(Nabinchandra Sen)
এস এস প্রিয় সখি কল্পনে! আমার,
বহুদিন করি নাই আলাপ তোমার।
বারেক আইস প্রিয়ে! ভ্রমি তব সনে,
নিরখি প্রকৃতিমূর্ত্তি মনের নয়নে।
কিন্তু আহা! কে দেখিবে আমিও যেমন,
শোকবাষ্পে পরিপূর্ণ মনের নয়ন।
নীরবে কাঁদিছে মন বসিয়া বিরলে,
অম্ভববাহিনী স্রোত বহে অশ্রুজলে। (Nabinchandra Sen)
কত করি বুঝাইনু মানে না বারণ,
নিজে না বুঝিলে কেবা প্রবোধিবে মন?
কে কবে বেঁধেছে মন ধৈর্য্যের শৃঙ্খলে?
বসনে কে বাঁধিয়াছে জ্বলন্ত অনলে?
তাহে স্মৃতি পাপিয়সী ধরিয়া দর্পণ,
বিগত-জীবন-চিত্র করে প্রদর্শন।
যখন আনন্দময়ী জননীর কোলে
নাচিতাম, হাসিতাম, আনন্দ হিল্লোলে।
যবে সুখে, প্রিয়তম সঙ্গিগণ লয়ে,
নেচে নেচে বেড়াতাম পুলক হৃদয়ে। (Nabinchandra Sen)
কভু তুঙ্গ শৃঙ্গে উঠি প্রফুল্লিত মনে,
দেখিতাম বিশ্বছবি সায়াহ্ন-পবনে।
দোলায়ে বসন্ত-লতা বহিত পবন,
মর্ম্মরিত পত্রকুল, জুড়া’ত জীবন।
গাইত বিহঙ্গকুল বসিয়া আবাসে,
গাইতাম, তোমা নাথ! মনের উল্লাসে।
দেখিতাম দূর নদী রবির প্রভায়,
জন্মভূমি-কণ্ঠমূলে স্বর্ণ-রেখা প্রায়:
অতি দূরে আম্রবণ, স্রোতস্বতী তটে,
চিত্রবৎ দেখাইত আকাশের পটে। (Nabinchandra Sen)
আরও পড়ুন: প্রকাশগলির ভিতর দিয়ে
যবে রবি শোভিতেন ভূধরকুন্তলে,
কিম্বা যবে শশধব আকাশমণ্ডলে
হাসিতেন, হাসিতাম বসি নদীকূলে,
শিক্ষকের যত জ্বালা যাইতাম ভুলে।
নৈশ আকাশের মূর্ত্তি অমল সলিলে,
দেখিতাম কাঁপিতেছে মলয় অনিলে।
কত শত পূর্ণ শশী এলো-খেলো হয়ে,
বিরাজিত সুনীলাম্ব-সরিত হৃদয়ে!
কল্লোলিত যবে নীল তরঙ্গিণীচয়,
নীরবে থাকিত কি হে এ পোড়া হৃদয়? (Nabinchandra Sen)
তা নয়, খুলিয়া আহা! হৃদয়ের দ্বার,
-দুই ধারে বিগলিত অশ্রু, দুই ধার,
গাইতাম তোমা নাথ! মনের হরষে,
স্মরিলে, এখনো মন গলে ভক্তিরসে।
হা নাথ! সে দিন মম ফিরিবে কি আর?
বসিবে কি নদীকূলে আভাগা আবার?
এবে কাদিতেছি বসে দুঃখনদীকূলে,
সে সকল সুখ আমি গিয়াছি হে ভুলে।
সে সকল সঙ্গী নাই নিকটে আমার,
আসিবে কি তারা কভু নিকটে আবার?
কেন বা আসিবে? আহা! কে আসে এখন
অভাগার দীন ভাব করিয়া স্মরণ?
যত দিন ধরে তরু ছায়া সুশোভিত,
কে না হয় ছায়া আশে তাহার আশ্রিত?
নিদাঘ অনলে তারে পোড়ায় যখন,
ছায়া আশে, তার কাছে, কে করে গমন?
ভগ্ন উপকূল যবে হয় নিমগন,
কে যায় বল না তারে ধরিতে তখন?
নাহি মম সৌভাগ্যের ছায়াপরিসর।
শমিপ্রায় হৃদে অগ্নি জ্বলে নিরন্তর। (Nabinchandra Sen)
আরও পড়ুন: আংরেজ বিবির অসম্পূর্ণ উপাখ্যান
নাহি সেই দিন মম, নাহি ধন জন,
কে আমারে বন্ধু বলে ডাকিবে এখন?
হৃদয়ের বন্ধু যারা ছিলেন আমার,
আমার হৃদয়াকাশ করিয়া আঁধার,
অস্তপ্রায়; নাহি আর তোষেন এখন,
করুণ-নয়নে নাহি করেন দর্শন।
হেন বন্ধু নাহি মম এই ধবাতলে,
ভাসিবে আমার দুঃখে নয়নের জলে।
“ভাই” বলে “দাদা” বলে ডাকিনু যে সবে,
গিয়াছে ছাড়িয়া তারা এ জীবিত শবে।
ওতে স্মৃতি। এ সকল দেখায়ো না আর,
কাঁদাযে এ অভাগাবে কি ফল তোমার?
অন্তরে রাখিয়া সব করহ যতন,
সুদিন হইলে তারা দিবে দরশন।
মরিয়া মরমে, জ্বলি চিন্তার অনলে,
যাইতাম সুখ আশে সুহৃদমণ্ডলে;
ভুলিতাম যত দুঃখ কথায় কথায়,
ইথেও বিধাতা বুঝি বিমুখ আমায়।
আমার জীবন-পথ করিয়া উজ্জ্বল,
যে কয়টি তারা ছিল উদিত কেবল,
দুর্ভাগ্য-জলদাবৃত দেখিয়া আমায়,
লুকায়েছে সব আর দেখা নাহি যায়।
হা বিধাতঃ! এতই কি ছিল তব মনে?
কিন্তু আহা; তোমারে বা দুষিব কেমনে?
সংসারের এই গতি যেখানে সেখানে,
দুরদৃষ্ট যার আহা! কে তাহাবে মানে?
তবে কেন করি মিছে সংসার সংসার,
সংসারের নহি, নহে সংসাব আমার।
হা নাথ! দুঃখীর সখা কেহ নাহি আর,
একই সুহৃদ তুমি জানিলাম সার। (Nabinchandra Sen)
নবীনচন্দ্র সেন রচিত কবিতা ‘একটি চিন্তা’
বানান অপরিবর্তিত
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।