(Little Magazine)
জলটুঙ্গি পত্রিকা
সম্পাদক: শতানীক রায়
সম্পাদকের পরিচিতি:
শতানীক রায়ের জন্ম মালদা জেলায়। বসবাসও মালদাতে। মূলত কবি। প্রবন্ধ লেখেন ও অনুবাদও করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটো, একটি গদ্যগ্রন্থ এবং দুটো সম্পাদিত গ্রন্থ। এবং সম্পাদনা করেন তিনটি পত্রিকা: ‘জলটুঙ্গি’, ‘অরণি’ এবং ‘সে’। জলটুঙ্গি পত্রিকা মূলত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। অরণি শুধুমাত্র অনুবাদের পত্রিকা। আর সে হল শুধুমাত্র বই ও পত্রিকা আলোচনার কাগজ।
(Little Magazine)

কথার পিঠে কথা (সম্পাদকীয়)
“Yesterday was a utopian day”
পেটার হান্ট্কে-র এই উক্তি যা তাঁর জার্নাল বা উপন্যাস ‘দ্য ওয়েট অফ্ দি ওয়ার্ল্ড’ বইয়ের ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের কোনো একটি দিনের এন্ট্রি। এই এন্ট্রি ইনভার্টেড কমার মধ্যে থাকার ফলে ভাবতে হচ্ছে, এটা অন্য কোনো বই বা অন্য কারও কথা যা তিনি নিজের জার্নালে টুকে রেখেছেন। বা এও হতে পারে যে সংলাপ হিসেবে তিনি লিখে রাখছেন যা অন্যান্য এন্ট্রির মতো ঘটনার বিবরণ নয়। অনেকসময়ই হান্ট্কে-র লেখা পড়তে গিয়ে কখনো আমার মনে হয়, কোনো একটি উপন্যাস সেটা ফিকশনের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তবে উত্তীর্ণ হচ্ছে। পার্থক্য করতে পারি না। তেমনই একটি কথা একটি সাক্ষাৎকারে ‘দ্য ওয়েট অফ্ দি ওয়ার্ল্ড’-কে তিনি বাস্তবাদী লেখা হিসেবে মান্যতা দিতে চাননি। সেই সাক্ষাৎকারেই নিজের লেখাকে বাস্তববাদী মনে করেন কি না জিজ্ঞেস করা হলে তার উত্তরে বলেছেন: “আমি লিখন-পদ্ধতিতে ‘বাস্তববাদী’ বা ‘রোমান্টিক’ এই ধরনের বিভেদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, এই ভেদাভেদের প্রচলন এখন আর নেই। আমি যখন এই লেখায় ‘বাস্তববাদী’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলাম তখন সম্ভবত এর কোনো একটা মানে ছিল, আর আমার মনে হয় লেখাতে সে-সমস্তটাই বেশ পরিষ্কার। কিন্তু একজনের পক্ষে কোনো একটা নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে লেখা সম্ভব নয়। প্রবন্ধটার কোনো নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ছিলই না; ওটা সে-সময় দাঁড়িয়ে কিছু জিনিস স্পষ্ট করতে চেষ্টা করেছিল। ‘বাস্তববাদী’ শব্দের মানে কী তা আমি সত্যিই জানি না।” এখানে “এই লেখায়” বলতে ‘দ্য ওয়েট অফ্ দি ওয়ার্ল্ড’ বোঝাতে চেয়েছেন।
হান্ট্কে-র সাহিত্যের বীজ যুদ্ধ-পরবর্তী অস্ট্রিয়ান আভাঁ গার্দ সাহিত্যধারায় (যা পশ্চিম জার্মান সাহিত্যধারা থেকে ভিন্ন) প্রোথিত হলেও পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্য অনেকটাই ভিন্নপথ তৈরি করে নেয়। হান্ট্কে নিজের উপন্যাস, স্পিক-ইন (নাটক) আর কবিতার মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন দর্শক ও পাঠকের চেতনায় এমন কিছু অভিজ্ঞতার সৃজন করতে যা তাদের তথাকথিত চেতনা অভস্থ নয়।

পেটার হান্ট্কে-র জন্ম ১৯৪২ সালে অস্ট্রিয়ার গ্রিফিন নামক একটি মফস্সলের “শ্রমিক পরিবারে” (হান্ট্কে-র নিজের কথামতো)। তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ নাটক ‘পাবলিক ইনসাল্ট’, বাইশ বছর বয়সে লিখেছিলেন, সেখানেই তিনি নানা আভাঁ গার্দ লিখন-পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন এবং দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রথাগত থিয়েটারের পদ্ধতি তিনি অবলম্বন করেননি। একই সময়ে লেখা ‘সেল্ফ অ্যাকিউজেশন’-এর ক্ষেত্রে তিনি নিজের এক স্বতন্ত্র নাটকের ধারা তৈরি করলেন— স্পিক-ইন। যেখানে নাটকের প্রথাগত অভিনয় প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করার চেষ্টা করা হল, সংলাপের ভাষাই হয়ে উঠল প্রধান, সেখানে দর্শকের প্রতিক্রিয়াও নাটকের একটা বড়ো অংশ হয়ে উঠল। উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তিনি নতুন একটা লিখন-জগৎ সৃষ্টি করলেন। যেমন ‘দি লেফ্ট হ্যান্ডেড ওম্যান’ পড়তে পড়তে মনে হয় জীবনের মন্থরতা পাঠের মন্থরতার সঙ্গে মিশে গিয়ে বিষয় এবং কাহিনিকে বাস্তব করে তুলছে। সেখানে উপন্যাস আর ফিকশন হিসেবে ধরা না দিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়ে উঠছে। যা আরও অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং ভাবনাচিন্তায় চলচ্চিত্রসম অথচ প্রথাগত চলচ্চিত্র নয়। কবিতার ক্ষেত্রেও একটা প্রতি-লিখনের চেষ্টা তিনি করে থাকেন যেখানে বাস্তবচিত্রই হয়ে ওঠে মূল বিষয়। আর সেইসব বাস্তবকে তিনি লেখার নানা কৌশলে দ্যাখার নানা বিকল্পের মধ্যে দিয়ে গিয়ে পাঠকের সামনে একটা সমাজবাদী কবিতার মতো কিছু উপস্থাপন করলেও তা সমাজবাদী কবিতা থেকে ভিন্ন। হান্ট্কে চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন।
হান্ট্কে-র বাস্তব ও কল্পনার জগৎকে সরিয়ে রেখে আসা যাক এই সংখ্যা তৈরির কথায়। ২০২০ সালে একটা ছোটো ক্রোড়পত্র জলটুঙ্গি পত্রিকা থেকেই করা হয়েছিল। তারপর থেকে ইচ্ছে ছিল আস্ত একটা সংখ্যাই হবে পেটার হান্ট্কে-কে কেন্দ্র করে। অনেক সংগ্রামের পর কাজটা শেষপর্যন্ত হল। সেখানে তাঁর লেখার অনুবাদ, চলচ্চিত্রপঞ্জি যেমন স্থান পেয়েছে, পাশাপাশি তাঁর সম্পর্কে প্রবন্ধ-আলোচনা-সাহিত্যতত্ত্বের বিশ্লেষণও রাখা হয়েছে। আশা করি একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। লেখক ও অনুবাদকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আর যাঁর সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হত না, তিনি কবি সন্তু দাস। শেষেমেষ স্বর্ণেন্দু ঘোষের অসাধারণ প্রচ্ছদের জন্য জলটুঙ্গি কৃতজ্ঞ।
(Little Magazine)
(Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।