Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

মুখোমুখি দেবজ্যোতি দত্ত: পর্ব ১১

বাংলালাইভ

জুন ২৮, ২০২৩

Interview with Debojyoti Dutta Part 11
Interview with Debojyoti Dutta Part 11
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

বিটি রোডের পাশে ঐতিহ‍্যবাহী বেলঘরিয়ার সরস্বতী প্রেস। কলকাতা তো বটেই, সারা ভারতবর্ষে এই প্রেসের সুখ‍্যাতি রয়েছে। ১৯২৩ সালে ‘যুগান্তর’ দলের কর্ণধার প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর পরামর্শে ত‍ৎকালীন দুই বিখ‍্যাত কংগ্রেস নেতা অরুণচন্দ্র গুহ এবং মনোরঞ্জন গুপ্তকে সঙ্গী করে মহেন্দ্রনাথ দত্ত ২৬/২ বেনিয়াটোলা লেনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সরস্বতী প্রেস। পরবর্তীকালে সাহিত‍্য সংসদ এবং শিশু সাহিত‍্য সংসদও তৈরি করেন এই মহেন্দ্রনাথ দত্ত-ই। বেনিয়াটোলা লেনে সরস্বতী প্রেসের শুরুটা হলেও নানা কারণে পরের বছর থেকে তা স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। পরাধীন ভারতে মূলত জাতীয়তাবাদী সাহিত‍্যকে প্রচারের আলোতে নিয়ে আসাই ছিল এই প্রেস তৈরির নেপথ‍্য কারণ। ফলে এই প্রেসের প্রতিটি ইঁটের খাঁজে লুকিয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাস। ১৯৭৫ সাল থেকে সরস্বতী প্রেসের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্রনাথ দত্তের সুযোগ‍্য পুত্র এবং সাহিত্য সংসদের কর্ণধার দেবজ‍্যোতি দত্ত। শতাব্দী প্রাচীন এই প্রেসের নেপথ‍্যের নানান গল্প নিয়ে বাংলালাইভের মুখোমুখি হলেন তিনি। প্রতি বুধবার ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পর্বে প্রকাশিত হবে দেবজ‍্যোতি দত্তের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি। কথোপকথনে দেবজ্যোতি দত্ত এবং শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়…

আজ একাদশ পর্ব।

দশম পর্বে বাংলা অভিধানের ইতিহাস, অভিধান সংকলনে সরস্বতী প্রেস ও সাহিত্য সংসদের ভূমিকা বিষয়ে আলোচনাক্রমে…

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আমরা সময়ের দিক থেকে এবার একটু এগিয়ে আসব। ষাটের দশক পর্যন্ত সাহিত্য সংসদ এবং সরস্বতী প্রেসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা শুনলাম। ষাটের দশক মানে আপনি তখন বড় হচ্ছেন, স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়েন। আপনি নিজে প্রকাশনায় এলেন ১৯৭৫ সালে।

দেবজ্যোতি দত্ত: আমার তো এখানে আসার কথা ছিল না।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনি তো যাদবপুরের কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ার…

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ, কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনি প্রকাশনায় এলেন কী ভাবে?

দেবজ্যোতি দত্ত: বলছি। কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ার তো!  জিঙ্ক সালফেট তৈরি করার বন্দোবস্ত করছি। জিঙ্ক সালফেট চা-বাগানে ব্যবহার করা হয়। তার একটা গ্রেড আছে। পিতৃদেবের কাগজের বোর্ড ট্রেডিং-এর একটা ব্যবসা ছিল, তার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কারণ আমি ঠিকই করেছিলাম যে চাকরি করব না। চাকরিটা আমার ঠিক ধাতে সয় না। কাজ শিখেছি। পাশ করার পর সরস্বতী প্রেসে গিয়ে আমি ফোর লেভেলে কাজ শিখেছি। যে কাজটা শিখেছি, সেটা পাবলিশিংয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। এগুলো সমস্তটাই কিন্তু প্রি-ডেসটিনড। বাইরের দেশে প্রেসের ব্যবসার ক্ষেত্রে কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ার কিন্তু জরুরি।

Debojyoti Dutta

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: অ্যাডভান্সড প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে এটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস?

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ, কারণ, অফসেট মেশিন, ইজ আ কেমিক্যাল প্রসেস। কী হচ্ছে, অয়েল অ্যান্ড ওয়াটার রিপালশন। সেই ক্ষেত্রটা হচ্ছে প্লেনোগ্রাফি। অফসেট হচ্ছে প্লেনোগ্রাফি। সেখানে টাইপের ক্ষেত্রে কালিটা ধরবে, টাইপের বাইরে কিন্তু কালিটা ধরবে না। অফসেটের এই জিনিসগুলো একটা কেমিক্যাল প্রসেস। সেখানে ইংক-এর অ্যাসিডিটি, কাগজের অ্যাসিডিটি—  এইগুলো নিয়ে চর্চা না করলে কিন্তু ভালো প্রিন্টিং হবে না।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: বা কাগজের ক্ষেত্রেও…

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ কাগজের ক্ষেত্রেও। সরস্বতী প্রেসের কাগজ আসত, প্রথম দিকে টিটাগড় পেপার মিল থেকে, বেঙ্গল পেপার মিল থেকে, তাদের টেকনিক্যাল সেলস্‌ ম্যানেজার বলে লোক ছিল। কারণটা কী? তাঁরা বুঝতেন কোন কাগজে কী কালি পড়লে কী এফেক্ট হব— সেই অনুযায়ী তাঁরা কালি তৈরি করবেন— এগুলো হচ্ছে একেবারেই টেকনিক্যাল ব্যাপার। আবার, জলের ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে কাগজ বাড়ে-কমে; লং গ্রেন, শর্ট গ্রেন— এসমস্ত ব্যাপার আছে। এসমস্ত কিছুর পেছনে কিন্তু এঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা সেন্স আছে। মনে করো, কাগজ সিজনড্‌ করতে হবে, তার জন্য পার্টিকুলার টেম্পারেচার দরকার হয়। এলটিএফ বলে একটা ব্যাপার আছে। লিথোগ্রাফিক টাইপ ফাউন্ডেশন-এর একটা থিয়োরি আছে— ঠিকভাবে ব্লোয়ার দিলে এই কাগজটা সিজনড্‌ হয়ে যাবে। তারপর ছাপলে কাগজটা বাড়বে-কমবে না। এই সমস্ত শিক্ষা কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিংয়ে থাকে। পেপার টেকনোলজি ইজ আ কেমিক্যাল প্রসেস।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: পারিবারিকভাবে আপনি তো ছোট থেকেই ছাপাছাপির সঙ্গে জড়িত, পরিচিত…

দেবজ্যোতি দত্ত: বাবার সঙ্গে যখন প্রেসে যেতাম তখন তো আমি স্কুলে পড়ি।

Paper technology
জলের ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে কাগজ বাড়ে-কমে

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনার কি ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল প্রকাশনায় আসার?

দেবজ্যোতি দত্ত: পাবলিকেশনের ব্যাপারে আমি বলছি। আমি প্রেসে কাজ শিখেছি। ১৯৬৯-৭০ সালে হাতে স্টিক নিয়ে কম্পোজ করেছি আমি এবং বই বাইন্ডিংও করেছি নিজে। এই সমস্ত করার ফলে ফার্স্ট হ্যান্ড নলেজ তৈরি হয়েছিল, গোটা কাজটা সম্বন্ধে আমার ধারণা হয়ে গিয়েছিল। প্রেসে কাজ শিখেছি। কাজ শেখার পর আমি ছেড়েও দিয়েছি। ছেড়ে দিয়েছি মানে, বাবাও প্রেস ছেড়ে দিয়েছেন, আমিও ছেড়ে দিয়েছি। তারপর কাগজের ব্যবসা করেছি। তারপর কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করেছি। কথা ছিল এই পাবলিশিং কোম্পানিটা আমার মেজদা, যে চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট, সেই দেখবেন। সেই জন্যই বাবা তাকে কোম্পানির একজন শেয়ার হোল্ডার করেছিলেন। ওই কোম্পানির নীচে একটা ঘর ছিল, সেখানে তার এক পার্টনার রমেন দত্ত বসতেন। তার সঙ্গে পার্টনারশিপ করে তুমি তোমার প্র্যাকটিস করতে পারবে এবং ওপরে কোম্পানিটাও দেখতে পারবে। দ্যাট ওয়াজ মাই ফাদারস মাইন্ডসেট। ১৯৭৫ সালে এসে সে হঠাৎ ঠিক করল যে ব্যবসা করবে না।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনার মেজদা?

