কবিতা (Poetry) লিখে অমরত্বের বাসনার চেয়ে জরুরি হচ্ছে এ মুহূর্তে পাঠক খুঁজে পাওয়া। এ যুগের একদল কবি সেরকমই ঘোষণা করেছেন। এঁরা নবীন কবি। এই নবীন কিশোরদের মনোভাব হচ্ছে শুভস্য শীঘ্রম। আজ রাতে বুকে আগুন জ্বেলে একটা কবিতা লিখলাম। ছ’মাস বা এক বছর পরে তা ছাপা হল কী হল না ক’জনের চোখে পড়ল, তাও টের পেলাম না। এই প্রতীক্ষা আর সহ্য হয় না। তার চেয়ে হাতে হাতে ফলে পেতে চাই। ভাল, মন্দ যেমনই লিখি, এখনই তা পরখ হয়ে যাক। একটানা খাতায় বন্দি থাকার জন্য নয়, মানুষকে পড়ানো আর শোনানোর জন্যই কবিতার জন্ম। ক্রমশ সোশ্যাল মিডিয়া আর অনলাইন পত্রপত্রিকার দৌলতে কবিদের আত্মপ্রকাশের পথ মসৃণ হয়েছে। দূর-দূরান্তের পাঠকের কাছে কবিতা পৌঁছে যাচ্ছে। নামী-দামি পত্রিকার সম্পাদকের কষ্টিপাথরে যাচাই হওয়ার পরীক্ষা নেই। প্রত্যাখ্যানের দুঃখ নেই। পাঠকের ভাল-মন্দ সমালোচনা, সেও তাঁরা কবিতাটি পড়েই জানাচ্ছেন। কবিতা এখন “বিচিত্র পথে সর্বত্রগামী”।
কিন্তু এই সুবর্ণ সুযোগ আসতে দীর্ঘসময় লেগেছে। আমেরিকায় প্রায় পঁচিশ বছর আগে সে সময়ের নতুন কবিদের জন্য টেলিভিশনে “মধ্যরাতের আসর” শুরু হয়েছিল। টিভির একটি চ্যানেলে প্রতি শুক্রবার রাতে দু-চারজন করে কবি আমন্ত্রণ পেয়ে যোগ দিতেন। আসরের নাম ছিল—“রাসেল্ সাইমনস্ প্রেজেন্টস্ ডেফ পোয়েট্রি”। প্রযোজকের নামে অনুষ্ঠান হলেও পরিচালনার জন্যে প্রতি সপ্তাহে একজন প্রতিষ্ঠিত কবি উপস্থিত থাকতেন।
কবিদের বিশ্বাস তাঁদের কবিতা কোনও একমুখী চিন্তা, সীমিত ধারণার বাহক নয়। কবিতা লেখার একটি উদ্দেশ্য হল সংযোগ স্থাপন। রচনায় সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন সত্ত্বেও লেখার গুণে তা কবিতা হয়ে উঠবে।

শুক্রবার রাত বারোটায় আসর শুরু হত। র্যাপ কবি মোস ডেফ একদিন আসর পরিচালনা করলেন। র্যাপ ঘেঁষা কবিতার আসর হলেও সেখানে তিন পর্বে অনুষ্ঠান ভাগ করা থাকত। সূচনায় কোনও প্রতিষ্ঠিত কবি কিছু বলতেন। কোনও বিখ্যাত কবির রচনার নির্বাচিত অংশ পাঠ করতেন। উইলিয়াম শেকসপীয়রের কবিতাই হয়তো পড়ে শোনালেন। তাঁর রচনা বৈশিষ্ট্য ও অবদান নিয়ে আলোচনা করলেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে থাকত আমন্ত্রিত নবীন কবিদের নতুন রচনা পাঠ। শেষ পর্বে সমালোচনা ও বিশ্লেষণ। প্রতিষ্ঠিত কবি ও কয়েকজন বিদগ্ধ অতিথি সে আলোচনায় অংশ নিতেন। কবিতা ভালবাসেন, এমন অভিনেতা, নাট্যকার, চিত্রকর, সঙ্গীতশিল্পী, অধ্যাপক ইত্যাদিদের মধ্যে থেকেই সাধারণত এক একজনকে ওই বিশ্লেষণপর্বে যোগ দিতে ডাকা হত।
আমেরিকার যুব শ্রোতাদের কাছে নবীন কবিতার আসর বেশ মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। র্যাপ-এর থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র হলেও কোনও কোনও কবিতার সঙ্গে বাজনা থাকত। সমসাময়িক জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে নবীন কবিরা যা লিখছেন, তা যে নিতান্ত তাৎক্ষণিক অনুভূতির প্রকাশ নয়, আসর পরিচালকরা সে-সবই ব্যাখ্যা করতেন।
লোক সংস্কৃতিতে কবিতার ভাষার প্রভাব এবং কবিতা নিজেই যে এক জোরালো সামাজিক শক্তি—ওই আসরের নবীন কবিরা রচনার মাধ্যমে সেই ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তাঁরা মনে করতেন না যে, শুধু যুবসমাজের জন্যেই এই কবিতার আসর। জীবনমুখী কাব্যপাঠের আসরে তাঁরা সব বয়সের মানুষকেই শ্রোতা হিসাবে আশা করতেন।
সেই সময়ের নতুন কবি স্টিভ কোলম্যান মধ্যরাতের আসরে পাঠ করেছিলেন—
“আই ওয়ান্ট টু হিয়ার এ লাভ পোয়েম
এ স্যাড পোয়েম
অ্যান্ড আই হেট মাই ড্যাড পোয়েম”
……
আই ওয়ান্ট টু ফলো দ্য ফুট স্টেপস্
অফ ডে
অ্যান্ড হিয়ার দ্য ট্রুথ
অ্যাবাউট দ্য ডে
দ্য সি.আই.এ.
