সম্প্রতি শ্রীমতী মমতাশঙ্করের এখনকার মেয়েদের শাড়ির আঁচল কোথায় থাকা উচিত বা অনুচিত, ইত্যাদি নিয়ে ভাষণ শোনা গেলো। রাস্তার-মেয়ে বা ল্যাম্প-পোস্টের নীচে দাঁড়ানো মেয়েরা যেভাবে শাড়ির আঁচল দেয়, আজকাল সেভাবে সাজ করা অনেক মেয়েকে দেখে উনি দুঃখিত এবং মর্মাহত। তবে ল্যাম্প- পোস্টের নীচে দাঁড়ানো মেয়েদের সেরকম সাজে ওঁর বিশেষ আপত্তি নেই। যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ওই সাজ, সেক্স ওয়ার্কারদের ‘পার্ট অফ জব’। হয়তো বলতে চেয়েছেন কাজের ‘ইউনিফর্ম’। ওই পোষাকে পুরুষ আকৃষ্ট হয়, বলে তাঁর ধারণা। মাঠে কাজ করা মেয়েদের আঁচল সরে যেতেই পারে, কারণ তারা পরিশ্রমের কাজ করে। সেটা ম্যাডাম ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখেন। কিন্তু অন্য মেয়েদের সেভাবে শাড়ি পরার কোনো কারণ নেই, একমাত্র পুরুষ জাতিকে আকর্ষিত করা ছাড়া।
অথচ উনি ফিল্মে কাজ করেছেন। ফিল্মের নায়িকা, যাঁরা ট্রেন্ড সেট করেন, তাঁদের অনেকেই, যেমন সুপ্রিয়া দেবী থেকে শর্মিলা ঠাকুর হয়ে বর্তমান নায়িকাদেরও কিন্তু সেইভাবে শাড়ি পড়ার ধারা বহমান। চোপড়া, জোহরদের ফিল্মে শিফনের শাড়িতে, উড়ন্ত আঁচলে ‘রেখা’, বেশ কয়েকটি জেনারেশনের হার্টথ্রব। ছবি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম। সমাজের বা কালচারের অনেক কিছু সেট করে দেয়। একজন নায়ক বা নায়িকা কোটি কোটি মানুষের আইকন। ব্যক্তি মানুষ, নিজেকে আইডেন্টিফাই করে তাঁর সঙ্গে। নীতিওয়ালাদের লেকচার মাঠে মারা যায়। কিন্তু মনে থাকে হেমা, জিনাত, পরভীন, অপর্ণা, রানি, দীপিকা।
বর্তমান লেখকের, ফিল্মের ইস্কুলে পাঠ নেবার সময়, কাটকার স্যার, যিনি ‘mise en scene’ এর ‘আলিফ বেহ ‘ পড়াতেন, বলেন যে, ‘অভিমান’ ছবি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল,’perfect Indian wife’ এর রিপ্রেজেন্টটেশন জয়া ভাদুড়ীর রোলে। এইভাবে গড়ে ওঠে আইডিয়া, ইমেজ, আইকন। সোশ্যাল সাইন্স এর রিসার্চের বিষয়।

স্বামী বিবেকানন্দের “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য” প্রবন্ধ, প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০০-১৯০১ সালে উদ্বোধন পত্রিকায়। ১৯০৯ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। স্বামীজি লেখেন: “পাশ্চাত্য দেশের মেয়েদের পা দেখান বড়ই লজ্জা, কিন্তু গলা ও বুকের খানিকটা দেখান যেতে পারে। আমাদের দেশে মুখ দেখান বড়ই লজ্জা; কিন্তু সে ঘোমটা টানার চোটে শাড়ী কোমরে ওঠেন উঠুন, তায় দোষ নেই। রাজপুতানার ও হিমাচলের অষ্টাঙ্গ ঢেকে তলপেট দেখানো!” স্বামীজি অবজার্ভ করেন দুই সভ্যতার পোশাকের আরো গভীর তত্ত্ব: “পাশ্চাত্য দেশের নর্তকী ও বেশ্যারা লোক ভুলাবার জন্য অনাচ্ছাদিত। এদের নাচের মানে, তালে তালে শরীর অনাবৃত করে দেখানো। আমাদের দেশের আদুর গা ভদ্রলোকের মেয়ের; নর্তকী বেশ্যা সর্বাঙ্গ ঢাকা। পাশ্চাত্য দেশে মেয়ে ছেলে সর্বদাই গা ঢাকা, গা আদুর করলে আকর্ষণ বেশী হয়; আমাদের দেশে দিনরাত আদুর গা, পোষাক পরে ঢেকেঢুকে থাকলেই আকর্ষণ অধিক। মালাবার দেশে মেয়ে-মদ্দের কৌপীনের উপর বহির্বাসমাত্র, আর বস্ত্রমাত্রই নেই। বাঙালীরও তাই, তবে কৌপীন নাই এবং পুরুষদের সাক্ষাতে মেয়েরা গা-টা মুড়ি-ঝুড়ি দিয়ে ঢাকে।”
বিভিন্ন সমাজে মেয়েদের শরীর কতটা দেখানো যাবে, তার মাপকাঠি আছে। মমতাশঙ্কর নারী শরীরের যে অংশের নাম উল্লেখ করেননি, সেটি আমেরিকান সাহেবদের ভাষায় ‘ক্লিভেজ’। স্বামীজি ১৯০০ সালে যখন “প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য” লেখেন, তখনও শব্দটির এই অর্থে ব্যবহার করার প্রচলন হয়নি। ১৯৪৩ সালে, জোসেফ ব্রীন নামে এক আমেরিকান সাহেব শব্দটি ব্যবহার করেন জেন রাসেলের ‘breasts’ বোঝাতে। ছবির নাম “The Outlaw”. ১৯৪৫ সাল থেকে বিলেতের সাহেবরা ক্লিভেজ শব্দটির ব্যাবহার শুরু করেন নারীর বিশেষ অঙ্গ বোঝাতে। এখনও বাংলায় শব্দটিকে খারাপ মনে করা হয়। টাইম ম্যাগাজিনে, ১৯৪৬ সালে শব্দটার অর্থ হিসেবে লেখা হয়: “It is most commonly used in the parlance of Western female fashion to refer to necklines that reveal or emphasize décolletage (display of the upper breast area)”.
এখন আবার দেখা যায় ‘heavage ‘ শব্দটির ব্যবহার। “Male cleavage (also called heavage), accentuated by low necklines or unbuttoned shirts, is a film trend in Hollywood and Bollywood. Some men also groom their chests.” মামার বাড়িতে দেখেছিলাম দাদু, দুই মামা রীতিমতো মুগুর নিয়ে ব্যায়াম করেন। দাদু ছিলেন কৃষ্ণ বর্ণের বৃষস্কন্ধ, সিংহকটির এক বিশাল পুরুষ। মামারাও সেরকম। সে যুগে বডি, একমাত্র বডি বিল্ডিং অনুষ্ঠানে দেখানো হতো। বর্তমান লেখকের মামারবাড়ী ছিলো পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহ সাবডিভিশন। জিলা কুমিল্লা। বাবার বাড়ি বর্ধমান। সেই পরিবারে ব্যায়াম করার চেষ্টা দেখা যায়নি। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ ‘ছবিতে ছেলেদের বডি বিল্ডিং ব্যাপারটায় হয়তো একটু শ্লেষের আভাস ছিলো।

১৯৬২-তে ‘Dr. No’ ফিল্মে ‘underneath the mango tree’ গানের সাথে সাগর থেকে বিকিনি পরে ‘Ursula Andreas’ উঠে আসছেন আর ‘Sean Connary’ এর সাথে সারা পৃথিবী দেখছে সাগর উত্থিতা সেই রূপ। এই ছবিতে Connary সাহেবের উন্মুক্ত ঊর্ধ্বাঙ্গও দর্শককে মুগ্ধ করে। হয়তো সেখান থেকেই পুরুষের শরীরকে ‘objectify’ করার চেষ্টা হয়। হিন্দী ছবি ‘কুরবানী’তে আমরা ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত আলফা-মেল বিনোদ খান্নাকে দেখি। তবে ছেলেদের শরীর গঠন করা এবং প্রদর্শন করার ট্রেন্ড হৃতিক রোশন, শারুখ খান, সালমান খান চালু করেন। দীপিকা, কাটরিনার জিম করা বডি আদর্শ হয়ে উঠেছে। বর্তমান লেখক যেহেতু তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত, সেখানে দেখা যায় ইয়ং ছেলেমেয়েদের পোষাক নিয়ে ‘taboo’ ব্যাপারটা অনেক লুপ্ত হয়ে গেছে। সেখানে সুগঠিত শরীর প্রশংসার জিনিস। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সৌন্দর্যবোধের ভিক্টোরিয়ান নীতিকথা থেকে সরে যাচ্ছে সমাজ। ওই ইংরিজিতে বলে, ‘চেঞ্জ ইস ওনলি কনস্ট্যান্ট’। প্রাণী জগতে চোখে পড়ে পুরুষ ময়ূরের বা সিংহের বা গরিলার বা হরিণের অসামান্য সৌন্দর্য। জীববিদ্যার প্রাকৃতিক থিওরি অনুযায়ী শক্তিশালী সৌন্দর্য প্রজননের অধিকার ছিনিয়ে নেয়। এদেশে এখনও অনেক রক্ষণশীলতা দেখা যায়।
স্বামীজির লেখার পর শতাব্দী পার হয়ে গেছে। সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালেও ‘মেয়েদের পোষাক’ আলোচনার বিষয়। কদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ নরকগুলজার, পক্ষে আর বিপক্ষে। আর্গুমেন্টটেটিভ বাঙালি। একদল বলেন পিতৃতন্ত্রকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে মাট্রিয়ার্কি। সেখানকার পাওয়ার স্ট্রাকচারের গঠন শুধুমাত্র মিসোজিনিকে সাহায্য করে। ‘ক্লিভেজ’ দেখানো আসলে পুরুষের লিবিডোকে জাগিয়ে দেওয়া। নারী ছলনাময়ী, পুরুষ দুর্বল, ইত্যাদি, ইত্যাদি। পার্লামেন্টে দেখা যায় নানা নারী বিরোধী মন্তব্য করেন আইন প্রণেতারা। অন্য দল বলে যে নারীর পোষাক কী হবে সেটা ব্যক্তিগত স্তরে নারীকে ডিসাইড করতে দেওয়া হোক। রাষ্ট্র বা পিতৃতন্ত্রের সে অধিকার নেই। আলোচনা হয়েই চলে।
স্বামীজি লেখেন, “প্রাচীন আর্যজাতিরা ধুতি-চাদর পরত; ক্ষত্রিয়দের ইজার ও লম্বা জামা—লড়াইয়ের সময়। অন্য সময় সকলেরই ধুতি-চাদর। কিন্তু পাগড়িটা ছিল। অতি প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে মেয়ে-মদ্দে পাগড়ি পড়ত। এখন যেমন বাঙলা ছাড়া অন্যান্য প্রদেশে কপনি-মাত্র থাকলেই শরীর ঢাকার কাজ হল, কিন্তু পাগড়িটা চাই; প্রাচীনকালেও তাই ছিল—মেয়ে-মদ্দে। বৌদ্ধদের সময়ের যে সকল ভাস্কর্যমূর্তি পাওয়া যায়, তারা মেয়ে-মদ্দে কৌপীন-পরা। বুদ্ধদেবের বাপ কপনি পরে বসেছেন সিংহাসনে; তদ্বৎ মাও বসেছেন—বাড়ার ভাগ, এক-পা মল ও এক-হাত বালা; কিন্তু পাগড়ি আছে! সম্রাট্ ধর্মাশোক ধুতি পরে, চাদর গলায় ফেলে, আদুড় গায়ে একটা ডমরু-আকার আসনে বসে নাচ দেখছেন! নর্তকীরা দিব্যি উলঙ্গ; কোমর থেকে কতকগুলো ন্যাকড়ার ফালি ঝুলছে।”
কিছুদিন আগে চন্দ্রযান চাঁদে পৌঁছে গেলো। সেখান থেকে ভিডিও পাঠালো। লাইভ টেলিকাস্ট দেখে দেশ গর্বিত। পুরুষের পাশাপাশি দেখা গেলো মহিলা বৈজ্ঞানিকদের। প্রধানমন্ত্রী মহিলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করলেন। নারীশক্তির প্রগতিতে দেশ মুগ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনা শুরু হয়। এতো পণ্ডিত অথচ তাঁরা আদর্শ ভারতীয় নারী। শাড়ি পরেন, মঙ্গলসূত্র, শাঁখা, সিঁদুর, গয়না। অর্থাৎ ভারতীয় নারী কোয়ান্টাম ফিজিক্সে এক্সপার্ট হলেও, এন্ড অফ দা ডে, তিনি শাড়ি, সিঁদুর, মঙ্গলসূত্র পরেন কিনা সেটা পাবলিক ডোমেইনে আলোচনার বিষয়। সেটা হয়তো সহজ, কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স, মাথস ইত্যাদি ইস নট কাপ অফ টি। গার্গী, মৈত্রেয়ী হয়ে খনা, লীলাবতী হয়ে আজও ভারতীয় নারী নমস্য। নারী হয় দেবীরূপে পূজিতা অথবা দাসীরূপে অবহেলিতা। ইক্যুয়াল পার্টনার হিসেবে এখনও খুব কম দেখা যায়।

আজ ‘breast’ ব্যাপারটা নারী শরীরের অঙ্গ থেকে সমাজে সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গেছে। এই কালচারের একটা অংশ, ‘aesthetics’. সেখানে কবিতা, গান, গদ্য, ছবি লিখে মানুষের মনন পরিতৃপ্ত হয়। আরেকটা অংশ ‘voyeuristic’, ‘ইরোটিক’। সেখানে লিবিডো জায়গা খোঁজে। ব্যবসায়ীরা প্রোডাক্ট বানিয়ে দু’দিক দিয়ে মুনাফা কামান। সত্তরের দশকে আমেরিকায় নারীমুক্তি আন্দোলনের একটা পর্যায়ে ‘brest’ খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ নেয়। ওই পর্যায়কে একটু ব্যঙ্গ করে ‘bra – burning feminist’ ইত্যাদি টার্ম ব্যাবহার করা হয়।
সনাতন ধর্মচেতনায়, মন্ত্রে দেবীর ‘breast’ এ মাতৃ-চেতনার আভাস, যা মানব শিশুকে পুষ্টি জোগায়। প্রাচীন ভাস্কর্যে, গুহাচিত্রে পুরুষ, নারী নির্বিশেষে ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত। মন্দিরে দেখা যায় বিভিন্ন মুদ্রায় সঙ্গমের কারুকার্য। অর্থাৎ এদেশে ‘নুডিটি’ এবং ‘দেহ মিলন’ কোনো ‘taboo’ বিষয় নয়, ‘perversion’ এর বিষয় নয়। অতীব সুস্থ, স্বাভাবিক এক চেতনা, যা মন্দির গাত্রে এক্কেবারে সমাজের মেনস্ট্রিম এর অংশ। রাবণ লিখিত ‘ শিব তাণ্ডব’ স্তোত্র, দেবাদিদেব মহাদেবের বর্ণনা আর বন্দনা, যা আজও গীত হয় ভারতের সর্বত্র। সাত নম্বর শ্লোক:
“করালভালপট্টিকাধগদ্ধগদ্ধগজ্জ্বল-
দ্ধনংজযাধরীকৃতপ্রচংডপংচসাযকে ।
ধরাধরেংদ্রনংদিনীকুচাগ্রচিত্রপত্রক-
-প্রকল্পনৈকশিল্পিনি ত্রিলোচনে মতির্মম”।
সেই ত্রিলোচনে আমাদের মতি হোক, যিনি প্রচণ্ড তাণ্ডব নৃত্য করেন, এবং একমাত্র তিনিই ধরেন্দ্র নন্দিনীর কুচ যুগলে ছবি আঁকেন। কালিদাস থেকে গীতগোবিন্দ সর্বত্র দেহের বর্ণনা। প্রেম, কাম, পূজা, নগ্নতা, একত্র হয়ে ভারতীয় ধর্ম চেতনা, ভারতীয় সংস্কৃতি। ‘objectification’, ‘fetish’, ‘pervert’ এসব পাশ্চাত্য সভ্যতা থেকে আমদানি। একদল ঐতিহাসিকের মতে মুসলিম ইনভেশনের সময় থেকে এদেশে নারী শরীর ভীষণ ভাবে ঢাকার প্রবণতা আসে। সে প্রসঙ্গ উহ্য থাক।
মুসলমান শাসনের অবসানে, আসে ইউরোপ থেকে বণিকের মানদণ্ড, বন্দুক আর বাইবেল নিয়ে সাহেবরা। ইউরোপ তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানে আলোকিত। শক্তিশালী সব রাষ্ট্র । এখানে উপনিবেশ স্থাপন করে বিলেতের সাহেবরা। ইংরিজি ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বাইবেলের অনুবাদ নিয়ে পাদ্রীরা সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে পড়ে। খ্রিস্টিয়ান ধর্মই মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায়। আব্রাহামিক রিলিজিয়ন এর বেসিক প্রেমিশস হলো ‘sin’, বাংলায় বলে ‘পাপবোধ’। আদম- ইভের পাপমুক্তির ধারা প্রবাহিত হয় দু’হাজার বছর জুড়ে। ভিক্টোরিয়ান নীতিবাদ এখানে যৌনতাকে, নগ্নতাকে স্থাপন করে সংস্কৃতির বিপ্রতীপে। পাপবোধের ধারণা আমাদের স্বাভাবিক জীবনধর্মে আবরণ টেনে দিল। শ্লীল-অশ্লীলের আর্টিফিসিয়াল সীমারেখা টানা হলো। যৌনতা, সঙ্গম, হস্তমৈথুন, প্রজনন, নগ্নতা ইত্যাদি সম্বন্ধে নানা অবৈজ্ঞানিক ধারণার জন্ম হলো। স্বাভাবিক যৌনতা হয়ে গেলো আশঙ্কার বিষয়। পাপবোধ প্রভাব বিস্তার করলো। সে যুগে সমাজে অবৈধ প্রণয়, পতিতালয় গমন ইত্যাদি সমাজের এলিট ক্লাসে বহুল প্রচলিত ছিল। কিন্তু কাব্যে, সাহিত্যে দেহাতীত ব্যাপারটাকে অত্যন্ত গ্লোরিফাই করা হলো। তারপর ধীরে ধীরে শরীরী প্রেম ইত্যাদি সাহিত্যে এলো, কিন্তু যৌনতা, শরীর নিয়ে কানাকানি, ফিসফাস চলতেই থাকলো। চলচ্চিত্রে সেন্সর বোর্ড, চুম্বনের সিন কেটে দিতে থাকলো, ক্লিভেজ দেখানো কাঁচিতে বাদ পড়তো।
এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা মজার প্রসঙ্গ আনা যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে নিত্যপ্রিয় ঘোষ, স্বপন সোম, সমীর সেনগুপ্ত সব অথরিটি গোছের মানুষ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বিখ্যাত গানের একটি শব্দ প্রথম সংস্করণের পর পাল্টে দেন। কারণটা অনুমেয়।
“ঝড়ে যায় উড়ে যায় গো আমার বুকের আঁচলখানি।
ঢাকা থাকে না হায় গো, তারে রাখতে নারি টানি॥
আমার রইল না লাজলজ্জা, আমার ঘুচল গো সাজসজ্জা-
তুমি দেখলে আমারে এমন প্রলয়-মাঝে আনি
আমায় এমন মরণ হানি।”
গীতবিতানের পাঠ হয়ে গেলো “বুকের” জায়গায় “মুখের”। মেয়েরা গাইবে এ গান। কী করে গাইবে? অথচ অন্যত্র মুগ্ধ হয়ে পড়েছি তাঁর লেখায়, ‘উরু পরে, কটিতটে, স্তনাগ্র চূড়ায়’ ইত্যাদি শব্দাবলীর ব্যবহার।

সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে অবহেলিত হয়েছে ‘breast’, শরীরের অঙ্গ হিসেবে। Prof. Viren Swamy , Anglia Ruskin Univesity, লেখেন, “Breast cancer is the leading cause of female cancer-related deaths worldwide and poor survival rates are associated with poorer breast awareness. Breast size dissatisfaction may result in avoidance behaviours that reduce breast awareness, particularly if a woman’s breasts trigger feelings of anxiety, shame, or embarrassment.” উন্নত দেশগুলোতে, গত কয়েক দশকে বেশ করে কাজ হয়ে, এখন ‘awareness’ প্রচুর। সেখানে রেগুলার চেকআপ করানো হয় এবং মৃত্যুর হার কন্ট্রোল করা গেছে।
বর্তমান লেখকের ছোটো পিসির ‘breast cancer’ হয় সেই আশির দশকের প্রথম দিকে। দ্রুত আইডেন্টিফাই করা যায়। চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হসপিটালের ডাক্তারবাবু, সরোজ গুপ্ত মহাশয় রোগমুক্তি ঘটান, এবং পিসি আরো বছর দশক বাদে স্ট্রোক হয়ে মারা যায়। তারপর বছর চল্লিশ কেটে গেছে, কিন্তু ‘breast cancer’ বিষয়ে সচেতনতার একেবারে অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে। লজ্জা বা সামাজিক ট্যাবুও রয়েছে। প্রকাশ্যে কোন আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করা হয়। ‘breast’ এ কোন পরিবর্তন বা প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেও মা বা স্বামীর কাছেও প্রথমদিকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। ডাক্তারের কাছে যায় একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন কিছু করার থাকে না। ক্যান্সারকে লজ্জা পাওয়া বা গোপন রোগ হিসেবে চিন্তা করার অবকাশ নেই। জীবনের দামে লজ্জার দাম পরিশোধ করা মূর্খামি।
WHO এর রিপোর্ট এ দেখা গেলো, “In 2022, there were 2.3 million women diagnosed with breast cancer and 670 000 deaths globally. Breast cancer occurs in every country of the world in women at any age after puberty but with increasing rates in later life. Global estimates reveal striking inequities in the breast cancer burden according to human development. For instance, in countries with a very high Human Development Index (HDI), 1 in 12 women will be diagnosed with breast cancer in their lifetime and 1 in 71 women die of it. In contrast, in countries with a low HDI; while only 1 in 27 women is diagnosed with breast cancer in their lifetime, 1 in 48 women will die from it.”
তাই শরীর নিয়ে, ‘breast cancer’ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সময় এসেছে। ছবির নায়ক, নায়িকা, ক্রিকেটারদের বিরাট ভূমিকা আছে ‘awarenesss’ জাগানোর ক্ষেত্রে। গ্রামে গঞ্জে, মহল্লায়, পঞ্চায়েত স্তরে খোলাখুলি আলোচনার প্রয়োজন। মানুষকে বোঝাতে হবে যে ‘স্তন’ নিয়ে আলোচনা কোনো খারাপ জিনিষ নয়। মাকে, মেয়েকে, স্বামীকে, স্ত্রীকে, পঞ্চায়েতের মোড়লকে বোঝাতে হবে যে কথা বলা জরুরি। কথা বলা অপরাধ নয়। একটা মানুষের বাঁচা, মরার প্রশ্ন। কিছু অসুবিধে হলেই, ডাক্তার দেখানো, টেস্ট করানো জরুরি। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে, শহরের শিক্ষিত মানুষকে সচেতন হতে হবে সবার আগে। জানা প্রয়োজন যে আমাদের সংস্কৃতিতে প্রাচীন আর মধ্যযুগের লেখায় শরীরের উল্লেখ প্রচুর। গীতগোবিন্দ ইত্যাদিতে শরীর থেকে অতীন্দ্রিয় চেতনায় মানুষের মুক্তি। বিলেতের সাহেবরা তাদের ভিক্টোরিয়ান পিউরিট্যান ব্যাপারটা আমাদের শিখিয়েছে। সেই ট্র্যাডিশনে চেয়ার, টেবিলের পায়া ভালো করে সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়। অর্থহীন প্রলাপ বা ভাবনা। তারা আজ সেসব ভন্ডামি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
মমদির মতো বিরাট মাপের শিল্পীকে জানতে হবে প্রায়োরিটি, দেশের প্রাচীন ধারা, এখনকার ছেলে-মেয়েদের ধারণা। গ্লোবালাইজেশনএর যুগ। হেলথকেয়ার ব্যাপারটা আমাদের পলিটিকাল ডিসকোর্স এ ব্রাত্য ছিলো। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন সিএম ডক্টর রাজশেখর রেড্ডি বিষয়টাকে প্রায়োরিটি দিলেন। এখন সব রাজ্যেই হেলথকেয়ার ভোট রাজনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক। স্বাস্থ্য প্রকল্প এখন সর্বত্র। পলিসি লেভেলে কল্যাণমুখী অনেক প্রকল্প অবশ্য চুরির জন্য ইমপ্লিমেন্টেশন লেভেলে ফেল করে। সবাই পরিষেবা পায় না। এটা দুঃখজনক। মম দিকে জানতে হবে ‘শাড়ির আঁচল’ এর অর্থহীন কথার চেয়ে ‘breast cancer’ বিষয়টির গুরুত্ব। এইসব আর কী!
ছবি সৌজন্যে: pinterest, rottentomatoes , Hindustan Times, flickr, অংশুমান দে
অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। কাজের ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি। কিছুদিন স্মার্ট সিটিতে কাজ করেছেন। আড্ডাবাজ মানুষ। বইপড়া আর সিনেমা দেখা নেশা। কাজের সুত্রে সলিউশন ব্লুপ্রিন্ট, স্পেক্স, প্রপোজাল ইত্যাদি অনেক লিখেছেন। ইদানিং বাংলায় প্রবন্ধ, গল্প, ফিল্ম রিভিউ লেখার একটা চেষ্টা চলছে।
4 Responses
Buddha purota polam,khub tathyasamriddho lekha.besh valo laglo kintu conclusion ba last er interpretation ta aro saktishali Kora uchit chilo bole amar mone holo?Jeta die suru sesh ta seta die holo na.
নরমে গরমে পান্ডিত্যে পড়াশোনায়,,
একঘর,, বন্ধুবর,, এবং ঋজুতায়,
কথা হবে না,,,তবে সবার কাপ অফ টি নয়,,
ঐ তাদের গালে চপেটাঘাত,,যারা শুধু নারী আর নারীশরীরেই ঘূর্ণিত হয়,,
আজো ,,এই চাঁদে যাওয়া সময়ে যাদের ভাবনায় কৃমি আর জীবাণুর বাস,,
তোর লেখা বেশ হয়েছে,,ওদের জন্যে ভয়ঙ্কর,,
ত্রাস,,
////////////
Thanks Buddha, you write really well. Since school days you are quite good in speaking as well as writing. Keep it up! Few observations, room for improvement:
1) every one has their perspective, better to respect their viewpoint & try to understand the context
2) Madam MS Di is well respected, would be better to present other perspective. I do not see anything wrong of her views. Similarly, no one will disagree what main issue and (to attach) due importance of the potential growing medical concern you are talking. Everyone is same page on that.
Seems two different issues.
3) Bollywood is not the reflection of our society, may be partly. Majority of the Bharat does not identify with Bollywood style, culture although they like or enjoy to watch movies only for entertainment purpose
4) you have done quite good study, research on the topic.
However It reads bit lengthy with lateral movements and sometimes gone out of the stumps even out of the crease. Need to edit, focus and remain on the context
5) Title, start and concluding remarks with word ‘meaningless’ is too harsh, inappropriate as per me. Why not be sober, respectful, humorous to present your views in order to win more hearts. In a debate or discussions, we encourage & enjoy all different views.
Indeed nice read, soar high! Please consider as constructive suggestions.
Thanks Buddha, you write really well. Since school days you are quite good in speaking as well as writing. Keep it up! Few observations, room for improvement:
1) every one has their perspective, better to respect their viewpoint & try to understand the context
2) Madam MS Di is well respected, would be better to present other perspective. I do not see anything wrong of her views. Similarly, no one will disagree what main issue and (attaching) due importance of the potential medical concern you are writing. Everyone is same page on that.
Seems two different issues.
3) Bollywood is not the reflection of our society, may be partly. Majority of the Bharat does not identify with Bollywood style, culture although they like or enjoy to watch movies only for entertainment purpose
4) you have done quite good study, research on the topic.
However It reads bit lengthy with lateral movements and sometimes gone out of the stumps even out of the crease. Better to edit, focus and remain on the context
5) Title, start and to concluding remarks with word ‘meaningless’ is too harsh & inappropriate as per me. Why not be sober, respectful, humorous to present your views in order to win more hearts. In a debate or discussions, we encourage & enjoy all different views.
Indeed nice read, soar high! Please consider as constructive suggestions. Cheers!