Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সুরসম্রাজ্ঞী: পর্ব ৭

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

এপ্রিল ২৬, ২০২২

Lata Mangeshkar hit songs
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

লতা মঙ্গেশকরের এক অতিপ্রিয় কম্পোজার ছিলেন গুণী ম্যান্ডোলিন বাদক ও খামখেয়ালি প্রকৃতির সঙ্গীত পরিচালক সাজ্জাদ হুসেন। তাঁর সুর করা প্রতিটি গানের মধ্যে থাকত অসম্ভব জটিল সব মারপ্যাঁচ। সুরের ওঠানামা, তার চলন, গতি সম্পর্কে সর্বদাই ওয়াকিবহাল থাকতেন তিনি। গানের দাবি মেটাতে সুরের প্রকৃতির নানা পথ অবলম্বনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সহজে কম্প্রোমাইজ় করতে চাইতেন না। লতা ও সাজ্জাদ দু’জনেরই জন্ম ইন্দোরে, তাই বোঝাপড়ায় খামতি ছিল না। এছাড়া সাজ্জাদ সাহেবের সঙ্গে লতার পরিবারের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল।

১৯৫০ সালে সাহিন পিকচার্সের ব্যানারে তৈরি ছবি ‘খেল’ সঙ্গীতপ্রিয় মানুষের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল সাজ্জাদের প্রাণবন্ত সুরশৈলীর দৌলতে। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন দেবানন্দ, নিগর, হাফিজ জাহান, মুরাদ, আনোয়ার প্রমুখেরা। এই ফিল্মে লতাকণ্ঠে আমরা পেয়েছিলাম দুটি অসাধারণ গান যার একটি গজল আঙ্গিকের। 

‘ভুল যা অ্যায় দিল মোহব্বত কা ফসানা
কিসিসে দিল লাগানা,
ফির না আয়েগা পলট কর ওহ জমানা
ওহ সপনা থা সুহানা,
ইয়াদ আতি হ্যায় তুঝে
অব কিঁউ ওহ রাঁতে পেয়ার কি,
অঊর ও বাঁতে পেয়ার কি,
ভুল যা উলফৎ কে মিঠে গীত গানা’। 

sajjad-husain-and-lata
সাজ্জাদ হুসেনের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর

সামস অজ়িমাবাদি’র লেখা এই গানটি তৎকালীন যুগের সঙ্গীত বোদ্ধাদের হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। এই ফিল্মে লতার অন্য গানটি ‘যাতে হো তো যাও হাম ভি ইহাঁ ওয়াঁদো কে সাহারে জি লেঙ্গে’ লিখেছিলেন সাগর নিজামি। গান দুটির জনপ্রিয়তা দেখে গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েস একই ম্যাট্রিক্স থেকে দু’বার দু’টি আলাদা ৭৮-পাক রেকর্ডের প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন সেই বছর। গানগুলির ফাইনাল টেকে সাজ্জাদ, লতার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর ছোটোখাটো ভুলত্রুটি শুধরে দিয়েছিলেন প্রকৃত শিক্ষকের ন্যায়। রাগের চলন, তার বিস্তার, ভয়েস মডিউলেশন– সবকিছুর প্রতি সাজ্জাদ হুসেনের ছিল তীক্ষ্ণ নজর। তাই হয়তো সাজ্জাদ ঘোষণা করেছিলেন যে ‘লতা গান গায়, আর অন্যরা গান গাইবার মর্মান্তিক চেষ্টা করে’। 

Hulchul_poster
১৯৫১ সালের এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন সাজ্জাদ

১৯৫১ সালে মুক্তি পাওয়া কে আসিফ প্রোডাকশনসের ‘হলচল’ ফিল্মের একটি গান লতাকণ্ঠে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিল। সাজ্জাদ হুসেনের সুরসৃষ্টি ‘আজ মেরে নসিব নে মুঝকো রুলা দিয়া’ এক অনন্যতার পরিচয় দেয়। খুমার বারাবাংকির লেখা এই নজ়ম উর্দু সাহিত্যের ইতিহাসে এক চমকপ্রদ সংযোজন। গানের অন্তরার ছত্রগুলি নায়িকার মনের যন্ত্রণার সঠিক উপস্থাপনায় এক নতুন আঙ্গিকের জন্ম দিয়েছিল, যা আগে সেভাবে হিন্দি ছবির গানে দেখা যায়নি। কথাগুলি ছিল এরকম – 

‘লুট লিয়া মেরা করার ফির দিল–এ-বেকারার নে,
দর্দ নে মেরে চ্যয়ন কো খাক মেঁ ফির মিলা দিয়া
লাঁউ কাঁহা সে ম্যাঁয় ও দিল তুমকো যো পেয়ার কর সকে,
জিসমে বসে হুয়ে থে উয়ো ম্যাঁয়নে উয়ো দিল গওঁয়া দিয়া’। 

অনস্ক্রিন নায়িকা নার্গিসের লিপ মুভমেন্টে এই নগমা হয়ে উঠেছিল সেন্টিমেন্টাল জার্নির এক চমকপ্রদ আইকন।

এই ফিল্মের গানে সাজ্জাদ হুসেন বুনেছিলেন এক আশ্চর্য সাংগীতিক মায়াজাল যা মূর্ত হয়ে উঠেছিল লতার কণ্ঠনিঃসৃত কাহারবা তালে আধারিত নজম ‘বাহার আয়ি মগর দিল কে ফুল খিল না সকে’-তে। খুমার সাহেব এটি লিখেছিলেন এক কাব্যগ্রন্থের জন্য যা অপ্রকাশিতই থেকে গিয়েছিল। এ গানে কবি প্রেমের অন্তর্দ্বন্দ্বকে অদ্ভুত সুচারু রূপে পরিবেশন করেছিলেন। গানের কথাগুলি ছিল– 

‘লুটা দিল মেরা হায় আবাদ হো কর,
হঁসি রেহ্ গয়ি মেরি ফরিয়াদ হো কর।
সিবা মেরে থা কৌন উনকা যাঁহা মেঁ,
কঁহা জায়েঙ্গে অব আজাদ হো কর’। 

এই ছবির প্রোডিউসারের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় সাজ্জাদ হুসেন সঙ্গীত পরিচালনার কাজ মাঝপথে ছেড়ে দেন। পরে এই ফিল্মের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মহম্মদ শফি। 

Sachin Dev and Lata
লতা মঙ্গেশকরকে খুব স্নেহ করতেন শচীন দেব বর্মণ

শচীনকর্তার সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের সম্পর্ক ছিল স্নেহের। ১৯৫০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ফিচার ফিল্ম ‘মশাল’ প্রযোজনা করেছিলেন বম্বে টকিজ়। নীতিন বোস পরিচালিত এই ছবিতে বিভিন্ন ভূমিকায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন অশোককুমার, সুমিত্রা দেবী, মণি চ্যাটার্জি, নানা পালসিকর, জাল মার্চেন্ট, কানু রায় প্রমুখ। এই ফিল্মে লতাকণ্ঠের দু’টি গান আজও মনে রেখেছেন গানপাগল শ্রোতারা। প্রথমটি– ‘আজ নহি তো কল বিখর যাঙ্গেগে ইয়ে বাদল’, (রেকর্ড নং – N 36475)। দ্বিতীয়টি – ‘আঁখো সে দূর দূর হ্যাঁয় পর দিল কে পাস যো’ (রেকর্ড নং –N 36474 / N 36475)। শচীন-লতা জুটির যে সর্বকালের আবেদন, তা আলোড়ন সৃষ্টি করে এই ছবির হাত ধরে। খুবই নিষ্ঠা সহকারে গান দুটি অনুশীলন করে শচীনকর্তার নির্দেশ মতো রেকর্ডিংয়ে নিজের মন-প্রাণ ঢেলে গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। কবি প্রদীপের প্রানবন্ত লিরিক এই দুটি গানকে সমৃদ্ধ করেছিল অনেকাংশে। 

Meena Bazar
‘মীনাবাজার’ ছবিতে লতার গলায় ছখানি অসাধারণ গান ছিল

পাঞ্চোলি প্রোডাকশনস–এর ব্যানারে পরিস্ফুট হিন্দি সামাজিক ছবি ‘মীনাবাজার’ পঞ্চাশ দশকের গোড়ার একটি জনপ্রিয় ছায়াছবি। শ্যাম, নার্গিস, ওমপ্রকাশ, কুলদীপ, সপ্রু, গোপ প্রমুখের অনবদ্য অভিনয় এই ফিল্মকে বসিয়েছিল সাফল্যের উচ্চ আসনে। হুসনলাল-ভগতরামের সুরে তামাম ভারতবর্ষের মানুষ শুনেছিলেন লতার কণ্ঠে ছটি অপূর্ব গান, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘তুঝে বরবাদ করনা থা মুঝে বরবাদ হোনা থা’। কমর জালালাবাদির লেখা এই অসাধারণ গান হিন্দি ফিল্মি সংগীতের এক অনন্য সম্পদ হয়ে রয়ে গিয়েছে। এই ছবিতে লতা-রফি পরিবেশিত ডুয়েট গানগুলো যেমন ‘সুনে মহব্বত কে হ্যায়ঁ মেলে আ যাও আ যাও’, ‘পাস আকে হুয়ে হম দূর ইয়হি থা কিস্মত কো মঞ্জুর’, ‘দুনিয়া হ্যায় বরবাদ দিল কি’, ‘ও মাহি ও মাহি ও দুপট্টা মেরা দে দে’, ‘ওয়ে গোরি চুপকে সে আয়া কোই চোর রে মেরে বাবুল কে খেত মেঁ’ শ্রোতাদের মন প্রাণ ছুঁয়ে গিয়েছিল। 

[‘মশাল’ ছবিতে শচীন দেববর্মণের সুরে লতা গাইলেন ‘আজ নহি তো কল বিখর যায়েঙ্গে ইয়ে বাদল’, এই গানই সুরভেদে গেয়েছিলেন গীতা দত্ত]

আলি সগীর উসমানী পরিচালিত ছবি ‘মাঙ্গ’ প্রচারের আলোয় এসেছিল মূলত তার মনমাতানো সংগীতের জন্য। ওয়াস্তি, রমোলা, লীলা পাণ্ডে, শান্তি মাধোক–এর প্রাণকাড়া অভিনয়ের ছটা ভরিয়ে রেখেছিল গোটা ছবিটিকে। গুলাম মহম্মদের চমৎকার সুরসৃষ্টি এক অনন্য আবেশে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমগ্র দেশবাসীকে। এই ফিল্মের অনুপম সংযোজন লতা কণ্ঠের গান –‘মেরে দিল কি দুনিয়া পে ছানে লগে, ও হো মুঝকো বহৎ ইয়াদ আনে লগে’। রাজা মেহেদি আলি খাঁয়ের কথা এই গানের মাধুর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। লতা কণ্ঠে এই ছবির আর একটি সোলো– ‘অ্যয় দিল-এ-বেকরার য্যায়সে ভি হো গুজার’ তার কাব্যিক গুণে শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে। 

প্রসিদ্ধ শিল্পী জি এম দুরানির সঙ্গে ডুয়েট ‘আও ব্যয়ঠো বাত শুনো’ এক চমৎকার তালের গান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সগীর উসমানী রচিত, লতাকণ্ঠের সোলো ‘মুহব্বত রঙ্গ দে জাতি হ্যায়’ এই ফিল্মের গুনগত মান বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ। উমা দেবীর সঙ্গে দ্বৈতগান ‘না জানে আজ কিউঁ ঘবরা রহি হো’ দর্শকরা মনে রেখেছিলেন একটি কমিক সিকুয়েন্সের জন্য।

[‘নিরালা’ ছবিতে মধুবালার লিপে লতার গজল আঙ্গিকের গান]

দেবেনশঙ্কর মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত হিন্দি ফিচার ফিল্ম ‘নিরালা’ ১৯৫০ সালের এক সাড়া জাগানো প্রোডাকশন। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দেবানন্দ, মধুবালা, রাধাকিষণ, মুমতাজ আলি, লীলা মিশ্র, নর্মদাশঙ্কর ও আরো অনেকে। যশস্বী কম্পোজার সি রামচন্দ্র দায়িত্বে ছিলেন সুরসংযোজনার। এই ফিল্মে আমরা শুনেছিলাম লতা কণ্ঠে পরিবেশিত, দাদরা তালে আধারিত গজল ‘মজবুর মেরি আঁখে বরবাদ মেরা দিল হ্যায়’। পিএল সন্তোষীর লেখা এই অনবদ্য সঙ্গীতের ছত্রগুলি আপামর শ্রোতাদের আজও নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন করে রাখে। অন্তরার কথাগুলি পাঠকের জন্য তুলে দিলাম– 

‘অ্যায় চাঁদ ডুব যা তু কিঁউ মুসকুরা রাহা হ্যায়,
কিঁউ অপনি চাঁদনি সে বিজলী গিরা রাহা হ্যায়,
ভটকা হুয়া হ্যায় রাহী খোয়ি হুয়ি মঞ্জিল হ্যায়,
রো রো কে আসুঁয়ো কো পলঁকো মেঁ হি ছুপায়ে,
ফরিয়াদ টুটে দিল কি ক্যায়সে জঁবা পে লায়ে,
রুখসৎ হুয়ে পরওয়ানে উজড়ি হুয়ি মঞ্জিল হ্যায়’।   (চলবে)

 

*ছবি সৌজন্য: LearningandCreativity, Outlook, Rediff, Youtube
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ৩ মে ২০২২

Author Sanjay Sengupta

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।

Picture of সঞ্জয় সেনগুপ্ত

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।
Picture of সঞ্জয় সেনগুপ্ত

সঞ্জয় সেনগুপ্ত

বিশিষ্ট গ্রামোফোন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, গান বাজনা-র জগতে এক বিস্ময়কর নাম। কলকাতায় জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে ওড়িশায়। দীর্ঘদিন এইচ.এম.ভি-র মতো ঐতিহ্যশালী সাঙ্গীতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে। তাঁর অনবদ্য কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে প্রায় ১২০০ বই ও পত্র-পত্রিকায়, দেশ বিদেশ জুড়ে। সঙ্গীত ছাড়াও আগ্রহ নানা বিষয়ে। খেলাধূলা, মূলত ক্রিকেট ও সিনেমা সংক্রান্ত লেখায় তাঁর পান্ডিত্য ঈর্ষণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস