খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন
যশোধরা রায়চৌধুরী
প্রকাশক: সৃষ্টিসুখ
মূল্য: ৩০০/- টাকা
ঘর সাজানো বা নিজেকে সাজানো নয়, ভূমিকায় লেখক লিখছেন, তিনি লেখা সাজিয়েছেন। আর এই সাজানো নেহাতই ‘মেয়েলি’ নয়, কারণ খণ্ডিতা কোনও একক মেয়ে নয়, মেয়েদের আলাদা করে দেখার বা ভাবার বাইরে এই বইয়ে ঘটে চলেছে এক বিশ্বদর্শন। সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে যশোধরা রায়চৌধুরীর খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন। এই বইয়ের নামকরণ প্রসঙ্গে লেখিকার বক্তব্য—একপেশে নারীবাদকে ভালোবেসে, তার হয়ে সওয়াল করে এতদিন তো কেটে গেল। নারীর দর্শন, নারীর দেখা, নারীর চোখ…দৃষ্টিকোণ, তার একপেশেমি আজও আমাকে ছেড়ে গেল না। তাই সেই খণ্ডিত বিশ্বদর্শনকেই এখানে রেখেছি বিছিয়ে…’ কবে যেন পড়েছিলাম সেই ঢেউগুলির কথা। একের পর এক নারীবাদের পাশ্চাত্য ঢেউ এসে ক্রমে ভাসিয়ে নিয়ে গেল আমাদের দেশকেও। মুক্তি, মুক্তি! উল্লাস করে বলে ফেলল কিছু মেয়ে। আর তাদেরই খারাপ, একপেশে, উগ্র, বদমেজাজি, আরও কত বিশেষণে ভূষিত করে ফেলল এই সমাজ। মেয়েদের জগতকে পুরুষের জগতের মতো বিশাল করে দেখাতে কি পারল তবু কেউ?
তো, সাজানোর কথায় আসি আবার। খণ্ডিতা সেজেছে কয়েকটি বিভাগ নিয়ে। নারীর চিত্রায়ন, নারীশরীর ও হিংসা, নারীর বাস্তবতা এবং নারী আর সম্পর্ক। আলোচনা করার আগে আবারও বলি, এই বইয়ের পাঠক কিন্তু শুধু মেয়েরা নয়। নারীবাদের প্রথম তরঙ্গে যেমন মনে করা হত নারীকে হতে হবে পুরুষের সমকক্ষ, তাতে তার নারীত্ব বিসর্জন দিতে হবে। পরবর্তী তরঙ্গে অবশ্য নারীর নিজস্ব ভুবন তৈরির প্রচেষ্টা ছিল। নারীর চিত্রায়ন বিভাগে প্রথম শিরোনাম জাঁহাবাজ মেয়েদের করুণ রঙিন পথ। সিনেমার মেয়েরা কেমন হয়? হয় ভ্যাম্প নয় মা। নায়িকা হলে তিনি আদর্শ স্ত্রী বা সেবিকা। ‘সুতপা ভট্টাচার্যের ভাষায় উর্বশী ছবি আর লক্ষ্মী ছবি’। সিনেমার মেয়েদের কথা আসে অবধারিত ভাবে। সাড়ে চুয়াত্তর। একটি পুরুষ মেসবাড়ি, এক আধুনিকা নারীকে কেন্দ্র করে যে চিত্রায়ন তারই মধ্যে শুনে ফেলি একটি বাক্যবন্ধ—কী জাঁহাবাজ মেয়ে মাইরি! সেই মেয়েকেও তার মা বকেন এই বলে—কী দরকার ছিল ছেলেদের কথার মাঝে যাবার?

তপন সিংহর ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিতে ছায়াদেবী বা ভারতীদেবী যেমন গৃহবধূ বা গৃহবন্দি তেমনই পুত্রবধূকে দেখানো হয়েছে আহ্লাদি রূপে, আবার আশ্রিতা কৃষ্ণা প্রায় দাসী। মূল চরিত্ররা পুরুষ, ধনঞ্জয় অর্থাৎ রবি ঘোষ, তিন ছেলে, তাদের পিতা আর অফিসের বস। তবে ‘জতুগৃহ’ ছবিতে নারী চরিত্রকে অনেক সূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক। দীনেন গুপ্তর ‘বসন্তপবিলাপ’ ছবিতে যেমন সেই আগেকার জাঁহাবাজ মেয়েরা উঠে এসেছে আধুনিক পরিসরে, চাকুরিরতা, মেসহস্টেলে থাকা মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে সমানে সমানে পা ফেলছে। মাঝে কুড়ি বছর কেটে গেছে অবশ্য। অপর্ণা সেন অনায়াসে ভাড়া চাইতে আসা হরিধনকে উইল করিয়ে রাখার হুমকি দিতে পারেন, সৌমিত্রর দাঁত ওপড়াতে সাঁড়াশি নিয়ে আসেন। প্রেমে পড়েন ঠিকই, কিন্তু সেটাই মোক্ষ থাকে না জীবনের।
সিনেমার প্রেক্ষাপট ছেড়ে লেখক এবার চলে আসেন বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। ২০২১-এর নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন ভদ্রমহিলাকে যে ভাষায় অবমাননা করা হল বারবার, তাতে গত পঞ্চাশ বছরের নারীর অগ্রগতির ইতিহাস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল। যে বাঙলায় ১৯৭৩ সালে নারীর আত্মনির্ভরতা নিয়ে গল্প তৈরি হয়েছিল, সেই বাংলায় ঘরের মেয়েকে সময় মতো বিদায় করার কথা শুনতে হল। শুনলাম ঘরে ঢুকিয়ে মা বোনেদের রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকি। রাজ্যপালের মুখে শুনলাম তারকা প্রার্থীদের ‘নগরের নটী’ সম্বোধন করতে।

এরপর আসে হিন্দি গানের মেয়েদের কথা। সেকালের হিন্দি গান মানেই নারীর রূপের বর্ণনা। রূপ তেরা মস্তানা…রাজকাপুর, শাম্মি কাপুর থেকে দেব আনন্দ বা রাজেশ খান্না, সব হিরোদের মুখেই বসিয়ে দেওয়া হত নারীর রূপের মহিমা কীর্তন। সেই রূপের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চাঁদ, ফুল, তারা, বন, গাছ, নদী, পাহাড়কে আশ্রয় করা অবধারিত। একমাত্র ১৯৬৫ সালের সাহির লুধিয়ানভির ‘কাজল’ ছবির জন্য লেখা লিরিক বোধহয় ব্যতিক্রম। ‘আপকে ভিগে হুয়ে জিসম সে আঁচ আতি হ্যায়/ দিল কো গরমাতি হ্যায়, জজবাত কো ভড়কাতি হ্যায়…’ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল সেই উষ্ণতা। যদিও আশি বা নব্বইয়ের দশকে বা তারও পরে ‘তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত’এর মতো খোলাখুলি নারীর শরীরের পণ্যায়ন আর হয়নি। এখনকার মেয়েরা আধুনিক মননের দাবী করে, এ সমাজও তাদের খণ্ডিত অবয়ব তুলে ধরতে আগ্রহী নয়, এরকম ভাবাটা এখনও বাড়াবাড়ির পর্যায়েই রয়ে গেছে। বরং ২০০০ পরবর্তীতে নারী নিজেকেই প্রডাক্ট রূপে তুলে ধরতে আগ্রহী হচ্ছে। আর তার ফলে হিন্দি গানে এসে গেল ‘মাই নেম ইজ শীলা। শীলা কি জওয়ানি’। নিজেকে ভালবাসার মোড়কে প্রসাধনী পুষ্ট শরীরকে ভোগ্য করার এই প্রয়াস এখনও থামেনি প্রকৃতপক্ষে।
তপন সিংহর ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিতে ছায়াদেবী বা ভারতীদেবী যেমন গৃহবধূ বা গৃহবন্দি তেমনই পুত্রবধূকে দেখানো হয়েছে আহ্লাদি রূপে, আবার আশ্রিতা কৃষ্ণা প্রায় দাসী। মূল চরিত্ররা পুরুষ, ধনঞ্জয় অর্থাৎ রবি ঘোষ, তিন ছেলে, তাদের পিতা আর অফিসের বস। তবে ‘জতুগৃহ’ ছবিতে নারী চরিত্রকে অনেক সূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক। দীনেন গুপ্তর ‘বসন্তপবিলাপ’ ছবিতে যেমন সেই আগেকার জাঁহাবাজ মেয়েরা উঠে এসেছে আধুনিক পরিসরে, চাকুরিরতা, মেসহস্টেলে থাকা মেয়েরা পুরুষের সঙ্গে সমানে সমানে পা ফেলছে।
আর পর্নোগ্রাফি? সেখানে মেয়েদের শরীরকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা সম্ভব নয়। নারীর শরীর ও রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে এমন এক ছবি দেখানো হয় যে, মনে হয় প্রতিটি নারীই পুরুষখেকো, ম্যাডোনা মার্কা, উত্তপ্ত, শরীর থেকে পদ্মগন্ধ বিকীর্ণকারী অসম্ভব আকর্ষক। একটি উলঙ্গ শরীর কখনও পর্নো হয় না, যদি না তাতে অস্বাভাবিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। আধো আলো, ছায়াঢাকা ছাড়া সম্পূর্ণ নগ্নতা যে সারল্য দেখায় তাতে সুড়সুড়ি থাকে না, পর্নোগ্রাফির উদ্দেশ্য নষ্ট হয়। বাস্তবতার থেকে চ্যুতিও পর্নো। জাপানি তেল, রকেট ক্যাপসুল আর খাটভাঙা কর্মসূচি বাদ দিয়ে যৌনতাকে আর আমরা ভাবতে পারি না বোধহয়। লেখকের আক্ষেপ মিশে আছে শেষের পঙক্তিগুলিতে।
‘তুমি কি ভেবেছিলে রক্তমাংসের/ভেতরে আমি খুঁজি প্রণামপল্লব?/পায়ের দুটি পাতা ছুঁতে চেয়েছি আমি/ছোঁয়া কি যায় বল অলীক পদতল?’ ওই অলীক পদতলে যে মন বসতে পারে, প্রেমের বসতি যে মনের মধ্যে পুষে রাখা শরীর ভাবনাতেও, নানা অনুষঙ্গ স্মৃতিরেখার আনাচেকানাচে, এইটে ভুলে আমরা বড় কষ্টে আছি। আমাদের শরীর ও মন বড় কষ্টে আছে’।
আদর্শ বধূ ও বিবাহ-উপহার-পুস্তিকা শিরোনামের অধ্যায়ে দেখলাম ‘শ্রীমান রবীন্দ্রের নববধূর শুভ্র করকমলে নিবেদিত হইল—শ্রী অমুক চন্দ্র তমুক’। নিবেদিত হইল বিবাহে উপহার দেবার জন্য স্পেশাল টাইপের পুস্তক, যার নাম ‘শুভদৃষ্টি’ বা ‘নবীন সাথী’ হতে পারে। এই বইয়ের উদ্দেশ্য বা অপরিহার্যতা এখন আর নেই বটে কিন্তু এই বইগুলি হল কাহিনির প্রেক্ষাপট। মূল কাহিনি ইন্দ্রাণী দেবীর, যতদূর মনে হয় সেই ১৯৩১-এ কোনও ব্রাহ্মণ পিতা ছদ্মনামে এই বই লিখেছিলেন, যে বইয়ের ছত্রে ছত্রে ব্রাহ্মণ পিতার দারিদ্র আর নিষ্ঠাকে হাইলাইট করা হয়েছে, অন্য জাতির লোকেরা কীভাবে অব্রাহ্মণ বা অযোগ্য হয়েও ধনী হয়ে পড়ছে, ইত্যাদির পরে কাহিনির একেবারে শেষে গিয়ে তাঁর কন্যার এক ব্রাহ্মণ সন্তানের সঙ্গে পরিণয়ে আপাত মধুর প্রলেপ পড়তে দেখা যায়। কালে কালে তরলবুদ্ধি ও অল্প বুদ্ধি মেয়েদের ঘরকন্নার কাজে নিমগ্ন হতে শেখানো বা গেরস্থালির ট্রেনিং দেওয়ার চল যেমন এসেছে, নিজে পছন্দ করে বিয়ে করার দু একটি উদাহরণও সামনে আসতে শুরু করেছে। বিয়েতে উপহার দেবার জন্য ভারত প্রেমকথা (সুবোধ ঘোষ), শেষের কবিতা, মিলনের মন্ত্রমালা (রাধারাণী দেবী), গীতগোবিন্দ বা মেঘদূতের আদি রসাত্মক অলংকরণ নববিবাহিতদের ভাল লাগারই কথা। লেখকের মা তাঁর বিয়েতে দশটি ভারত প্রেমকথা উপহার পেয়েছিলেন!
ও মেয়ে শরীর কি তোর? একদিকে হায়দ্রাবাদের অভিনেত্রী রেড্ডি পোশাক খুলছেন ক্যামেরার সামনে, আর লেখকের হাতে উঠে আসছে মার্গারেট অ্যাটউডের লেখা বই, ‘দ্য হ্যান্ড মেইড’স টেল’। যে বইয়ে রাষ্ট্র মেয়েদের সুরক্ষা দিতে গিয়ে মেয়েদের সব ধরনের কার্যকলাপে ফতোয়া জারি করেছে। শিক্ষা ও উপার্জনহীন তারা পরিণত হয়েছে জরায়ুযন্ত্রে। অ্যাটউড নারীস্বাধীনতার ক্ষেত্র হিসেবে মেয়েদের শরীরকে দুঃস্বপ্নের জগত কল্পনা করেছেন, অন্যদিকে রেড্ডি ব্যতিক্রম, এই জগতের মোড় ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন।
সুপারম্যানের জুড়ি সুপারউওম্যান। ম্যান অর্থাৎ স্মার্ট, আর উও মানে দুঃখ অর্থাৎ উওম্যান মানেই যে পুরুষের জীবনে দুঃখ ডেকে আনেন। তাই সুপার গার্লই ভাল। কমিক সিরিজে ওয়ান্ডার উওম্যানের সৃষ্টির পরে তার চেয়ে কুড়ি বছরের ছোট সুপারগার্ল চলে এল। কমিক বিশেষজ্ঞ টিম হেনলি জানাচ্ছেন আগামী দিনের মাতৃতান্ত্রিক অবস্থানের সূচনা হিসেবেই এই চরিত্রগুলি সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও বাস্তবে ওই কমিক স্ট্রিপ ছাড়া তাদের অস্তিত্বই নেই। যেভাবে সুপারম্যানের ইমেজ আমজনতার বাস্তব মনে ছায়া ফেলে, সেভাবে তারা ব্যর্থ। আমাদের দুর্গা, কালী সেই অর্থে সুপার উওম্যান হতে পারতেন। কিন্তু দেবী রূপে ভয়াল ইমেজ নিয়ে তাঁরাও অধরা রয়ে গেলেন। নারীশক্তির জয়জয়কার বইতেই রয়ে গেল।

খারাপ মেয়ের ইতিবৃত্ত অধ্যায়টি এই বইয়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। ‘মন্দ বলে লোকে বলুক না, বলুক না…’ আদতে মন্দ বলা বা মন্দ শোনা কোনোওটাই অভিপ্রেত নয়। ও মেয়ে তুই খারাপ? নারী কবিদের লেখায় বারেবারে উঠে এসেছে এই খারাপ মেয়ের কথা। লেখকের সমসাময়িক শ্বেতা চক্রবর্তীর কবিতা তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ। পঞ্চাশের দশকের কবিতা সিংহের লেখায় যে আখরের উত্থান পরবর্তীতে আশির দশকে চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, সুতপা সেনগুপ্ত, সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে তৈরি হল মিথ। গেরস্থালি ঘুরে হাফ গেরস্থ হয়ে যে কবিতা খদ্দের ধরতে শেখে চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে, সেই কবিতাই আবার দুহাজার পরবর্তী সময়ে রাকার কলমে অলক্ষ্মীর ঝাঁপি খোলে। যশোধরা নিজেও অবশ্য কম যান না মিথের পুনর্নিমাণে।
পুরুষের কলমে নারীর নির্মাণ হয়েছে সেই আদিকাল থেকেই। কল্লোল-বুদ্ধদেব-জীবনানন্দের অনুপ্রেরণায় নারীর ভূমিকা কুয়াশা ঘেরা, অবদমিত যৌনবোধের তাগিদ সেখানে স্পষ্ট। পরবর্তীর সুনীল-শরত-শক্তি-তারাপদর পরে তুষার রায়, বেলাল চৌধুরী, তন্ময় দত্তদের উন্মুক্ত প্রকাশে যৌনতাবোধ আর কুয়াশাঘেরা রইল না। পুরুষের কবিতায় এরপর কেবলই নারী শরীরের উদযাপন হল কিছুদিন। শরীরের সঙ্গে এল রোমান্স। নীরার পাশাপাশি পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনের সেই জনপ্রিয় কবিতাতেও নারী। ষাট ও সত্তর দশকের কবিদের কলমে লাবণ্যময়ী নারীর বাহুল্য বা অতিচর্চার পরে এল জয় গোস্বামীর পাগলি। লাবণ্যের সঙ্গে ঝাঁজ, প্রেমের রসায়নের জ্বলুনি।

