানুষেরা বেশি বিপজ্জনক অবস্থায় আছে তারা হল – (১) ৬০ বা এর চেয়ে বেশি বয়সী, (২) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা নিউমোনিয়ার মতো অন্য কোন রোগে আক্রান্ত, (৩) যারা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ খাচ্ছে ইত্যাদি। এখনও অবধি দেখা যাচ্ছে তুলনায় শিশু এবং মহিলারা নিরাপদ। এছাড়াও আমাদের মতো দেশে যেখানে এক বিশাল সংখ্যক মানুষ ফুটপাথে এবং বস্তিতে বাস করে এবং, স্বাভাবিক নিয়মে, অস্তিত্বধারণের তাগিদ প্রথম হওয়ায় একেবারে গোড়ার হাইজিন এবং স্যানিটেশন সম্পর্কে অনিবার্যভাবেই কোন বোধ গড়ে ওঠেনি সেখানে সংক্রমণ ছড়ালে কী পরিণতি হবে? এমনকি আজ যদি জাতীয় ইমার্জেন্সিও ঘোষিত হয় তাহলেও এ অবস্থার খুব পরিবর্তন হবে কি?
করোনাভাইরাসে যাদের মৃত্যু ঘটে তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ দুটি – (১) ডাক্তারি পরিভাষায় বললে “cytokine storm syndrome” যখন অত্যন্ত মাত্রাছাড়াভাবে শরীরের আভ্যন্তরীন ইমিউন রেস্পন্স তৈরি হয় যার ফলে আক্রান্তের ফুসফুস চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং (২) “fulminant myocarditis” যার ফলে অতি দ্রুত এবং মারাত্মক হার্ট ফেইলিউর হয় যাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসাধ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ACE2 inhibitor নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু ১৭ মার্চ, ২০২০-তে প্রকাশিত জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে সমস্ত রোগী এসিই-আই এবং এআরবি ওষুধ খান তারা করোনা আক্রান্ত হলেও ওষুধ চালিয়ে যান যদি না ডাক্তার অন্যরকম নির্দেশ দেন। ব্যথা কমানোর ওষুধ ইবিউপ্রোফেন নিয়েও একই কথা। একমাত্র তাড়াহুড়ো করে লেখা ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটি চিঠি ছাড়া আর কোথাও একে নিষিদ্ধ করা হয়নি। এ নিয়ে ১৭ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে।
এখনও অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগে ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “ট্রায়াল অফ লোপিনাভির-রিটোনাভির ইন অ্যাডাল্টস হসপিটালাইসড উইথ সিভিয়ার কোভিড-১৯” জানাচ্ছে – “হাসপাতালে ভর্তি প্রাপ্তবয়স্ক তীব্র করোনা আক্রান্তদের ওপর লোপিনাভির-রিটোনাভির-এর কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে না”। ১৯ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত সম্পাদকীয় – ‘কোভিড-১৯ দ্য সার্চ ফর এফেক্টিভ থেরাপি’-তে খানিকটা বেদনার স্বরেই বলা হয়েছে – করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এবং বাকিদের মধ্যে সংক্রমণ রুখতে উপযুক্ত কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল এজেন্ট এখনও আমাদের হাতে নেই। ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে যে ফ্লু-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ‘অ্যাভিগন’ করোনাভাইরাস সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে যদি গোড়ার দিকে পিরয়োগ করা হয়। কিন্তু যতক্ষণ না একটি ওষুধ র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাকে মান্যতা দেওয়া মুশকিল।
হু এবং করোনাভাইরাস
১৬ মার্চ হু-র ডিরেক্টর জেনারেল এখনও আমরা যে জায়গায় উপযুক্ত ফোকাস করতে পারছিনা সেদিকে দৃঢ়ভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন – (১) টেস্টের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো, (২) আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন আক্রান্তকে আলাদা/বিচ্ছিন্ন করে রাখা, এবং (৩) যারা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে তাদের খুঁজে বের করা। হু-র তরফে ১২০টি দেশে দেড় কোটি টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। ডিরেক্টর জেনারেল স্মরণ করিয়েছেন, এরকম সংকটের সময়েই মানুষের মহত্তম এবং কুৎসিৎতম দুটি চেহারাই ধরা পড়ে।
মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে হু-র নির্দিষ্ট বক্তব্য হচ্ছে –
- আপনি যদি সুস্থ হন তাহলে কেবলমাত্র করোনা আক্রান্ত সন্দেহভাজনের দেখাশোনার সময়ে পরা দরকার।
- যদি আপনার হাঁচি কাশি থাকে তাহলে মাস্ক পরতে হবে।
- মাস্ক পরা তখনই কার্যকরী যখন বারংবার সাবান জল দিয়ে হাত ধোয়া হবে কিংবা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করা হবে।
- মাস্ক ব্যবহার করলে জানতে হবে কীভাবে এটা ব্যবহার করতে হয় এবং ব্যাবহারের পরে ফেলে দিতে হয়।
করোনাভাইরাসের সময় সারণী
- ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে করোনা ভাইরাসের খবর আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পৌঁছয়। চিন সরকার দ্রুত এ খবর হু-র কাছে পাঠায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য।
- ওয়াশিংটন পোস্টের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯-র খবর জানাচ্ছে – চিনের করোনা সংক্রমণের সঙ্গে অস্ত্র গবেষণার সূত্র বাতিল করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৭ মার্চ, ২০২০-র সায়েন্স ডেইলি পত্রিকার শিরোনাম – “কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস অতিমারীর উৎপত্তি ঘটেছে প্রাকৃতিক উৎস থেকে”। পরে আরও ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে – পাব্লিক জেনোম সিকোয়েন্স ডেটা পরীক্ষা করে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা থেকে বলা যায় যে এই ভাইরাস কৃত্রিমভাবে গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে।
- ২৭ জানুয়ারি, ২০২০, অস্ট্রেলিয়া কৃত্রিমভাবে নভেল করোনা ভাইরাস তৈরি করতে সফল হয়েছে। ফলে ভবিষ্যৎ গবেষণার সুবিধে হবে।
- এর পরবর্তী সময়ের ইতিহাস আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম। সর্বশেষ চিন্তায় ফেলার মতো খবর হল নেচার-এর মতো মান্য জার্নালে ২০ মার্চ, ২০২০-তে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট – সুপ্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা যেতে পারে। এমন অনেকেই আছেন যাদের কোনও সিম্পটম নেই কিন্তু তারাও অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। সেরকম মানুষের সংখ্যা ঠিক কত এবং জনসংখ্যার কত ভাগ, এটা নির্ধারণ করাই বৈজ্ঞানিকদের পক্ষে জরুরি। আমাদের কাছে অজানা কত সংখ্যক মানুষের মাঝে সুপ্ত হয়ে আছে এই ভাইরাস যেখান থেকে আবার সংক্রমণ ঘটতে পারে।
- কিন্তু এক ভাইরাসের গুঁতোয় বিশ্বসুদ্ধ গেল গেল রব পড়ে গেছে – কি মেডিসিনে, কি পর্যটনে, কি বিশ্ব অর্থনীতিতে। একেই বলে গ্লোবালাইজেশন – “আওয়াজ খানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা”।
করোনাভাইরাসের ভ্যাক্সিন এবং কর্পোরেট পুঁজির রাজনীতি
১৬ মার্চ, ২০২০-র খবর হচ্ছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথ-এর তরফে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাক্সিন সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে mRNA-1273।
আমেরিকা থেকে প্রকাশিত আরস টেকনিকা নিউজ চ্যানেলের একটি খবরে বলা হয়েছে জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কিয়োরভ্যাক জানুয়ারি মাস থেকেই করোনার ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছিল। আর এই কিয়োরভ্যাক-এর ভ্যাক্সিন কেনার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমেরিকায় এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে যে জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায় যে রিসার্চ হয় সে রিসার্চের ফল কেন বাণিজ্যিকভাবে বিপুল মুনাফার জন্য কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হবে? রয়টার্স-এর খবর (১৫ মার্চ, ২০২০) অনুযায়ী – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রয়াস নস্যাৎ করে দিয়েছে জার্মানি। কিয়োরভ্যাকের প্রধান লগ্নীকারী হর্স্ট সিহোফার (Horst Seehofer) জানিয়েছেন তিনি ভ্যাক্সিন বিক্রি করবেন না এবং এই ভ্যাক্সিনের লক্ষ্য হবে গোটা পৃথিবীর মানুষকে সাহায্য করা, কোনও বিশেষ এলাকাভিত্তিক গোষ্ঠিকে সাহায্য করা নয়।
আমেরিকার আর এক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন তিনি নির্বাচিত হলে এই ভাক্সিনকে সম্পূর্ণত বিনামূল্যে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-তে ৪৬ জন ডেমোক্র্যাটের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি ট্রাম্পকে দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যদি মার্কিন করদাতাদের টাকায় করোনার কোনও চিকিৎসা বা প্রতিষেধক তৈরি করা সম্ভব হয় তা যেন আমজনতার আয়ত্তের মধ্যে থাকে এবং কোনও কর্পোরেট সংস্থা যেন তার দাম, বন্টনব্যবস্থা, ইত্যাদি নির্ধারণ করতে না পারে।
১৯ মার্চ, ২০২০ নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি খবরের শিরোনাম “করোনার প্রতিষেধকের খোঁজ এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চেহারা নিয়েছে”। প্রবন্ধটিতে মন্তব্য করা হয়েছে যে গোড়ায় এই খোঁজ ছিল মূলত বৈজ্ঞানিক সম্মাননা, পেটেন্ট এবং মুনাফা জিতে নেওয়ার প্রতিযোগিতা। কিন্তু এখন এর পরিধি বেড়ে এটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার আওতায় চলে এসেছে। বিশ্ব কি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে? না কি জাতীয়তাবাদ এবং মুনাফার উদগ্র বাসনাই প্রধান বিষয় হয়ে উঠছে?
মানুষের বাঁচামরার জিয়নকাঠিও কর্পোরেট পুঁজির আবর্তে পড়ে গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, বর্তমান অর্থনীতির এই ধ্বসের মাঝেও আমেরিকান বহুজাতিক ফার্মা কোম্পানি ইলি লিলি-র শেয়ার লাভের মুখ দেখেছে কারণ এরা সর্বসাধারণ্যে বিবৃতি দিয়েছে যে করোনাভাইরাসের নতুন চিকিৎসা নিয়ে আসছে।
বুঝ জন, যে জানো সন্ধান!
পেশায় ডাক্তার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন। বর্তমান ঠিকানা রায়গঞ্জ।