Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পুজোর খাওয়া

শমীতা হালদার

অক্টোবর ১০, ২০২৩

পুজোর খাওয়া Durga puja food Durga puja recipe
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

অনেক কাল আগের কথা। তখন পুজোর মুখে হালকা শীত পড়ত, পুজোর মাস দেড়েক আগে মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির কর্তারা বোনাসের হিসেব মেলাতেন, বাড়ি, আত্মীয় কাকে কী দেওয়া যায়, পুজোর কদিনের বাজারের হিসাব, সব মিলিয়ে একটা বাজেট ঠিক হত, তারপর শুরু হত কেনাকাটা। নতুন জামা, শাড়ি, জুতো। তারপর হইহই করে পাড়ার ক্লাবের মাঠে বাঁশের খুঁটি বাঁধার দিন চলে আসত, বাড়িতে বাড়িতে দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি সঙ্গে গায়ে লাগা লক্ষ্মী পুজোর বাসন তোরঙ্গের থেকে বের হত। ষষ্ঠী থেকে বিজয়া, নাড়ু, মোয়া, নিমকি ইত্যাদি দু’একটা জিনিস বানিয়ে গিন্নি বয়ামে ভরে রেখে দিতেন। তবে ষষ্ঠী থেকে দশমী সব বাড়িতেই দু-একটা ভালমন্দ খাবার রান্না হতই (Durga Puja food), আর পুজোর দিনে আত্মীয়ের আগমন হলে তো কথাই নেই। সেইসব দিন আজ হয়তো অনেকটাই ফিকে, এখন আমরা সারা বছর কেনাকাটা করি, বাড়ি বসেই দুনিয়ার খাবার খাই,  কিন্তু পুজো এলে সে দেশে হোক আর প্রবাসে, বাঙালির আবেগ সেই আগের মতোই থাকে। এখন হয়তো বাড়িতে বাড়িতে নাড়ু, মোয়া, তক্তি ইত্যাদি বানানোর মানুষ কমে গেছেন কিন্তু তাও আমরা পুজোর কটা দিন মনেপ্রাণে বাঙালি হয়েই থাকি। 

ষষ্ঠীর দিনে অনেক মহিলা তাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনায় উপোস রাখেন। দিনমানে পুজো সেরে, বিকেলে উপোস ভাঙেন। সেই সময় চালের তৈরি খাবার তাঁরা খান না, তাই ষষ্ঠীর দিনে অনেকেই নিরামিষ রান্নার আয়োজন করে। ময়দার লুচি অথবা পুর ভরা কচুরি, কাজু কিসমিস, নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল, আলুর দম, আর শেষপাতে মিষ্টি। সপ্তমীর দিন দুপুরে সাধারণত ভাত এর ব্যবস্থাই হয় সব বাড়িতে, সঙ্গে থাকে ভালমন্দ নানান পদ। আমি এইবার ঠিক করেছি সপ্তমীতে মেনু করব, সাদা ভাত, শুক্তো, কাঁচা মুগের ডাল, কুমড়ো ফুলের বড়া, দুই রকম মাছের পদ (সে পাকা রুই এর ঠাকুরবাড়ির চমৎকার রান্না রুই দেহেবু কি পাবদার তেলঝাল হতে পারে), শেষ পাতে একটু পেঁপের চাটনি আর ক্ষীর সেমাই। 

কচুরি ছোলার ডাল Bengali kachuri cholar dal
কচুরি ছোলার ডাল হলে ষষ্ঠীর খাওয়া জমে যাবে।

অষ্টমীর সকাল থেকে হইহই কাণ্ড। বাড়ির বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই স্নান করে নতুন পোশাক পরে রেডি হন অঞ্জলি দেবার জন্য। অঞ্জলি দিয়ে এসে সেই চিরন্তন জলখাবার– ফুলকো লুচি, আলু চচ্চড়ি আর রসগোল্লা না হলে অষ্টমী র সকাল জমে না। দুপুরে অনেকেই নিরামিষ খান। সাধারণত পুজোর ভোগ প্রসাদ খাওয়া হয়। তাতে খিচুড়ি, পোলাও, কয়েক রকমের ভাজা, আলু ফুলকপি কষা কিংবা আলুর দম, চাটনি, পায়েসের এলাহি আয়োজন থাকে। নবমীতে বাঙালির পাতে মাংস নাহলে চলে না। দশমীর দিন আগে বাড়ি বাড়ি নারকেল কুচি দিয়ে ঘুগনি, কুচো নিমকি, এলোঝেলো আর নাড়ুর আয়োজন করা হত। ঠাকুর বিসর্জনের পরে মিষ্টিমুখ এর ব্যবস্থা। তারপর পাড়ায় এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরতে ঘুরতে মুখ চলতেই থাকত নানারকম নোনতা মিষ্টি খাবারে। 

