কাশ্মীর সংকট নিয়ে মতামত জানিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়লেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজ়াই।
সম্প্রতি সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দিয়েছে ভারত। বিলোপ করা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা। রাজ্যটিকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে- লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর। এর পর থেকেই কার্যত থমথমে ভূস্বর্গ। বন্ধ দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, মোবাইল পরিষেবা, এটিএম, ইন্টারনেট। উপত্যকার প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে হয় আটক অথবা গৃহবন্দি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ হয়েছে যাবতীয় সভা-সমিতি, মিছিল। এর পাল্টা হিসাবে বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, ভারতীয় সেনার দিকে উড়ে এসেছে পাথর। জবাবে সেনার হাতে বন্দি হয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী।
বৃহস্পতিবার টুইটারে এই নিয়েই মুখ খুলেছিলেন মালালা ইউসুফজাই। কাশ্মীর সংকটের জন্য ভারত, পাকিস্তান বা বিচ্ছিন্নতাবাদী- তিন পক্ষের কাউকেই দায়ী করেননি তিনি। বলেছিলেন উপত্যকার নারী ও শিশুদের কথা। অশান্তি বন্ধের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু জবাবে তাঁকে শুনতে হল কটাক্ষ। নোবেলজয়ী সমাজকর্মীকে কেউ বললেন ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’, কেউ তুললেন বালুচিস্তানের প্রসঙ্গ। কাশ্মীর নিয়ে কথা বলার এক্তিয়ার তাঁর আছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। যদিও মালালা জানিয়েছেন, গোটা দক্ষিণ এশিয়াই তাঁর ঘর। এই ভূখণ্ডের ১৮০ কোটি মানুষই তাঁর আত্মীয়।
ঠিক কী লিখেছেন মালালা, যা নিয়ে এত বিতর্ক? টুইটারে মালালা লিখেছেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন থেকেই কাশ্মীরের জনগণ হিংসাদীর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে বাঁচছেন। আমার মা-বাবা যখন ছোট ছিলেন, আমার দাদু-দিদিমার বয়স যখন কম ছিল, তখনও পরিস্থিতি ছিল একই রকম। গত সাত দশক যাবৎ কাশ্মীরের শিশুরা ভায়াবহ হিংসার মধ্যে বাঁচছে।’
কেন তিনি কাশ্মীর নিয়ে উদ্বিগ্ন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মালালা। তিনি লিখেছেন, ‘আমি কাশ্মীরের কথা ভাবি, কারণ গোটা দক্ষিণ এশিয়াই আমার ঘর। এই ভূখণ্ডের ১৮০ কোটি মানুষ আমার আত্মীয়, কাশ্মীরিরাও তার অংশ। আমরা বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা, আমাদের ভাষাগত ভিন্নতা আছে, খাদ্যাভ্যাস, রীতিনীতিও হরেক রকমের। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা এক সঙ্গে ভালই থাকতে পারি। বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে পারি।’ মালালা লিখেছেন, ‘আমি আশা করি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দারা, আর্ন্তজাতিক মহল এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ কাশ্মীরিদের যন্ত্রণার পাশে থাকবেন। আমাদের অবশ্যই মানবাধিকার পক্ষে দাঁড়াতে হবে। শিশু এবং মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
মালালার এই টুইটের পরই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তাঁকে ‘পাকিস্তানের এজেন্ট’, ‘ইসলামাবাদের হাতের পুতুল’ বলে দেগে দিয়েছেন নেটিজেনদের একাংশ। তাঁদের অভিযোোগ, আর্ন্তজাতিক মঞ্চে ভারতকে অপদস্থ করতে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তান। সেই উদ্দেশ্যেই মালালাকে দিয়ে এমন টুইট করানো হয়েছে। নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক পরিচয় দিয়ে এক ভারতীয় লিখেছেন, ‘আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন কি কেবল কাশ্মীরই অশান্ত ছিল! আপনার বাড়ি থেকে কাশ্মীরের দূরত্ব অনেক, কিন্তু ঘরের কাছে বালুচিস্তানের অশান্তি আপনার নজরে আসে না!’ প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের দখলে থাকা বালুচিস্তানেও দীর্ঘ দিন যাবৎ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে।
মালালার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। এক জন জানিয়েছেন, ইসলামাবাদ বছরের পর বছর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দিয়ে আসছে। মালালা সেই ইসলামাবাদের হাতের পুতুল। ‘অযোগ্য’ মালালার কাছ থেকে নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন ভারতীয় নেটিজনদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্যের সমর্থন এসেছে বালুচিস্তানের নেটিজেনদের থেকে। অন্য দিকে মালালা ন্যায়, শান্তি ও সত্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশের নেটিজেনরা।
স্বতন্ত্র‚ চমকপ্রদ ও মন ভালো করা খবর পেশ করার চেষ্টা করি আমরা | প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | আপডেট পেতে ফলো করুন https://www.facebook.com/banglaliveofficial/