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ। সে তখন চাকরি নিয়ে চলে গেল। বাবার তখন বয়স কত? ৭৬ বছর।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনার কত তখন?

দেবজ্যোতি দত্ত: আমার তখন কত আর— ওই ২৮ বছর। কোম্পানি তখন ছোট। তখন কত আর, ৬-৭ লাখ টাকার মতো ব্যবসা হবে। বাবার খুব দুঃখ হচ্ছিল, কী হবে, কে দেখবে। কিন্তু সুনাম আছে। সাহিত্য সংসদের একটা সুনাম হয়েছে।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: গ্র্যান্ড নেম…

দেবজ্যোতি দত্ত: গ্র্যান্ড নেম হয়েছে। এবার কেউ না দেখলে তো অসুবিধে। আমি তখন হিসাবটা করলাম। আমি কাগজের বোর্ডের ব্যবসা করি। কাগজের বাজারের সঙ্গে ভালো রকম পরিচয় আছে। ওই সূত্র ধরে আমি তখন পেপার ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন অ্যাকটিভ মেম্বার। টিম ওয়ার্ক করার ব্যাপারে আমার আগ্রহ ছিল। তো এইসব ভেবে বইয়ের ব্যবসায় ঢুকেছি। প্রথমে, বড় কয়েকজন ডিলার ছিলেন, বাবাকে তাঁরা খুব শ্রদ্ধা করতেন। সেই সূত্রেই ওঁরা বললেন, তুমি আসছ না কেন? আমি ভাবলাম, ঠিক আছে, করি। ’৭২ কি ’৭৩ সালে যখন কলকাতায় পেপার ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের অল ইন্ডিয়া কনফারেন্স হয়, আমি তখন ক্যালকাটা পেপার ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন মেম্বার। ওই কনফারেন্সে আমি খুব অ্যাক্টিভলি জয়েন করি। অনেকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়, কাগজ সম্বন্ধে ধারণা হয়, অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়… ফলে আমি দেখলাম প্রকাশনার তিনটে এক্সটার্নাল আউটপুট— একটা হচ্ছে এডিটোরিয়াল, একটা হচ্ছে প্রোডাকশন বা প্রিন্টিং, আর একটা হচ্ছে পেপার। এই তিনটেকে কম্বাইন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রিন্টিং, প্রিন্টিং কস্টিং— এই প্রসেসটা আমি মোটামুটি জানি। পেপারটাও ভালো জানি। এই দুটো হচ্ছে কস্ট এফেক্টিভ। ওইখানে যদি কস্টটাকে কন্ট্রোল না-করতে পারি, তাহলে বইয়ের দাম আমি সেই জায়গায় রাখতে পারব না। আর একটা হচ্ছে এডিটোরিয়াল। সেটা হয়তো এক্সটারনাল ভালো ভালো মানুষ আছেন, তাঁদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারব।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: এই দুটো জিনিস আপনাকে নিজেকেই শিখতে হবে!

দেবজ্যোতি দত্ত: নিজেকেই শিখতে হবে। কারণ এটাই হচ্ছে কস্ট এফেক্টিভ, ইকোনমি অফ পাবলিশিং। এই দুটো জায়গা যদি আমি জানি, হোয়াই নট ট্রাই? তো, ১৯৭৫-এর শেষে, ’৭৬ সালের শুরু থেকে আমি পাবলিশিংয়ে ঢুকলাম। আমার কপালটাও অদ্ভুত, ’৭৬ সালেই প্রথম বইমেলা শুরু হল।

Kolkata Book Fair
৭৬ সালেই প্রথম বইমেলা শুরু হল

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা বইমেলা!

দেবজ্যোতি দত্ত: বাবার সংস্থা তখন মোটামুটি নামী এবং সরস্বতী প্রেসও আছে, বাবাকে ওরা মেম্বার করেছিল।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: বিমল ধর তখন…

দেবজ্যোতি দত্ত: বিমলবাবু। আসলে, বিমলবাবু, দাশগুপ্ত কোম্পানির প্রবীর দাশগুপ্ত ও আরও অনেকের এটা প্রাথমিক চিন্তা ছিল। ইনিশিয়াল স্টেজে প্রবীর দাশগুপ্ত, বিমল ধর এবং আরও কয়েকজন মিলে কফি হাউসে বসে আড্ডা মারতে মারতে এগুলো ঠিক করেছিলেন। এইভাবে ’৭৫ সালে গিল্ডটা তৈরি হয়েছে। বিমলবাবু খুব ডাইনামিক ছিলেন। প্রবীর দাশগুপ্ত পরে গিল্ড ছেড়ে দিয়েছিলেন। এঁরা দু-জন না থাকলে কিন্তু গিল্ড এই জায়গায় পৌঁছত না। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে দিল্লিতে একটা বুক ফেয়ার হয়েছিল।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ার?

দেবজ্যোতি দত্ত: ওয়ার্ল্ড বুক ফেয়ার। না, ওয়ার্ল্ড নয়, অন্য কী একটা বুক ফেয়ার ছিল। এক বছর অন্তর হত। সেইখানে গিল্ড একটা স্টল নিল। সেই স্টলটা বিমল ধর ও প্রবীর দাশগুপ্ত মিলে দেখেছিলেন। সেই স্টল একটা প্রাইজও নিয়ে এসেছিল। এটাই কিন্তু ইনস্পায়ার করল গিল্ডকে— হোয়াই নট স্টার্ট এ বুক ফেয়ার! সেই সময় বইয়ের বাজার কিন্তু খুব ভালো ছিল না। বিপণনের দিক থেকে ভালো ছিল না। তখন চেষ্টা করা হল। এখানে প্রবীর দাশগুপ্তের ইনপুটটা সব থেকে বেশি। কারণ, প্রবীর দাশগুপ্ত ‘দাশগুপ্ত কোম্পানি’র সেক্রেটারি ছিলেন। ’৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, যেহেতু দাশগুপ্ত কোম্পানি বহু প্রাচীন সংস্থা, ভালো কোম্পানি, বাংলাদেশে যত বই সাপ্লাই হত, কোটি কোটি টাকার বই তখন তারা বাংলাদেশে পাঠাতেন। দিল্লিতে আইএফএস ছিলেন শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায়, তিনি এবং আরও অনেকে সাহায্য করেছিলেন। ফলে বইয়ের প্রকাশ বিপণনের সঙ্গে যোগাযোগ তো ছিলই, বেশি করে যোগাযোগটাও তৈরি হল।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: বিস্তৃতিটা বাড়ল।

দেবজ্যোতি দত্ত: বিস্তৃতিটা অনেক বাড়ল এবং সেই সঙ্গে কী হল, গভর্নমেন্টের লেভেলে পরিচিতি হল। তার সঙ্গে পুলিশ লেভেলেও প্রচুর পরিচিতি হল।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: একটা মেলা করতে গেলে যা লাগে আর কী। হয়েছিলেন। প্রবীরের খুব বন্ধু ছিলেন।

Publishers & Booksellers Guild

দেবজ্যোতি দত্ত: মেলা করার প্রথম স্টেজে কিন্তু প্রবীর দাশগুপ্ত না-থাকলে মেলাটা হত না। প্রথম মেলা মার্চ মাসে হয়েছিল বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের উলটোদিকে।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: হ্যাঁ।

দেবজ্যোতি দত্ত: ১৯৭৬ সালে মার্চ মাসে যে প্রথম বইমেলাটা হয়, ‘দেশ’-এ একটা লেখা বেরিয়েছিল, ১৯৮২ বা ’৮৩ সালে বোধহয়, আমার ঠিক খেয়াল নেই, কবে থেকে কবে মেলা হয়েছে, কোথায় হয়েছে, কোন মাসে হয়েছে ইত্যাদি নিয়ে। দশদিনের মেলা হত। এক শুক্রবার চালু হত, পরের সপ্তাহের রোববার শেষ হত। শুক্রবারে ইনঅগুরেশন হত। ’৭৬ সাল মানে কংগ্রেসের শেষ বছর। মৃত্যুঞ্জয় ব্যানার্জি ছিলেন, আরও কেউ কেউ ছিলেন, ঠিক জানি না। পুলিশ সেখানে সাহায্য করেছিল। তুষার তালুকদার, পরে কমিশনার হয়েছিলেন।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: নগরপাল।

দেবজ্যোতি দত্ত: নগরপাল

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: খুব পড়ুয়া মানুষও।

দেবজ্যোতি দত্ত: তুষার তালুকদারকে জিজ্ঞেস করতে পারো। কিছুদিন আগেও আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তখন বলছিলেন যে, হ্যাঁ, ওই সময় এঁরা উৎসাহ না দিলে— পুলিশের পারমিশন ইত্যাদি সমস্ত লাগে তো— সব হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বইমেলায় কত স্টল হয়েছিল, দেশের বইসংখ্যার ওই লেখাটায় ছিল। স্ট্যাটিসটিক্স দিয়েছিল প্রথম চার-পাঁচ বছরের।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: তার মানে আপনি প্রথম থেকেই গিল্ডের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত?

দেবজ্যোতি দত্ত: না। ১৯৭৬ সালে আমি এমনিই স্টল নিয়েছি।

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আপনার বাবা তখন মেম্বার।

দেবজ্যোতি দত্ত: বাবা তখন মেম্বার। স্টল নিয়েছে, দেখাশোনা করছি, ওরই মধ্যে সবার সঙ্গে আলাপ পরিচয় হচ্ছে।

Mahendra Dutta
বাবা মহেন্দ্র দত্ত

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: বিক্রিবাটা কি সেবার ভালো হয়েছিল?

দেবজ্যোতি দত্ত: বুক ফেয়ারের সাফল্য মানে পরিচিতি হয়েছিল। আমি দু-জন লোককে মানি। এক হচ্ছেন স্টেটসম্যানেরর ধরণী ঘোষ, আর একজন হচ্ছেন সি আর ইরানি। এই সি আর ইরানি প্রথম দিকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছিলেন, প্রোপাগেশন-এর দিক থেকে। ধরণী ঘোষ কী করতেন তখন, প্রত্যেক দিন বিকেলবেলায় এসে স্টলগুলোতে ঘুরতেন। পরের দিন বিভিন্ন বই সম্বন্ধে ফ্রন্ট পেজের বাঁ-দিকের তলায় একটা লেখা থাকত কোন বই কীরকম ইত্যাদি নিয়ে। ধরণী ঘোষকে আমি এখনও স্যালুট করি ওই ইনিশিয়াল বছরগুলোয় কাজের জন্য। উনি গিল্ডের প্রোপ্যাগান্ডায় সাহায্য করেছিলেন। পরবর্তীকালে ‘আনন্দবাজার’ করেছে, সবাই করেছে। প্রথম দুটো স্টেজ — ’৭৬ কি ’৭৭ এখানে লাভ কিছু হয়নি। প্রথম বছর, আমি যা শুনেছি, একজন পার্টিসিপেন্ট হিসেবে গেছিলাম, অনেকেই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিল খোলা মাঠে বইমেলা কী করে করবে! তার আগে একটা বইমেলা হয়েছিল, ঠিক বইমেলা নয়, এগজিবিশন হয়েছিল ১৯৭১ না ’৭২ সালে। সেটা হয়েছিল অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে। এন বি টি করেছিল। সেখানে লোকের উৎসাহ ছিল মারাত্মক! 

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: সেখানে বিভিন্ন কোম্পানি স্টল দিয়েছিল?

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ, হ্যাঁ। স্টল মানে কী, র‍্যাকের মতো সমস্ত কিছু। সেটাও ১৯৭৬ সালে বইমেলা করার উৎসাহের জায়গায় ছিল। তা সত্ত্বেও প্রবীণ প্রকাশকরা বলেছিলেন, খোলা মাঠে কী মেলা করবে! বই ভিজে যাবে, ঘেরা জায়গায় মেলা করো। প্রথমবার তেত্রিশটার মতো স্টল হয়েছিল। একটা জিনিস করেছিল গিল্ড, কলেজস্ট্রিটের কফি হাউসকে নিয়ে গিয়েছিল ওখানে। বইয়ের সঙ্গে কফি হাউস যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, সেটা কিন্তু সেই সময় থেকেই ছিল। 

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: মানে ভিশন ছিল একটা।

দেবজ্যোতি দত্ত: হ্যাঁ। সেখানে রূপা কোম্পানির একটা জিনিস খুব ভালো ছিল। যদি কোনও স্টল খালি থাকত, রূপা কোম্পানি বই দিয়ে ভরিয়ে দিত। প্রথমবার এভাবে হল, দ্বিতীয়বার একটু বাড়ল। তৃতীয়বার থেকে কিন্তু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের উলটোদিকের মাঠে দু-বছর করার পরে এদিকে, ইস্ট গেটের মাঠটায় চলে এসেছে। রবীন্দ্রসদন অবধি যায়নি। আস্তে আস্তে বেড়েছে। ’৮৩ সালে হল কী প্ল্যানেটোরিয়াম থেকে আরম্ভ করে সাউথ গেট। পুরো মাঠ। 

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: আড়ে-বহরে বেড়ে গেল আর কী! 

দেবজ্যোতি দত্ত: প্ল্যানেটোরিয়াম থেকে একেবার সাউথ গেট। পুরো স্ট্রেচ। তার আগে কী হত তোমার মনে আছে কি না জানি না। পুরো এক মাস ধরে হ্যান্ডলুমের একটা মেলা চলত। ময়দানে রেগুলার ফেয়ার করার হিস্ট্রি কিন্তু গিল্ডের, সেই ১৯৭৬ সাল থেকে। তারপরে, লেক্সপো বলে একটা অর্গানাইজেশন ছিল, ’৭৭ সাল থেকে বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সামনে তারা লেদার এক্সপো নামে মেলা করত। তারও এক কি দু-বছর বাদে, সেন্ট্রাল গভর্মেন্টের হ্যান্ডলুম ডিপার্টমেন্ট থেকে, সমস্ত স্টেটের হ্যান্ডলুম নিয়ে এক মাসের জন্য হ্যান্ডলুম এক্সপো নামে মেলা করত। 

শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়: কিন্তু বই নিয়ে এই যে একটা আস্ত মেলা…

দেবজ্যোতি দত্ত: ওই যে বললাম, এগজিবিশন নয়, মেলা, একদম মেলার মতো করে। মেলার ওই আবহটাকে তৈরি করে। কলকাতা বইমেলা এই জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছে। সেজন্যই আজও বইমেলার মতো জনপ্রিয় এবং বড় ইভেন্ট কম আছে। আর সেটার যাঁরা সূচনা করেছিলেন তাঁদের দূরদৃষ্টি ছিল সত্যিই অভাবনীয়।

*ছবি সৌজন্য: লেখক, Pixabay, Facebook

*পরের পর্ব প্রকাশ পাবে আগামী বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

Banglalive.com Logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।
Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com