Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শুধু বিঘে দুই: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের কবিদের কবিতা׃ একটি অসম্পূর্ণ লেখচিত্র

বাংলালাইভ

নভেম্বর ৩০, ২০২৩

Gautam Mondal article Sudhu Bighe Dui
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

গৌতম মণ্ডল

Gautam Mondal

কিছুই থাকে না দেখো, পত্র পুষ্প গ্রামের বৃদ্ধরা
নদীর নাচের ভঙ্গি, পিতলের ঘড়া আর হুঁকোর আগুন
উঠতি মেয়ের ঝাঁক একে একে কমে আসে ইলিশের মৌসুমের মতো
হাওয়ায় হলুদ পাতা বৃষ্টিহীন মাটিতে প্রান্তরে
শব্দ করে ঝরে যায়। ভিনদেশি হাঁসেরাও যায়
তাদের শরীর যেন অর্বুদ বুদ্বুদ
আকাশের নীল কটোরায়।

কিছুই থাকে না কেন? করোগেট, ছন কিংবা মাটির দেয়াল
গাঁয়ের অক্ষয় বট উপড়ে যায় চাটগাঁর দারুণ তুফানে
চিড় খায় পলেস্তারা, বিশ্বাসের মতন বিশাল
হুড়মুড় শব্দে অবশেষে
ধসে পড়ে আমাদের পাড়ার মসজিদ!

চড়ুইয়ের বাসা, প্রেম, লতাপাতা, বইয়ের মলাট।
দুমড়ে মুচড়ে খসে পড়ে। মেঘনার জলের কামড়ে
কাঁপতে থাকে ফসলের আদিগন্ত সবুজ চিৎকার।
ভাসে ঘর, ঘড়া-কলসী, গরুর গোয়াল
বুবুর স্নেহের মতো ডুবে যায় ফুল তোলা পুরনো বালিশ।
বাসস্থান অতঃপর অবশিষ্ট কিছুই থাকে না
জলপ্রিয় পাখিগুলো উড়ে উড়ে ঠোঁট থেকে মুছে ফেলে বাতাসের ফেনা। (বাতাসের ফেনা)

উদ্ধৃত কবিতাটি কার লেখা, আমাদের বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না। হয় কি? আমাদের অনেকেরই প্রিয় কবি আল মাহমুদের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘সোনালি কাবিন’-এর দ্বিতীয় কবিতা এটি। ‘সোনালি কাবিন’ কোনও সন্দেহ নেই, বাংলা কবিতায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কিন্তু শুধুই কি ‘সোনালি কাবিন’? বই হিসেবে আল মাহমুদের ‘কালের কলম’, ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, বা ‘আরব্য রজনীর রাজহাঁস’ও স্বতন্ত্র একটা স্থান দাবি করে। তবে আল মাহমুদকে এ-বঙ্গের কবিতারসিক মানুষেরা ‘সোনালি কাবিন’ থেকেই লক্ষ করে আসছেন। আমরাও কবিতা লেখার শুরুর দিনগুলি থেকে হাতের নাগালে যতটুকু পেয়েছি, লক্ষ করেছি। পেরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা অনেকেই বাংলাদেশের কবিতা বলতে শুধু আল মাহমুদ বা শামসুর রাহমানের কবিতা বুঝি একথা সত্য, আল মাহমুদ যে স্তরের কবি, ভাবনা ও ভাষার দিক থেকে, ওই স্তরে বাংলাদেশের আর কোনও কবি বিচরণ করেননি। কিন্তু আর কেউ কিছু লেখেননি বললে ভুল হয়ে যাবে, বড় ভুল। শহীদ কাদরী, আনু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ ও আবুল হোসেনের কবিতার কথা বলতেই হবে। বলবও। এঁদের কবিতায় হৃদয়ের পাশাপাশি মননের আলোও লক্ষ করা যায়। তবে বাংলাদেশ যেহেতু একদিনে তৈরি হয়নি, বহু ঘটনা ও রক্তপাতের ভিতর দিয়ে তা ধীরে ধীরে একটা রূপ পেয়েছে সেইজন্যই হয়তো বাংলাদেশের কবিতায়, বেশিরভাগ কবিরই কবিতায়, মেধার তুলনায় আবেগ ও উচ্ছ্বাস বেশি লক্ষ করা যায়। যে দেশকে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে বার বার যেতে হয়েছে সেই দেশের কবিতায় সেসবের যে ছাপ থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। আছেও। ছিল। কিন্তু আটের দশকের পর থেকে বাংলাদেশের কবিতা বাঁক নিতে শুরু করে। কবিতা সরে আসে সমষ্টির জায়গা থেকে ব্যক্তির জায়গায়। ব্যক্তির নিজস্ব আলো ও অন্ধকার। অ্যালিয়েনেশন। নৈঃশব্দ্য। বোধ। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, কুমার চক্রবর্তী, ব্রাত্য রাইসু ও মাসুদ খানের কবিতায় দেখি ব্যক্তিমানুষের বোধ ও বিচ্ছিন্নতা। নাগরিক নির্মেদ উচ্চারণ। নয়ের দশকের কবিতাও সেই পথ ধরে আরও কিছুটা এগিয়ে গেছে। মজনু শাহ, মুজিব ইরম, শামীম রেজা, সরকার আমিন ও বিষ্ণু বিশ্বাসের কথা বলতেই হয়। বলবও। কিন্তু আজকের প্রসঙ্গ তা নয়, তরুণ কবির কবিতা।

Sudhu Bighe Dui 6th edition

যাঁদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশে, তাঁরাই, তাঁদের কবিতা এ নিবন্ধের মূল অবলম্বন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতাকে একটা ইনডেক্স হিসেবে ধরতে চাইছি কেন? ধরতে চাইছি এ কারণেই, আসলে ৭১-এ স্বাধীনতা লাভের পরই বাঙালি জাতিসত্তা সার্বিকভাবে একটা রূপ পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফলত যাঁদের জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁদেরকে টালমাটাল সময়ের মধ্য দিয়ে ততটা যেতে হয়নি, দেখতে হয়নি ভাষার জন্য জাতির লড়াই, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার পরও বাংলাদেশকে অস্থিরতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে, স্বৈরাচারী শাসককে মেনে নিতে হয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বাধীনতালাভের পরবর্তী সময় ছিল তুলনামূলকভাবে অনেকটা স্থির। শান্ত। এর প্রভাব পড়ে কবিতাতেও। কবিতা তুলনামূলক অনেকটাই উচ্ছ্বাসমুক্ত হয়। যে আবেগ এবং উচ্ছ্বাস পঞ্চাশে ষাটে সত্তরে এমনকী আশি নব্বইতেও দেখা যাচ্ছিল তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে আসে শূন্য দশকের কবিদের কবিতায়। শূন্য দশকের কবিদের একটা বড় অংশের মধ্যেই আমরা পাই সংহত আবেগের পাশাপাশি মেধার ব্যবহার। অন্য দশকের কবিদের কবিতায় তুলনায় শূন্য দশকের অধিকাংশ কবিতা তুলনামূলকভাবে অনেক সংহত। নির্মেদ। তবে উচ্ছ্বাসময় কবিতা যে লেখা হয়নি, এসময়ের কবিরা কেউ লেখেননি সেকথা হলফ করে বলা যাবে না, বলছিও না। অনেকের কবিতাতেই আবেগের আতিশয্য রয়েছে, রয়েছে কথার ফেনা, কিন্তু একটা বড় অংশের মধ্যে যা নেই তা হল এই তারল্য। উচ্ছ্বাস। প্রক্ষোভ।

