Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ফেক নিউজ চেনার আলাদা প্রশিক্ষণ কেরালার স্কুলে!

পল্লবী মজুমদার

নভেম্বর ২৯, ২০১৯

fake news
ভুয়ো খবর নিয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কর্মশালা চলছে।
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

মনে পড়ে, দিন কয়েক আগেই ফেসবুক-হোয়াটস্যাপে ভাইরাল হওয়া আলিয়া ভট্ট আর রণবীর কাপুরের বিয়ের কার্ড? আকাশি নীলের ওপর সোনালি অক্ষরে ছাপা সেই কার্ড দেখে ভুরি ভুরি শেয়ারের জোয়ারে ভেসে গেল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী! দু’একটা খবরের কাগজেও বিনোদনের পাতায় ঠাঁই করে নিল সে খবর। অথচ কার্ডে অজস্র ভ্রান্তি। ভুল খোদ আলিয়ার বাবার নাম! মহেশ ভট্টের জায়গায় মুকেশ ভট্ট। আলিয়ার নামের বানানও ভুল। তবু জনতার উৎসাহের অন্ত নেই। ওরে দ্যাখ রে চেয়ে, আয় রে ধেয়ে… আলিয়া-রণবীরের শাদি কা কার্ড আলা রে আলা…!!! পরের দিন আলিয়ার মা সোনি রাজদান বিবৃতি দিলেন ভুয়ো খবর বলে। ফের কাগজে কাগজে সংশোধনী। তখন আন্তর্জাল জুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস। যাক বাবা, সব মিথ্য়ে। কে বলল ওরা বিয়ে করছে? যত্ত বাজে কথা। সব ফেক নিউজ। হোক্স। 

কিন্তু সত্যিই কি এ খবরের ভুয়োত্ব বুঝতে সোনি রাজদানের বিবৃতির প্রয়োজন ছিল? বলিউডের প্রথম সারির নায়িকা আর যাই করুন, অন্তত বাপের জায়গায় যে কাকার নাম লিখবেন না, এ কথা বুঝে নিতে ঠিক কতটুকু মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয় বলুন তো? কিন্তু সেটুকুও আমরা খাটাব না। আমরা চোখে ঠুলি পরে মোবাইলের বোতাম টিপতে থাকব। ফরোয়ার্ড ফরোয়ার্ড ফরোয়ার্ড। ছড়িয়ে দাও গুজব, উড়িয়ে দাও মিথ্যের ফানুস। ভুয়ো খবরের সুনামি উঠুক ভুবন জুড়ে।

সে সুনামি রুধিবে কে? চেষ্টা যদিও শুরু হয়েছে একটু একটু করে। তবে কাজের ভিত্তিভূমি হতেই হবে তৃণমূল স্তরে। আর সেটাই ধীরে ধীরে আরম্ভ হয়েছে কেরলের কান্নুর প্রদেশের শ’দেড়েক সরকারি ইশকুলে। উদ্যোগী হয়েছেন কান্নুরের জেলা কালেক্টর মির মহম্মদ আলি। তাঁরই ব্রেনচাইল্ড এই প্রকল্প যার পোশাকি নাম ‘সত্যমেব জয়তে।‘

কী এই প্রকল্প?

মিরের কথায়, “এটা মূলত স্কুলের বাচ্চাদের জন্য একটা প্রশিক্ষণ প্রকল্প। ওদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই কিছু চরিত্রবৈশিষ্ট, কিছু মূল্যবোধ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। বোঝানোর চেষ্টা করছি যে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত প্রতিটি তথ্য যাচাই করে নেওয়া দরকার। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে – তার তফাত করতে শেখা দরকার।“ মির মনে করেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে এই সমস্যার মোকাবিলা করা অসম্ভব। প্রত্যেক মানুষকে দৃঢ় ভাবে সত্যের পক্ষ নিতে হবে। পক্ষ না নিলে মনে হবে, মিথ্যে বা ভুয়ো খবরে আদতে কারও বিশেষ কিছু এসে যায় না। মির নিজেও এ ব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস। যেমন কদিন আগেই মিরের নির্দেশে নিপা ভাইরাস সংক্রান্ত ব্যাপারে ভুয়ো খবর ছড়ানোর দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে।  

