(Dilip Kumar) ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিনের কালজয়ী ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’ ছবিতে পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি, যদিও যেতে রাজি হননি। অমিতাভ বচ্চনের মতে, ‘তরুণ অভিনেতারা পর্দায় পূর্বজদের দেখতে দেখতে সবসময় ভাবে আমি হলে এই সিনটা কীভাবে করতাম। কিন্তু ওঁর অভিনয় দেখার পর কোনও বিকল্পের কল্পনাই করা যায় না।’ আবার জাভেদ আখতারের কথায়, ‘এখনকার অনেকেই খেয়াল করেন না, অভিনয়ের ব্যাকরণ ও ছন্দে হয়তো অজান্তে তাঁরা ওঁকেই অনুসরণ করছেন।’
তাঁর অভিনয়ের গুণমুগ্ধ স্বয়ং সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে হাল আমলের শাহরুখ খান পর্যন্ত। তিনি ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা, হিন্দি চলচ্চিত্রের যুগনায়ক দিলীপ কুমার। অভিনয় ছাড়ার কয়েক দশক পেরিয়ে এসেও রূপোলি পর্দায় আজও অটুট যাঁর আশ্চর্য স্বরক্ষেপণ ও অভিনয় দক্ষতার জাদু-সম্মোহন! (Dilip Kumar)
ব্রিটিশ ভারতের পেশোয়ারে ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্ম মহম্মদ ইউসুফ খানের। বাবা লালা গোলাম সারওয়ার, মা আয়েশা বেগম। বাবা ছিলেন ফল ব্যবসায়ী। ১৯৩০ সালে পরিবার নিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসেন তাঁরা। কর্মজীবনের শুরুতে ইউসুফ ছিলেন ক্যান্টিন মালিক, পাশাপাশি শুকনো ফল সরবরাহ করতেন। এভাবেই কয়েক বছর পর হঠাৎ এসে যায় চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। মাসিক ১২৫০ টাকা বেতনে বম্বে টকিজে তাঁকে সই করান দেবিকা রাণী। (Dilip Kumar)
১৯৪৪ সালে অমিয় চক্রবর্তীর ‘জোয়ার ভাটা’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ। সিনেমায় নেমে ইউসুফ খানই নাম বদলে হয়ে উঠলেন দিলীপ কুমার! ১৯৪৭ ও ১৯৪৮ সালে যথাক্রমে ‘জুগনু’ ও ‘শহিদ’ সিনেমা বাণিজ্যসফল হওয়ার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নীতিন বসুর সঙ্গে ‘মিলন’, ‘দিদার’, ‘গঙ্গা যমুনা’ বা বিমল রায়ের পরিচালনায় ‘দেবদাস’ থেকে ‘মধুমতী’, ১৯৭৬ পর্যন্ত চুটিয়ে অভিনয় করেছেন একের পর এক ছবিতে।(Dilip Kumar)
১৯৪৯ সালের ছবি ‘আন্দাজ’। এতে দিলীপ কুমার, নার্গিস ও রাজ কাপুর ছিলেন।নৌশাদের সুরে অনেকগুলো ভালো গান ছিল ছবিতে। যেটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, তা হল, ছবিতে মুকেশের গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। আর রাজ কাপুরের ঠোঁটে ছিল মহ. রফির গান। ছবিটা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। (Dilip Kumar)
ভিডিও: রুপোলি পর্দার ‘মেরিলিন মনরো’ মধুবালা
এক সময় তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘ট্র্যাজেডি কিং’ অভিধায়। মনে করা হয়, ‘তরানা’ বা ‘হালচাল’ ছবি থেকেই এই অভিধার সূচনা, আর পরিণতি ‘দেবদাস’ ছবিতে। শোনা যায়, ‘দেবদাস’-এর এক জরুরি দৃশ্য শুট করার আগের রাত তিনি স্টুডিয়োয় কাটিয়েছিলেন – অভুক্ত, বিনিদ্র, যথোচিত ‘লুক’ এবং ‘ভাব’ আনার তাগিদে। কিন্তু অভিনয়ের কোনও নির্দিষ্ট ব্যাকরণে তো তাঁকে বাঁধা যাবে না, তিনি নিজের ভাবমূর্তি ভাঙতে জানতেন। ১৯৬৭-এর কমেডি ফিল্ম ‘রাম অওর শ্যাম’-ই তার প্রমাণ। আবারও এক নতুন ছাঁচে নিজেকে ঢেলে সাজানো। হিন্দি ছবির চালচিত্র তখন বদলে গিয়েছে অনেকখানি। শাম্মি কপূর বা জয় মুখোপাধ্যায়ের দৌলতে হিন্দি ছবিতে এসে পড়েছে পাশ্চাত্যের ছায়া। কিন্তু এই ছবির বিখ্যাত গান ‘আয়ি হ্যায় বাহারে’-তে সেই ছায়াকে পাশ কাটিয়ে দিলীপ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর নিজস্বতা! (Dilip Kumar)
‘কোহিনুর’, ‘আদমি’, ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’ এবং অবশ্যই বহুচর্চিত ‘মোগল-এ-আজম’। ছয় দশকের রাজত্বে প্রায় ৬০-টি ছবিতে অভিনয় করে তখন তিনি ভারতীয় সিনেমার ‘পাওয়ার হাউস’। ১৯৭৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য স্বেচ্ছাকৃত, অঘোষিত অবসর। দ্বিতীয় দফায় ফিরে ফের একের পর এক উজ্জ্বল প্রকাশ। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কিলা’। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বাংলা ছবিতেও, যার মধ্যে তপন সিংহ পরিচালিত ‘সাগিনা মাহাতো’-র কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। অন্যদের মতো পরিচালনা-প্রযোজনায় মন দেননি সেভাবে, আজীবন অভিনয়েই তন্নিষ্ঠ ছিলেন দিলীপ। ‘সাগিনা মাহাতো’-য় তাঁর সহঅভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘ডাবিংয়ের সময় দেখেছিলাম, উনি কতটা পারফেকশনিস্ট। একই সংলাপ পনেরো-কুড়ি বার বলতেন নানা ভাবে। একজন প্রকৃত শিল্পীরই এমন ডেডিকেশন থাকে।’ (Dilip Kumar)
দিলীপ কুমার অসামান্য গান গাইতেন।কিন্তু ছবিতে তাঁকে নিজের গলায় গান গাইতে একেবারেই প্রায় দেখা যায় নি।একমাত্র ব্যতিক্রম, ১৯৫৭ সালের ছবি ‘মুসাফির’। এটিই একমাত্র ছবি, যাতে দিলীপকুমার নিজের গলায় গান গেয়েছিলেন। ছবিটির সংগীত পরিচালক ছিলেন সলিল চৌধুরী।
হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই অভিনেতা ‘ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’-র পুরস্কার পেয়েছেন মোট আট বার। ১৯৯৩ সালে সম্মানিত হয়েছেন ‘ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা’-য়। ১৯৯৪ সালে পেয়েছেন ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’। পাকিস্তান সরকার তাকে ভূষিত করেছে ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’ সম্মাননায়। ভারত সরকার ১৯৯১ সালে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ২০১৫ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করেছে তাঁকে। নক্ষত্রখচিত ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে স্টারের সংখ্যা নেহাত কম নয়, প্রচারের আলোয় কেউ কেউ হয়তো তাঁর চেয়েও উজ্জ্বল। কিন্তু অভিনয়? সেখানে আপামর দেশবাসীর মনে দিলীপ কুমার আজও অদ্বিতীয়, অনন্য! আজ তাঁর জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।