নব্বইয়ে এসে নারী যত প্রগতিশীল হয়েছে, তার পণ্যায়ন বেড়েছে আরও বহুগুণ। একদিকে নারীর খুল্লমখুল্লা নগ্নতা বিক্রি হচ্ছে, অন্যদিকে নারী প্রায় প্রতিটি বিষয় বা ক্ষেত্রে পা রেখে ফেলেছে। ঠিক এই সময়ে এসে রাণা রায়চৌধুরী, প্রসূন ভৌমিক, চি্রঞ্জীব বসু, শিবাশিষ মুখোপাধ্যায়, পিনাকি ঠাকুর, শ্রীজাত, রূপক চক্রবর্তীদের হাতে নারীর রেঞ্জ ঘরোয়া মিষ্টি ইস্তিরি থেকে সংসার তছনছ করে দেওয়া প্যাশন পায়রা। পরের দুটি দশকে পুরুষরা আর প্রেম বা নারী নয়, লিখছেন অ্যাবস্ট্রাকশনের কবিতা। রাণা বসু, দেবর্ষি সরকার, ইন্দ্রনীল বক্সী, দীপ্তিপ্রকাশ দে, অরিজিত ভট্টাচার্য, সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশুমান দে, নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়রা অবশ্য এখনও নারীকে চাইছেন মনেপ্রাণে।
‘নারীশরীর ও হিংসা’ পর্বের প্রথমেই রয়েছে ধর্ষণের ইতিবৃত্ত। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে এদেশের চারটি দলিত মেয়ে উচ্চবর্ণের দ্বারা রোজ ধর্ষিত হয়। হাথরস কাণ্ড, মনীষা বাল্মীকি, নির্ভয়ার পরে তেলেঙ্গানার প্রিয়াংকা রেড্ডি। একের পর এক ঘটনায় এদেশ কেন সারা পৃথিবীর মেয়েরা এখনও নির্যাতিত। অথচ এই ধর্ষণ বা নির্যাতন পুরুষের চোখে লো প্রোফাইল কেস, যার গুরুত্ব কম পুলিশের কাছেও। সুরক্ষার অর্থ মেয়েদের বাড়ির বাইরে বেরতে না দেওয়া নয়, তার পায়ে বেড়ি পরানো নয়, একথাই ভুলতে বসেছে আজ রাষ্ট্র।
ঈর্ষা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। আর এই ঈর্ষাই হয়ে ওঠে আক্রামকের হাতিয়ার। দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক টিঁকে না গেলে, মেয়েটি অন্য পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হলে বা বিয়ে করলে, প্রণয়ী আর তখন প্রণয়ী থাকতে পারে না এই ঈর্ষার ফলেই। আর অ্যাসিড ভিক্টিমের সংখ্যা বেড়ে চলে। ওই সুন্দর মুখ আর কাউকে দেখাতে দেব না—এই প্রত্যয়ে অ্যাসিড ছুড়ে দিতে হাত কাঁপে না ছেলেটির। এমনিতেও সুন্দর মুখের মেয়ে কোনও কাজে সফল হলেই বলা হয়ে থাকে—সুন্দর মুখের জন্যই আজ এত বাড়বাড়ন্ত। মনীষা পৈলান, লক্ষ্মী আগরওয়ালের সংখ্যা বাড়ছে কি আজও?
মেয়েদের প্রতি মাসে যে ঋতুস্রাব হয়, আর সেই সময় ঠাকুর ঘর বা রান্নাঘরে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়, এই ধারা ছেলেবেলা থেকেই চলে এসেছে আমাদের। এখন অবশ্য পিরিয়ডস নিয়ে ছেলে-মেয়ে বন্ধুর খোলাখুলি আলোচনা হয়, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলের মধ্যেও এই নিয়ে কথা বা আলোচনা নিষিদ্ধ কিছু নয়। স্বাভাবিক ঘটনাকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যখনই ভাবি, তখনই শুনি গুজরাটের এক কলেজে মেয়েদের অন্তর্বাস পরীক্ষা করা হবে যাতে তারা ঋতুকালীন সময়ে রান্নাঘরে না ঢোকে। এরই বিপরীতে যাদবপুর কলেজে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে প্রকাশ্যে যে আন্দোলন চলেছিল সেই নিয়েও কত ছি ছি। কারণ ওই একই, ট্যাবু। স্ত্রী অঙ্গের গোপনীয়তা জরুরী।
এরই পাশাপাশি চলেছে শিশু নির্যাতনের ঘটনা। স্কুলে দারোয়ান বা পুল কার চালকের হাতে, এমনকি শিক্ষকের হাতেও। বেবিফ্রকে লেগে যাচ্ছে রক্তের দাগ। এমনকি শিশু পুং জাতি হলেও বাদ যাচ্ছে নির্যাতকের হাত থেকে। বিকৃত রুচির ওই কদর্য লোকগুলির কাছে নরম, ফুলের মতো কোমল মাংসপিণ্ডের স্বাদ উত্তেজক লাগে। যাদের জন্য তৈরি হয়েছে পকসো আইন, যে আইনের সঠিক মূল্যায়ন বা প্রয়োগ সঠিক ভাবে হয়নি বা হচ্ছে না এখনও। বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ কি ছিল না আগে? কাকু, জেঠু, দাদুদের হাতে কচি মেয়েগুলো কি পিষ্ট হয়নি গোপনে? পরিবারের লজ্জা ভেবে সবাই চুপ করে গেছে। এখনও যেমন স্কুলে সেই শিশুটিকেই বকাঝকা করা হয় প্রথমে, কেন তুমি অন্ধকারে গেছিলে? কেন একা একা ছিলে? ভয়, ত্রাস, আতঙ্ক—নিজের পরিবার ও নির্যাতক দুপক্ষের থেকেই তার সুকুমার মনে সঞ্চারিত হয়। ভবিষতে সে হয়ে ওঠে পুরুষ বিদ্বেষী।
শুধু কি শিশু? মায়েরা বাদ পড়েছেন? বাদ পড়েছেন সেই সত্তোরর্ধ্বা কনভেন্টের সন্ন্যাসিনী? বাদ পড়েছিলেন সোনারপুরের ষাটোর্ধ্বা প্রৌঢ়া? এরকম উদাহরণের সংখ্যা কম, কারণ আর কিছুই না, এ সমাজ আজও বয়স্কা নারীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ। লজ্জা লুকোবে কোথায় তারা? মা, কাকিমাকে ধর্ষণ করা হলে সেই লজ্জা যে সেই পরিবারের, মুখ দেখাতে পারবে কেন তারা? ধর্ষক চুলোয় যাক। চাপা পড়ে থাক আপাতত এই ঘটনা। তাছাড়া বয়স্কা, যৌবন অস্তমিত, অসুন্দর এক নারীর প্রতি তার গোপনাঙ্গের প্রতি কারর ওঅত মনোযোগ থাকার কথাও না।
এরপরেই এল সেই অব্যর্থ অস্ত্র। মি টু। ২০১৭-র ১৫ই অক্টোবর থেকে উত্তর আমেরিকায় আছড়ে পড়ল মি টু। এতদিনের ঢাকাচাপা দিয়ে রাখা যত গোপন লজ্জা, যৌনহয়রানির শিকার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এসে আত্মস্বীকারোক্তি। মেয়েরা নীরবতা ভেঙে বলছে আমিও। আমারও হেনস্থা হয়েছে।
হ্যাশট্যাগ মি টু, ক্যাম্পেন। অনেক পুরুষও এই ক্যাম্পেনে ভাগ নিয়েছেন। অনেকে আবার বলেছেন এই দায়সারা ভার্চুয়াল ক্যাম্পেনের কাজ কী? নিজের নির্যাতনের কথা বললেই তো হয় না, আক্রামককে চিনিয়ে দেওয়াও জরুরি। এক্ষেত্রে তা হচ্ছে না তো! প্রকৃতপক্ষে এই মি টু ক্যাম্পেনের কাজ হল গরিব, মধ্যবিত্ত, ধনী সকল শ্রেণীর মেয়েদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে বা হয়েছে, তার ছবিটা স্পষ্ট করে সকলের সামনে তুলে ধরা।
পরবর্তী পর্ব নারীর বাস্তবতা। যার শুরুতেই রয়েছে রান্নাঘরের কথা। রেড ইন্ডিয়ানরা নাকি বলে থাকেন কোন বাড়িতে কত সুখ, তা তার রান্নাঘর দেখে বোঝা যায়। অথচ আগে আমাদের দেখা রান্নাঘরটিই ছিল সবথেকে নোংরা, তেলচিটে, ঝুলকালি মাখা। যদিও এখনকার ওপেন কিচেন গ্যাজেট সমৃদ্ধ, মডিউলার। রান্নাঘরের কথা লিখতে লেখক অবধারিত ভাবে ঠাকুর বাড়ির রান্নার কথা আলোচনা করেছেন, এসেছে আমিষ ও নিরামিষ রান্নার কথাও। শহর, গ্রাম, রাজ্যভেদে রান্নার প্রাকারান্তরের কথাও এসেছে। কবিতা সিংহের লেখায় রান্না নিয়ে ডবল স্ট্যান্ডার্ড ফুটিয়ে তোলার উল্লেখ করেছেন লেখক।
রান্নাঘরের পলটিক্সের প্রসঙ্গের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব রান্নাঘরও এসেছে আলোচনায়। রিসাইক্লিং অর্থাৎ সব্জির খোসা ফেলে না দিয়ে ভাজা বা ছেঁচকি। লেফট ওভার দিয়ে নিউ রেসিপি। রসগোল্লার হাঁড়ি এলে রসটা চাটনির জন্য রেখে হাঁড়িতে গাছ লাগানো, যা কিনা আমি এখনও করি। হরলিক্সের শিশি ধুয়ে শুকিয়ে রেখে দেওয়া, যাতে থাকবে নাড়ু, মোয়া, আচার, জ্যাম, জেলি আর সস। পুরনো ছেঁড়া শাড়ি দিয়ে কাঁথা আর হাতমোছার ন্যাকড়া।
যেভাবে রান্নাঘরের বিশ্বায়ন হয়েছে, সেভাবে মেয়েদের পোশাকেও বিপ্লব এসেছে। শাড়ি হয়ে গেছে তোলা পোশাক, জিনস, টপ, কুর্তি, লেগিংস, মিনি, মিডি, ম্যাক্সি কোনও কিছুতেই আর বাঙালির আপত্তি নেই। খোলামোলা পোষাকেও সে এখন স্বচ্ছন্দ। যে বাঙালিনি আক্ষরিক অর্থেই ছিল কুড়িতে বুড়ি, চল্লিশ পেরলেই যে ম্যাটম্যাটে রঙের শাড়ি পরত, ষাটে এসে সে এখন আরও উজ্জ্বলতর হয়েছে। চাকুরে কন্যার স্ট্রেস বেড়েছে, কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মী বা বসের সুযোগ সন্ধানী হাতগুলো আরও তীব্র হয়েছে। এক্ষেত্রেও রয়েছে আইন, যে আইন এড়িয়ে চলাই সহজাত প্রবৃত্তি, নইলে চাকরি বাঁচে না! নিরাপত্তা-অনিরাপত্তার মাঝে পড়ে তাকে ঘর-সংসারের খেই ধরতে হচ্ছে, একচুল এদিক ওদিক হলেই শুনতে হচ্ছে, চাকরি করা মেয়েদের সংসার হয় না। আর যখন এল লকডাউন, স্বাভাবিক ভাবেই পরিচারক/পরিচারিকার ছুটি হয়ে গেল, ঘরের কাজ ভাগ করে নিতে শিখল পুরুষ, নারী ও ছোটরাও। বাসন মাজা, ঘর মোছা, রান্না করার বৃত্তে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে গেল দিনগুলো। রেস্তোরাঁ বন্ধ, বাড়ি বসে মুখরোচক খাবার রান্নার ভার পড়েছে মেয়েদের ওপর। যারা গৃহবধূ, স্বামী, সন্তান চলে গেলে তারা এতদিন নিজস্ব স্পেসটুকু উপভোগ করতে পারতেন, সেই সময়ে তাদের প্রাইভেসিটুকুও হারিয়েছিল। আর যারা কর্মরত, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, তাদের ঘরের আর বাইরের কাজ সামলাতে সামলাতে স্ট্রেস বাড়ল এতটাই যে সংসারে নিত্য খিটিমিটি লেগে রইল। আর তার জন্য দায়ী হল মেয়েরাই।
নারী আর সম্পর্ক পর্বে প্রথমেই এসেছে ঋতুমতী হওয়ার প্রথম দিনের কথা। যেভাবে এককালে মেয়েদের মাসিক হলে ছেঁড়া কাপড় ব্যবহার করে সেগুলিকে কেচে লোকচক্ষুর আড়ালে শুকিয়ে আবার ব্যবহার করতে হত, আজকের দিনে অন্তত স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য হওয়ায় সেই অস্বাস্থ্যকর প্রথা বন্ধ হয়েছে। কাগজে মুড়ে ন্যাপকিন কিনে নিয়ে আসার প্রথা যদিও চালু রয়েছে। অথচ এক প্যাকেট ডায়াপার কিনতে কাগজে মুড়ে লজ্জা ঢাকতে হয় না।
সেযুগের প্রেম মানে আমার চোখে আমার দেখা দাদুদিদার প্রেম। মৃতু পর্যন্ত যা অটুট ছিল। কয়েকদিনের ব্যবধানে দুজনেই স্বর্গে গেছেন। ঠিক সেভাবেই লেখকও নিজের দাদুদিদার প্রেমের প্রসঙ্গ এনেছেন। মা, মাসিদের জেনারেশনে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়, একদিকে ছেলেরা, অন্যদিকে মেয়েরা বসত। এখনকার মতো কাঁধে হাত দিয়ে বন্ধু, সহপাঠীদের (ছেলে ও মেয়ে একত্রে)ঘুরে বেড়াচ্নো ছিল কল্পনার অতীত। চায়ের দোকান, ক্যান্টিনে আড্ডা, ছাদ থেকে চিরকুট ফেলা, কাউকে দিইয়ে প্রেমপত্র পাঠানো, তাও আবার বইয়ের মধ্যে, এসব ছিল একসময়ের প্রেমের ইকুয়েশন। শোয়া শব্দটি ছিল নিম্ন গোত্রের। সাইকেলের হ্যান্ডেলে প্রেমিকাকে বসিয়ে ঘুরে বেড়ানো থেকে সিনেমায় বসে অন্ধকারে চুম্মাচাটির পরবর্তী স্টেজে এল ব্লু ফিল্মের উত্তেজনা। আর নুনশো-এ খারাপ ছেলেদের ভিড়। এই পর্বে লেখক নিজের ব্যক্তিগত বৃত্তের ছোট ছোট আবেগঘন চিত্র তুলে ধরেছেন সম্পর্কের সুতো ধরে।
একসময়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স ছিল ষোল, আঠেরো। তিরিশ পেরিয়ে গেলে তার আর বিয়ে হত না। ভাঙচুর হয়েছে আজ বয়সের সীমারেখায়। কিন্তু যা এখনও হয়নি বিয়ের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতায়। টিভিতে, সিনেমায়, রোজকার কথোপকথনে, সংসারে, সমাজে মেয়েদের বিয়ে করতেই হবে—এই নিয়ম লঙ্ঘন করা যাবে না কিছুতেই। আইবুড়ো থাকার চেয়ে তাদের অসুখী দাম্পত্যেও মুখ গুঁজে পড়ে থাকাই শ্রেয়। মাথার ওপর পিতা, স্বামী আর ছেলেসন্তান থাকা বাধ্যতামূলক এখনও।
এই পর্বের শুরু যেমন হয়েছিল ঋতুমতী হওয়ার আখ্যান দিয়ে, শেষ হচ্ছে মেনোপজের বৃত্তান্তে। মেনোপজ শব্দটি আমাদের যুগে ছিল অচেনা। উঠে গেছে—এই বাক্যবন্ধে বুঝতে হত সেই মেয়েটি এখন বৃদ্ধা হয়েছে, বা বলা ভাল, জড় বস্তুতে পরিণত সে। তার দিকে এখন আর পুরুষের কুনজর লাগবে না, তার গোপনাঙ্গ নিয়ে কৌতূহল হারিয়েছে সবাই। সে এখন পুজোর ঘরে, রান্নাঘরে অবাধে যাতায়াত করবে। সে এখন পবিত্র। ওগো যৌনতা, এখনই তোমার বন্ধ কর না পাখা…
প্রেম হারানো, যৌনতা হারানো মেনোপজ স্টেজে এসে যাওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ তার ঋতুবন্ধ হওয়া। আর পুরুষের পজ? কথায় বলে আশি বছরেও পুরুষের কাম নিবৃত্তি হয় না। সত্যিই কি তাই? আদপে এ হল মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করার ছল। বয়স কাউকে ছাড়ে না।
খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন সৃষ্টিসুখের অন্যান্য বইয়ের মতোই বানানের ত্রুটি বা মুদ্রণ প্রমাদহীন। চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন দেবাশীষ সাহা। পেপারব্যাক ও হার্ডবাউন্ড কভার, দুরকম বিকল্পই পাঠকের আয়ত্বে রয়েছে। পুরো বই জুড়ে কিঞ্চিৎ অলংকরণের ছোঁয়া থাকলে বইটি আরও দৃষ্টিসুখকর হত নিঃসন্দেহে।
সবশেষে বলি, এই আলোচনার বেশিরভাগ সূত্র বা বক্তব্য ও পঙক্তি লেখকের লেখা থেকেই নেওয়া। নিজস্ব বয়নে লিখেছি উদ্ধৃতি চিহ্নটুকু ছাড়া। আর পরিশেষে বলি, খণ্ডিতার বিশ্বদর্শন এককথায় সংগ্রহযোগ্য তো বটেই, সময়ানুসারে সাজিয়ে রাখা মেয়েদের নিজস্ব বৃত্তান্তের ইতিহাসও। অস্বীকার করার উপায় নেই খণ্ডিতাদের। আর অবশেষে বলি, শেষ বিভাগটি অর্থাৎ নারী ও সম্পর্ক বিভাগটিকে আমি শুধুমাত্র নারীবাদী লেখার গণ্ডিতে আটকে রাখতে পারিনি। এখানে অর্থাৎ খণ্ডিতার বিশ্বদর্শনে কিছুটা হলেও বাহুল্য এনেছে। তা বর্জন করা যেত কিনা, বুঝতে উৎসাহী পাঠককে অনুরোধ করব বইটা পড়ে দেখতে।
ছবি সৌজন্য: Getty Images
তুষ্টি হুগলি জেলার শেওড়াফুলির বাসিন্দা এবং বোটানিতে স্নাতক। গদ্য ও কবিতা লেখায় সমান আগ্রহ। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিন - ভিজে যাওয়া গাছ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ও এরিসেডের আয়না। গদ্যের বইয়ের নাম পদাবলি।