যে দেড়শোটি স্কুলে এই প্রকল্প চালু হয়েছে তার মধ্যে একটির নাম অমৃত বিদ্যালয়ম। সেখানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে পডু়য়াদের বোঝানো হচ্ছে কাকে বলে ফেক নিউজ বা ভুয়ো খবর। কী ভাবে তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে গুজব, আতঙ্ক কিংবা হিংসা। আট থেকে বারো ক্লাসের বাচ্চাদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে শুরু হয়েছে এই কাজ।স্থির হয়েছে, প্রথমেই নির্বাচিত দেড়শো স্কুল থেকে শিক্ষকদের এক মাসের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হবে। তার পর প্রশিক্ষিত শিক্ষকেরা নিজেদের স্কুলে শুরু করবেন ছাত্রছাত্রীদের শেখানো। ইতিমধ্যেই জুলাইতে একটি একদিনের প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়েছে।

কী কী শেখানো হবে এই প্রকল্পে?

মির জানান, ফিল্টার বাবল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হবে।

সেটা কী?

ইন্টারনেটে কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে কেউ যখন তথ্য সংগ্রহ করে, তখন সাধারণত তাঁদের মধ্যে এমন একটা আবেগ কাজ করে যাতে পছন্দের মানুষের ব্যাপারে ভালো ভালো তথ্য আর অপছন্দের মানুষের ব্যাপারে খারাপ খারাপ তথ্যই চোখে ধরা দেয়। ইন্টারনেট কিছু অদ্ভুত অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ঠিক যা সেই মানুষটি দেখতে চান বা যা তাঁর মন খুশি করে, সে ধরনের তথ্যই দেখায়। একেই বলে ফিল্টার বাবল। এর সাহায্য নিয়ে অতি সহজেই যে কেউ মানুষকে বোকা বানাতে পারে, ভুল বোঝাতে পারে। এ ব্যাপারে পডু়য়াদের সচেতন করা হবে।

এ ছাড়া রয়েছে ক্লিকবেইট। বেইট শব্দের অর্থ টোপ। এই অ্যালগোরিদমের সাহায্যে এমন কনটেন্ট ইন্টারনেটে ছাড়া হয় যা মানুষের চোখ টানবে আর তারা প্রলুব্ধ হয়ে কোনও বিশেষ লিঙ্কে ক্লিক করে ফেলবে। আর হয়তো সেই লিঙ্কের একটি ক্লিকেই চুরি হয়ে যেতে পারে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের ডিটেলস! কেউ জানতেও পারছে না, ধরতেও পারছে না, কারণ আপাতদৃষ্টিতে হয়তো সেটা একটা মেমুলি ওয়েবসাইট কিম্বা মোবাইল অ্যাপ!

মির বলেন, “বিভিন্ন ধরনের অনুশীলনীর মাধ্যমে ওদের শেখানো হচ্ছে ভুয়ো খবর পেলে কী করতে হবে। কী ভাবে চিনতে হবে সত্য-মিথ্যা। ভবিষ্যতে আরও স্কুলকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের। আমরা ইংরেজির পাশাপাশি মালয়ালিতেও রিডিং মেটিরিয়াল তৈরি করছি যাতে যে কেউ এর সুবিধে নিতে পারে।”

কেরল পথ দেখিয়েছে। সে পথে আমরা পা বাড়াব কবে?

Author Pallavi Majumdar

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Picture of পল্লবী মজুমদার

পল্লবী মজুমদার

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!
Picture of পল্লবী মজুমদার

পল্লবী মজুমদার

লিখতে শিখেই লুক থ্রু! লিখতে লিখতেই বড় হওয়া। লিখতে লিখতেই বুড়ো। গান ভালবেসে গান আর ত্বকের যত্ন মোটে নিতে পারেন না। আলুভাতে আর ডেভিলড ক্র্যাব বাঁচার রসদ। বাংলা বই, বাংলা গান আর মিঠাপাত্তি পান ছাড়া জীবন আলুনিসম বোধ হয়। ঝর্ণাকলম, ফ্রিজ ম্যাগনেট আর বেডস্যুইচ – এ তিনের লোভ ভয়ঙ্কর!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস