Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ধূসর জগতের অভিশাপ

দেবাশিস দাস

জুলাই ১৭, ২০২৪

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

অন্ধকারে ফোনের রিং-টোন বেজে উঠল গাড়ির স্পিকারে। ড্যাশবোর্ডের এলসিডিতে ফুটে উঠল এক অচেনা নম্বর। রাত হয়েছে। গুজরাটের মসৃণ রাস্তায় গাড়ি চলছে দুরন্ত গতিতে। একটা প্রত্ন-শহর সফর করে সস্ত্রীক ফিরছে চন্দ্রকেতু। হরপ্পার ধূসর জগতে তখনও ঘোরাঘুরি করছে মন। আগামীকাল রবিবার হওয়ায় মন আরও ফুরফুরে। ফোনটা স্টিয়ারিং থেকে অ্যাকসেপ্ট করতেই ওপাশ থেকে ধরা গলাতে কেউ বলল, “খবর পেয়েছেন?”…। কোন খবর? কার খবর? ইত্যাদি পেরিয়ে সে জানতে পারল যে তাদের পারিবারিক বন্ধু সুনীল আজ বিকেলে আকস্মিকভাবে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মন আছড়ে পড়ল বাস্তবের কঠিন মাটিতে। সুনীল একজন স্বাস্থ্যবান, মধ্য-চল্লিশের কর্মব্যস্ত মানুষ। কী করে এসব হল তার? সুনীলের বাড়ি কারশিয়াং-এ। ও ছিল চন্দ্রকেতুর দার্জিলিং কনভেন্টে পড়া মেয়ের লোকাল গার্জেন। মেয়েকে কীভাবে সে জানাবে ব্যাপারটা কে জানে। সামনেই ওর ক্লাস এইটের ফাইনাল পরীক্ষা। গাড়ির গতি নিজের থেকেই কমে এল। ভেতরের অন্ধকারে মুহ্যমান হয়ে রইল চন্দ্রকেতু ও তার স্ত্রী অবন্তিকা। (Curse of the gray world)

আজ গুজরাটি নতুন বছরের ছুটিতে প্রত্নশহরে সারাদিন অবশ্য বেশ ভালই কেটেছিল তাদের। কোথাও কুয়ো, কোথাও জলাশয়, কোথাও বাজার, কোথাও আশ্চর্য নিকাশি ব্যাবস্থা-সহ ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি ঘুরে ঘুরে দেখা হল। করোনার প্রকোপ কমলেও, তার বিধিনিষেধের কারণে ভিড় তেমন ছিল না। গাইড বলেছিল এই জায়গাটা একসময় ছিল এক বন্দর শহর। নানা দ্রব্য এখানে তৈরি করে জাহাজে করে রপ্তানি করা হত সুদূর মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত। নানারকম মশলা তৈরির জায়গা, বীড বা গুটিকা-ফ্যাক্টরি ইত্যাদি বিশেষ করে ভাল লাগল তাদের। অনেকক্ষণ প্রাচীন নগরী দেখাবার পর গাইড কোনও একটা জরুরি কাজে অফিস-ঘরে ফেরত গিয়েছিল। বলে গিয়েছিল ‘স্যার, মোটামুটি সবই দেখানো হয়েছে, তবে আপনারা আরও কিছুক্ষণ এখানে ঘুরে বেড়াতে পারেন। আমি ফিরে আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই’।

গাইড চলে যাওয়ার পর ওরা বীড বানানোর ফ্যাক্টরির ধ্বংসাবশেষের আশেপাশেই ঘুরতে লাগল। বীড বা গুটিকা দিয়ে অলঙ্কার ইত্যাদি তৈরি হত। আর সেই বীড বানানো হত মূল্যবান পাথর, ধাতু, এমনকি জীবজন্তুর হাড় বা দাঁত দিয়ে। অনেকক্ষণ এই ধূসর জগতে টহল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে কোথাও বসে বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবছিল চন্দ্রকেতু। হঠাৎ কানে এল স্ত্রীর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর। ‘দেখ, কি সুন্দর একটা জিনিস পেলাম’। সে দেখল, এক ভগ্নাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে অবন্তিকা, আর হাতে রয়েছে টেবিল-টেনিস বলের আকারের একটা রক্তবর্ণ মসৃণ বীড বা গুটিকা। সাদা, কালো, হলুদ রঙের সূক্ষ্ম কারুকাজে অপূর্ব রূপ তার। ধুলো, মাটি পরিষ্কার করতেই বেশ চকচক করতে লাগল বীডটা। কী করে যেন সকলের নজর এড়িয়ে জিনিসটা একটা ভাঙা ইটের স্তূপের মধ্যে পড়ে ছিল। বোধহয় সাম্প্রতিক কিছু খোঁড়াখুঁড়িতেই বেরিয়ে এসেছে জিনিসটা। অবন্তিকা নিজের ব্যাগের মধ্যে সন্তর্পণে চালান করে দিল বীডটা। চন্দ্রকেতু আপত্তি করল- “দেখ, জিনিসটা সরকারের, তাই অফিসে জমা দেওয়া উচিত।” কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্ত্রীর যুক্তি হল ছোট জিনিসটা ও নিজে যখন পেয়েছে তখন সেটা ওরই।

গাইড ফিরে এসেই তাড়া দিল। “চলুন চলুন, বিকেল হয়ে গেছে, সাইট বন্ধ হয়ে যাবে।” হঠাৎ কী খেয়াল হওয়াতে সে বলল, “আরে এখানে বসে আছেন কেন? এটা তো একটা কবরস্থান ছিল হরপ্পার মানুষদের, তাই এখানে বসতে মানা আছে। ওই দেখুন লেখা আছে।” ভাল করে নজর করাতে সত্যিই দেখা গেল পাশের ঝোপে ‘সিমেটেরি’ লেখা একটা সাইনবোর্ড। নীচে ছোট করে আরও কিছু লেখা। কাঁটাঝোপের আড়ালে থাকায় লেখাটা তারা দেখতে পায়নি। মাটির ঢিবিগুলোর নিচে প্রত্ন মানুষদের মৃতদেহের উপস্থিতি কল্পনা করে শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল চন্দ্রকেতুর। এখানে এই নির্জন বিকেলে শুধু তারাই বসেছিল এতক্ষণ ধরে?

ফেরার সময় এখানকার সংগ্রহশালায় অনেক কিছুর সঙ্গে অজস্র বীডও দেখল ওরা। দেখল এখান থেকে পাওয়া কবরের নানান ছবি। সেই সময়ে কবরে মৃতদেহের সঙ্গে অনেক সময় তাদের পছন্দের বীডের অলঙ্কার, খাদ্যশস্য ইত্যাদি রেখে দেওয়া হত। মৃত্যুই যে সবকিছুর শেষ নয় একথা বিশ্বাস করত তারা। এরমধ্যেই অবশ্য গাইডকে চন্দ্রকেতু কুড়িয়ে পাওয়া বীড-এর কথা জানিয়ে জিজ্ঞেস করল ওটা নিয়ে যাওয়া যাবে কী না। গাইড মিন মিন করে কিছু বলে চুপ হয়ে গেল। ‘মৌনং সম্মতি লক্ষনম’ ভেবে আর কথা বাড়াল না ওরা। বীড ব্যাগেই থাকল।

দুঃসংবাদটা শুনে গাড়ির গতির সঙ্গেই শরীরের রক্তসঞ্চালনও যেন শ্লথ হয়ে গিয়েছিল চন্দ্রকেতুদের। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখল তাদের পরিচিত ফলওয়ালি ‘উকরি-বেনের’ ফুটপাথের ঝুপড়ি-দোকান এত রাতেও খোলা। দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে কিছু ফল কিনল। বাড়িতে ঢুকতেই শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি পুরোপুরি গ্রাস করে নিল তাদের।

উত্তর-গুজরাটের এই ছোট্ট সুন্দর তৈলশহরে কয়েকমাস হল বদলি হয়ে এসেছে চন্দ্রকেতু। এখানকার খনিজ-তেলের খোঁজ ও উত্তোলনের কাজ দেখাশুনার দায়িত্ব তার। তাদের একমাত্র মেয়ে শ্রাবস্তী দার্জিলিং কনভেন্ট স্কুলের ছাত্রী। নিজেদের থাকার জন্য অফিস থেকে পাওয়া আধুনিক ডুপ্লেক্স বাংলোটাও দারুণ। কেয়ারটেকার, মালীরা সবাই লাগোয়া আউট-হাউসে থাকে।

পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলেই অবন্তিকা বলল- “কি কাণ্ড দেখেছ? কাল যে বীডটা কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম, সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।”
“ব্যাগেই ভাল করে দেখ।” আমি বললাম।
“না নেই। অনেক জায়গায় খুঁজলাম, কোথাও নেই।” অবন্তিকা যেন খানিকটা হতাশই।
মনটা খারাপ হয়ে গেল চন্দ্রকেতুর। এত কাণ্ড করে আনা হল জিনিসটা। কোথায় যে গেল?

মেয়ের ক্লাস টিচারকে ভালই চেনে চন্দ্রকেতু। দার্জিলিঙে তাকেই সে ফোন করে জানিয়ে দিল মেয়ের লোকাল গার্জেন সুনীলের মৃত্যুর খবরটা। ক্লাস টিচার জানালেন নতুন লোকাল গার্জেন কে হবেন সেটা ঠিক করে একটা ইমেল যেন স্কুলের এডমিনিস্ট্রেসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারশিয়াং-এ সুনীলের স্ত্রীকেও ফোন করে শোক প্রকাশ করল চন্দ্রকেতু। ভীষণ ভেঙে পড়েছেন মহিলা। জানতে পারল সুনীলের মৃত্যু নাকি একেবারেই আকস্মিক। বিকেলে চায়ের পরে সে অফিসে সিটে বসে কাজ করছিল। এরপর হঠাৎ নাকি মাটিতে পরে যায়, আর ওঠেনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়েছে তার।

রবিবার সারাদিনে বন্ধু-বিয়োগের ব্যথা থিতিয়ে যাওয়ার আগেই বিকেলে মালী আরেক দুর্ঘটনার খবর দিল। সকালেই নাকি বড় রাস্তায় একটা গাড়ি ব্রেক-ফেল করে ওদের চেনা ফলওয়ালির শান্তাবেনের ঝুপড়ি-দোকানে ধাক্কা মেরেছে। উদ্বিগ্ন চন্দ্রকেতু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখল দোকানের একদিক ভেঙে গেছে। শান্তাবেন গুরুতর আহত হয়ে হসপিটালে ভর্তি। ওর বর আর বাচ্চাদের অবশ্য কিছু হয়নি। ওর বর দোকান সামলাচ্ছিল। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়েই দোকানের পেছনে মাটিতে পড়ে থাকা একটা চকচকে জিনিস ওর নজরে পড়ল। কাছে গিয়ে দেখল তাদের হারানো বীডটা মাটিতে পড়ে আছে। কালরাতে এটা নিশ্চয়ই ফল কিনে পয়সা দেবার সময় অবন্তিকার ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়েছিল। ভাগ্যিস তার চোখে পড়ল, নাহলে আর কোনদিনই আর পাওয়া যেত না এটা। বীডটা কুড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরল চন্দ্রকেতু।

‘ইতস্তত ময়ূর ঘোরে এই অরণ্যে সমস্ত দিন’। কবি গুজরাটে এসে লাইনটা লিখেছিলেন কী না চন্দ্রকেতু জানে না। তবে এখানে অরণ্যে তো বটেই, হাটে, মাঠে, রাস্তা ঘাটেও অনেক ময়ূর দেখা যায়। চন্দ্রকেতুর বাংলোর পিছনের জঙ্গলেই এক ময়ূরদম্পতির বাস। প্রতিদিন সকালে বাংলোর পেছনের দরজা খুললেই দেখা যায় ময়ূরদম্পতি বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রোজই ওদের দানা খাইয়ে দিন শুরু করে চন্দ্রকেতু। ভীষণ অবাক হয়ে আজ সকালে সে দেখল ময়ূরদুটো তাদের বাগানের সীমানার বাইরে দাঁড়িয়ে কর্কশ স্বরে চেঁচাচ্ছে। দানা দিয়ে ডাকলেও তারা যেন কোনও অদৃশ্য বাধার জন্য ভেতরে ঢুকতে পারছে না। বাইরে গিয়ে দানা দিলেও তারা খেল না। বরং মুখ ঘুড়িয়ে ফিরে গেল। ভীষণ অবাক হল চন্দ্রকেতু। এরকম তো হয় না কখনও।

একজন ভাল ‘টেকনিকাল ম্যানেজার’ হিসেবে অফিসে বেশ নামডাক রয়েছে চন্দ্রকেতুর। খুব তাড়াতাড়ি অনেকটা উপরের ধাপে পৌঁছে গেছে সে। যেকোনও দায়িত্ব সে অবলীলায় সামলে নিতে পারে। হেড-অফিসেও বড়সাহেবরা সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। এত বড় দায়িত্ব দিয়ে তাকে এখানে পাঠিয়ে উপরওয়ালারা তাই বেশ নিশ্চিন্ত।

তবে আজ কিন্তু অন্যরকম এক ঘটনা ঘটল। লাঞ্চের পর হেড অফিসের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল মিটিং অ্যাটেন্ড করতে করতেই তার মোবাইলে একটা দুর্ঘটনার খবর এল। তাদের একটি তৈলকূপে ব্লো-আউট হয়েছে। তেল এবং গ্যাস ওই কূপ থেকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেরিয়ে আসছে। সামলাতে না পারলে যে কোনও সময় বিধ্বংসী আগুন লেগে কর্মীদের অনেকের প্রাণনাশ হতে পারে। ড্রাইভারকে নিয়ে সাইটে ছুটল সে। গিয়ে দেখল ভাগ্যক্রমে ব্লো-আউট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে এবং কারও প্রাণহানি হয়নি। যদিও চারজন কর্মী দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়াও অনেক যন্ত্রাংশের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।

এতদিন ভালোই কাজ হচ্ছিল এই তৈলকূপে। হঠাৎই অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তেল উত্তোলন আবার শুরু করতে কতদিন লাগবে কে জানে! কোম্পানির বিরাট আর্থিক ক্ষতি তো হবেই, সঙ্গে অডিট ইত্যাদির বড় ঝামেলাও তাকে সামলাতে হবে। মোটের উপর মসৃণ কেরিয়ারে এটা একটা দাগ হয়ে রইল।

পরেরদিন এই অ্যাক্সিডেন্ট সংক্রান্ত এক জরুরি মিটিংয়ে আমেদাবাদ গেল চন্দ্রকেতু। কীভাবে তাদের তেলের প্রোডাকশন টার্গেট মিট করা যাবে তাই নিয়ে মিটিং। সে জানে অফিসে তার অনেক প্রতিযোগী। তার এই বিপদে সেই মানুষগুলো খুশিই হয়েছে। এই অবস্থায় সব সামলে আবার নিজের জায়গা ফিরে পাওয়াই তার কাছে আসল চ্যালেঞ্জ। কীভাবে সেসব হবে তাই তার মূল চিন্তা। এদিকে হাসপাতালে দুজন কর্মীর অবস্থা বেশ সংকটজনক। পুরো মিটিং-এ তাকে বেশ গ্রিল করা হল নানাভাবে। মনে হল ম্যানেজমেন্ট তাকে সাপোর্ট করবে না। সবাই পিঠ বাঁচাতে ব্যস্ত। তবে একটা ব্যাপার সে মানে, যে ভগবানের অশেষ দয়া না থাকলে অনেক বড় অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারত। এমনকি তার নিজেরও সাসপেনশন হতে পারত।

সন্ধ্যে নেমেছে। মিটিং শেষে চিন্তান্বিত হয়ে নিজের অফিসের গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলল সবরমতী নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে। ওখানে মুক্ত বাতাসে বসতে চায় সে।

সবরমতীর এই রিভারফ্রন্ট তার খুব পছন্দের জায়গা। সন্ধ্যায় নদীর বাতাসে প্রাণ একেবারে জুড়িয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে উঠে পার্কিং-এর দিকে যেতে যেতে হঠাৎ মনে হল আধো অন্ধকারে একটা লোক তাকে অনুসরণ করছে। এখানে রাস্তায় তো কেউ ছিল না, হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হল লোকটা?
লোকটা নিজেই গতি বাড়িয়ে তার কাছে আসতে মনে হল একে কোথায় যেন দেখেছে চন্দ্রকেতু।
“কেমন আছেন স্যার, আমায় চিনতে পারছেন?” লোকটার গলা শুনেই চিনতে পারল তাকে। এই লোকটি সেই প্রত্ন-শহরে তাদের গাইড ছিল সেদিন। কী যেন নাম বলেছিল? ‘বাবুভাই’, হ্যাঁ ‘বাবুভাই প্যাটেল’।
“কেন চিনতে পারব না? এখানে কী ব্যাপার?” অনেক দুশ্চিন্তার মধ্যেও মুখে খানিকটা হাসি আনার চেষ্টা করল চন্দ্রকেতু।
“আগে বলুন তো স্যার, কেমন আছেন আপনারা?” বাবুভাই কুশল জানতে চাইল।
“চলছে একরকম।” নিজেদের দুরবস্থার কথা একে আর কী বলবে চন্দ্রকেতু।
“আপনি সেদিন যে বীডটা নিয়ে এসেছিলেন সেটা আপনার কাছে আছে এখনও নাকি কাউকে দিয়ে দিয়েছেন।”
“কেন? দেবো কেন? ওটা তো নিজেদের কাছে রাখার জন্যই নিয়ে আসা। তবে এ প্রশ্ন করছেন কেন?” বেশ অবাক হল চন্দ্রকেতু।

“আগে বলুন, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সহ আপনারা নিজেরা সবাই ভালো আছেন তো? আমি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলাম। আজ দেখা না হলে আপনার বাড়িতেই যেতে হত।”

“ঠিক কী হয়েছে বলুন তো? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“স্যার একটা জরুরি কথা আপনাকে জানাবার জন্য আমি আপনাকে খুঁজছি। আপনি যে বীডটা সেদিন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন, তা অভিশপ্ত।”
“অভিশপ্ত? তার মানে?”

“আমার দাদু এই প্রত্নশহরের মিউজিয়ামের কিউরেটর ছিলেন অনেক বছর আগে। তাকে আমি কথায় কথায় বীডের কথা বলেছিলাম, তিনি যা বললেন, তা আপনাদের পক্ষে খুব শুভ নয়। ওঁর বক্তব্য হল প্রত্নশহরের কবরস্থানের জিনিস বাইরে নিয়ে গেলে অভিশাপ লাগে।”
“আভিশাপ?”
“হ্যাঁ আভিশাপ। এই বীডের অলঙ্কার ছিল সেই সময়ের মানুষদের প্রাণের থেকেও প্রিয়। তাই মৃত্যুর পরেও তাদের কবরে সেগুলো রেখে দেওয়া হত। আপনাদের কুড়িয়ে পাওয়া বীডটা হয়তো কোনও মৃতের কবরে রাখা অলঙ্কারের অংশ। এই আভিশাপ সেই মৃতদের অভিশাপ। অনেকদিন আগে দাদুর সময়েও কয়েকবার খনন-শ্রমিকরা কবরস্থান থেকে পাওয়া জিনিস বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। তাদের পরিবারেও নেমে এসেছিল ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। একমাত্র এই প্রত্নশহর ছাড়া এইসব জিনিস বাইরে যার কাছে থাকবে, তার সংসারে দুর্যোগ নেমে আসবে।”
“এ অলৌকিক ব্যাপার নাকি?”
“দাদু একসময় তন্ত্রসাধনা করতেন, তিনি বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বীড যেখানে পেয়েছিলেন সেখানেই রেখে আসবেন। তাহলে যার জিনিস সে-ই ফেরত পাবে। নাহলে আপনাদের কিন্তু ভীষণ বিপদ।”

“কী বলছেন এসব। আমি কোনও অলৌকিকে বিশ্বাস করি না।”
“আপনাদের ভালোর জন্য বললাম। কী করবেন সেটা আপনি নিজেই ঠিক করুন।”
কথা বলতে বলতে হঠাৎই যেন অন্ধকারে মিলিয়ে গেল লোকটা।
বাড়ি ফিরে অবন্তিকাকে এসব কিছু বলল না চন্দ্রকেতু। ও অযথা ভয় পাবে।

এর দুদিন পরে অফিসে বের হওয়ার মুখে চন্দ্রকেতুকে বাংলোর কেয়ারটেকার আউটহাউস থেকে কাঁদতে কাঁদতে এসে জানাল, ওর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ভোরবেলা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লোকাল ডাক্তার বলেছে, ‘কঠিন অবস্থা, হয় মা বাঁচবে, নয় বাচ্চা’।
“সে কী, গতকালও তো কাজকর্ম করেছে। কোনও অসুবিধা তো ছিল না।” আবন্তিকা পাশ থেকে বলল।
“হ্যাঁ মোটাবেন, দিনের বেলা কোনও আসুবিধে ছিল না। আপনার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কাজও তো করেছিল সে। কী যে হল কাল রাতে”। অবন্তিকাকে ওরা মোটাবেন (দিদি) বলে ডাকে।
“চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। কোনও দরকার হলে অবশ্যই জানিও। আমি পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসব”। চন্দ্রকেতু শান্ত করার চেষ্টা করল তাকে।
চলে যাওয়ার আগে কেয়ারটেকার বলল- “দেখুন তো এই জিনিসটা আপনাদের কী না? কাল রাতে বাইরের বারান্দায় পড়েছিল। আমি আমার ঘরে রেখেছিলাম। ভাবলাম যদি আপনাদের জিনিস হয়।”
আশ্চর্য হয়ে দেখলাম সেই বীডটা ধরা আছে ওর মুঠোতে।
“আরে, এটা বাইরে গেল কী করে। আমাদের বেডরুমের তাকেই তো রাখা ছিল এটা। দাও আমাকে।” আবন্তিকা জিনিসটা ফেরত নিয়ে ভেতরে চলে গেল।

সারাদিন অফিসে বড় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকল চন্দ্রকেতু। মন একটা কু-ডাক ডাকছে সারাক্ষণ। বীডের আভিশাপের ব্যাপারে গাইডের কাছ থেকে শোনার পর থেকে এটা হচ্ছে। অফিসের সমস্যা, তার সঙ্গে নানান খারাপ খবর মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে তাকে। লাঞ্চের সময় সবচেয়ে খারাপ খবরটা এল- আজ সকালে দু’জন গুরুতর আহত শ্রমিকদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। মৃতের বাড়ির লোকজন সাইটে নানা গাফিলতির জন্য পুলিশে ‘এফ এই আর’ করেছে। পুলিশ যে কোনও সময় অফিসে চলে আসতে পারে। শ্রমিকরাও ক্ষেপে উঠেছে সাইটে নিরাপত্তার গাফিলতির জন্য। মিডিয়াতেও নানারকম খবর ছড়াচ্ছে। এরকম চললে তার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। এতদূর যে যাবে ব্যাপারগুলো, সে ভাবতেই পারেনি। এখন তো পুরো বিষয়টাই প্রায় হাতের বাইরে চলে গেল মনে হচ্ছে।

বিকেলে নিজের বাংলোতে ফিরতেই অবন্তিকা জানাল, এইমাত্র ফোন এসেছে, ওর মা কলকাতার বাড়িতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে কোমরে ফ্রাকচার হয়ে শয্যাশায়ী। এই বয়সে ফ্রাকচার, ঠিক হবে কী না কে জানে।
“কী হচ্ছে বল তো? পরপর দুঃসংবাদ পাচ্ছি। আমাদের ওপরে নিশ্চয়ই কারো কুনজর লেগেছে।” স্ত্রীর কথাতে নিজের অফিসের পুলিশ ‘এফ আই আর’-ইত্যাদির কথা মনে পড়ল চন্দ্রকেতুর।
“অবন্তী, আমার অফিসের অবস্থাও ভাল নয়। কী যে হচ্ছে এসব, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অবন্তিকার কথাতে হঠাৎ আরেকটা আশঙ্কার কথা মনে হল চন্দ্রকেতুর। দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর খবর আশেপাশের লোকজন বা বন্ধুবান্ধব ছেড়ে এবার ক্রমে নিকট-আত্মীয় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে কী গাইড বাবুভাই-এর কথাই সত্যি? বিপদ এরপর তাদের ঘরের মধ্যেই এসে ঢুকবে? পরের লক্ষ্য কে? সে, অবন্তিকা, নাকি তাদের মেয়ে শ্রাবস্তী?

ডিনার শেষ হতেই মোবাইল বেজে উঠল। স্ক্রীনে অচেনা নম্বর। কোনও ল্যান্ডলাইন থেকে কল এসেছে মনে হচ্ছে। ভয়ে ভয়ে ফোনটা ধরল চন্দ্রকেতু। ওপাশ থেকে একটা ফ্যাসফ্যাসে গলা বলল- “আমি হরপ্পার প্রত্নশহরের মিউজিয়ামের একসময়ের কিউরেটর। জানতে চাইছি, আপনারা সবাই সুস্থ ও নিরাপদে আছেন তো?”
“কেন এ প্রশ্ন করছেন?” চন্দ্রকেতু অবাক।
“আপনাদের গাইড মানে বাবুভাইয়ের কাছ থেকে কদিন আগে জানলাম যে এখানকার সিমেটেরির সাইটে আপনারা একটা বীড কুড়িয়ে পেয়ে সেটা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। গাইড তো আপনাকে বীড রেখে যেতে বলেছিল। ফেরত দিয়েছেন সেটা? নাকি বীড এখনও আপনাদের কাছেই আছে?”

“আমাদের কাছেই তো আছে সেটা, কেন বলুন তো?”

“আপনি শোনেননি তাহলে গাইডের কথা। আপনি কী জানেন যে আপনার নিজের ছাড়াও আপনার বন্ধু, আত্মীয়পরিজন সকলেরই প্রাণ নিয়ে খেলছেন আপনি।”

“হয়তো আপনি ঠিকই বলছেন। বীড আনার পর আমরাও পরিচিতদের বেশ কয়েকটা খারাপ খবর পেয়েছি। ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে।” দুর্বল কণ্ঠে বলল চন্দ্রকেতু।
“ক্ষতি তো শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে। যে মুহূর্তে আপনি বীড নিয়ে সাইট থেকে বের হলেন তখন থেকেই। ঠিক সেই সময় আপনার বন্ধুর ক্ষতি হল তো?”
“সে কী আপনি এসব জানলেন কী করে”?
“অবান্তর প্রশ্ন। আমি এও জানি যে অফিসের অ্যাক্সিডেন্টের জন্য পুলিশ আপনাকে ডাকবে। আপনার চাকরিও নড়বড়ে অবস্থায় আছে।”
“দয়া করে বলবেন আপনি কে? কে জানাল আপনাকে এত খবর?”
“আপনি শুধু জানবেন যে আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি। আর যাদের ক্ষতির কথা আপনি বলছেন তাদের ছাড়াও অনেকের ক্ষতির খবর আপনি জানেন না।”
“আরও অনেকের ক্ষতি?”
“থাক এসব কথা, যদি আরও ক্ষতি এড়াতে চান তো কালকেই অপরাহ্ণের আগে ফিরিয়ে দেবেন বীডটা। অবশ্য প্রত্ন মানুষের মধ্যে কিছু শুভ আত্মা নিজেরাই চেষ্টা করে হারানো জিনিস ফেরত নেওয়ার। হয়ত ইতিমধ্যে বীড আপনার ঘরের বাইরে আনা হয়েছিল।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, দুবার আমরা বীড হারিয়েছিলাম। কিন্তু আবার খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু যাদের কাছে বীডটা সেই সময় ছিল, তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
“হ্যাঁ শুভ আত্মারা চেষ্টা করে যাতে আপনাদের ক্ষতি কম হয়। কিন্তু আভিশাপ এমন প্রবল যে তারাও অনেক সময় হার মানে।”
“প্রথমে আমি বিশ্বাস করিনি ঠিকই, তবে এখন ঠিক করলাম কাল বীডটা ফিরিয়ে দিতেই হবে। কিন্তু অপরাহ্ণের আগে কেন?”
“অপরাহ্ণ থেকেই অশুভ কার্যকলাপ শুরু হয়। খেয়াল করলে দেখবেন, খারাপ কিছু ঘটার আগে বীডটা মলিন হয়ে যায়। এটা হয় বিকেলের দিকেই। আপনার হাতে সময় কিন্তু খুবই কম।”
“কাল ভোরেই বীড নিয়ে রওয়ানা হব তাহলে।”
“আর একটা কথা, আজ রাতে কোনমতেই ঘর থেকে বের হবেন না। চেনা কেউ ডাকলেও না। ক্ষতি হবে। প্রত্নমানুষের আত্মা আশেপাশেই আছে জানবেন। সব কিন্তু শুভ আত্মা নয়।”

ফোন কেটে গেল। অবন্তিকা পাশেই দাঁড়িয়েছিল। সেদিন গাইডের সঙ্গে হওয়া সব কথা সহ পুরো ব্যাপারটা ওকে জানাতেই হল। শোবার ঘরের কাচের দেওয়াল-আলমারিতে রাখা বীডটা যেন কিছুটা ম্লান মনে হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের মনেই অজানা আশঙ্কা ঘনীভূত হল ।

ঘুম আসছে না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে চন্দ্রকেতু। চারদিক অন্ধকার। হঠাৎ ‘ধুপ’ করে আওয়াজ। মনে হল ছাদে কেউ লাফিয়ে নামল। একসময় মনে হল বাগানেও কেউ চলাফেরা করছে। জানলা দরজা বন্ধ বলে নভেম্বরেও ঘরের ভেতরে অটো মোডে এসি চলছে। হঠাৎ শুনল জানলাতে ঠক-ঠক করে কেউ মৃদু টোকা দিচ্ছে আর হিশ-হিশ শব্দে কিছু বলতে চাইছে। কেউ নিতে এসেছে কী বীডটা? দরজা খুলে বের হলেই ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে? সত্যিই কী এসব ঘটছে নাকি পুরোটাই তার মনের ভুল? অবন্তিকা পাশেই ঘুমোচ্ছে। পাতলা চাদরটা টেনে মুড়ি দিয়ে শুলো চন্দ্রকেতু।

ভোরের আলো ফোটার আগেই বিছানা ছেড়ে উঠে চন্দ্রকেতু দেখল অবন্তিকার বেশ জ্বর। একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে স্ত্রীকে বলল বেলার দিকে যেন ডাক্তারকে দেখিয়ে নেয়। এখন করোনার সময় এসব অবহেলা করা উচিত নয়। অনেকটা রাস্তা। কালক্ষেপ না করে বীডটা ফেরত দিতে নিজের এস ইউ ভি গাড়ি নিয়ে বের হল চন্দ্রকেতু। ঠিক সময়ে এবং ঠিক জায়গায় রাখতে হবে বীডটা। এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হল অফিসটাইমের আগেই মাঝখানের আমেদাবাদ শহর পার হওয়া। না হলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।

ভয়ের সঙ্গে একটা স্বস্তির ব্যাপারও অবশ্য মনের মধ্যে কাজ করছে চন্দ্রকেতুর। মনে হচ্ছে কোনও রকমে সময়মতো যদি বীডটা সাইটে রেখে আসা যায়, তবে এর ভীষণ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে তারা।

দ্রুত গাড়ি চালালেও আমেদাবাদ পৌঁছতেই সকাল ন’টা বেজে গেল। রাস্তাঘাটে অফিসের ভিড় শুরু হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি যেতে পারছে না চন্দ্রকেতু। লক্ষ্য করল, ড্যাশবোর্ডে রাখা বীডটা ক্রমশঃ মলিন হতে শুরু করেছে। গতরাতে ঘুম না হওয়া, টেনশন ইত্যাদি মিলে অসম্ভব একটা ক্লান্তি বোধ হচ্ছিল। কিন্তু থামলে চলবেনা। হঠাৎ মনে হল তার করা ক্লাচ, ব্রেক, এক্সিলেটরের সঙ্গে গাড়ির গতির কোনও সামঞ্জস্য নেই। সে নয়, যেন গাড়ি চালাচ্ছে অন্য কেউ। সেই অদৃশ্য চালকের ভীষণ তাড়া। বিপজ্জনক-ভাবে সামনের গাড়িগুলোকে ওভারটেক করে যাচ্ছে সে। শহর পার করে অপরপ্রান্তে বেরোবার মুখে একটা ব্যস্ত চৌরাস্তার ক্রসিং-এ হঠাৎই লাল সিগন্যালের নিষেধ উপেক্ষা করে এগিয়ে গেল গাড়িটা। ওদিকে ক্রস রোড দিয়ে সবুজ সিগন্যাল পেয়ে একটা ট্রাক দুরন্তগতিতে এগিয়ে আসছিল চন্দ্রকেতুর গাড়ির দিকে কালান্তক যমের মতো। একেবারে কাছে এসে গেল দানবীয় ট্রাক। তীব্র হর্ণে কান পাতা দায়। নিশ্চিতভাবে ট্রাকের নিচে চলে যাবে তার কালো এস-ইউ-ভি। চোখ বুজে ফেলল সে। কানে এল আশেপাশের মানুষের প্রচণ্ড চিৎকার, ‘গেল’ ‘গেল’ রব।

কতটা সময় গড়িয়ে গেল কে জানে? একসময় বোজা চোখ খুলে গেল। চন্দ্রকেতু দেখল ক্রসিং পেরিয়ে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি দৌড়চ্ছে। উত্তেজনায় ঘাম হচ্ছিল। কী ভাবে বাঁচল সব? মিরাকেল কী? অনেকটা রাস্তা এখনও বাকি। সময়মতো পৌঁছতে হবে। গাড়ির আক্সিলেরেটরে চাপ বাড়াল সে।

শহর থেকে বেরোবার মুখে চৌরাস্তার সিগনালের কাছে প্রচুর মানুষ ঘিরে আছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার জায়গাটা। ট্রাকের সঙ্গে জোর সংঘর্ষে একেবারে দুমড়ে গেছে কালো এস-ইউ-ভি গাড়িটা। অনেক কষ্টে দুমড়ানো গাড়ির ভেতর থেকে রক্তাক্ত ডেডবডিটা বের করার সময় পুলিশ দেখল মৃত ব্যাক্তির পকেটের মোবাইলে একটা পপ-আপ ‘মেসেজ’ এসেছে। তাতে লেখা ‘বীডটা ফেরত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ’।

পরদিন সকালবেলা মর্গের কর্মচারিটি অপেক্ষা করছিল ডাক্তারবাবুর আসার। সে ডাক্তারকে শব ব্যবচ্ছেদে সাহায্য করবে। কালকের অ্যাক্সিডেন্টের সাইট থেকে যে বডিটা এসেছে তা একেবারে বিকৃত। কী ভীষণ দুর্ঘটনা ঘটেছিল তা ভাবতেও ভয় লাগে। ডাক্তারবাবুর দেরি দেখে পাশে রাখা ব্যাগ থেকে সেদিনের গুজরাটি খবরের কাগজটা বার করে পড়তে লাগল সে। আজকের কাগজে এই অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা বেরিয়েছে।

এই লোকটা এত বড় একটা চাকরি করত। এত কম বয়স কিন্তু এইভাবে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করল। নিজের বউ-বাচ্চার অবস্থাটা কী হবে একবার ভাবল না? কী আর করা, এ তো যার যার ভবিতব্য।

এই কাগজেরই প্রথম পাতার নিচের দিকে ছোট করে আরো একটা খবর বেরিয়েছে। গুজরাটি নতুন বছরের দিনে সন্ধ্যাবেলায় প্রত্নশহরের কবরস্থানের কাছে সেখানকার এক গাইডের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে। গাইডের নাম বাবুভাই। কে বা কারা তাকে শ্বাস রোধ করে মেরে রেখে গেছে। মুখ চোখ দেখে মনে হয় মৃত্যুর আগে কিছু একটা দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছিল সে।

কাগজের ভেতরের পাতায় এই খবরেরই বাকি অংশে লেখা আছে, মৃত গাইডের পিতামহ একসময় এখানকার মিউজিয়ামের কিউরেটর ছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে তাকেও বহুদিন আগে এই প্রত্নশহরের মধ্যে একইভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সে মৃত্যু রহস্যের আজও কিনারা হয়নি। বহুদিনের ব্যাবধানে এই দুই মৃত্যুর মধ্যে কোনও যোগ আছে কী না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Author Debasish Das
দেবাশিস দাস
Picture of দেবাশিস দাস

দেবাশিস দাস

Picture of দেবাশিস দাস

দেবাশিস দাস

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com