কিলড্ লুমুমবা”।
শুক্রবারের নবীন কবিদের আসরে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রচারের দিকটির ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হত। বিখ্যাত কবিরা অপরিচিত কবির রচনার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতেন। শুধু কবি কেন, অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও তাতে যোগ দিতেন। এ জন্যে তাঁদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকত।
এক রাতে অভিনেতা বেঞ্জামিন ব্র্যাট পাঠ করেছিলেন দক্ষিণ আমেরিকান কবি ও নাট্যকার মিগেল পিনেরোর রচনা। পিনেরো মাত্র ৪২ বছর বয়সে লিভারের অসুখে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে “পিনেরো” নামে একটি ছবি হয়েছে। বেঞ্জামিন ব্র্যাট ওই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। “রাসেল সাইমনস্”-এর অনুষ্ঠানে ব্র্যাট-এর উপস্থিতি একদিকে যেমন প্রয়াত কবি ও নাট্যকারের জীবন সম্পর্কিত ছবিটির প্রচারে সাহায্য করল, অন্যদিকে ব্র্যাট-এর কবিতা পাঠ টেলিভিশনের দর্শক, শ্রোতাদের কাছেও উপভোগ্য হল। তিনি পাঠ করেছিলেন মিগেল পিনেরোর “লোয়ার ইস্ট সাইড” কবিতা। নিউইয়র্ক শহরের লোয়ার ইস্ট সাইড অঞ্চলের অনুসঙ্গ নিয়ে কবি যেখানে লিখেছেন—
“আই ওয়ান্ট টু বি নিয়র দ্য স্ট্যাবিং,
শ্যুটিং, গ্যাম্বলিং, ফাইটিং, অ্যান্ড
আনন্যাচারাল ডাইং…”
অথবা যেখানে কবি শেষ আবেদন জানাচ্ছেন—“স্ক্যাটার মাই অ্যাশেস থ্রু দ্য লোয়ার ইস্ট সাইড”। এই অংশে মিগেল পিনেরোর বিদ্রোহী, ক্ষুব্ধ যৌবন ও কবিসত্ত্বার আবেদন অভিনেতা বেঞ্জামিন ব্র্যাটের কবিতা পাঠের গুণে শ্রোতাদের অভিভূত করেছিল।
সে সময় প্রায়ই মধ্যরাতে টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠান দেখতাম। এক রাতে আসরে এলেন প্রতিষ্ঠিত কবি নিকি জিওভানি। তিনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেন। এক রাতে এলেন মহিলা কবি সোনিয়া স্যানচেজ। তিনি পড়লেন একটি কবিতা, যেখানে ড্রাগের নেশার খরচ জোগাড় করার তাগিদে একটি লোক তার সাত বছরের কৌমার্য্য বিক্রি করতে চলেছে। সোনিয়া স্যানচেজ তাঁর দীর্ঘ কবিতার কয়েকটি চরিত্রের সংলাপের মাধ্যমে ওই অমানবিক ঘটনা বিবৃত করেছেন। একটি অংশে গানের সুর ব্যবহার করেছেন।

এবার নতুন কবিদের কথায় আসি। এঁদের কারও কারও কবিতা তখন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর পাঠক সমাজে পৌঁছায়নি। টেলিভিশনের মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে ভেবে আয়োজকরা ওই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ‘ডেফ’ কথাটি কালো গীতিকার ও কবিরা ব্যবহার করেন সজীব, স্নিগ্ধ, চিরনবীন ইত্যাদি বোঝাতে। অর্থাৎ ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে যা লেখা হয়। র্যাপ কবি মোজ ডেফ যেদিন ওই আসরে এলেন, তিনি শেকসপীয়রের কবিতা পড়ার আগে বললেন—“উইলিয়ম শেকসপীয়র, ডেফ পোয়েট”। অর্থাৎ, শেকসপীয়রকেও এঁরা ‘চিরনবীন’ বলে দলে নিয়েছেন।
নতুন কবিদের মধ্যে কালো, ল্যাটিনো ও এশিয়ান কবিদের তুলনায় সাদা আমেরিকান কবিদের সংখ্যা সে সময় আরও বেশি ছিল। কালো, ল্যাটিনো ও এশিয়ান কবিদের মধ্যে কারও কারও কবিতায় সাম্প্রদায়িক বৈষম্যজনিত ক্ষোভ ও অভিমান আজও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দুই এশিয়ান মহিলা কবি নিজেদের পরিচয় দেন “ইয়েলো রেজ” বলে। পীতবর্ণের কবিদ্বয়ের ক্ষুব্ধ মনোভাবের কারণ হচ্ছে—আমেরিকায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান মহিলাদের দীর্ঘকাল ধরে মার্কামারা ছাঁচে ঢালাই করা হত। সেই সাম্প্রদায়িক চিহ্নিতকরণের মধ্যে যথার্থ বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ নেই। কবিতা পাঠের আসরে “ইয়েলো রেজ”-রা অংশত প্রতিবাদমূলক রচনাই পাঠ করেছিলেন।
এক কালো কবি নিজের পরিচয় দেন “ব্ল্যাক আইস” নামে। মূল সমাজের সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের শীতল কঠিন সম্পর্কের আভাস দেওয়াই তাঁর কবিতার বক্তব্য। রচনার মধ্যে সমাজবিরোধী কালো মানুষদের নিজস্ব শব্দ ও ভাষার ব্যবহার এত বেশি যে, তিনি যেন শুধু তাঁদের জন্যই কবিতা লিখছেন। আঞ্চলিকতা আর সাম্প্রদায়িকতা মিলেমিশে গিয়ে কালো কবির কবিতা বলেই তা চিহ্নিত হয়ে উঠেছে। ওই সব শব্দ যারা শুনতে অভ্যস্ত নয়, তাদের পক্ষে কবিতার রসগ্রহণে বাধা পড়ছে।
এক শুক্রবার রাতে কবিতার আসরে এলেন নতুন মহিলা কবি সুহেইর হামাদ। প্যালেসস্তিনিয়ান আমেরিকান সুহেইর তখন থাকতেন নিউইয়র্কে ব্রুকলিনে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হওয়ার পরে তিনি “ফার্স্ট রাইটিং সিনস” নামে যে কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটি পড়ে শোনালেন। আরব আমেরিকানদের ওপরে এদেশের মানুষের রাগ, সন্দেহ তখন প্রবলভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। মার্কিন নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কবিকে সেই বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। অথচ নিউইয়র্ক তাঁর নিজের শহর। ব্রুকলিন থেকে টুইন টাওয়ার দেখা যেত। ১১ সেপ্টেম্বর সুহেইরের চোখের সামনে দুটো টাওয়ার ভেঙে পড়ল। সেই দৃশ্যের বর্ণনা আছে ওই কবিতায়। “আই ক্রায়েড হোয়েন আই সও দোস্ বিল্ডিংস্ কোল্যাপ্স অন দেমসেলভস লাইক এ ব্রোকেন হার্ট…”।
কবিতার পরবর্তী অংশে আছে পথে-ঘাটে অপমানিত আরব মহিলাদের সোচ্চার প্রতিবাদ—
“ওয়ান মোর পার্সন অ্যাস্কস মী
ইফ্ আই নিউ দ্য হাইজ্যাকার্স”।
এবং কবিতার শেষ অংশে সুহেইর হামাদ লিখছেন বড় এক উৎকণ্ঠার কথা। তাঁকে যেন এক আমেরিকান বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করছেন—“মেয়ে, তোমার এত ভয় কিসের?”
উত্তরে কবি লিখছেন—“মাই ব্রাদার ইজ ইন দ্য নেভি আই সেড,
অ্যান্ড উই আর অ্যারাবস্”।
তখন বৃদ্ধা বলছেন—“ওয়াও, ইউ গট ডাবল্ ট্রাবল্”।
সুহেইর হামাদের কবিতার সেই আরব মেয়েটি তার ভাই-এর জন্য চিন্তিত। মার্কিন নেভিতে কাজ করে তার ভাই। তখন আমেরিকান সৈন্যদের সঙ্গে আফগানিস্থানের লড়াইয়ে চলে গেছে। অথচ জন্মসূত্রে প্যালেসস্তিনিয়ান বলে আমেরিকায় আজ তারা সন্দেহ আর ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠেছে। এই উভয় সঙ্কট উপলদ্ধি করেই সেই বৃদ্ধা তখন মেয়েটিকে বলছেন—“আহা! তবে তো তোমার দ্বিগুণ বিপদ। দ্বিগুণ দুঃখ!”
