Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বুড়ি! থুড়ি থুড়ি: জমায়েত

মন্দার মুখোপাধ্যায়

আগস্ট ১০, ২০২৩

memories of school days
memories of school days
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

আগের পর্বের লিংক- জীবন তো একটাই

ইস্কুলের প্রাইজ, র্যাংক, মেরিট লিস্ট, সার্টিফিকেট অফ একসেলেন্স, ট্রান্সফার এবং পাশ ফেল এসবের পাশাপাশি আরও এক বিরাট ক্যানভাস থাকে, যেখানে তৈরি হয় মনের সিলেবাস। সেখানেই আমাদের দুষ্টুমি, নালিশ, আড়ি, ভাব, অভিমান, মান; মাথার উকুন, খুশকি, আম্বাত, পাঁচড়া, ফ্রক থেকে শাড়ি, ঋতুমতী হওয়া, গা জ্বর জ্বর, সর্দি, শুধু শুধু পেটব্যথা আর অকারণে ইস্কুল কামাই। আজ ষাট পার করা এই পরিণত বেলায়, সেই সিলেবাসটাই যেন এক টলমলে দীঘি, যার আলো আর ছায়ার মায়ায় মনও ভরে উঠে টলমল করে।

কাজ থেকে পালিয়ে হঠাৎ ইস্কুলে, জুলাই মাস ২০১৮; তেতাল্লিশ বছর পর দেখা হবে আমাদের। 

চিরকালের ভালমেয়ে স্নিগ্ধা সবার আগে এসে ইস্কুলে ঢুকে বসেছিল। আমাকে দেখেই একগাল হাসি। তপতী ঠিক আগের মতোই গটমট করে। গৌরী ছিপ ছিপে থাকলেও তাকে তার মায়ের মতো দেখতে হয়ছে। ছাতি বন্ধ করতে করতে এগিয়ে আসা অনুরাধাকে দেখেই গৌরী বলে উঠল,ঘাড় নাড়িয়ে হাঁটা মানেই অনুরাধা। সবশেষে গাড়ি থেকে নামল ঝলমলে গীতা ও প্রতিমা। প্রথমে কেমন যেন একটা অস্বস্তি। এখন আমরা সবাই একষট্টি! এই পথে শেষ হেঁটেছি, আঠারোতে! তারপর ছড়িয়ে পড়েছি যে যার বৃত্তে! সবাই সবাইকে নাম ধরে ডেকে উঠলাম। বাগবাজারের রাস্তায় এই প্রথম। আজ আর কেউ চেনেনা আমাদের। আগে সাবধান থাকতাম। মুগ্ধ দৃষ্টি যুবারা নাম জানলেই গলির আড়াল থেকে নাম ধরে চেঁচিয়ে ডেকে জানান দেবে–নাম জেনেছি…। আজ অসঙ্কোচে ‘অনুরাধা, গৌরী, গীতা, তপতী,স্নিগ্ধা, প্রতিমা আর মন্দার’। স্বরস্থানে যেন বৃষ্টি নেমে এল। “আয় -আয় -আয়/বেলা যায় যায় যায়”! 

reunion with school friends Bagbazar Multipurpose
আমাদের সেই গুলঞ্চতলা।

মুহূর্তে যেন প্রার্থনার ঘন্টা বাজল। হুড়মুড় করে ছুটতে লাগলাম করিডোর ধরে। ছুটি হয়ে যাওয়া শুনসান ইস্কুলে এখনকার বড়দি শ্রীমতী হেনা সিদ্ধান্তের ঘরটা খোলা। ১৯৭৫ এর ছাত্রীরা এসেছি, গুলঞ্চতলায় একটু বসতে পারি! কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে, মৃদু হেসে সবাইকে তাঁর ঘরে এসে বসতে বললেন। জমাট গপ্পো। অবাক হওয়া, আমাদের বালিকা-ভাব এখনও এত অটুট দেখে। আমরা ভুলে গেছিলাম যে এটা বড়দিদিমণির ঘর। এমন সোরগোল লাগিয়েছিলাম যে, জরুরি ফোন আসায় দেখি, উনি চেয়ার ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। লজ্জিত  আমরা ওঁকে বসতে  অনুরোধ করতে করতেই ‘ মালবিকাদির গলাটা যেন শুনতে পেলাম- ‘put your finger on your lips…’ । ওঁর কথা শেষ হতে বললাম, এই দেখাটাও আমাদের পরম সৌভাগ্য যে বড়দিদিমণিও আমাদের চেয়ে বয়সে ছোট। কেউ কি স্বপ্নেও ভেবেছিলাম, সেই আমরাও যে কখনও, এই সেদিনের আঠারো ছাড়াতে ছাড়াতে ষাট পেরিয়ে এত বড় হব!  যখন বড়দিও আমাদের আপনি করে কথা বলবেন! বললাম যে, সে সময় আমরা সবাই এ অঞ্চলেরই মেয়ে ছিলাম। পথেঘাটে  মুগ্ধ “দৃষ্টিবাণ” ছিল, কিন্তু ইভ টিজার ছিলনা। আর এও ঠিক যে আমাদের দলটাকে, সবাই একটু  ভয়ই পেত। বাকি দুজন শিক্ষিকা একটুও সময় নষ্ট না করে, মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে, এক স্বরে বলে উঠলেন- আপনারা তো, এখনও ভয় পাওয়ারই মতো। এতো প্রাণবন্ত আর এইরকম বন্ধু-টান! 

ইস্কুলের খোলা চত্বরটায় গিয়ে শুরু হলো তদন্ত। এই তো সেই আমাদের দেবযানীর লাগানো কদম গাছ! আরে তিনতলাটা ছিল! ওই সেপটিক-ট্যাঙ্কেই তো মঞ্চ বেঁধে গাইডের নাচ গান হতো! গীতা বলল, এখানে বসে, দুলে দুলে গান গাইতে গিয়ে, আমি পড়ে গেছিলাম, তোরা তুলিসনি। তপতী বললো, নাচ থামিয়ে তোকে তুলব কী করে! প্রসঙ্গত, পিছনের বাড়ির কোন কোন বারান্দায় বা কোন খড়খড়ির আড়ালে, কলেজ না গিয়ে দাড়ি বা দাড়িবিহীন কারা কারা দাঁড়িয়ে থাকত…সে সবও হাসতে হাসতে। হঠাৎ দেখি, সেই দুজন শিক্ষিকা সমেত বড়দিও কখন যেন, পিছনেই এসে দঁড়িয়েছেন। আবার আমরা put your……। এগিয়ে এসে আমাদের ছবি তুলে দিলেন। নতুন উঠোনে পুরনো আঁচল বিছিয়ে, একটু মুচকি হাসলো, সময়। এবার যেন ছুটির ঘণ্টা বাজলো। চারটে বেজে গেছে। ওঁদের খুব ইচ্ছে যে, তিনতলা অবধি আমরা একবার ঘুরে আসি। সকলের হয়ে আমিই বললাম, আমাদের যে হাঁটু ব্যথা! যদিও মন তখন, তিন লাফে তিনতলায়- যেখানে কার্পেট বিছানো ঘরে, গানের ক্লাস নিতেন মীরাদি। আমাদের আপ্যায়ন করে আবার ঘরে নিয়ে এসে, কালিকার সেই বিখ্যাত সিঙাড়া আর সন্দেশ। প্রতিমা এর আগেই বিদেশী চকোলেট খাইয়েছে সবাইকে। শোনপাপড়ি বার করছিল ব্যাগ থেকে। আমি ইশারায় না করতেই তপতী বলল, আমরা না স্টুডেন্ট! ব্যাগে ঢোকা! 

