১৯৩২ সালে জার্মানির কোলন শহরে জন্ম বেকের-এর। ছোটবেলা কেটেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায়। হারিয়েছেন কাছের মানুষদের। পূর্ব জার্মানিতে থাকাকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেখেছেন সোভিয়েত আগ্রাসন ও অত্যাচার। বেকের ছিলেন একাধারে কবি, চিত্রশিল্পী, গদ্যকার এবং নাট্যকার। তাঁর প্রথম কবিতা ও গদ্যের বই প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। ‘ইস্ট জার্মান পোয়েট্রি’ নামে দ্বিভাষিক একটি সংকলনে ইউরগেন বেক, পূর্ব জার্মানির একজন প্রধান কবি হিসেবে গৃহীত হন।
প্রতীকী ও সঙ্কেতধর্মী কবিতার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষ স্টেটমেন্ট সুলভ কবিতাও তাঁর কাব্যভুবনের এক অংশ। জুরগেনের পরিবার ১৯৩৯ সালে কোলন শহর থেকে এরফুর্টে চলে যান। ’৩৯ থেকে ’৪৭ পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকেন। এরই মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতাকে প্রত্যক্ষ করেন। ১৯৫০-এ বেকের আবার ফিরে আসেন কোলন শহরেই। আস্তে আস্তে কবিতার মধ্যেই নিজের কণ্ঠস্বর খুঁজে পান।
একদিকে যখন পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত আগ্রাসন বাড়তে থাকে, অপরদিকে, কবি তাঁর কবিতার মধ্যেই আরও গভীর উচ্চারণে সেই সময়ের চিত্রগুলিকে লিখে রাখতে থাকেন। মূলত ছয়ের দশকের কবি হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ এবং গদ্যের গ্রন্থের মাধ্যমে। ফেল্ডার (১৯৬৪), কুন্ডার (১৯৬৮) , ব্লিড্র, হাউসের হউস্ফ্রেন্ডে (১৯৭০) তাঁর অন্যতম প্রধান কিছু কাজ। এছাড়াও রয়েছে তাঁর গদ্যসংকলন এবং রেডিও-নাট্য-সংকলন। জার্মান শিল্প অকাদেমির সভ্য বেকের ২০১৪ সালে পেয়েছেন জর্জ বাকনার পুরস্কার।

একটি চিত্রের বিবরণী
একটি উপসাগরের ছবি, আর সেই উপসাগরটি
শান্ত এবং শূন্য
সৈকতে তার কোনও উচ্ছ্বাস নেই। নামেও তেমন ভাবে কিছুই
বোঝা যাচ্ছে না, এমনকী কোনও নামও নেই।
চিত্রটি সর্বোপরি একটি কাহিনি;
বিবরণযোগ্য নয়, যেমন এখানকার কোনও কিছুই
বলার মতো আর অবশিষ্ট নেই।
তুমি আমেরিকান সেক্টর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছ
(উলফগ্যাং মাইয়ার-এর প্রতি)
জঙ্গলের রাস্তায় দুটি মানুষ, এখন
বাঁশের বেড়া টপকে কোথায় চলে যাচ্ছে
চলে যাচ্ছে যেখানে কোনও দেশ নেই, এখানে
শুকনো পাতা পড়লেও বিস্ফোরণ হয়।
যখন টহলদারি করতে করতে করতে
ওরা চলে যায়
তখন ঘাসগুলিও ভয়ে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে
তুমি শূনতে পাও?
অদৃশ্য
একটি দেশ, অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ
তোমার আমার মধ্যে
ভেঙে পড়ে যাচ্ছে সমস্ত বাড়ি, ঘর, মাঠ, বাজার
মানুষ
মানুষ
একটি দেশ, ভেঙে দু টুকরো হয়ে পড়ে আছে
অবিশ্বাসী হিংসায়
তোমার আমার মধ্যে
ভেঙে পড়ে যাচ্ছে সব কবিতা
চিঠি
মানুষ
মানুষ
শেক্সপীয়রের দেশ
খেলার জন্য আছে দিগন্ত, কিন্তু আমরা সেখানে
ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, যদি প্রশ্ন করতে পারতাম
যদি চিঠি পাঠাতে পারতাম
যদি আমাদের পোষা ভেড়ার দলকে বলতে পারতাম
ওদিকে চলে যেতে
পাহাড় পেরোতে পেরোতে যেখানে
নিজেদের নাম ভুলে যায় মানুষ
আর নেমে আসে শান্ত একটা চাঁদ
আমরা গুনগুন করি
এখানে যুদ্ধ হয়েছিল
নেমে এসেছিল বোমারু বিমান
এগিয়ে এসেছিল গাছ মাথায় প্রতিশোধ
সীমান্ত
যেদিন ওরা দেওয়াল গেঁথে দিয়েছিল
বুঝতে পারেনি
দেওয়াল পেরিয়েই ছিল সেই সন্ধ্যাবেলার পার্ক
যেখানে আমরা চুম্বন করেছিলাম
শুনেছি এখন সেখানে ফায়ারিং স্কোয়াড এবং কবর
বিধবা মায়ের মতো চাঁদ
মাঝেমাঝে আসে
দেখে যায়, ছেলে ফিরল কিনা
ম্যানিফেস্টো
আমি কমিউনিস্ট নই
নাজি নই
আমেরিকান নই
আমি শুধু
রুটি আর মাংসের জন্য
কাঁদি
আমি জার্মান
আমার দেশের লোক
হিটলার
আমি ইহুদিও নই
আমি শুধু
কেক আর আপেল-এর জন্য
ওইদিকে যাব
দেওয়াল ভাঙতেও পারি
(মূল জার্মান থেকে অনুবাদ এবং ভূমিকা- হিন্দোল ভট্টাচার্য)
*ছবি সৌজন্য: wikimedia commons
গ্রন্থসূত্র—১) জার্মান পোয়েট্রি ১৯১০-১৯৭৫ ( অ্যান অ্যান্থোলজি ইন জার্মান অ্যান্ড ইংলিশ)
সম্পাদনা – মাইলেক হ্যামবার্গার
২) পোয়েট্রি অফ ইস্ট জার্মানি
https://g.co/kgs/VcCUYc
হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।
4 Responses
কবিতাগুলি খুব ভালো লাগল। চমৎকার অনুবাদ
খুব ভালো অনুবাদ। আগে পড়িনি এনার কবিতা। “বিধবা মায়ের মতো চাঁদ মাঝে মাঝে আসে দেখে যায়, ছেলে ফিরল কিনা” ❤️❤️
বেশ ভালো
হৃদয় এর রন্ধ্রে কেমন যেন একটা ছবি একে দিলো,আমি মোহিত হয়ে গেলাম।আরও আপনার লেখা ও অনুবাদ পড়তে আগ্রহী।