পুজোর রেসিপি

ষষ্ঠীর রাধাবল্লভী

বিউলির ডাল ১ কাপ ভিজিয়ে রাখতে হবে ৪ ঘন্টা। তারপর প্রেসার কুকারে খুব অল্প জল দিয়ে নুন দিয়ে সিটি দিয়ে নিতে হবে। এইবার একটা কড়াই তে তেল গরম করে তাতে হিং, কালোজিরা, আদা আর কাঁচা লংকা বাটা দিয়ে একটু নুন হলুদ মিশিয়ে মসলা কষে সেদ্ধ করে রাখা ডাল মেশাতে হবে। ডাল শুকনো করে জল টানিয়ে নিতে হবে। শুকনো খোলায় ভেজে রাখা পাঁচফোড়ন গুঁড়ো এতে মেশালে স্বাদ ভাল হয় আর সামান্য চিনি। পুর তৈরি হয়ে গেলে তা ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। 

ময়দা তে নুন, ঘি দিয়ে ময়ান দিয়ে মেখে ঢেকে রাখতে হবে ১ ঘণ্টা। তারপর লেচি কেটে পুর ভরে ভেজে নিলেই রেডি। রাধাবল্লভীর সঙ্গে ঝাল ঝাল আলুর তরকারি কি ছোলার ডাল তোফা মানায়।

সপ্তমীর ইলিশের বরিশালি

নারকেল, পোস্ত, সরষে, কাঁচা লংকা একসঙ্গে মিহি করে বেটে নিতে হবে। তারপর ইলিশ মাছে এই মশলা, নুন, অল্প হলুদ মাখিয়ে কয়েকটি চেরা কাঁচালংকা, আর কাঁচা সরষের তেল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে কড়াই তে দিয়ে আঁচ একদম কম রেখে ভাপাতে হবে ১৫ মিনিট। যদি মনে হয় জল লাগবে, সামান্য জল দেওয়া যেতে পারে। শেষে অল্প তেল ছড়িয়ে নিলেই রেডি।

Durga puja special recipe
ইলিশ বরিশালি।

অষ্টমীর খিচুড়ি

ভোগের খিচুড়ির স্বাদের জন্য, গোবিন্দভোগ চাল আর সোনা মুগ ডাল নিতে হবে সমপরিমাণ। ডাল শুকনো খোলায় ভেজে নিতে হবে। তারপর হাঁড়িতে জল দিয়ে, ফুটে গেলে তাতে দিতে হবে চাল। চাল একবার ফুটে গেলে তখন ডাল দিতে হবে। তারপর নুন হলুদ আর লংকা। চাল ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে ফোড়ন দেবার পালা। 

সরষের তেল গরম করে তাতে, সাদা জিরে, শুকনো লংকা, তেজপাতা, গোটা গরম মসলা দিয়ে জিরে, ধনে আদা বাটা দিয়ে ভাল করে কষে নিয়ে তাতে মেশাতে হবে নারকেল কোরা আর বাটা গরম মসলা। মসলা কষা হয়ে গেলে খিচুড়িতে ঢেলে ভাল করে খুন্তি দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর ওতে দিতে হবে ঘি আর ভাজা গুঁড়ো মসলা। এইবার হাঁড়ি ঢেকে আঁচ বন্ধ করে ৩০ মিনিট ওইভাবে রেখে দিলেই খিচড়ি রেডি।

নবমীর কষা মাংস

মাটনে দই, আদা বাটা, রসুন বাটা,  হলুদ, গরম মসলা গুঁড়ো, আর সরষের তেল মেখে ঢেকে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ২-৩ ঘন্টা। কড়াই তে সরষের তেল গরম করে তাতে তেজপাতা, গোটা গরম মসলা ফোড়ন দিতে হবে। এরপর ওই তেলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে লাল করে, তারপর মেশাতে হবে আদা, রসুন আর কাঁচা লংকা বাটা। তারপর একে একে নুন হলুদ আর কাশমীরি লাল লংকা গুঁড়ো, জিরে আর ধনে গুঁড়ো, অল্প জল মিশিয়ে কষে নিতে হবে। তারপর ম্যারিনেট করে রাখা মাটন টা দিয়ে কষতে হবে ৪০-৪৫ মিনিট আঁচ কম রেখে। যখন মাটন থেকে তেল বেরতে শুরু করবে, প্রেসার কুকারে দিয়ে অল্প গরম জল আর ছোট এলাচ বাটা মিশিয়ে সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে মাটন। কুকার খুলে ঘি দিয়ে দিলেই মাটন কষা রেডি।

দশমীর নিমকি

ময়দা, কালোজিরে, জোয়ান, নুন, সাদা তেল আর বেকিং পাউডার দিয়ে খুব ভাল করে ময়ান দিয়ে মাখতে হবে। তারপর তা ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে ১ ঘন্টা, তারপর লেচি বানিয়ে বড় রুটির মতো বেলে নিমকির আকারে কেটে কড়াইতে তেল দিয়ে মিডিয়ামে আঁচে ভাজতে হবে।

পুজোর পাঁচদিনের জন্য রইল পাঁচটি বিশেষ পদের রেসিপি। আশা করছি আপনাদের পুজোর খাওয়া দাওয়া জমে যাবে। সকলের উৎসব ভাল কাটুক।

ছবি সৌজন্য: লেখক।

Author Samita Haldar

নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।

Picture of শমীতা হালদার

শমীতা হালদার

নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।
Picture of শমীতা হালদার

শমীতা হালদার

নিবাস গুরগাঁও। পেশায় বাবুর্চি। নিয়মিত রান্না বিষয়ক লেখালেখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এছাড়া স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করেন শমীতা।

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস