banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

ভার্চুয়াল

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

Social Media

সুদাস ঘরের বাইরে আসে। সকালটা মনোরম। খড়িমাটি গ্রামে ওর পৈতৃক বসত। বাড়ির চৌহদ্দি পেরলেই ক্ষেত শুরু। ফসল উঠে গিয়েছে। অনাড়ম্বর মাঠ, খালি গায়ে শুয়ে আছে। ঘাসের ওপর শিশির ছুঁয়ে নতুন রোদ। ঝিকমিকে আলো সুদাসের পায়ে জড়ায়, শিরশির করে। মাঠের কোণে একটা নিম গাছ। সেখান থেকে একটা ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁতে কাটতে থাকে। চাকরির জন্য সারা সপ্তাহে টাউনে কাটাতে হয়, শুক্রবার বিকেল হলেই বাড়ি ফেরে। এই টান করে রাখা ফসলের মাঠ ফেলে, শহরে পড়ে থাকার কোনও মানে হয় না। সারা সপ্তাহ টুথব্রাশ-পেস্ট ব্যবহার করলেও, নিমডাল চিবোনো সুদাসের একটা সুখ। এর মধ্যে ফোন বেজে ওঠে। অনিন্দিতা।

এত সকালে ফোন দেখে অবাক হয়ে যায়,
– কী ব্যাপার? এত ভোরে?
– কাল রাতে চিঠিটা এসেছে। 
– কোন চিঠি? 
– ইমেল।
– কীসের ইমেল বলবে তো? 
– অ্যাপয়েন্টমেন্ট।
– আরিব্বাস! এত ভালো খবর, অমন ভয়ে ভয়ে বলছ কেন?
– মুম্বই যেতে বলছে।
– যেতে যখন বলছে, যাবে। এতে ভয় পাবার কী হয়েছে?
ওপাশ থেকে কোনও কথা নেই, শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়।
নিমডাল মুখ থেকে সরিয়ে সুদাস বলে,

– এমন সুযোগ সবাই পায়? তুমি যাও। 
– সবাইকে ফেলে কী করে থাকব? 
– সব অভ্যাস করতে হয়। বিকেলে খড়িঘাটে এসো, দেখা হবে।

ওপাশ থেকে শুধু ‘উঁ’ করে একটা শব্দ হয়। খবরটা পেয়ে সুদাস খুশি হয়েছে, সঙ্গে খানিক কষ্ট মেখে থাকে, ওই শিশির জড়ানো পায়ের মতো। খড়িমাটিতে অনিন্দিতা আছে জেনে টাউনে ঘাড়গুঁজে কাজ করে। অনিন্দিতার সঙ্গে দেখা হবে, তাই প্রতি সপ্তাহের শেষে গ্রামে ফিরে আসা। এই দিগন্ত-ছোঁয়া মাঠ, ফসলের ঘ্রাণের সঙ্গে ওদের সম্পর্কটাও যেন মিলেমিশে রয়েছে। এখান থেকে আনিন্দিতা পাড়ি জমাবে মুম্বই! ভাবতেই মনের ভেতর ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়, সকালে চাদর জড়াতে ভুলে গেছে আর মাঠ থেকে মন কেমন করা ওই ফিনফিনে হাওয়া ছুটে এসেছে। সুদাস ভালোই জানে, ওর জীবনে নরম চাদরের মতো অনিন্দিতার উপস্থিতি। 

 

আরও পড়ুন: হৈমন্তী ভট্টাচার্যের গল্প: পলাশ পথে

 

খড়িঘাটে নৌকা এপার-ওপার করে। হাট ফেরত মানুষরা আসে, সঙ্গে তাদের সওদার থলি। কেউ আসে ফাঁকা ঝুড়িগুলো নিয়ে, কেউ বা দুটো ছাগল, কিছু গাঁঠরি। এসব গেরস্থালির সাধারণ জিনিসে বোঝাই হয়ে নৌকা ছেড়ে যায়। তেমন চওড়া নয়। বিকেলে আবছা ধোঁয়া-ওঠা জল পেরিয়ে যায়। ওপার থেকেও একইরকম আর একটি নৌকা এসে ঘাটে দাঁড়ায়। অনিন্দিতা নেমে আসে, সবুজ ডুরে শাড়ি আর হালকা হলুদ একটা চাদর জড়ানো গায়। সুদাস বটগাছের ওপাশে অপেক্ষায়। অনিন্দিতা ভীরু গলায় বলে,
– আমি পারব?
– আচ্ছা, ওরা তো তোমায় পারবে বলেই পছন্দ করেছে? 
– ওখানে কেউ বাংলা জানে না। আমি কী করে কথা বলব?
– তুমি তো ইংরাজি নিয়েই পড়াশুনা করলে। পারবে না কেন? এত হিন্দি ছবি দেখে, হিন্দিও তো ভালোই বোঝো। 
– বোঝা এক, আর বলতে পারা অন্য। 
– ভেবো না। জলে নেমেই সাঁতার শেখে।
– তোমার সঙ্গে দেখা হবে না।
– রোজ ভিডিও কল করবে, আর ছুটিতে চলে আসবে।
– কবে ছুটি পাব?

কথার পিঠে কথা চলতেই থাকে। বিকেলের সূর্য ধীরে ধীরে অস্তমুখী। খেয়া পারাপার কমে এসেছে। এবারে ফেরার নৌকা না ধরলে অনেক ঘুরে, বাসরাস্তা হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সুদাস এগিয়ে দেয়। ঝুপ-ঝুপ অঘ্রাণের সন্ধ্যা নামে। নৌকো একটু এগোতে আর মুখ দেখা যায় না। একটা স্তিমিত স্মৃতি বুকে নিয়ে সুদাস ঘরে আসে। অনেক সাহস জুগিয়ে তারও কেমন অর্থহীন মনে হয়।

অনিন্দিতা ইংরাজি সাহিত্যের স্নাতক। মুম্বইতে একটা বড় বহুজাতিক কোম্পানিতে ‘কনটেন্ট ডেভেলপার’ হিসেবে যোগ দিল। কাছেই এক প্রবাসী বাঙালি পরিবারে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার জায়গা পায়। আপিসে অবাক করা দুনিয়া! এরা ‘ভার্চুয়াল’ জগতেই থাকে। অনিন্দিতার একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে, কখনও তেমনভাবে ব্যবহার করেনি। ওর ফোনটাও স্মার্ট নয়। আপিসে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক এইসব নিয়েই কাজ হয়। কাজটা যে ঠিক কী, এখানে আসার আগে বুঝতে পারেনি। প্রথম টিম মিটিংয়ে ম্যানেজার বিকেকেএম অর্থাৎ ‘ব্যাঙ্গালুরু কুমার কেশবমূর্তি’ বোঝাতে শুরু করে। কারও নামের মধ্যেই শহরের নাম ঢোকানো থাকে, অনিন্দিতার জানা ছিল না।

‘সোশাল মিডিয়া’ এক অধরা বাস্তব। কিন্তু এতেই মজে আছে দুনিয়া। ভার্চুয়াল হলেও এই ‘মিডিয়া’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে মানুষের পাপ-পুণ্যের জীবন। দূরত্ব অতিক্রম করে যেমন ভাব-ভালোবাসা হয়, তেমনি খুন, নাশকতা, দেশবিরোধী কাজকর্মেও ভরে গেছে। প্রতিটি দেশ এই সোশাল মিডিয়াকে লাগাম পরাতে চেষ্টা করে চলেছে। অনিন্দিতাদের আপিস, এমনই লাগাম পরানোর কাজ করে। ওদের কোম্পানি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার-সরঞ্জাম নিয়ে সারাক্ষণ নজরদারি করে। কোথায় কে নিয়ম লঙ্ঘন করল, অহর্নিশ সেই খোঁজ চলে। খুঁজে পেলে, তাকে মুহূর্তে নিষ্ক্রিয় করে, সরকারের বিশেষ দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতে হয়। অনিন্দিতাদের টিম প্রযুক্তির নানা রকম উপায়ে এই অ্যাকাউন্টগুলো খুঁজে বার করে। আর সেইসব তথ্য, কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার শক্তি বৃদ্ধি করে। 

Social Media Viral
ভার্চুয়ালের দুনিয়া এক ভয়ঙ্কর চোরাবালি

কেশবমূর্তি কাজ বোঝাতে, নতুন কর্মীদের একটা লম্বা ক্লাস নেয়।
– ভার্চুয়ালের দুনিয়া এক ভয়ঙ্কর চোরাবালি। নিজের অজান্তে মানুষ পদচিহ্ন রেখে যায়। পরিভাষায় বলে, ‘ডিজাট্যাল ফুটপ্রিন্ট’। বিশ্বজোড়া আন্তর্জালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিনে রাখে, ব্যবহারকারী কোন সাইট দেখছে? কে তার বন্ধু? সে কোথায় থাকে? কোন জায়গাতে সে যায়? কোন পণ্য সে উইন্ডোশপিং করে? আর কোন পণ্য সে কেনে? কোন রাজনীতিতে বিশ্বাস করে? কোন সিনেমা দেখে? কোন গান শোনে? কোন জামা পরে? কোন গাড়ি চড়ে? এমনি আরও হাজারো প্রশ্নের উত্তর ক্রমান্বয়ে গ্রন্থিত হতে থাকে। পদচিহ্ন জুড়ে জুড়ে প্রতিটি মানুষের মনস্তাত্বিক অবয়ব তৈরি হয়। সেই অবয়ব অনুযায়ী পরিচালিত হয় পরবর্তী পদক্ষেপ। যে ক্রিকেট পছন্দ করে, তার সোশাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টে শুধু ক্রিকেটের খবরই আসে। ফুটবল, দাবা বা অন্য খেলা তেমনভাবে নয়। অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সর্বশক্তিমানের মতো ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ন্ত্রণ করে পছন্দের হিসেব। মানুষকে নিয়ে, মানুষের দ্বারা যে সৃষ্ট সেই প্রযুক্তি এখন মানুষকেই পথ দেখায়, নিয়ন্ত্রণ করে। এক সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে মানুষ ধরা দেয়। সেখানে আমি, তুমি, আমরা, সবাই। কেউ এই জালের বাইরে নই।

ছেলেমেয়েগুলো স্তম্ভিত হয়ে কথা শুনছিল। অনিন্দিতা এক্কেবারে গ্রামের মেয়ে। খড়িমাটির বাইরে, বড় জোর কৃষ্ণনগর বা রানাঘাট অবধি তার যাতায়াত। এক ধাক্কায় মুম্বই এসে, এই ভার্চুয়াল পৃথিবী দেখে বিস্ময়ের পরিমাপ করতে পারে না! এরপর, অনিন্দিতাকে ‘উন্মুক্ত-যৌনতার পসরা সাজানো’ একশোটা ভারতীয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে বার করতে বলা হয়। আইন অনুযায়ী, এমন পোস্ট নিষিদ্ধ। তাই লঙ্ঘনকারীকে খুঁজে বার করে ব্লক করাই ওদের কোম্পানির কাজ। কেশবমূর্তি ওদের বুঝিয়ে দেয়, ঠিক কীভাবে এই কাজটা করবে, কোন সফটওয়্যার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে।

অনিন্দিতা নিজের সিটে বসে, কম্পিউটারে লগ ইন করে, ফেসবুকে ঝাঁপ দেয়। বসের দেখানো পদ্ধতি মেনে একের পর এক রগরগে যৌন আবেদন সম্বলিত পোস্টগুলো খুঁজে বার করতে থাকে। প্রথম প্রথম কান গরম হয়ে ওঠে। আশেপাশে নজর করে, কেউ দেখে ফেলছে কিনা… একশোরও বেশি অ্যাকাউন্টের তালিকা করতে বেশি সময় লাগে না। পরের মিটিংয়ে কেশবমূর্তি অনিন্দিতার কাজ দেখে বেশ খুশি হয়। পরবর্তী কাজ হিসেবে খুঁজতে বলে, হিংসা আর যৌনতার মিশ্রণ। ওদিকে সুদাসের মন ভালো নেই। অনিন্দিতাবিহীন দিনগুলো ভীষণভাবে শ্রীহীন, শুকনো পাতার মতো নীরস। দূরত্ব ঘোচাতে সেই ভার্চুয়াল দুনিয়ার কাছেই হাত পাতে। সবসময় তো ফোনে কথা বলা যায় না। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম দিয়ে দু’জন দু’জনকে ছুঁয়ে থাকে। কিন্তু কদিন ধরে সুদাস লক্ষ্য করে, অনিন্দিতার ফেসবুকের পাতায় শুধুই যৌন উত্তেজনার পোস্ট। বেশ ঘাবড়ে যায়! 

‘সোশাল মিডিয়া’ এক অধরা বাস্তব। কিন্তু এতেই মজে আছে দুনিয়া। ভার্চুয়াল হলেও এই ‘মিডিয়া’কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে মানুষের পাপ-পুণ্যের জীবন। দূরত্ব অতিক্রম করে যেমন ভাব-ভালোবাসা হয়, তেমনি খুন, নাশকতা, দেশবিরোধী কাজকর্মেও ভরে গেছে। প্রতিটি দেশ এই সোশাল মিডিয়াকে লাগাম পরাতে চেষ্টা করে চলেছে। অনিন্দিতাদের আপিস, এমনই লাগাম পরানোর কাজ করে।

অনিন্দিতা কয়েকদিনের মধ্যে কাজের মোটামুটি একটা ছন্দ পেয়েছে। বুঝতে পারছে, ওর কাছে কোম্পানি কী চাইছে। পেয়িং গেস্ট-এর বাড়িটা খুব বেশি দূরে নয়। সারাদিন কাজের জন্য কম্পিউটার আর মোবাইল ঘেঁটে, ঘরে ফিরে আর ফোন ধরতে চায় না। বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মমাফিক দুটো কথা বলে রেখে দেয়। সমস্যা হয় সুদাসকে নিয়ে, ওর কথা ফুরতে চায় না। ফোনের ভেতর দিয়েই ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে থাকতে চায়। অনিন্দিতা আর পারে না। বলেই ফেলে,
– আজ বড্ড টায়ার্ড লাগছে। রাখি? 
– তোমার তো রোজই ক্লান্ত লাগে।
– কী করব বলো? কাজটাই এমন। তখন তো জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছ। এখন সহ্য করতে হবে। 
– কিন্তু তোমার ফেসবুক জুড়ে এসব কী? 
অনিন্দিতা বুঝতে পারে না, সুদাস কী বলতে চাইছে। একটু বিরক্ত হয়েই বলে,
– দেখো ওগুলো আমার কাজের জায়গা। ওসব নিয়ে বেশি ভেবো না।

Social Media World
মুম্বই গিয়ে ওর ভালোবাসার মানুষটা কি হারিয়ে কি গেল?

এরপর আর কথা এগোয় না। সুদাস ফোন রেখে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। এখন টাউনেই আছে। শহুরে আকাশ কৃপণ। সেখানে না আছে তারা, না আছে বিস্তার। ধোঁয়া ধোঁয়া পরিবেশে, বড় বাড়ির ফাঁক দিয়ে ভাঙাচোরা পরিসরকে আকাশ বলে চেনাই যায় না। ঠিক যেমন অনিন্দিতাকে আজ চিনতে পারল না। অনিন্দিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটুকু ছোঁয়াতেই সুদাসকে অনেক তপস্যা করতে হত। সেই অনিন্দিতার ফেসবুকের দেওয়াল জুড়ে শুধু কামগন্ধী ছবি! মুম্বই গিয়ে ওর ভালোবাসার মানুষটা কি হারিয়ে কি গেল? রাতে ঘুম আসে না সুদাসের। শুতে গিয়ে অনিন্দিতারও সুদাসের কথা মনে পড়ে। ও কি আজ একটু বেশিই রুক্ষতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছে? নিজেকে নিজের কাছেই খানিক অপরিচিত লাগছে। শিকড় উপড়ে চলে এসে ওর কি চরিত্র বদলে যাচ্ছে?

আপিসে বন্দনার সঙ্গে বেশ খাতির হয়েছে। এই ট্রেডে অনেকটাই সিনিয়র। পরদিন লাঞ্চের সময়, গতরাতের কথাটা বন্দনাকে বলে অনিন্দিতা।
– এই, আমি কি পাল্টে যাচ্ছি? 
প্রায় চার মাস এই কোম্পানিতে কাজ হয়ে গেছে। বন্দনা সবটা মন দিয়ে শোনে। নিজের ফোন বার করে চট করে অনিন্দিতার ফেসবুকটা দেখে, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তুই কি তোর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে আপিসের অ্যাসাইনমেন্ট করেছিস? 
– হ্যাঁ, মানে, আমার তো একটাই অ্যাকাউন্ট! 
– বিকেকেএম কে জিজ্ঞেস কর? তোকে আলাদা অ্যাকাউন্ট করে দেবে। কেউ নিজের প্রোফাইল থেকে এইসব সার্চ করে? তুই এক্ষুণি ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে নিজের নতুন প্রোফাইল খুলবি। ওই জন্য তোর ওয়াল জুড়ে সব ‘সেক্সুয়াল ফিড’। সেসব দেখে তোর বয়ফ্রেন্ডের ঘুম উড়ে গেছে। আমার বর হলে তো, ডিভোর্স দিয়ে দিত। এইসব কাজের ব্যাপার, অন্য ডোমেন-এর লোক কিছু বুঝবে না। তুই ওকে পরে এক্সপ্লেন করে দিস।

Social Media Menace
শান্ত সবুজ খড়িঘাট থেকে এসে, এ কোন পৃথিবীর সঙ্গে ওর আলাপ হল?

ব্যাপারটা এত গুরুতর হয়ে যাবে, অনিন্দিতা সত্যিই বোঝেনি। যাইহোক, বন্দনার কথা মতো ক্ষতি মেরামত করতে শুরু করে। কিন্তু এবারে ভায়োলেন্স কন্টেন্ট খুঁজে বার করার অ্যাসাইনমেন্ট পেয়ে ওর মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। মানুষ এত নৃসংশ হতে পারে! এক একটা ভিডিও খুঁজে বার করছে, আর হাত পা পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে। একটা মেয়েকে একের পর এক ধর্ষণ করে, শেষে একটা ভাঙা বিয়ারের বোতল নিম্নাঙ্গে অবলীলায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পেঁয়াজ কাটার মতো করে মানুষের গলার নলি কেটে দিচ্ছে। হাঁটু মুড়ে বসিয়ে মাথায় পিস্তল দেগে দিচ্ছে। আর সেগুলো জনসমক্ষে পোস্ট করছে। 

সেদিন অনিন্দিতা একশোটা এমন ভয়ঙ্কর ভিডিও খুঁজে বার করে, বাড়ি ফিরেছে প্রায় কাঁপতে কাঁপতে। বমি বমি লাগছে। রাতে খেতে পারেনি। মনের মধ্যে ঘুরে ঘুরে রক্ত, এক পক্ষের যন্ত্রণা আর অন্যপক্ষের পাশবিক উল্লাসভরা মুখগুলো ফিরে আসছে। বাড়িওয়ালি দু’বার খোঁজ নিয়ে গেছেন। জ্বর এসেছে দেখে দুটো প্যারাসিটামলের বড়ি রেখে গেলেন। আর বলে গেলেন পরদিন আপিস থেকে ছুটি নিতে। সত্যি বলতে, আবার আপিসে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসার কথা ভাবলেই অনিন্দিতার আতঙ্ক হচ্ছে। ওর সবুজে ঘেরা নরম গ্রামের পথ ছেড়ে, এখানে এত হিংসা, ক্লেদ, শরীর নিয়ে ঘিনঘিনে কাম! 

মনে পড়ে খড়িঘাটের শান্ত নিরুপদ্রব দিনগুলোর কথা। মেঘের আলতো ঢাকনা দিয়ে যত্নে মোড়া পৃথিবী। নদীর স্রোতের ওপর খেয়া ভেসে চলেছে। সেখান থেকে এসে, এ কোন পৃথিবীর সঙ্গে ওর আলাপ হল? অনিন্দিতা জানে না। অনেক দূরে, একা, এক অচেনা পৃথিবীতে, অনিন্দিতা জ্বর গায়ে রাতে প্রলাপের মতো সুদাসকে ডাকতে থাকে।

 

*ছবি সৌজন্য: Saatchiart

এক সর্বগ্রাসী হাঁ-করা চোখ নিয়ে, কলকাতা ও সংলগ্ন শহরতলিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌরভের। যা দেখেন, তাই মনে হয় ছুঁয়ে দেখলে ভালো হয়। কিছুটা প্রকৌশল, কিছুটা ছবি আঁকা, ভাষা শিক্ষা, থিয়েটার এমন আরও অনেক কিছু। এভাবেই ভেসে চলা। শৈশবে স্কুল পত্রিকায় হাত পাকিয়ে রেল স্টেশনে দেওয়াল পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিনের পাতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক পত্রিকায় পৌঁছনো। জীবিকার তাগিদে কম্পিউটারের সাথে সখ্য। পাশাপাশি কয়েক মাইল ‘কোড’লেখা চলে সমান্তরাল। কর্পোরেটের হাত ধরে পৃথিবীর কয়েক প্রান্ত দেখে ফেলার অভিজ্ঞতা। সবই উঠে আসে লেখায়। আপাততঃ কলকাতা ও ঢাকা মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা সাত।

7 Responses

  1. সুন্দর লেখা।একদম যুগোপযোগী।সত্যিই আজকাল ভার্চুয়াল জগৎ এর অনেক কিছু মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করে।এরকম আরও লেখা চাই।

  2. প্রযুক্তির দুনিয়ার বড় রুক্ষ ও কঠিন বাস্তব ফুটে উঠেছে গোটা কাহিনি জুড়ে। পাশাপাশি একটা হাহাকার ও অপূর্ণতা, যা সুদাস ও অনিন্দিতার মনোজগৎ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পাঠকের মনেও। সার্থক একটি ছোটগল্প।

  3. সময়োপযোগী লেখা। বিষয় নির্বাচন অনেক ভাবনার দিক খুলে দেয়। যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষ এর সুচতুর প্রভাব ফেলছে ভাবলে আতঙ্কিত হতে হয়। এসবই মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষের প্রতিদিনের ডেটাই তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে বুদ্ধি জুগিয়ে চলেছে। কিন্তু মানুষ যদি এর ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে তবে এবং ভাবনা চিন্তা করা ছেড়ে দেয় তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একদিন দুর্বল হয়ে পড়বে। অতএব মানুষ এর উদ্ভাবনী শক্তি তে শান দেওয়া বন্ধ করলে চলবে না। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা র ব্যাবহারে মানুষ কে অনেক সচেতন হতে হবে। নাহলে সমাজে অনেক জটিলতা বাড়বে , মানবিক দিক গুলো ক্রমশঃ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে। সম্পর্কে র টানাটানি শুরু হবে। এসবের ইঙ্গিত এই গল্প সুচারুতার সাথে সঙ্গে ছুঁয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com