banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

প্রবন্ধ: সমানাধিকার এখনও অধরা

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

the great indian kitchen

রান্না করতে করতে, বাসন মাজতে মাজতে, পারফেক্ট গৃহবধূর ভূমিকায় নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে নিতান্তই অস্তিত্বের সংকটের ক্লান্তিকর অবস্থান থেকে মেয়েটি পালিয়ে যায়। কেরালা শিক্ষিত প্রগতিশীল রাজ‍্য। কিন্ত গৃহের চৌকাঠ পেরিয়ে  অন্দরে প্রবেশ করলেই চিরাচরিত নারীবিদ্বেষের আবহাওয়া। পরিচালক বেবির “দ‍্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন” (২০২১) আর রায়ের চারুলতা”র (১৯৬৪) মধ্যে মিল চোখে পড়ে। দূরবীন নিয়ে নিঃসঙ্গ নারী প্রটাগনিস্ট জানালার বাইরের দুনিয়ার ঝলক দেখে। সিকোয়েন্সের নিঃস্তব্ধতা দর্শককে ক্লান্ত করে। চারুলতা এলিট ক্লাসের প্রতিনিধি। তাকে রান্না করতে বা বাসন মাজতে হয়না। হয়তো স্বামীর সঙ্গ একমাত্র কাম‍্য ছিল। বেবির প্রটাগনিস্ট নামহীন। সে আদর্শ গ্রেট ইন্ডিয়ান মিডিলক্লাস শিক্ষিত গৃহবধূ। ছবিতে নারীবিদ্বেষ এবং পুরুষতন্ত্র অত‍্যন্ত সাটল। অত‍্যন্ত সাবলীলভাবে পরিচালক তা দেখিয়েছেন ছোট ছোট নিত‍্য ঘটনায়। উচ্চশিক্ষিত স্বচ্ছল পরিবারে নারীবিদ্বেষ এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে  চলে যায় অজান্তে। পুরুষতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে নারীরা। চারুলতায় এক অসাধারণ ফ্রিজড শটে ছবি শেষ হয়েছিল। 

সল্টলেকে ছিমছাম বাড়ি। আড্ডা জমেছিল বৈঠকখানায়। কাকু, কাকিমা অর্থাৎ বন্ধু অমলকান্তির বাবা মা পেশায় চিকিৎসক। বামপন্থী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। তখন বাঙালি চাকরিজীবিদের বেশির ভাগ বামপন্থায় আস্থা রাখতেন। সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি। তখন বই পড়া এবং তা নিয়ে আলোচনার রেওয়াজ ছিল। কথা প্রসঙ্গে কাকিমা বলেন যে, “প্রেমচন্দ বিরাট মাপের লেখক, কিন্তু মেয়েদের কথা সেভাবে বলেননি”। কাকু ছিলেন ডাক্তার। খানিকটা আত্মগতভাবে উত্তর দিলেন যে, “মুন্সিজী সমাজসচেতনতার কথা লেখেন, মেয়েদের কথা আলাদা করে লেখার মতো অবসর তাঁর নেই”। বেশ অবাক হওয়ার পালা। সমাজসচেতনতা ব্যাপারটা তাহলে পুরুষতান্ত্রিক। 

সমরেশ বসুর “শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে”তে পড়া গেল  কারখানার শ্রমিকের মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে বউকে ঠেঙ্গানোর র‍্যশানাল। সাবঅল্টার্ন আরগুমেন্ট। মেহনতী মানুষ সমস্তদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর অপমানিত হবার পর মাতাল হয়ে ঘরে ফিরে ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি। 

১৯৪৯ সালে সিমোন দি বোভোয় প্রকাশ করেন “দ্য সেকেন্ড সেক্স”। ফেমিনিস্ট আন্দোলনের তাত্ত্বিক দিকের প্রথম লেখা। সিমোন লেখে “নারী সংস্কৃতির সৃষ্টি”‘। নারীর শারীরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক অবস্থান নির্ধারণ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। বেশ আলোড়ন ফেলে দেয় বইটি। ভাটিকান “ইনডেক্স লিব্ররম প্রহিবিটোরম”এ বইটি ইনক্লুড করেন কারণ চার্চকে বেশ করে সমালোচনা করা হয় নারীর অবস্থান এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা বলায়। 

ডাক্তারকাকুর মতো অনেকে মনে করেন যে মানবসভ্যতা এবং পুরুষতন্ত্র এক। পবিত্রগ্রন্থে ইভের উৎপত্তি হয় আদমের অস্থি থেকে। উৎপাদনে নারীর ভূমিকা, গৃহকর্মে নারীর ভূমিকা ইত‍্যাদিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়ার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। নারীর ক্ষমতার বিপক্ষে যে যুক্তি প্রায়ই শোনা যায় তা হল নারীর দীর্ঘ সময় গর্ভাবস্থা। অন্য যুক্তি শারীরিক দুর্বলতা। পুরুষের চোখ দিয়েই নির্ধারণ করা হয়েছে নারীর অবস্থান। সেইজন্য নারীকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় পজিশনে। দ্য সেকেন্ড সেক্স।

সিমোন মেমসাহেব ফ্রয়েড সাহেবের লেখাকে একেবারে তুচ্ছ করেন, এঙ্গেলস সাহেবের লেখাকে তুচ্ছ করেন। বৃদ্ধতম প্রপিতামহ পিথাগোরাসকেও রেয়াত করেননি। অত্যন্ত সমালোচিত হয় সিমোনের তত্ত্ব সেই চল্লিশের দশকে। পরের দশক গুলোতে ফেমিনিস্ট আন্দোলন বেশ জোরকদমে শুরু হয় পশ্চিমের দেশে। ফেমিনিস্ট যুক্তির ত্রয়ী এই বইটির দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রেরিত হন, জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে। বেটি ফ্রিডন, কেট মিল্যট  এবং নিঃসন্দেহে জারমেইন গ্রীর।

আজকের দিনে সিবিএসসি স্কুলের সেভেন এইটের বাচ্চারা পড়ে সেক্স আর জেন্ডারের পার্থক্য। তারা মুখস্থ করে “হোয়াট ইজ স্টিরিওটাইপ”। “দ্য সেকেন্ড সেক্স” হল সেই বোঝার শুরু চল্লিশের দশক থেকে। সিমোন দেখেছিলেন নারী পুরুষের সমানাধিকার দিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যর্থতা। প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা। নব্বই এর দশক থেকে ইউরোপের পার্লামেনটগুলোতে নারী সাংসদের সংখ্যা সতত বর্ধমান। কিন্তু ২০২২ সালে আজও নারী-পুরুষের সমানাধিকার অধরা।

simone de beauvoir
১৯৪৯ সালে সিমোন দ্য বোভোয় প্রকাশ করেন "দ্য সেকেন্ড সেক্স"।

সিমোন দ‍্য বোভোয়ার “দ‍্য সেকেন্ড সেক্স” বইটি ফেমিনিস্ট আন্দোলনের সেকেন্ড ওয়েভে তত্ত্বগত রসদ যুগিয়েছিল। প্রথম ওয়েভ নারীদের ভোটের অধিকারের লড়াই ছিল। দ্বিতীয় ওয়েভে লিঙ্গবৈষম‍্য, পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে ভূমিকা, কর্মক্ষেত্রে সমানাধিকার, প্রজননের অধিকার মুখ‍্য ছিল। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল ষাট এবং সত্তরের দশকের আন্দোলন। থার্ড ওয়েভ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে। মোটামুটি দ্বিতীয় ওয়েভের এক্সটেনশন। ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের ফোর্থ ওয়েভ – #Me Too. এখানে ডিজিটাল মিডিয়ার ব‍্যপক ব‍্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সমান সুযোগের, বেতনের জন‍্য আন্দোলন। আরও  গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে যৌনহেনস্থাকারীর নাম করে তাদের বিরুদ্ধে মোর্চা তৈরি করা। অ‍ামেরিকা থেকে আন্দোলন ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। এক মানহানির মামলায় ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে কেস ডিসমিস করে বিচারক লেখেন,”as the right of reputation cannot be protected at the cost of the right of life and dignity of woman as guaranteed in the Indian Constitution.

একটা ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে মুম্বই অফিসের কনফারেন্স রুমে ল‍্যাপটপ রেখে এক বড়কর্তার কেবিনে হাই- হ‍্যালো বলতে যাওয়া। এইচ আর হেডও সেখানে হাজির। একই ফ্লাইটে আমরা ছিলাম। ঘন্টাখানেক পর, ধূমপানের বিরতিতে মুষলধারে বৃষ্টি। শোনা গেল যে যৌন হেনস্থার জন‍্য সেই বড়কর্তাকে ইস্তফা লিখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক এথিকস বিভাগে প্রমাণসহ সরাসরি অভিযোগ জানানো হয়েছিল। একাধিক অভিযোগ। আইনি জটিলতা এড়াতে দ্রুত ব‍্যবস্থা নেওয়া হয়। অন‍্য পক্ষের সঙ্গে কী ডিল হয় জানা নেই। বহুজাতিক সংস্থা, অতএব যৌন হেনস্থায় জিরো টলারেন্স। কয়েকজন সহকর্মীর চাকরি গেল। কিন্তু নেমিং শ‍্যেমিং হল না। আইনি পদক্ষেপও কিছু নেওয়া হল না। 

ফেরা যাক বিষয়ে। ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট আদতে অ‍্যাংলো স‍্যাকসন এবং বামপন্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গ নারীদের ভোটের অধিকার ১৯২০ সালে দেওয়া হয় কিন্তু অ‍্যাফ্রোঅ‍্যামেরিকান নারীদের আরও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়। পাশ্চাত্যের নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রব্লেম স্টেটমেন্ট সহজে অনুধাবন করা যায়।

পশ্চিমের মতো নারী পুরুষের সমান অধিকারের আন্দোলন ভারতে সেভাবে দেখা যায়নি। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে, আজাদ হিন্দ ফৌজে চল্লিশের দশকে নারীদের কিন্তু সমানভাবে দেখা গেছে পুরুষের পাশে। স্বাধীনতার পর নারীপুরুষের ভোটের অধিকার স্বীকৃত হয়। আলাদা করে নারীদের লড়াই করতে হয়নি। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর এবং আরও অনেকে আইনি পথে কিছু সংস্কার তার আগে নিয়ে এসেছিলেন। 

কিছু নারী ক্ষমতার উচ্চতম আসনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন কিন্তু সেগুলি ব্যতিক্রম। পুরভোটে, পঞ্চায়েত ভোটে  দেখা যায় তদ্বির চলে এবং টিকিট পেয়ে যান কোনও নেতার স্ত্রী, কন্যা অথবা পুত্রবধূ। রিমোট কন্ট্রোলে কাজ চলে। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। আমরা বলি যুগাড়। কল্যাণমুখী পলিসি ব্যর্থ হয়। 

যদিও আমাদের দেশে কিছু নারী তথাকথিত গ্লাস সিলিং ভেঙে ক্ষমতার উচ্চতম পদে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছেন, তবুও  লিঙ্গবৈষম্য, ভায়োলেন্স, বাল্য বিবাহ, ভ্রূণহত‍্যা, কন‍্যাসন্তান হত‍্যা, পণপ্রথা, বধূহত‍্যা, ধর্ষণ ঘটে চলে। মেয়েদের আচরণ নিয়ে এখনও পঞ্চায়েত বসে। উচ্চপদে অধিষ্ঠিত মানুষ মতপ্রকাশ করে বসেন মেয়েদের চলন-বলন নিয়ে অকারণে। যেন একইসঙ্গে আমরা বেশ কয়েকটি শতাব্দীতে বাস করছি। পুরুষতন্ত্র বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রূপে ছড়িয়ে আছে। পিতৃতন্ত্রের মধ‍্যে আবার নারীর পাওয়ার স্ট্রাকচারও আছে। সেই হায়ারার্কি পুরুষ তন্ত্রকে মজবুত করে।

উপসংহারে এইটুকুই বলা যে আইনসভায় নারী সদস‍্যের সংখ‍্যা বৃদ্ধি জরুরি। উইমেন্স রিজার্ভেশন বিল এখনও লোকসভায় পাস হয়নি। বিলটি সর্বসম্মতিতে পাস হওয়া জরুরি। নারীর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে হয়তো অনেক সমস‍্যার সুষ্ঠ সমাধান হয়ে বৃহত্তর কল‍্যাণ হবে। লোকসভায় এবং বিধানসভায় এক তৃতীয়াংশ নারী আইনপ্রণেতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

সিমোন দ‍্য বোভোয়া ষোড়শ শতকের “সেন্ট টেরিসা অফ আভিলা” কে মনে করতেন ইতিহাসের একমাত্র নারী যিনি সম্পূর্ণ নিজের শর্তে জীবন কাটিয়েছিলেন। সমসাময়িক  মীরাবাই এর কথা  জানা থাকলে সিমোন নিঃসন্দেহে তাঁর নামও উল্লেখ করতেন।

“কোই রোকে নহি, কোই টোকে নহি,
মীরা গোবিন্দ গেপাল গানে লগি…”

ছবি সৌজন্য: Wikimedia Commons

অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কাজের ক্ষেত্র তথ‍্যপ্রযুক্তি। কিছুদিন স্মার্ট সিটিতে কাজ করেছেন। আড্ডাবাজ মানুষ। বইপড়া আর সিনেমা দেখা নেশা। কাজের সুত্রে সলিউশন ব্লুপ্রিন্ট, স্পেক্স, প্রপোজাল ইত্যাদি অনেক লিখেছেন। ইদানিং বাংলায় প্রবন্ধ, গল্প, ফিল্ম রিভিউ লেখার একটা চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com