(Little Magazine)

(Little Magazine)
Doshomik
সম্পাদকীয়
পুরোনো সময়ে ফিরে যাওয়া একইসঙ্গে আনন্দের এবং আতঙ্কের। আনন্দের কারণ সহজেই বোঝা যায়, কিন্তু আতঙ্কের যেটা, তা হল একবার পিছিয়ে গেলে চট করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। অতীত এক ধরনের চোরাবালি। নিজের অজান্তেই কখন যে মানুষ তলিয়ে যায়, টের পায় না সহজে! নইলে এই সংখ্যা করতে কখনো বছরের পর বছর লেগে যায়! শেষ কয়েক বছর শুধু ভেবেই গেছি এই সংখ্যা প্রকাশ করার কথা, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনো-না-কোনোভাবে পিছিয়ে গেছে কাজ। এমনকী একটা তথ্য জোগাড় করার পিছনেও দিনের পর দিন সময় কীভাবে চলে গেছে, বুঝতে পারিনি। অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত এই সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে, এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না!

২০১৬ সালের আগস্ট মাস। হাওড়ার মন্দিরতলা অঞ্চলে কবি অরণি বসু আমার হাতে তুলে দেন ওঁর তিনটে কবিতার বই। সঙ্গে দু-চারটে অগ্রন্থিত লেখা। গোয়েন্দার হাতে যেভাবে কোনো সূত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়, সেইমতো। তারপর এই সাত-সাতটা বছর আমি আর শামশের আনোয়ার! পুরোনো পত্রিকার পাতায় ধুলো ঘাঁটতে-ঘাঁটতে ওঁর লেখা আবিষ্কারের নেশা আমাকে এমনভাবে পেড়ে ফেলেছিল একটা সময়ে, নিজের ওপরই কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। একে-একে ফাইলবন্দি হয়ে সেসব লেখা আজ পাঠকের সামনে।
শামশের আনোয়ারের (১৯৪৪-১৯৯৩) মৃত্যুর ঠিক পরে-পরেই ‘ক্রুসেড’ পত্রিকা ওঁকে নিয়ে একটা ক্রোড়পত্র করে, ‘শামশের অথবা প্রেমিক স্মরণে’ এই নামে (যে-শিরোনাম এই পত্রিকাতেও ব্যবহার করা হয়েছে)। সেখানে গ্রন্থিত হয় ওঁর কিছু অগ্রন্থিত কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প এবং সাক্ষাৎকার। কিন্তু আশ্চর্য লাগে, এতগুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁর কোনো বই বাজারে সুলভ নয়। রুগ্ণ চেহারার একটা ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র মধ্যে কেন তাঁকে বন্দি হয়ে থাকতে হল এতগুলো বছর! বাংলা বাজারের প্রথিতযশা রাম-শ্যাম-যদুর দৌরাত্ম্যের ভিড়ে, হারিয়ে যাওয়া একজন শক্তিশালী কবিকে নিয়ে কাজ করা লিট্ল ম্যাগাজিনের দায় মনে করি বলেই শামশের আনোয়ারকে নিয়ে কাজ শুরু করার কথা ভেবেছিলাম।
এই কাজে বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি, উৎসাহ পেয়েছি, আর দেখেছি শামশেরের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা। সলিল বিশ্বাসের মতো মানুষ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-শুয়ে মৃত্যুর আগে তাঁর লেখাটি সম্পূর্ণ করে দিয়ে গেছেন, এ কি কোনোদিনও ভুলবার! শামশের আনোয়ারের জন্যই কি আমি দেখিনি অনুত্তম বিশ্বাসের শেষ জীবনের একটা দিন? যিনি সম্পূর্ণ স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েও শুধু রবীন্দ্রনাথের গানের মাঝে মাঝে গেয়ে ওঠেন দু-এক কলি! ওই সাত বছর ছিল আমার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সাত বছর, যার নেপথ্যে ছিলেন শামশের!
এই সংখ্যার বিষয়াবলি তিনটে ভাগে ভাগ করা হয়েছে। শামশের আনোয়ারের যাবতীয় যা-কিছু এক ভাগে, অন্য ভাগে ওঁকে নিয়ে লেখা, এবং শেষে শামশের আনোয়ারের কবিতা ও হিরণ মিত্রের ছবি। অসংখ্য মানুষ পাশে না থাকলে হয়তো সত্যিই এই সংখ্যা আমি করে উঠতে পারতাম না, তবু বিশেষভাবে এখানে দু-একজনের কথা না বললেই নয়। আমি বিশেষভাবে ঋণী অরণি বসু, শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত মাজী এবং সন্দীপ দত্তের কাছে। শামশেরের অনেক লেখাই তাঁরা খুঁজে দিয়েছেন। এবং নানা সময়ে বিভিন্ন মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে আমায় ঋদ্ধ করেছেন। যতদূর সম্ভব পরিশ্রম করে এই সংখ্যা তৈরি করার চেষ্টা করেছি, এখন ভালো-মন্দের বিচার পাঠকের হাতে। আর সবশেষে একটা কথা— যদি কারো চোখে শামশেরের কোনো রচনা চোখে পড়ে, জানাবেন। কেননা আমি এখনও বিশ্বাস করি, পাঠক ঈশ্বরতুল্য!
(Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।