banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গল্প: কুহকজাল

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

এপ্রিল ২৬, ২০২২

Loneliness and show off
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

প্রথমেই ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু ঝাপসা করে দিল। জানলার পর্দাগুলো সুবিধের নয়, ঠিক আছে, আর বোঝা যাচ্ছে না। হ্যাঁ এইবার ভালো আসছে মুখগুলো। প্রথমে ব্রাইটনেসটা একটু বাড়ানো, তারপর… রোজ়ি এফেক্টটা ভালো লাগে। রেট্রো অপশনে একটু থমকালো সে। করবে? মেয়েগুলোর ভালো লাগতে পারে। তবে আগে একটু সফট টোন আনতে হবে। দিয়া-রিয়ার জন্য নয়– মেয়েদের কাঁচা মুখের পাশে তার  মুখের রেখাগুলো এখন একটু বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করেছে। এই তো, এবার বেশ দেখাচ্ছে। এখন পোস্ট করা যায়। 

কত্তদিন বাদে মেয়েগুলোকে একটু কাছে পেয়েছিল সে। ঘুরে গেল কলকাতা থেকে। দুজনে একসঙ্গে আছে, ভালো আছে আনন্দে আছে– আর কী চাই? আচ্ছা এই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে ওদের সঙ্গে শিফট করে গেলে কেমন হয়? কী সুন্দর ওদের হাউসিংটা! মুম্বই থেকে একটু দূর, কিন্তু কী সবুজ, কী সুন্দর বিল্ডিং! পুল, জিম! নাঃ এতদিনে ওরা একটু পায়ের তলায় জমি পেয়েছে। ইন্সটা থেকে ওদের ছবিগুলো আবার দেখতে শুরু করল আলোলিকা। তবে এর মধ্যে কিছু ছবি একটা প্রোডাকশন হাউসের কোন পার্টি উপলক্ষে মেয়েরা দুর্দান্ত একটা ফার্মহাউসে গেছিল, সেখানকার। কী ট্রেনডি জামাকাপড় পড়া মানুষজন। কী সুন্দর সব কিছু!

আঙুলের ডগায় মানুষের আনন্দের দিন, উৎসব, হাসিমুখ, উজ্জ্বল চোখ, মহার্ঘ্য খাবার, চোখধাঁধানো ব্যাকগ্রাউন্ড- সরে সরে যায়। একের পর এক। আলোলিকার বুকের নীচে বালিশ, নাইটিটা উঠে গেছে পায়ের গোছ পর্যন্ত, চুল চুড়ো করে মাথার ওপরে নট বাঁধা, একুশ ইঞ্চির গাঁথনি পেরিয়ে বৈশাখের তাতে কপালে, গলায় ঘাম। এ বাড়িতে শুধু মায়ের শোবার ঘরে একটা পুরনো এসি। ওই ঘরে ওষুধ, ফিনাইল, বেবি লোশনের একটা গন্ধ। বেশিক্ষণ থাকলে কেমন গা গোলায়। প্রায় তিনমাসের ওপর মা বিছানায়। কোমরের নীচ থেকে অবশ, আচ্ছন্নের মতো বিছানায় পড়ে থাকে। দিনেরবেলার একটা আয়া আছে। রাতদিনের লোক শ্যামলীও দেখে নেয়। আলো এসব খুব একটা পারে না, দরকারও পড়ে না খুব। মায়ের জমানো টাকা, বোনের, জার্মানি থেকে ভাইয়ের পাঠানো টাকায় চলছে এত চিকিৎসা, আয়া, ওষুধপত্র। আপাতত সে দায়িত্ব নিয়ে তদারকি করছে। বোন ছেলের কাছে গেছে; ফিরে এলে তার ছুটি। তবে সে  কাছেই থাকে, যাতায়াত করে।

আলোলিকা নেশাচ্ছন্নের মতো দেখে যাচ্ছে কলেজের বান্ধবী সুচেতার মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন, গতবছর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন বেড়াতে গেছিল ওরা, বিশাখা নিউটাউনে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে। আঙুলের ডগায় সরে যায় একের পর এক- যেন টিভির কুকিং শোতে প্ল্যাটারে সাজানো চলমান সময়। মানুষের জীবন। শুধু স্বাদগন্ধ কেমন, তা বোঝা যায় না। কেমন জীবন ওটা? জানতে কে চায়? ঠিক সে  যেমনভাবে দেখছে তেমনটাই-

Social Media
আলোলিকা নেশাচ্ছন্নের মতো দেখে যাচ্ছে মোবাইলে

ফোনটা রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো আলো, সিলিংয়ের দিকে মুখ। পর্দার মধ্যে এসে পড়া আলো সিলিং ফ্যানের ওপর। তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন বিভ্রম তৈরি হয়, কেমন জালের মতো লাগে। মিথ্যের জাল। চোখ বন্ধ হয়ে আসে। জীবন এখন কেমন? যেমন তুমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাবে তেমন। শুধু দেখে সে সবার জুতো, ব্যাগ, বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, বেড়ানো, সম্পর্ক, গলাগলি, প্রতিভা। যেখানেই তাকায় শুধু হাস্যোজ্বল মুখের সারি। দেশে, বিদেশে, ঘরে, সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ের মাথায়, রাস্তায়, রেস্টুরেন্টে, বিয়েবাড়ি, গানের মজলিশে, খেলার মাঠে শুধু হাসিমুখ-সুখী, নিশ্চিন্ত আত্মীয়, বন্ধু, বন্ধুদের বন্ধুর ছবি– সবাই দারুণ আছে। নিখুঁত, নিভাঁজ। এসব  ভাবতে থাকে আলো। কিন্তু সম্পূর্ণ ভুলে যায়, বহু বছর আগের আলোলিকাকে– সেই কবে থেকে সে শুরু করে বুনতে এই জাল- যখন আন্তর্জালে বাঁধা ছিল না পৃথিবী; দূরে থাকলে রাখা যেত না খবর সেই সময়ে। সূক্ষ্ম, স্বচ্ছ। তাদের জীবন ঘিরে রূপকথার মতো.. যেখান থেকে আলো ফেলত সে, আরো মনোরম হয়ে উঠত। যে রং ধরাতে চাইত, সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠতো সেই জাল। 

চা-বাগানে কাজ করতেন তার বাবা। ছুটিতে আসা হত কলকাতা। আদিগন্ত পাহাড়, কুয়াশা, চা-বাগান, বাংলো। তার মধ্যে সিলিং থেকে মাটি পর্যন্ত কাচের জানলা। সবমিলিয়ে লোকের কাছে এক কল্পজগতের বাসিন্দা তখন তারা। তার উজ্জ্বল বলয় নিয়েই মাটিতে পা দিত, প্যাচপ্যাচে গরমে ধুলোধোঁয়া ভরা শহরে। তাদের কথাবার্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তিন কোর্সের মিল, ডিনার বেল, বিংগো নাইট, বেয়ারা, চকলেট ফ্রস্টেড কেক, ফায়ার প্লেস, সব কিছুই শ্রোতাদের কাছে বিস্ময়। না-দেখা পৃথিবী। তবে হ্যাঁ, সেই সময়ে এই জাল বুনতে তার বা মায়ের বিশেষ কষ্ট করতে হয়নি। তার ‘পিচ আর ক্রিম স্কিন’, পুতুলের মতো গড়ন, ফ্যাশনেবল  জামাকাপড়, ইংরেজি, হিন্দিতে স্বাচ্ছন্দ্য, পিয়ানোতে পারদর্শিতা– কলকাতায় তার মামা মামিদের, তুতোদিদিদের কাছে সে ছিল রীতিমতো দেখানোর বস্তু। মাটিতে প্রায় পা পড়ত না তার। ক্লাবে পার্টি থাকলে বিনা কারণে তার বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলত সে। ক্যালকাটা ক্লাবে বা পার্টিতে পিয়ানোতে বসিয়ে দিতেন তার মামি– এই স্তুতি এই আদরের নীচে চাপা পড়ে  যেত বাবার মদ, বেপরোয়া জীবন, শ্রমিকদের সঙ্গে কোম্পানির  গন্ডগোল, বাড়িতে হওয়া ঝগড়াঝাঁটি, বাবার ধীরে ধীরে অ্যালকোহলিক হয়ে যাওয়া। 

Tea Garden
চা-বাগানের আদিগন্ত পাহাড়, কুয়াশা, চা-বাগান, বাংলো

মাঝেমাঝেই বাবাকে প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় ধরে ধরে ঘরে ফিরিয়ে আনত তাদের ড্রাইভার বা বেয়ারা। সকালে ড্রইংরুমের জানলার ধারে বসে আঁকছে আলো, বাবা সোফায় আধশোয়া, অর্ধেক পা মাটিতে, মুখটা হাঁ, লালা গড়িয়ে শুকিয়ে গেছে। প্যান্টে, কার্পেটে  জুতোয় কাদার দাগ। বিস্রস্ত শার্ট, সেখান থেকে বেরনো টাইয়ের নট আলগা। আঁকা থামিয়ে মাঝে মাঝে বাবার দিকে তাকিয়ে সে  বোঝার চেষ্টা করত বাবার নিশ্বাস পড়ছে, না মরে গেছেন। অনেক সময় একদৃষ্টে পেটের দিকে তাকিয়ে থাকত সে। হঠাৎ বাবা নড়ে উঠতেন। সে মন দিত রং করায়। প্রায়ই হত এমন। তারপর একদিন বাবা আর ফিরলেন না; সম্পূর্ণ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন- ড্রাইভারকে চালাতে না দিয়ে।

সেই অবস্থায় গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে দু’দিন থাকার পর   বাবা মারা যান। কয়েকদিনের মধ্যে বাবার পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসে তারা সবাই। আলো বড়। ভাইবোন তখন বোঝার বয়সেই পৌঁছয়নি। মা গোড়া থেকেই বাবার মৃত্যু নিয়ে নানা গল্প চালু করে দেন। জিপের ব্রেকফেল, প্রমাণ পাওয়া না গেলেও কোম্পানিতে বাবার শত্রুদের কাজ– এইসব। বলতে বলতে কলকাতা আর গৌহাটির আত্মীয়দের কাছে সেটাই সত্যি হয়ে যায়। সেই সময় বাড়িতে প্রচুর লোক আসত– মাকে ঘিরে বসা, কাকা, জ্যাঠা, পিসিদের সঙ্গে মামাবাড়ি, দূরসম্পর্কের আত্মীয়, প্রতিবেশী।

এরকম হঠাৎ করে দুর্ঘটনায় মৃত্যু– তার গল্প একের পর এক লোককে বলতে বলতে মায়ের গলা-জিভ শুকিয়ে যেত। তেমনই একটা দিন… বসার ঘরের সোফার একদিকে মা বসা, মায়ের চোখদুটো লাল, ঠোঁট ফাটা, মাকে দেখে মনে হয় জ্বর হয়েছে– সে ঘরে এসেছিল কী একটা নিতে, কানে এল মা বলছে,
– অনিমেষমামা, ওই দিনের আগের বিকেলে,আমাদের ড্রাইভারের  মেয়ে সুলু, দুটো গুন্ডা গোছের লোককে দেখেছিল আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে। জানো? কোনওদিন দেখিনি ওদের-
তারপর গলাটা নামিয়ে যোগ করল,
– বিহারিদের মতো দেখতে।
আলো ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সেই মুহূর্তে। পরদিন দুপুরে এক মাসি আর দুই মাসতুতো দিদির পাশে শুয়ে শুয়ে হঠাৎ সে শুরু করে,
– মিতুলদিদি জানো, বাবার অ্যাকসিডেন্টের আগের দিন আমি বিকেলে রেশমির বাড়ি থেকে ফিরছিলাম, কর আঙ্কেলদের বাড়ির সামনে একজন লোক আমাকে জিজ্ঞাসা করল…”
মিতুলদি উত্তেজনায় উঠে বসে।
– কে রে? চিনতিস?
– না। জিজ্ঞাসা করেছিল তুম মিত্তর সাব কি বেটি?
– সেকি রে? তুই আগে বলিসনি তো?
– মনে পড়েনি তো।
– আর কি বলল লোকটা? তুই কথা বললি কেন?
– জিজ্ঞাসা করল মিত্তর সাব কব ঘর আতা হ্যায়?
– তুই বলে দিলি?
– আমি বললাম মুঝে নেহি পতা। 

পর্দার মধ্যে এসে পড়া আলো সিলিং ফ্যানের ওপর। তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন বিভ্রম তৈরি হয়, কেমন জালের মতো লাগে। মিথ্যের জাল। চোখ বন্ধ হয়ে আসে। জীবন এখন কেমন? যেমন তুমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখাবে তেমন। শুধু দেখে সে সবার জুতো, ব্যাগ, বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, বেড়ানো, সম্পর্ক, গলাগলি, প্রতিভা। যেখানেই তাকায় শুধু হাস্যোজ্বল মুখের সারি। দেশে, বিদেশে, ঘরে, সমুদ্রের ধারে, পাহাড়ের মাথায়, রাস্তায়, রেস্টুরেন্টে, বিয়েবাড়ি, গানের মজলিশে, খেলার মাঠে শুধু হাসিমুখ-সুখী, নিশ্চিন্ত আত্মীয়, বন্ধু, বন্ধুদের বন্ধুর ছবি– সবাই দারুণ আছে। নিখুঁত, নিভাঁজ।

আর কী কী সে বলেছিল মনে নেই। শুধু মনে আছে, বলতে বলতে সে লোকটার নীলসাদা স্ট্রাইপ গেঞ্জি, ভুরুর কাছে কাটা দাগ সব দেখতে পাচ্ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাতে যুক্ত হতে থাকে বাড়িতে আসা উড়ো ফোনকল, শোকসভার দিন বাবার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের তাদের এড়িয়ে মুখ নামিয়ে চলে যাওয়া। তারা মা-মেয়ে মিলে যেন নতুন করে লিখতে থাকে বাবার মৃত্যুর গল্পটা। ধীরে ধীরে বাবা মেলোড্রামাটিক হিন্দি সিনেমার বাবাতে পরিণত হন, আদর্শের জন্য যাঁদের মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুটা মিথ হয়ে যায়। 

বাবার চা-বাগান থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণ নিয়ে গৌহাটির পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসে তারা– যৌথ পরিবারে। বাবার ছন্নছাড়া জীবন, দেদার খরচে হাতের জন্য তেমন কিছু জমানো ছিল না। কিন্তু খাওয়া পরার সমস্যা হল না পারিবারিক সম্পত্তি আর ব্যবসার জন্য। তবে  তাদের জীবন খুব তাড়াতাড়ি ম্যাড়ম্যাড়ে, সাধারণ, যৌথ পরিবারের একটা অংশ হয়ে যেতে থাকল। বেরঙিন। কাকা-জ্যাঠার ছেলেমেয়ের সঙ্গে রিক্সায় বা হেঁটে স্কুলে যেতে যেতে, দু’বেলা সাধারণ বাঙালি খাবার খেতে খেতে, সবার সঙ্গে পিকনিক সিনেমা, ফ্যাশনেবল জামা ছোট হয়ে যাবার পর বাকি সবাইয়ের মতো সাদামাটা জামাকাপড়ে বাকি সবাইয়ের মতো দেখতে হয়ে যেতে যেতে আলোলিকা বুঝতে পারে, যে সে এরকম জীবন কাটাতে পারবে না। তার চারপাশে ওই রঙিন বর্ণবলয় চাই, লোকের মুগ্ধ দৃষ্টি। সে কিছুতেই হঠাৎ সাধারণ হয়ে যেতে পারবে না, কিছুতেই টিঁকতে পারবে না এই জগতে। 

 

আরও পড়ুন: অমিতরূপ চক্রবর্তীর গল্প: কুড়ি কুড়ি বছরের পার

 

সেই সময় থেকে শুরু হল তার নতুন জীবন। নিজের হাতে তৈরি এক পৃথিবী। তার হিসেব অনুযায়ী রং, আলো। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ার মতো রূপসী হয়ে ওঠে সে– তাই কলকাতায় মামারবাড়িতে বেড়াতে এসে, গৌহাটিতে তার পাড়ায় এবং স্কুলে কতজন ছেলে মোটসাইকেলে চক্কর মারে, যাদের মধ্যে একজন উঠতি গুন্ডার ছেলে– তার গল্পে হয়ে যায় মন্ত্রীর ছেলে, খেঁকুরে মেয়েবাজ বয়স্ক শিক্ষক হয়ে যায় শাহরুখ খানের বয়স্ক সংস্করণ, মডেলিং থেকে গৌহাটি টিভির জন্য অ্যাঙ্কর হবার প্রস্তাব– কিছুই বাকি থাকে না। আর গৌহাটিতে ফিরে কলকাতায় মামাদের গাড়ি, ক্লাব, পার্টি আর লস এঞ্জেলসে থাকা তার ডাক্তার ছোটমামার বেভারলি হিলসের বাড়ি আর সেলিব্রিটি পেশেন্টদের গল্প।
– জানিস নিশিকা, সোনালি মামি বলে ডেমি মুরকে সামনে আরো সুন্দর দেখতে– যেমন স্ক্রিনে দেখায়। তাও যে কেন প্লাস্টিক সার্জারি দরকার পড়ে….
– জানো শুধু সুইমিং ঠিক এক্সারসাইজ। আমার বোন জিনা কত লুজ় করেছে। তবে ওদের পুলটা বিশাল। হাফ অলিম্পিক সাইজ।

এইভাবে অর্থমন্ত্রী দীপেন কাকোটির ছেলে তাকে না পেয়ে সুইসাইড করতে গেছিল, বা টলিক্লাবে তরুণ মজুমদারের অ্যাসিস্ট্যান্ট তাকে সরাসরি নায়িকা হবার প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তার গৌহাটির কাকা জ্যাঠারা রাজি হবেন না বলে মা রাজি হননি। গল্পের জাল বুনতে থাকে সে– তার একটু সুতোর টানে অরেঞ্জ কাউন্টিতে থাকা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট মামা হলিউডে অবাধ আসাযাওয়া করতে থাকেন, দূর থেকে দেখা নাম করা উওম্যানাইজার নিখিল কাকোটি নার্সিংহোমের সাদা বিছানায় কব্জিতে ব্যান্ডেজ বেঁধে শুয়ে থাকে উদাস মুখে। 

 

আরও পড়ুন: সৌরভ হাওলাদারের গল্প: ভার্চুয়াল

 

আলোলিকা এই গল্প বলাকে একটা আর্টের পর্যায়ে নিয়ে যায়। নিখুঁত বুঝতে পারে কোথায় কতটা বলতে হবে, কোথায় হঠাৎ করে চুপ করে যেতে হবে। ঠিক কোথায় থামলে দ্বিগুণ হবে কৌতূহল, কোথায় জাগবে বিশুদ্ধ ঈর্ষা, কোথায় বা অকপট মুগ্ধতা– এইভাবে তার চারপাশে তৈরি হয় একটা পরিমণ্ডল। তার থেকে ছোট তুতো ভাইবোনেরা, বন্ধুরা, তার ব্যক্তিত্বে, তার ফ্যাশনে মুগ্ধ, আর সেটা আরো পূর্ণতা পায় যখন সে প্রেমে পড়ে জনের– অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, অতীব সুদর্শন। চা-বাগানের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের চাকরি পেয়েছে সদ্য। আলোলিকার ফেলে আসা রাজপাট আর রাজপুত্র।  খুব ভালো করেই জানতো সে, যে তার গোঁড়া পরিবার কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি হবে না। তাই সে সেরকম কোনও চেষ্টা না করে বেশ ফিল্মি কায়দায় ইলোপ করে। ফলে তাদের বিয়েটাও একটা গল্প হয়ে থেকে যায় তাদের পরিবারের ছোটদের মধ্যে– মিলস এন্ড বুনসের গল্প। 

তারপরের বেশ কয়েকবছর, তার দুই মেয়ের বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তাদের জীবন মোটামুটি মসৃণ ছিল। বাড়িতে তার বিয়ে মেনে নেয়। সময় বদলাতে থাকে। আগে তাদের চা-বাগানের জীবন নিয়ে একটা রোম্যান্সের কুয়াশা ছিল। পরে লোকের অনেক বেশি বেড়াতে যাওয়া, আরো অনেক কিছু নিয়ে ঠিক ততটা আকর্ষণ থাকে না আর। এর মধ্যে দেশটা পাল্টে যেতে থাকে হুহু করে। পড়াশোনা, কেরিয়ার, এন্টারটেনমেন্ট, উন্নতি, সবকিছুই বড়ো শহরে। সেখানেই শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স। তাই একটু বড় হতেই মেয়েদের মনে হয় তারা সবকিছু থেকে অনেক দূরে। 

Woman
আলোলিকা এইভাবে তার চারপাশে তৈরি করে একটা পরিমণ্ডল

চা-বাগানের অবস্থাও পাল্টাতে শুরু করে। রাজনীতি, শ্রমিক সমস্যা, ব্যবসায় লোকসান সব মিলিয়ে বাড়তে থাকে জনের মানসিক চাপ।  অন্যদিকে তাদের সোশ্যাল লাইফে আলোলিকা তখন অলিখিত রানি। অন্যের স্ত্রীরা চা-বাগানের বিলিতি পরিবেশে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করছে। রূপ, আভিজাত্য এসব ছেড়ে দিলেও চা বাগানে বড়  হবার পেডিগ্রি নিয়ে এই রেসে আলোলিকা সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু কলকাতায়, বিলেত আমেরিকা থেকে আত্মীয়স্বজন আসে অনেকের বাড়ি। চা-বাগানের বিলিতিয়ানায় লোকের আগ্রহ ফিকে। তাই বাধ্য হয়ে সময়ের সঙ্গে পাল্টানোর চেষ্টা করছিল আলোলিকা। আরো জমজমাট পার্টি দিয়ে, কলকাতা গেলে দামি বুটিক থেকে এক্সক্লুসিভ শাড়ি গয়না– তাছাড়া এটাও প্রমাণ করা জরুরি ছিল যে তার বিয়ের সিদ্ধান্ত খুব ঠিক। বহুদিন ধরে এতবার করে লোকের সামনে তাদের বিদেশ বেড়াতে যাবার কথা বলেছে আলো, আর মান থাকছিল না। প্রথমে মায়ের দেওয়া ঠাকুমার ভারী গয়নার সেটটা বেচে দিল সে। টাকাটা দিয়ে থাইল্যান্ড বেড়ানোর অনেকটা খরচ তুলে ফেলল। জনকে প্রচুর মিথ্যে বলল কিন্তু লোকের সামনে মুখটা থাকল। 

তারপর বাঁধ ভেঙে গেল। যখন ইচ্ছে গয়না বিক্রি, কলকাতায় এসে খোঁজ করে চড়া সুদে ধার… মিথ্যের জালে একটু একটু করে জড়িয়ে পরা। একবার জার্মানি থেকে ভাইয়ের পাঠানো টাকা দিয়ে ধার থেকে উদ্ধার হল সে। চা-বাগানে তখন প্রচুর সমস্যা, বাড়তে থাকা রাজনীতিতে তাদের অবস্থা এমনিতেই টলমলে। জন ভীষণভাবে বাধা দিতে শুরু করল তার এই খরচে স্বভাবের। নিত্যকার ঝগড়াঝাঁটি, আরো বেশি করে কলকাতা যাওয়া শুরু করল আলো। একবার এইভাবে টাকা জোগাড় করে একটা বিবাহবার্ষিকীর পার্টি আয়োজন করে ফেলল জনকে না জানিয়ে, আসলে নিজে জনকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিল।

বাবার চা-বাগান থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণ নিয়ে গৌহাটির পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসে তারা– যৌথ পরিবারে। বাবার ছন্নছাড়া জীবন, দেদার খরচে হাতের জন্য তেমন কিছু জমানো ছিল না। কিন্তু খাওয়া পরার সমস্যা হল না পারিবারিক সম্পত্তি আর ব্যবসার জন্য। তবে  তাদের জীবন খুব তাড়াতাড়ি ম্যাড়ম্যাড়ে, সাধারণ, যৌথ পরিবারের একটা অংশ হয়ে যেতে থাকল। বেরঙিন। কাকা-জ্যাঠার ছেলেমেয়ের সঙ্গে রিক্সায় বা হেঁটে স্কুলে যেতে যেতে, দু’বেলা সাধারণ বাঙালি খাবার খেতে খেতে, সবার সঙ্গে পিকনিক সিনেমা, ফ্যাশনেবল জামা ছোট হয়ে যাবার পর বাকি সবাইয়ের মতো সাদামাটা জামাকাপড়ে বাকি সবাইয়ের মতো দেখতে হয়ে যেতে যেতে আলোলিকা বুঝতে পারে, যে সে এরকম জীবন কাটাতে পারবে না। 

দামি হোটেলের ব্যাংকোয়েটে শ’খানেক অতিথি, মহার্ঘ্য খাদ্য-পানীয় এসবের মধ্যে জন যখন ঢুকল, তার মুখের অবস্থা দেখার মতো। সত্যিই সারপ্রাইজড সে। কেক কাটা, অতিথি আপ্যায়ন সব করলেও, তার মুখের থমথমে ভাব ছিল খুবই প্রকট। রাত্তিরে এল ঝড়… আর আলো পেল তার সারপ্রাইজটাও। রাগের চোটে যখন সে টেবিল থেকে গিফটগুলো ছুড়ে ফেলছে, তার হাতটা প্রায় মুচড়ে পেছনে আটকে রেখে জন চিবিয়ে চিবিয়ে বলল
– ডার্লিং এই খরচ শোধ করার ব্যবস্থা তুমি কোরো। আমার চাকরিটা আর নেই। নেক্সট মাসে আমি ধীমানের ফার্মে জয়েন করব, শিলিগুড়িতে একটা দু’ঘরের ফ্ল্যাট ভাড়া করেছি। আসতে হলে এসো। নয়তো হ্যাভ এ নাইস লাইফ সুইটহার্ট।
ধীমানের ফার্ম! অর্ধেক মাইনে! শিলিগুড়ি!
– কেন বলনি আমাকে? আর কোথাও চেষ্টা করলে না কেন?
– কাকে বলব? তুমি কোথায়? কোন জগতে? ভেবে দেখেছ এই চুয়ান্নতে কে কাজ দেবে আমাকে? সব বাগানের এক অবস্থা। তুমি আর তোমার মেয়েরা আমার কাছ থেকে তোমাদের ফুর্তির পয়সা আর পাচ্ছ না। যা খুশি কর। ইচ্ছে হলে শিলিগুড়িতে থাকতে পারো, না তো যেখানে খুশি।
জনের শক্ত চোয়াল, লাল চোখ, স্থির দৃষ্টি। সেখানে অন্ধকার ছাড়া কিছু বিশেষ নেই।

তারপর প্রায়  দেড় বছর কেটে গেছে। বড় মেয়ে ফ্যাশন ম্যানেজমেন্ট পাশ করে মুম্বই গিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে থেকে একটা মাঝারি গোছের ফ্যাশন হাউসে এন্ট্রি লেভেলে কাজ জোগাড় করেছে। ওই বন্ধুর সঙ্গেই থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ছোটটা বরাবরই গানবাজনায় ঝোঁক, একটা প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক স্তর  পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু মেয়েটার মূল আকর্ষণ গিটার। সেটাকেই পেশা করতে চায়। কিন্তু গত দেড় বছরে একদম নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল আলো। মায়ের কাছে থাকত সে বেশিরভাগ। মা-ও তাকে কথা শোনাতে ছাড়ত না। তবে বেশিদিন এরকম রইল না। তার ভেতরের ধোঁয়াটে শূন্য জায়গায় হৈহৈ করে ঢুকে পড়ল বাইরের পৃথিবী। আলো আর বর্ণাঢ্য মুখোশ নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়া। 

আঃ কী শান্তি! লোকের সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে না, পার্টি ক্লাব রেস্তরাঁ নেই, দামি পার্লার যেতে হচ্ছে না। যে টাকা নেই, সেটা খরচ করতে হচ্ছে না। কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষের সুখ দেখা যাচ্ছে। নিজের সুখ দেখানো যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ছবি কী করে আরো সুন্দর লোভনীয় করে তোলা যায়, কোন ধরনের ছবি লোকে খায়, সোশ্যাল মিডিয়ার রূপকথার জগতে ঢুকে পড়ল আলোলিকা। তার হিসাবে বয়স একটু বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে কী? নিজের প্রতিবিম্ব কেমন তার জগতের আয়নায়– সেটা নিয়ে বড়ো পরিশ্রম হয়েছে এতদিন। সম্পর্ক হারিয়েছে। পুঁজিও। এখন আর পোষায় না। এই ভালো। আঙুলের ডগায় নিজের মতো গড়ে তোলা পৃথিবী।

Loneliness and show off
পাশের ঘরের আলমারির লকারে এখনো আছে মায়ের গয়না

বাইরে নেমে আসছে বিকেল। চোখ বুজে আসছে ঘুমে। মেয়েদের ফ্ল্যাট, কমপ্লেক্স, নতুন মুম্বই হাতছানি দিচ্ছে। ছোট মেয়েটা বলছিলো কোক স্টুডিওর একজন প্রোডিউসারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাছাড়া টুকটাক প্রোগ্রাম, সিরিয়ালের গান এসবের খোঁজ আসছে। কী সুন্দর জায়গাটা। ম্যানিকিওর্ড বাগান, লন, ওদের জামাকাপড় ফ্যাশন দেখলে কে বলবে সারাজীবন ওরা ওখানে থাকেনি? আচ্ছা ওদের সঙ্গে গিয়ে থাকলে কেমন হয়? তিনজন থাকে– ছোটমেয়ের সঙ্গে আলো ঘর ভাগ করে নিতে পারে। যদি টাকা পয়সা কিছু হাতে থাকত! ওদের ছবিগুলো আবার দেখল সে– শুরু করা যায় না? নতুন জীবন। 

কলকাতা পচে গেছে। মা আর ভালো হবে নাকি? মনে হয় না। কিন্তু টাকা? হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো খেলে গেল মাথায়। ঘুম নেমে আসা চোখ খুলে গেলো সটান। পাশের ঘরের আলমারির লকারে এখনো আছে– মায়ের সবসময় পরা ছাড়া আরো কিছু– সোনার এখন যা দাম! না না এটা ঠিক হবে না… তার কি মাথা খারাপ? ওই গয়নায় তার একার অধিকার নেই, আর মা এখনো আছে– যদি চিকিৎসায় লাগে? বারবার করে তাড়িয়ে দিলেও ফিরে আসছে নাছোড়বান্দা চিন্তারা। পাশের ঘরের আলমারির লকারে বিছে হার, কানপাশা, বালা, চুড়ি– কয়েকলাখ টাকা নির্জীবভাবে পড়ে আছে তার আর তার মেয়েদের ভবিষ্যৎ গায়ে জড়িয়ে। দেওয়ালের গায়ে বিকেলের সোনালি আলো…

***

একমাস পেরিয়ে গেছে। খোলা প্রান্তর দিয়ে রাত্রের ট্রেনের জানলায় কাছে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে আলোলিকা। একা। রাত্রের এই জানলায় শুধু নিজেকে ছাড়া আর তো কিছু দেখা যায় না। কাকে দেখছে সে? শূন্য দৃষ্টি আটকে গেল– কার মুখ রাত্তিরের ট্রেনের অন্ধকার জানলায়? তার মা? কবে মায়ের মতো দেখতে হয়ে গেল তাকে? মায়ের নাকের পাশের ভাঁজ, চশমার আড়ালে বসে হওয়া চোখ, চোখের তলার কালি– চোখ বন্ধ করে ফেলল আলো। 

girl-on-train
ট্রেনের জানলার কাছে বসে আছে আলোলিকা

মেয়েদের চমকে দিতে গেছিল সে। পানভেলে ঘিঞ্জি একটা ছোট ফ্ল্যাটে কোনওরকমে একচিলতে জায়গা হিয়ার। দিয়া তারই একদিকে প্রায় একটা কাবার্ডের মতো জায়গায়। অকথ্য খাটায় হিয়াকে– সময়মতো মাইনে দেয় না, আধবেলার ছুটিও পায়নি সে, আলোর আসার পর। মুম্বইয়ের ট্রেনে বসে জানিয়েছিল মেয়েদেরকে সে আসছে। ভেবেছিল খুশি হবে ওরা। আর এতগুলো টাকা সঙ্গে। স্টেশন থেকে তাকে নিতে আসা দিয়ার মুখ দেখে কিছুটা আন্দাজ করলেও এতটা ভাবতে পারেনি। কোনওরকমে দুটো রাত কাটিয়ে ফিরে আসা। বেশ কিছু টাকা দিয়ে এসেছে ওদের। কোনও আপত্তি করেনি কেউই। কলকাতা ফিরে কী বলবে সে বোনকে…  

অনেকদিন আগে একটা কোথায় পড়েছিল, পশ্চিম ভারতের  কোনও দ্বীপে আদিবাসী মেয়েদের একটা উৎসব-আচার ছিল, যাতে তারা আগুন জ্বালিয়ে অনেক কিছু আহুতি দিত। যেন তাদের নিজেদের, পূর্বজদের ভুলগুলো পুড়িয়ে ফেলত। কেন করত এমনটা? তাদের একজন লিখেছিল, যখন আমরা আয়না দেখি, যে আমাকে দেখি, সেটা তো আমাদের মা দিদিমারই ছায়া। আর আয়নায় দেখে, নিজেদের খুঁত সংশোধন করে নিজেদের আরো সুন্দর দেখতে চাই না? আগের প্রজন্মের খুঁতগুলো সংশোধন না করলে আরো সুন্দর হব কী করে? সেটাই তো করে আসছে আলোরাও। মায়ের থেকে বেশি আলো। আর আলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তার মেয়েরা। আরো সুন্দর দেখাচ্ছে-প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। 

কিন্তু ভবিষ্যতের কোনও অন্ধকার রাতে, এরকম একলা আয়নায় কী দেখতে পাবে আলোলিকার মেয়েরা?

 

*ছবি সৌজন্য: Pixels, Artmajeur, Bark, Saatchiart

জন্ম, বড় হয়ে ওঠা কলকাতায়। গত একুশ বছর ম্যাসাচুসেটস,আমেরিকা প্রবাসী। বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক। এখন পর্যন্ত লেখা বেরিয়েছে ওয়েব ম্যাগাজিন পরবাসে এবং আনন্দবাজারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com