সময়টি এই শতাব্দীর নয়। ১৯৮৪ সালের কথা| তখন আমি আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে আর্ট বিভাগের সিনিয়র আর্টিস্ট হিসাবে চাকরি করছি। সেইজন্য আনন্দ পাবলিশার্স-এর বইয়ের প্রচ্ছদও আমাদের এঁকে দিতে হত। তার জন্য কিছু পারিশ্রমিকও আমরা পেতাম। সে যাই হোক, আমাকে আনন্দ পাবলিশার্স-এর তৎকালীন ম্যানেজার বাদল বসু মহাশয়, কয়েকটি কবিতা ও বইয়ের নাম, লেখকের নাম ও কত ফর্মার বই হবে, কী সাইজ হবে একটা কাগজে লিখে দিলেন। আর বললেন, “তাড়াতাড়ি কভারটা করে দিও।”
[the_ad id=”266918″]
আমি পড়লাম খুব বিপদে। বলে রাখি, তখন আমি যেটা এঁকে দেব সেটাই ছাপা হবে। দায়িত্ব পুরো আর্টিস্টের। একে নামকরা কবি, তার ওপরে বিদেশে থাকেন। পড়তে পেয়েছি মাত্র কয়েকটা কবিতা। কিছুই মাথায় আসছে না। কী করব, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এক-দু’দিন এভাবে খসড়া করে করেই কেটে গেল। কাজের কাজ কিছু হল না। এইভাবে দিন তিন চারেক পর মাথায় এল আমি যদি চলা-টাকে পদ-চিহ্ন দিয়ে করি, আর বিপ্রতীপ বোঝাতে ভিন্নদিক ব্যবহার করি, কেমন হয়? যেই ভাবা ওমনি এঁকে ফেললাম। আঁঁকলাম বটে, কিন্তু ততটা পছন্দ হল না। কারণ পদ-চিহ্ন সলিড রঙের এঁকেছিলাম প্রথমে৷ এরপর আমি ওটাকে সরু সরু লাইনে বদলে ফেললাম। একটা ডিরেকশনে পদচিহ্নটা ছিল। ওটার ওপর দিয়ে অন্য ডিরেকশনে আর একটা পায়ের ছাপ ফেললাম।
[the_ad id=”266919″]
প্রথমবার যে দিকে যাওয়ার ছিল, সে দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে পুরো ছাপটা আঁকলাম। পায়ের আঙুলগুলো ফুলের মতো করলাম। দশটা আঙুল কিস্তু ফুলের মতো নয়। বিপ্রতীপের পায়ের আঙুলগুলোই শুধু ফুলের মতো। এবং নীচের চাপা পড়া পায়ের ছাপটাও কাটা কাটা করে আঁকলাম। এই বইয়ের নামটা ওপরে দিইনি। আসা- যাওয়ার ভাবটা রাখার জন্য ওপর নীচ করে এক পাশে করে দিলাম। প্রচ্ছদপটে রঙের ব্যবহার খুব সীমিত করেছিলাম। ধূসর, কালচে সবুজ ও সাদা দিয়ে। বইয়ের নামটাও কালচে মেটে রঙের। জানি না কবির এই প্রচ্ছদ কতখানি ভাল লেগেছিল, না কি আদৌ পছন্দ হয়নি। কবির সঙ্গে কোনও দিন দেখা হয়নি আমার। দেখা হলে জেনে নিতাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার আর কোনও সুযোগই কবি রাখলেন না। এবার উনি বিপ্রতীপে চলে গেলেন, চিরকালের জন্য। উনি যেখানেই যান না কেন, যেন চিরশান্তিতে থাকুন, এটাই কামনা করি।
শিল্পী নির্মলেন্দু মণ্ডলের জন্ম ১৯৫৪ সালে। হেয়ার স্কুল থেকে পাশ করে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক। কর্মরত ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার শিল্পী ও সহকারী শিল্প নির্দেশকের পদে। লীলা মজুমদার থেকে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, এমন অজস্র কিংবদন্তী কবি সাহিত্যিকদের বইয়ে শিল্প নির্দেশনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।