Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

স্মৃতির আকাশ থেকে: হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যখন হেমন্ত দাদু

অরিজিৎ মৈত্র

জুন ১৫, ২০২৪

Hemanta Mukhopadhyay
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

প্রতি রবিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার(Kolkata) রবীন্দ্রসরোবর সংলগ্ন মেনকা সিনেমার উল্টোদিকের বাড়ির তিনতলায় যাওয়াটা ছিল আমার কাছে একটা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সঙ্গে বাবা, মা এবং কোনও কোনও সময় মামা অমিত বাগচী থাকতেন। বাড়ির মালিক সব সময়ই প্রস্তুত থাকতেন দুটো ফাইভস্টার চকলেট নিয়ে। প্রাপক অবশ্যই আমি। হেমন্তদাদুর হাত থেকে ওই দুটো ফাইভস্টার পাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। তিনি তখন খ্যাতির মধ্য গগনে। বাংলার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়(Hemanta Mukhopadhyay) আর বম্বের হেমন্ত কুমার। কিন্তু আমার কাছে হেমন্তদাদু। মাতামহ কবি গীতিকার অমিয় বাগচীর তিনি ছিলেন যৌবনের বন্ধু। তাই ছোটো থেকে তাঁকে হেমন্তদাদু বলতে শিখিয়েছিল মা, বাবা। প্রথম দেখা কেশবচন্দ্র স্ট্রিটে আমার মামারবাড়ির সাবেক উঠোনে। সময়টা ঠিক কবে, কেন, কী কারণে এসেছিলেন, সেসব আজ আর মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে যে আমি আমার এক মাসির কোল থেকে ওঁকে দেখছি আর মনের মধ্যে পাল্কির গানের ‘হুনহুনা’ অনুরণিত হচ্ছিল। সাহস সঞ্চয় করে শুধু একবার হেমন্তদাদু বলে ডেকেছিলাম কিন্তু কাছে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।

আমাকে উপহার দেওয়া পুজো সংখ্যার রেকর্ড

যত বড় হয়েছি ততোই ওঁর স্বর্ণকণ্ঠের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি। অনেকেই জানেন যে অতীতে দুর্গা পুজোর আগে পুজো সংখ্যার গানের ডালি নিয়ে আসত গ্রামোফোন কোম্পানি। সব শিল্পীর রেকর্ডই প্রকাশিত হত। একসময় বেরোত ইপির ছোটো রের্কড। পরে প্রকাশিত হত লং প্লে রেকর্ড। এর দুটি পিঠে মোট বারোটি গান। এমনই বেশ কয়েকটি রেকর্ড আজও রয়ে গেছে আমার কাছে। যেগুলো উনি আমার নাম লিখে ‘হেমন্তদাদু’ বলে সই করে দিয়েছিলেন। স্মৃতিচারণমূলক লেখার একটা বড় দোষ অনেকরকম ভাবে সাবধান হয়েও আত্মপ্রচারের বিষয় ঠেকান যায় না। কত ঘটনাই বিক্ষিপ্তভাবে মনে পড়ে। একবার কোনও একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ বাড়ি এলেন দুপুরবেলা।

জন্মশতবর্ষে তপন সিংহের সংগীত: এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা – অরিজিৎ মৈত্র

ওঁর মতো ব্যক্তিত্বের এমন অপ্রত্যাশিত আগমনে বাব-মা দুজনেই অবাক। যাই হোক, সেদিন বিকেলেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘কিশোরকুমার নাইট’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে আমি আর মামা গেলাম ওঁর সঙ্গেই। সেই অনুষ্ঠানের অন্যতম গায়ক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠলেন, ধরলেন ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস’ গানটি। কিছু সময় পরেই ছন্দপতন। শ্রোতারা অভিযোগ জানাতে শুরু করলেন গান নাকি ঠিক মতো শোনা যাচ্ছে না। অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করার পরেও সমস্যার সমাধান হল না। আরো পরে বোঝা গেল সমস্যার আসল কারণ। কিশোর কুমারের গান শুনতে আসা শ্রোতাদের এদিন আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান ভালো লাগছিল না। খানিকক্ষণ পরে অন্ত্যন্ত শান্ত এবং ধীর কণ্ঠে ‘হেমন্তদাদু’ নিজেই মাইক টেনে নিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মনের কথাটা বলে মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোরা থাকবি তো? কিশোরের গান শুনবি না?’ আমরা এক বাক্যে জানিয়ে দিলাম ‘না, তোমার সঙ্গে ফিরে যাব।’

জন্মদিনে আমি, হেমন্ত দাদু, মা-মধুশ্রী মৈত্র, মামা- অমিত বাগচী, দিদা- মলীনা বাগচী, আমার বাবা স্বর্গীয় অঞ্জন মৈত্র

খুব ছোটবেলার একটা মধুর স্মৃতি, তবুও কয়েকটি ছবি আজও মনের মধ্যে গেঁথে আছে। ৭৫ বা ৭৬ সাল হবে, সেই সময়ে আমাদের বাড়ির কাছেই দেশপ্রিয় পার্কে ‘যুগান্তর’, ‘অমৃতবাজার’ সংবাদপত্র গোষ্ঠির উদ্যোগে দোল পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে ৭দিন ব্যাপি এক বিরাট অনুষ্ঠান এবং মেলা হত। ভারতের বিখ্যাত সাধক-সাধিকা যেমন সীতারাম দাস, ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, আনন্দময়ী মা প্রমুখ আসতেন। অনুষ্ঠানে গান গাইতে আসতেন ভারতের সমস্ত প্রখ্যাত সংগীত শিল্পীরা। আমার জন্মদিন মার্চ মাসে হওয়াতে প্রতিবারই দোল পূর্ণিমার কাছাকাছি দিনটা পড়ে। সেবার জন্মদিন পড়েছিল একদম দোলের দিন। সেইদিনই আবার দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে ওঠার আগে হঠাৎ শরীর খারাপ। সুগার ফল করেছিল। ডায়াবেটিসের কারণে মাঝে মধ্যেই এমন হত। তা সেই দিন ওঁর পকেটে রাখা চকোলেট খেয়ে কিছুটা সুস্থবোধ করতে মঞ্চে উঠলেন সংগীত পরিবেশন করতে। আমাকে সঙ্গে নিলেন। মঞ্চের সামনে তখন কয়েক হাজার শ্রোতা। যেদিকে চোখ যায়, শুধু কালো মাথা। অনুষ্ঠান শেষে ভক্তদের উন্মাদনার মধ্যে কলকাতা পুলিশের পাইলট কার হেমন্তদাদুর সাদা রঙের ছোট্ট ফিয়াট গাড়িটাকে আমাদের বাড়ির সামনে পৌঁছে দিয়ে গেল।

আমার জন্মদিনে

আমার জন্মদিনের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পায়ে হেঁটে তিনতলায় উঠলেন। পুরনো আমলের সাবেকি বাড়ি, লিফ্ট নেই। এরপর ঘরের খাটে দীর্ঘদেহী হেমন্তদাদু সোজা হয়ে শুয়ে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে খেতে উঠলেন আবার চারতলায়। অন্যান্য অতিথিরা খেয়ে উঠে পড়লেও আমার খাওয়া যতক্ষণ না শেষ হল, ততক্ষণ পাশে বসে থাকলেন। ওঁর সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে গেলেই জিজ্ঞাসা করতেন, ‘উইংসের পাশে বসে গান শুনবি না স্টেজের সামনে বসে?’ অগণিত মধুর স্মৃতির কোথায় শেষ, তা আমারও জানা নেই। এমন মানুষকে তো সহজে ভোলা যায় না। যত দিন যায়, ততোই মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে কিন্তু কোথাও তো একটা দাঁড়ি টানতে হবে তাই সঙ্গীতের জগতে চিরবসন্ত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কাহিনি আজ এই পর্যন্তই।

Author Arijit Maitra

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।
Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

2 Responses

  1. একই সঙ্গে অন্য হেমন্ত এবং অন্য অরিজিৎকে পেলাম এই লেখায়। সত্যি এসব লেখা লেখক এবং পাঠক উভয়কেই কেমন যেন আবিষ্ট করে ফেলে। আপনার স্মৃতির ভান্ডার থেকে এরকম মনিমুক্তো আরো তুলে আনুন পাঠকদের জন্য। শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস