তার পর জীবনে এল “রং বরষে” গানের মহিমা। বুঝলাম রং কী ও কেন। প্রশ্নপত্রে পেলাম রং কাহাকে বলে, উদাহরণ সহ উহার মহিমা আলোচনা কর। কম নয়, কুড়ি নম্বরের প্রশ্ন। উত্তর তো জাঁকিয়ে দিতেই হবে।
রং, মানে গাঢ় আর উজ্জ্বল রং, সম্ভবত অজ্ঞান অবস্থা থেকেই আমার পেয়ারের। আমি বিশ্বাস করি যে রঙের ছটফটানিই জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে। এমনকী ধূসর রং-ও। তার চলন-বলন, তার ব্যবহার, তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, এমনকী জীবনদেবতার চাল-চলন, মস্তানিকে সে কেমন ভাবে তার জীবনে প্রবেশাধিকার দেবে, সবই রং দিয়ে বোঝানো যায়।
এমন করে যে রং পরতে পরতে আমাদের জীবনে জড়িয়ে আছে, সে কথা প্রথম বুঝেছিলাম আশির দশকের একটি রঙের সংস্থার বিজ্ঞাপন থেকে—একটা প্রায় বেরঙিন পেতলের চাবির ছবির তলায় লেখা ছিল, “হোয়েনএভার ইউ সি কালার, থিঙ্ক অব আস”, ধাঁ করে মরমে সেঁধিয়ে গেল কথাখানা। সত্যিই তো রং মানে তো কেবল উজ্জ্বল নয়। রং মানে তো না-রং ও। তখন থেকে মলিন সব কিছুকে তারই ধারায় বোঝার আর ভাবার চেষ্টা করি, গ্রহণও করি খানিক।
কিন্তু যে কোনও রংকে, তার বৈশিষ্ট্য সমেত গ্রহণ করতে দ্বিধা জাগে মনে। কেমন যেন মনে হয়, সে আমার মনের কথা বলে দেবে। ধূসর পরলে যদি কেউ ভাবে, মন খারাপ। মনের ভেতরটা চাপা মেঘে ভর্তি, তার চেয়ে চাপা মেঘ চাপা দিতে উজ্জ্বল হলুদ সূর্যমুখীকেই সঙ্গী করে নেওয়া ভাল। আমার মনের অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতাবোধ যেন ওই উজ্জ্বল রংকে সঙ্গী করে পেরিয়ে যেতে পারে। গাঢ় কমলা যেন আমায় মনে করিয়ে দিতে পারে প্রবল গরমেও মনে বসন্ত জাগানো যায়। টকটকে লাল রং যেন প্রবল শীতে, সুইৎজারল্যেন্ডের বরফের ওপর শ্রীদেবীর ঠোঁট হয়ে উঠতে পারে। তবেই রঙের মাহাত্ম্য আর মাস্তানি।
তবে কি শুধুই উজ্জ্বল রঙের রাজত্ব চলবে? মোটেই নয়, বাদামি দেখলেই আখরোট কাঠের দিদিমার বাক্সখানা মনে পড়বে, গোলাপি দেখলে মায়ের ফুলভয়েলের শাড়ি, আর মরচে ধরা লোহা দেখলে মনে পড়ে যাবে, বাগানের ধারে লোহার পাতের পাশ থেকে সন্তর্পণে ক্রিকেট বল কুড়িয়ে আনার দিন। নীল রং দেখলেই যেমন বসের সঙ্গে মিটিং আর ধূসর মানে বড় মামার নস্যির ডিবে থেকে আয়েশ করে নেওয়া এক টিপ নস্য।
এ তো রঙের সঙ্গে আমার সহাবস্থান— কী রং দেখলে কী মনে হয়। হয়তো অন্য কারও স্মৃতিতে এ সব রঙের সঙ্গে অন্য স্মৃতির সমাহার, অন্য ব্যঞ্জনা। কিন্তু রংহীন জীবন বা জীবন বেরঙিন এ কথা একেবারেই বলা যাবে না। কোনও না কোনও ভাবে, ফাঁকফোকর দিয়ে রঙ জীবনে ঢুকবেই। সে উজ্জ্বল হোক, বা মলিন, গাঢ় হোক বা হালকা, না থাকার মধ্যেও সে থেকে যাবে। রঙের অস্তিত্বকে অগ্রাহ্য করা সম্ভবই নয়। করতে চাইলে নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে হয়। সে বড় কঠিন কাজ। আসলে, প্রতি দিনের জীবনে এমন ভাবে আমাদের আত্মার প্রতিটি কণায় রং মিশে থাকে যে তাকে আলাদা করে কোনও প্রাধান্য আমরা দিই না। আর সেটাই বোধ হয় রঙের জয়।এ কথা তিনি অনেক আগেই বলে গিয়েছেন,
“রং যেন মোর মর্মে লাগে,
আমার সকল কর্মে লাগে…”
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।
One Response
ছবি বলে আমি, লেখা বলে আমি। দুধ আর আম মিলে মিশে একাকার।