সুহেইর হামাদের কবিতা শ্রোতা আর সমালোচকদের বিচারে নতুন কবিদের সাম্প্রতিক রচনার মধ্যে প্রথম সারির মর্যাদা পেয়েছিল।
মধ্যরাতের কবিতার আসরের প্রযোজকরা এরও আগে “ডেফ কমেডি জ্যাম” নামে টিভিতে একটি সাপ্তাহিক হাস্যকৌতুকের অনুষ্ঠান চালু করেছিলেন। আমেরিকার “স্ট্যান্ড আপ” কমেডির ধারায় ওই “ডেফ কমেডি জ্যামসেশন” কৌতুকরস সমৃদ্ধ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। কালো সমাজের নিজস্ব রঙ্গরসিকতা, হাস্য-পরিহাস নিয়ে ডেফ কমেডি ভীষণ জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিল। ক্রমশ “রাসেল সাইমন প্রেজেন্টস্ ডেফ পোয়েট্রি”র প্রযোজক, পরিচালকরা শুক্রবারের মধ্যরাতের কবিতার অনুষ্ঠানগুলি আরও বেশি দর্শক, শ্রোতাদের আকর্ষণ করবে, এমনই আশা করেছিলেন। তবে অনুষ্ঠান এক সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
রাত জেগে কবিতা লেখে, এমন লোক আপনি অনেক পাবেন। কিন্তু রাত জেগে অপরিচিত কবিদের কাব্য শোনার লোক তেমন পাওয়া যায় না। তবে শ্রোতা হিসেবে আপনাকে যদি রাত-বিরেতে বাইরে থাকতে না হয়, ঘরে বসেই টিভিতে কাব্যপাঠ দেখতে শুনতে পান, তবে তো ভালই লাগবে। ধরুন, টিভিতে খেলা দেখা না থাকলে, প্রতি শুক্রবার রাত বারোটা থেকে একটা-দেড়টা অবধি কবিতার আসর দেখলেন। আমরা তো মহা উৎসাহে রেডিওতে শুক্রবার সন্ধ্যেবেলায় বাংলা নাটক শুনতাম। “শেষের কবিতা”য় বসন্ত চৌধুরী আর সাবিত্রী চ্যাটার্জির অমিত, লাবণ্যর প্রেম থেকে বিচ্ছেদের শেষ কবিতা “হে বন্ধু বিদায়” শুনতে শুনতে অভিভূত হয়ে যেতাম!

ধরা যাক, এবার কোনও বাংলা চ্যানেলে মাসে দু’বার করেই না হয় নতুন কবিদের আসর বসল। এই নবীন কবিদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বা পুরস্কারের প্রসঙ্গ নেই। কিছু সম্মান-মূল্য দেওয়া হল। মূল উদ্দেশ্য হল নতুন কবিদের সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করানো। আসর পরিচালনার জন্যে প্রতিবার একজন প্রখ্যাত কবি, সঙ্গীতশিল্পী নয়তো সুরকার আসবেন। আপনাকে জাগিয়ে রাখার জন্যে তাঁরাই পড়বেন শেষের কবিতা।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন অনুষ্ঠান স্পনসর করবেন কারা? সরকার না বেসরকার? এক সরকার পরিবারের বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকায় লেখার সুযোগ পেয়ে কত নবীন কিশোর কবি-খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কত পুরস্কার, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। সেই সরকার পরিবারও আছেন, তাঁদের সাহিত্য পত্রিকা আজও প্রথম সারিতে আছে। সেখানে সুযোগ না এলেও অপরিচিত কবিদের উৎসাহ দিতে তাঁদের নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেলে কবিতার আসর স্পনসর করতে পারেন। প্রাইমটাইমের প্রশ্ন নেই। নিশুতি রাতের ছোট আসরের খরচ কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে যদি পাওয়া যায়। প্রকাশনা সংস্থা থেকেও যদি “বাংলা বই কিনুন, বাংলা কবিতা পড়ুন” ধরনের বিজ্ঞাপনের সাহায্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাংস্কৃতিক দপ্তর থেকে সাহায্য আশা করা যায় কি? মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং কবি। ব্রাত্য বসু বাংলা নাট্যকার। অপরিচিত নিবারণ চক্রবর্তীদের প্রতিভার স্ফূরণে উৎসাহ দিতে পারেন।
দর্শক হিসেবে আপনার কাজ শুধু জেগে বসে থাকা। কবি হিসেবে একমাত্র কাজ নব নব কবিতা প্রসব। মধ্যরাতের আসরে কবে আপনারও ডাক পড়বে, কেউ তা জানে না।
দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।