ক্রমশ বিপজ্জনক দিকে বাঁক নিচ্ছে পরিস্থিতি। বাড়ছে রক্তপাতের সম্ভাবনা। মঙ্গল বার সকালে বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়া বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে যাওয়ার পর হংকংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে এমনই অভিমত আন্তর্জাতিক মহলের একাংশের।
গত তিন দিন ধরে চিন বিরোধী বেনজির গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে রয়েছে হংকং। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সোম বার থেকে দখল করে রেখেছেন বিমানবন্দরের লাউঞ্জের বড় অংশ। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ব্যারিকেড যুদ্ধ চলছে জনতার। এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে মঙ্গল বার সকালে কালো পোশাক পরা অসংখ্য বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়েন বিমানবন্দরের আগমন বা অ্য়ারাইভাল অঞ্চলে। বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য উড়ান ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দরের কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ দিন ভোরে যে যাত্রীরা চেক-ইন করেছিলেন, কেবল তাঁরাই শহর ছাড়তে পেরেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে কয়েকটি বিমান হংকংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল, সেগুলি ছাড়া অন্য কোনও বিমান শহরে পৌঁছতে পারেনি। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা-ও জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে হংকংয়ের চিনপন্থী প্রশাসক ক্যারি লামের বিবৃতিতে। এ দিন তিনি জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলনের নামে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তাতে আর পিছিয়ে আসার পথ খোলা নেই। চিনের কমিউনিস্ট সরকার পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে দাবি করেছে, আন্দোলনকারীরা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। আন্দোলনের নামে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা, পাথর ছুঁড়ছেন। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া দাবি করেছে, অশান্তি ছড়ানোর জন্য প্রায় ১৫০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৫৩। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, ধৃতের সংখ্যা পাঁচশ’র বেশি। তাঁদের অভিযোগ, বেজিং বিক্ষোভ দমনে অত্যাচার শুরু করেছে। বিক্ষোভকারীদের মতো কালো পোশাক পরে জমায়েতে ঢুকে পড়ছেন পুলিশকর্মীরা। বেধরক মারধর করা হচ্ছে তাঁদের। আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অন্তত ৪০ জন গুরুতর আহত, এক মহিলার চোখ নষ্ট হতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে চিনের বিবৃতির পর পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক দিকে বাঁক নিতে পারে বলে আশঙ্কা আর্ন্তজাতিক মহলের একাংশের। আন্দোলন দমনে বেজিং বলপ্রয়োগ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মত আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষকদের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা হংকংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো চিনের কমিউনিস্ট সরকারকে সংবেদনশীল হয়ে পরিস্থিতি সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকারও। ট্রাম্প প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে। আমেরিকা চায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই হিংসা ও বলপ্রয়োগের পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে হংকংয়ের সমস্যার সমাধান করুক।
চিন এবং হংকংয়ের সম্পর্কের টানাপড়েন প্রায় দুই দশকের পুরনো। দীর্ঘ ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের চুক্তি শেষ হওয়ার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকংকে চিনের হাতে তুলে দেয় ব্রিটেন। খাতায়-কলমে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত হংকংয়ের স্বায়ত্বশাসন থাকলেও বর্তমানে চিনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসাবেই বিবেচিত হয়। এবং স্বায়ত্তশাসনের সেই আইনকে উপেক্ষা করে গত জুন মাসে চিনপন্থী শাসক ক্যারি লাম অপরাধী প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত একটি বিল আনেন। সেই বিলে বলা হয়, চিনে অপরাধ করে হংকংয়ে পালিয়ে আসা কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চিনে নিয়ে যাওয়া যাবে। এর পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে হংকং। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, এই বিলটিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করবে বেজিং-এর কমিউনিস্ট সরকার। গত কয়েক দিন ধরে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা আকাশছোঁয়া।