শূন্য দশকের অনেকেই ছন্দে লিখতে পছন্দ করেন, লেখেনও কিন্তু একটা বড় অংশের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, প্রচলিত ছন্দের বাইরে লেখা। প্রচলিত ছন্দের বাইরে আগেও লেখা হয়েছে, লিখেছেন, কিন্তু একটা বড় অংশ, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, এই প্রথম ছন্দের বাইরে দাঁড়িয়ে কবিতা লিখতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

বাংলাদেশের শূন্য দশকের কবিদের, যেটুকু পড়ার সুযোগ হয়েছে, মনে হয়, আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হল, অধিকাংশের কবিতায় কেন্দ্রীয় কোনো ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় কোনো চিন্তাসূত্রের পরিবর্তে রয়েছে ছোটো ছোটো অনেক ভাবনা। ইমেজ। একটা ইমেজের সঙ্গে পরবর্তী ইমেজের ভিতর রয়েছে প্রচুর দূরত্ব। গ্যাপ। ফলত কবিতা রয়েছে শুধু বহুরৈখিক নয়, বহুকৌণিকও। কবিতার পক্ষে এটি, বলাই বাহুল্য, একটি পজিটিভ দিক। এই প্রসঙ্গে আরও একটা বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতেই হবে। বাংলাদেশের শূন্য দশকের কবিরা ছড়িয়ে রয়েছেন সমগ্র বাংলাদেশে জুড়ে এমনকী বাইরেও, বিদেশে, কিন্তু বেশিরভাগই কোনো না কোনো সূত্রে বসবাস করেন ঢাকায়। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। একটি কসমোপলিটন শহর। কসমোপলিসের যা যা বৈশিষ্ট্য সবই রয়েছে ঢাকায়। তাছাড়া পঞ্চাশের দশকের ঢাকা আর শূন্য দশকের ঢাকা, খুব স্বাভাবিকভাবেই এক নয়। সারা পৃথিবীজুড়ে এই সময় যা যা হয়েছে তার কমবেশি অভিঘাত ঢাকাতেও আছড়ে পড়েছে। প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার। মোবাইল। ইন্টারনেট। ফেসবুক। হোয়াটসঅ্যাপ। কবিরাও খুব স্বাভাবিকভাবে এর মধ্যে জড়িয়ে গেছেন, পেয়েছেন একটি নাগরিক মন। নাগরিক মনের প্রতিফলনও দেখা গেছে কবিতায়। কারও কারও কবিতায় রয়েছে নাগরিক উচ্চারণও। বিচ্ছিন্নতা। একাকীত্ব। ক্লান্তি। অবসাদ। কিন্তু সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয়, বাংলাদেশের তরুণ কবিরা প্রায় সবাই ঢাকাতেই বসবাস করলেও সকলেই কিন্তু নাগরিকতায় আবদ্ধ নন। অনেকের কবিতাতেই রয়েছে গ্রামবাংলা। বাংলার নিসর্গ। পেলবতা। রয়েছে মরমী উচ্চারণ। একটি সুফি ঘরানা।

আর যা আছে, তা হল শেকড়ে ফেরার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এইজন্যই হয়তো এইসময়ের কবিতায় লক্ষ করা যায় লোকশব্দের ব্যবহার। লোকজ উপাদান। লোকসংস্কৃতি। কেউ কেউ আবার নিজের আরবি ফারসিযুক্ত নাম পরিবর্তন করে নিজেই নামের বঙ্গীকরণ করেছেন। অবশ্য পাশাপাশি অনেকের কবিতায় আরবি ফারসি শব্দের ব্যবহারও চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ইংরাজি শব্দের ব্যবহারও।

তবে এতক্ষণ যে বিষয় নিয়ে আমরা কথা বললাম, সেই বিষয়েও রয়েছে বিতর্ক। শূন্য দশকের কবি বা কবিতা, এই ব্যবহারেই রয়েছে অনেকের আপত্তি। বাংলাদেশের অনেকেই, বেশিরভাগই শূন্য দশককে বলে থাকেন প্রথম দশক এ-হিসেবে আমরা যে দশকের কথা এতক্ষণ বোঝার চেষ্টা করছিলাম, শূন্য দশক, আসলে তা বাংলাদেশের হিসেবে প্রথম দশক।

যাই হোক, শূন্য বা প্রথম, এই দশকের কবি কারা? কারা ইতোমধ্যেই নিজেদেরকে স্বতন্ত্র স্বরের কবি হিসেবে চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছেন? কেউ হয়েছেন কি? পশ্চিমবঙ্গ থেকে এর উত্তর খোঁজা খুবই দুঃসাধ্য একটি কাজ। কেননা, বাংলাদেশের তরুণ কবিদের কবিতার বই এখানে এমনকী কলকাতার কলেজস্ট্রিট চত্বরেও মেলে না। ফি-বছর বাংলাদেশের প্রকাশকদের প্রকাশন নিয়ে একটি মেলা কলকাতায় হয়, সেখানে ক্বচিৎ কদাচিৎ কবিতার বই মিললেও তরুণ কবিদের কবিতার বই নৈব নৈব চ।

Sudhu Bighe Dui2এই অবস্থায় তরুণ কবিদের চিহ্নিত করার কাজটি হয়ে যেতে পারে অন্ধের হস্তীদর্শনের মতো। কিন্তু সে ঝুঁকি নিয়েও কিছু নাম আমরা বলতে চাইব, বলবও। সোহেল হাসান গালিব, শুভাশিস সিনহা, তুষার কবির, তারিক টুকু, নওশাদ জামিল, ইমরান মাঝি, পিয়াস মজিদ, তানিম কবির, পলাশ দত্ত, রুদ্র হক, চাণক্য বাড়ৈ, অতনু তিয়াস, আলতাফ শাহনেওয়াজ। বলতে হবে আরও কয়েকজনের নাম। এমরান কবির, চন্দন চৌধুরী, রনি অধিকারী, সঞ্জীব পুরোহিত, অচিন্ত্য চয়ন, আদিত্য অন্তর, জাহানারা পারভীন, কাজী নাসির মামুন, গৌতম কৈরী, অনন্ত সুজন, ফেরদৌস মাহমুদ, আসমা সোমা, আসমা বীথি, তিথি আফরোজ, মনিরুল মনির, জাহিদ সোহাগ, জাকির জাফরান, মোস্তাফিজ কারিগর, জুয়েল মোস্তাফিজ, মেঘ অদিতি, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, ফারুক আহমেদ, মাহমুদ সীমান্ত। বলব নিতুপূর্ণা, অবনী অনার্য, আহমেদ ফিরোজ, চ্যবন দাশ, সুমন সুপান্থ, মাসুদ পথিক, অনুজা ভট্টাচার্য, বিপাশা মণ্ডল, মুক্তি মণ্ডল, অপূর্ব সোহাগ, অঞ্জন সরকার জিমি, মামুন রশীদ, তুহিন দাস, সিদ্ধার্থশঙ্কর ধর প্রমুখের নামও।

কিন্তু নাম দিয়ে কী হবে? হয় কি? আমাদের চাই তো কবিতা। কবিতাই। হ্যাঁ, কবিতা-ই একজন কবির একমাত্র ডিকশন।

প্রথমে আমরা পড়ব গালিবের কবিতা। সোহেল হাসান গালিব। আটাত্তরের জাতক এই কবির বই, ‘চৌষট্টি ডানার উড্ডয়ন’, ‘দ্বৈপায়ন বেদনার থেকে’, ‘রক্তমেমোরেন্ডাম’, ‘অনঙ্গ রূপের দেশে’ এবং ‘তিমিরে তারানা’। গালিবের একটা স্বকীয়তা রয়েছে চিন্তাভাবনায়, ভাষায়ও, রয়েছে স্বতন্ত্র কল্পনা। ইমাজিনেশান। আর বিমূর্ততা। রয়েছে এক্সপেরিমেন্ট করার প্রবণতা। অভিনব শব্দপ্রয়োগ। স্যাটায়ার। আর রয়েছে প্রসারিত অবচেতন। স্যুররিয়ালিস্টিক বিমূর্ত একটা পৃথিবী। ঢোকা যাক গালিবের পৃথিবীতে।

ভুট্টা ক্ষেতের ধারে বসে লিখছি এ প্রবন্ধ। প্রবন্ধই বটে। লিখছি ফরমায়েশি মুহূর্তের এক ঘোর কালো পরিখার মাঝখানে, একা। পাশ ফিরে লক্ষ করি সুপ্ত গ্রেনেডের উপর উবু হয়ে পড়ে থাকা কিছু কথা। যাকে ঘিরে আছে শব্দের ঘূর্ণিবাও, রৌদ্রের ব্রাশফায়ার। জীবনকে কুলার বাতাসে উড়ে যাওয়া এক মুঠো তুষ ভেবে অবলীলায় হারিয়ে গেল যে কোকিল মৃত্যুর দিকে নীলাভ শিস ছুড়ে দিয়ে, তার একটি অসতর্ক চাহনি সহসা উন্মোচিত করেছে আমাকে।

 

তাই ছায়ার মুখোশ পরে ঘরে বসেই লিখছি׃ এখন বসন্ত…

 

কৃষিভূমির বুক চিরে কত সরু নালা ছুটেছে ফাল্গুনের ফল্গুধারা পার হয়ে কেঁচো ও কাঁকড়ার হৃদয় প্লাবিত ক’রে। শীর্ষে শিহরণ—শুভ্র স্বর—মেঘস্তন। আকাশের আয়নায় দেখি। ফেনোচ্ছল বাসনাবাষ্পে আচ্ছন্ন বাক্যরাশির মতো সবুজ জিহ্বা লকলক করছে মেঘবিম্বিত সেই আয়নার ভেতর।

নিঃশেষিত হবে বলেই জেগেছে নিশ্বাস। বৃক্ষের বাকল-খশা সুগন্ধ-তিমিরে ছিল এই দারুলিপি। গুটিসুটি পায়ে যাবে যে তোমারই নৈবেদ্য হয়ে—যে তুমি পাঠাও নির্দেশ নিশ্বাসের ব্যবধানে গড়ে-ওঠা গমকের চূড়া থেকে—মন্ত্রবৎ–মিড়ের মার্জনাসহ—পারদের নীড়ে। 

অচিন্ত্য অঙ্গার থেকে দূরে আছে জতুগৃহ। বিদুরাগমনের পথ অপরিসর, বাবলা-ঘন। দিবাহার সেরে নৈশভোজের দিকে চলেছে সময়। (এখন বসন্ত/ রক্তমেমোরেন্ডাম)

গালিবের তুলনায় নওশাদের কবিতা, নওশাদ জামিল একটু পেলব। ছন্দময়। ছন্দেই নিজেকে প্রকাশ করতে নওশাদ বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ছন্দেই খুঁজে পান মুক্তিও। তাঁর প্রথম বই ‘তীর্থতল’ প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এরপর তাঁর আরও দুটি কবিতাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘তীর্থতল’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটা সনেট আমরা পড়ব। আসুন, পড়ি।

ব্যথা নিয়ে এতদূর এসে ফিরে যাব? আলিঙ্গনে

কাঁপে যদি তোমার ভ্রূভঙ্গি, তবে ঢেউয়ে ঢেউয়ে

রেখে যাব কালতিয়াসার গান। তুমি তো ইশারা

মুহূর্তের উপচে পড়া তরীপ্রেমে নয়, প্রান্তদেশে

ঘিরে আছে জলের প্রবাহ। ঘুরে ফিরে রূপকথা

শুনিয়েছ অনেক। আড়ালে ব্যথা দিয়ে হেসে হেসে

চলে যায় গহিনের ঢেউ। তুমি দুঃখ নও, তুমি

দিনান্তে ঝাঁপিয়ে ওঠা জলস্রোত, নির্ঘুম শ্রাবণ।

 

ঝুমশব্দে দেখা দাও যদি ভেসে যায় ধরাতল।

তবে কেন ডেকেছ আমাকে? এই স্তব এই বাঁধ

নিমেষেই ভেঙে যাবে। বালুচর পেরিয়ে পেরিয়ে

ঠিকই পৌঁছাবে বার্তা, এমন রোদনক্ষণে তুমি

নিশ্চল নিঝুম কেন? মনে কি আসেনি সন্ধ্যাহাওয়া?

হাহাকার আছে জানি, তবুও ছুঁয়েছি শীর্ষদেশ। (তীর্থতল ১/ তীর্থতল)

তীর্থতল’-এর শীর্ষদেশ ছুঁয়ে নওশাদের কাব্যময় রোমান্টিক পৃথিবীতে অবগাহন করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আপাতত ‘কফিনে কাঠগোলাপ’ বা তারও পরবর্তী কাব্যগ্রন্থে না প্রবেশ করে আমরা চলে যাব আমাদের পরবর্তী কবির কাছে।

প্রথম দশকের কবিদের মধ্যে যাঁরা প্রথম বইয়েই যথেষ্ট পরিণতির ছাপ দেখিয়েছেন তাঁদের মধ্যে তারিক টুকু অন্যতম। তারিক যতটুকু কথা বলেন, তার চেয়ে গোপন করেন অনেক বেশি। এই কারণে তাঁর কবিতা রহস্যময় এবং বহুকৌণিক। প্রথম বইয়ের প্রথম কবিতাটিই আসুন, পড়ি।

নীল ময়ূরটিই এখানকার লাইটহাউস।

নৌপথে লক্ষ রাখা শৈলচোখ—

যাকে এড়িয়ে দুর্গের দ্বারে এসে পৌঁছলাম

দেখি তারও জ্বলজ্বলে চোখ, দমকা নিশ্বাস আছে।

আয়ু আছে। আয়ুর ভেতরে দপদপ করছে সূর্যমুখী ফুল।

 

কেননা, প্রেমের চেয়ে প্রেমের গানেরা নাকি অধিক সুন্দর।

বাগান রঙিন! (লাইটহাউস/ বিস্মৃতি ও বিষাদটিলা)

বস্তুত পুরো কাব্যগ্রন্থটিই অনুভূতির আশ্চর্য উন্মোচন। নীহারিকা। ‘হরিৎ নীহারিকার ভেতর গুমগুম করতে থাকা অন্তর্জীবনের কথা’।

এবার আমরা পরিচিত হব তুষার কবিরের সঙ্গে। তুষার কবির জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৬ সালে। ‘বাগদেবী আমার দরজায়’ তুষারের প্রথম বই। বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় দশ। নতুন নতুন চিত্রকল্প দিয়ে তুষার নির্মাণ করতে চান এক আশ্চর্য যাদুশরীর, আচ্ছন্নতা। ‘ঘুঙুর ছড়ানো ঘুম’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাটিই, আসুন, পড়ি।

ওখানেই পড়ে আছে যত ঘুমের ঘুঙুর;

মদ মোহ প্রেম কাম আর মধু—

যারা শুধু চাইছে কেবলি আজ ডুবে যেতে

অভ্র, ভায়োলিন আর ভ্রমরের স্বরে—

 

তাদের আস্তিনে দ্যাখো জমে আছে

সিরামিক রোদ, পরিযায়ী তিতিরের ডানা—

ওষ্ঠের কুঠুরি খুলে তাঁরা জড়ো করে

লালাভ দ্রাক্ষার রস, চকমকি প্রিজমের কণা!

 

তন্দ্রালস তুন্দ্রাঞ্চল থেকে উঠে আসা

এই তাঁবু—নভোনীল থেকে দেখা যাচ্ছে

ঠান্ডা বরফকুটির-ঝলসানো হরিণীর ঘ্রাণে

শিকারির বুনো রক্তে মেতে ওঠে কুহক বিভ্রমে!

 

তাঁবুর নীচেই আজ চাইছি দু’হাতে

শাদা শাবকের ডানা, মেদহীন তরুণীর নাভি—

কোয়েল যেভাবে ঘুম দেয় সেই

পালক ছড়ানো ঘুম-স্বর্গভ্রষ্টা ডাকিনীর চাবি! (তাঁবু/ ঘুঙুর ছড়ানো ঘুম)

বোঝা যায়, কীভাবে তুষার কবির কবিতায় ছড়িয়ে দিতে চান ‘চকমকি প্রিজমের কনা’ আর ‘স্বর্গভ্রষ্টা দাকিনীর’ ‘ঘুমের ঘুঙুর’। ‘বুনো রক্ত’। ‘কুহক বিভ্রম’

এবার আমরা পাঠ করব সজলের কবিতা, সজল সমুদ্র। ১৯৮২ সালের জাতকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পত্রে রচিত ভোর’ প্রকাশিত হয় ২০০৫ সালে। তাঁর উল্লেখযোগ্য বই ‘ডালিম যেভাবে ফোটে’। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। মিতায়তন কবিতায় অনেক বলা ও না-বলা কথাকে তিনি আশ্চর্যভাবে প্রকাশ করতে পারেন। আসুন, তাঁর একটি রহস্যমেদুর কবিতা পাঠ করি।

প্রিয় কোনো গ্রন্থের ভেতর রেখে গেছ আধোভাঁজ পৃষ্ঠার মতোই

না-হাঁটা রাস্তাগুলো এখানে সমবেত, না-যাওয়া দিকেরাও…

এমন শব্দহীনতায় ফুটতে থাকা ফুলেদেরও ঘ্রাণ নেওয়া যায়

 

এত দূরে দাঁড়ানো বাগান, যেতে যেতে ঝরে যায় ফুল

অসুখ প্লাবিত রাত্রি নেমে এসে ফোটায় তারাদের

তুমি কি তারও দূরে, পরাগ হারানো কোনো মুখরতা হয়ে

নিহিত স্তব্ধতার মতো লুকিয়ে পড়েছ?

 

গ্রন্থের ভেতর থেকে ডাক যতদূর যায়, ফিরে এসে বলে

কিছু নাই (নিহিত/ ডালিম যেভাবে ফোটে)

পিয়াস মজিদ। জন্ম ১৯৮৪-তে। পিয়াস একজন বহুপ্রদ কবি। লেখকও। ইতিমধ্যেই তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। গদ্যের বইও। তাঁর কবিতায় অভিনব শব্দ প্রয়োগ দেখা যায়, অভিনব তাঁর বলার ভঙ্গিও। এই নিজস্ব ভঙ্গিটিকে, আসুন, একবার লক্ষ করি। কবিতাটি ‘গোধূলিগুচ্ছ’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।

স্বপ্নের ভেতর কত জলাভূমি, দাহপথ।

বিজন স্বপনমহলে নিত্য আসা-যাওয়া

তবু পাইনি অগ্নি

পাইনি ভেলা

 

খিড়কি আর সিংহদরোজায় দিনরাত বাঁধা থাকে

শুধু এক রক্তরথ।

এই উড়ন্ত নাও দিগ্বিদিক ঘুরেফিরে থামে যেখানে

তা তো নীলিমার রেশমি সমাধি।

সে সমাধির এককোণে ফুটে আছি ফুল;

বাস্তচ্যুত, স্বপ্নহীন।

দূর সমুদ্রও ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না

আমার অপজন্মের ঢেউ। (তারায় পাওয়া/ গোধূলিগুচ্ছ)

তবে পত্রপত্রিকায় ক্রমাগত নিজের লেখা মুদ্রিত করতে গিয়ে, আমাদের ধারণা, পিয়াস নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করছেন না।


নির্লিপ্ত নয়ন বর্তমানে আলতাফ। আলতাফ শাহনেওয়াজ। ১৯৮১ সালে জন্ম এই জাতকের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘আলাদিনের গ্রাম’। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। আসুন, দেখি, কেমন তাঁর রণসাজ

অজস্র পত্রালি মেলে কাঁটার বাগানে

কেঁদেছে জঠরগ্রন্থি—যাতনা ভুলিনি

আমার হল না কিছু। অন্ত্যমিল খুলে

বলেছি গ্রামের নাম, কোথা হতে আসা;

হাতের অঙ্গুরি একা বাক্য হয়ে ছোটে—

তুরুপের তাস সব। লেখার অক্ষরে

কীভাবে কিরণবন্দী, আগে দেখিয়েছি;

লিখেছি, না-ফোটা ফুলে পাপড়ি জাগাব…

পুষ্পিত বাসরে লখা হেমলক আছে

সেই পাত্রে নিদ্রা গেলে ডেকো না কখনো।

অযথা বদান্যতায় এখানে আসিনি,

ভাঙালে অনার্য ঘুম, অস্ত্র পাব, ভাষা…

সূর্যাস্তে ক্রুসেড শেষে দেখবে তোমরাই

হাতে মধু, রণসাজ… আবার ফিরেছি। (২৪/ আলাদিনের গ্রাম)

‘আলাদিনের গ্রাম’ সত্যই আশ্চর্য এক গ্রাম যেখানে আলতাফ উচ্চারণ করেন ‘মিতালি দোসর তুমি এসো আলাদিন/এই দেহ ফুলগাছ, কাঁটা হয়ে বসো’-র মতো মরমী উচ্চারণ।

এইরকম আরও গভীর উচ্চারণ রয়েছে বাংলাদেশের শূন্য দশকের কবিদের কবিতায়। শূন্য দশকের কবিদের কবিতার প্রবণতাগুলোকে চিহ্নিত করতে গেলে প্রয়োজন এইরকম আরও কিছু কবিতার। কিন্তু নিবন্ধটির পরিসর ক্রমশ বড় হয়ে ওঠায় আমরা আপাতত লোভ সংবরণ করে নেব। অন্য কোনো সময় অন্য কোনো নিবন্ধে বাকি আলোচনা করা যেতে পারে, করবও।

তবে একটা কথা বলতেই হয়, সাম্প্রতিক সময়ের কবি মানে তো শুধু শূন্যের কবি নয়, প্রথম দশকের কবিরাও, তাঁদের কবিতা। কিন্তু যেহেতু এই দশকটি শেষ হয়নি, এখনও চালু রয়েছে তাই এখনই প্রথম দশকের কবি নিয়ে কিছু বলা উচিত হবে নয়, বলবও না। শুধু জানিয়ে রাখি ইতোমধ্যেই প্রথম দশকের কবি হিসেবে যাঁরা স্বতন্ত্র একটা ভাষাভঙ্গিমা ব্যক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিজল। হিজল জোবায়ের। আরও একজনের কথা বলতে হবে, বলবও। আল ইমরান সিদ্দিকী। তাকিয়ে থাকতে হবে আরও কয়েকজনের কবিতায়। বিধান সাহা, গিরিশ গৈরিক, আসমা অধরা, অনু মেহেদি, আহমদ শামীম, রাজীব দত্ত, রাসেল রায়হান, সাম্য রায়হান, অরবিন্দ চক্রবর্তী, শঙ্খচূড় ইমাম, সিক্তা কাজল, অধরা জ্যোতি প্রমুখের দিকে। এর বাইরেও থেকে যেতে পারেন অনেকেই। এঁদের সকলকে নিয়েই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের কবিদের কবিতা।

 

প্রবন্ধ (শুধু বিঘে দুই, ষষ্ঠ সংখ্যা-২০১৮)

Banglalive.com Logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।
Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com