মানুষ হাসে। মানুষই হাসে। অন্য প্রাণীরা হাসতে পারে না। হায়নার হাসি কথাটা চালু আছে বটে, কিন্তু সে তো আর আসলে হাসি নয়। এমনকি মানুষের সঙ্গে থেকে যে প্রাণীরা নানা ব্যাপারে মানুষের মতো হয়ে যায়, তারাও হাসতে শেখে না। পোষা কুকুর গরমকালে এসি ছাড়া ঘুমোতে পারে না, এ তো হামেশাই শোনা যায়, কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের গল্পের সেই অসমঞ্জবাবুর কুকুর ছাড়া সহাস্য সারমেয় আর দেখা গেছে কি? তাই বললে ভুল হবে না যে, প্রাণীদের জগতে মানুষকে হাসি দিয়ে চিনে নেওয়া যায়।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাসি সত্যি সত্যিই মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার পথে রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। অট্টহাসি নয়, হাসিমুখ, চলতে ফিরতে চেনা, বা এমনকি অচেনা মানুষের দিকেও আমরা মুখে যে হাসিটা নিয়ে তাকাই, আজকাল পথেঘাটে হাটেবাজারে সর্বত্র অনেক মানুষ যখন তখন যে হাসি হেসে নিজেই নিজের মোবাইলের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে দুখানি সেলফি তুলে নেন, সেই স্মাইল, কিংবা স্মাইলির কথা হচ্ছে।
তো, ইটালিতে মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকরা লক্ষাধিক বছর আগেকার কয়েকটি নিয়ান্ডারথাল-এর দেহাবশেষ নিয়ে জেনেটিক গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, আদিমানবের বিবর্তনে হাসিমুখের অবদান ছিল। গবেষণাটি, বলা বাহুল্য, কঠিন এবং জটিল। কিন্তু তার মোদ্দা কথাটা সহজ ও সরল। ধরা যাক, আদিম মানুষ বা তাদের পূর্ব-প্রাণীদের মধ্যে কেউ কেউ, হয়তো আকস্মিকভাবেই, আবিষ্কার করল যে, অচেনা প্রাণীর সামনে পড়ে গেলে যদি মুখে একটা হাসি হাসি ভাব আনা যায় (তাকে যে হাসি বলে, সে কথা তারা তখন জানত না, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না), তা হলে সেই অচেনা প্রাণীটি আক্রমণ করে না, অন্তত তার আক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। সোজা কথায়, আমি হাসিমুখে কারও পানে তাকাচ্ছি মানে বোঝাতে চাইছি, “ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, আমি তোমার শত্রু নই।” ফলে সেও নিশ্চিন্ত বোধ করছে। এবার হল কি, দেখা গেল, যারা মুখে হাসি ফোটাতে পারে তারা মারামারি কম করে, ফলে বেশি বাঁচে। সুতরাং বিবর্তনে তারা এগিয়ে গেল। আর তার ফলে জীববিজ্ঞানের নিয়মে, হাসিমুখের জয় হল।
তাই রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে রাখার অভ্যেসটা মন্দ নয় মোটেই। তবে হ্যাঁ, মানুষ তো বিবর্তনের পথে অনেক দূর এগিয়েছে, কালে কালে অনেক বাজে ব্যাপারের সঙ্গে সঙ্গে নকল হাসিও শিখেছে। এমনকি হাসিমুখে সর্বনাশ করতেও। অতএব, বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: নকল হইতে সাবধান।