reunion with school friends Bagbazar Multipurpose
ফেরার সময় আবার দলবেঁধে ফটো।

গেট খুলে আবার সবাই দাঁড়িয়ে ফটো। দিদিরা বার বার বললেন, মন কেমন করলেই চলে আসবেন। কথা দিয়েছি সরস্বতী পুজোয় সবাই সদলবলে হাজির হব। আর সেই সময় আড়ি করে দেওয়া গৌরী, তেতাল্লিশ বছর পর আজ আবার ভাব করে নিয়ে অনুরাধাকে জিজ্ঞাসা করলো, এই আড়িটা কেন হয়েছিল রে! ইস্কুল থেকে বেরিয়ে, বেজায় খিদে পেয়ে যাওয়ায় এবার অন্য ঠেক।

স্টারের ছাদে “আরসালানে” গুছিয়ে বসে, ষাট বছরদের আসল স্বরূপ সেদিন বের হলো। সবাই যার যার ছেলে-বউ-মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনিদের মোবাইল সিন্দুক থেকে বের করল। গেছে যা তা হলো দু-একটা দাঁত আর চোখের জোর। যোগ হয়েছে মেদ, হাঁটু-কোমরে ব্যথা আর পরিণত আত্মবিশ্বাস। কে কোন কলেজ, কার কবে বিয়ে, কার কেমন বর- এই সব আলুর ঝালুর আয়েশ আরাম শেষে একটু বাঁকা মন্তব্যও– বাবা এখনকার মেয়েরা (এটা ষাট বছরের ধকল)! কিছু আগেই স্নিগ্ধার বরের উদ্বিগ্ন ফোন- ‘কতক্ষণের প্রোগ্রাম, কে কে এসেছে!’ হা -হা- হি- হি।

এরই মধ্যে পুনে থেকে দেবযানীর অস্থির ফোন– ফটো দে, কখন তোদের দেখতে পাব! হুউউশ করে সময় আবার ষাটে পৌঁছে, ঘরে ফেরার ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। ততক্ষণে রোদ পড়ে গোধূলি আলোয় ‘মভ’ রং; আমাদের ইস্কুল বেলার ড্রেস– স্কার্ট থেকে শাড়ি আর তন্বী কোমরে গোঁজা মায়ার আঁচল।

school friends
এই জমায়েত এক অদ্ভুত আরাম এনে দিল।

আড্ডা দিয়ে ফিরেই WA দল। সাতজন দিয়ে শুরু হয়ে প্রায় জনা তিরিশ। খুব সুবিধে, সশরীরে হাজিরা নয় অথচ আছি আছি আছি; এমন মজার সময় জীবনে আসে নি; প্রায় প্রতিদিন একজন করে জুড়ছে, আর সকলে মিলে হৈ হৈ …… দেখ দেখ, কে এসেছে; ফোনে ফোনে যোগাযোগ, যোগাযোগ ফেসবুক ঝেঁটিয়ে; এর বন্ধু ওর বন্ধু ছাড়াও ভাসুরঝি, ভাইঝি জামাই, ভাগ্নে বউ, এমন কী বরের সহকর্মীর বউ, শালার বউ অবধিও খুঁজে বার করে দিয়েছে, আমাদের বন্ধুদের। সে এক সাজো সাজো রব এবং উথালপাথাল অবস্থা! নিউইয়র্ক থেকে লছমী, আসাম থেকে অমরাবতী, দিল্লী থেকে জয়শ্রী, শান্তিনিকেতন থেকে  সঙ্ঘমিত্রা, পুনে থেকে দেবযানী, দুর্গাপুর থেকে শকুন্তলা। কিন্তু এরই সঙ্গে খোঁজ খোঁজ- কোথায় গেল, মিলি, সুপর্ণা, দেবীপ্রিয়া, শুক্তি, কল্পনা! আজও অনবদ্য ইস্কুল বন্ধুদের নিয়ে এই স্টক টেকিং এবং বন্ধু- অডিট ও আপডেট। আর এর ঠিক একমাস পর, মানে এমনই এক অগস্টে সত্যিকারের জমায়েত হল, শ্রাবন্তীর  বাড়িতে; আমেরিকা, দিল্লি এবং দুর্গাপুর থেকে আসা লছমী, জয়শ্রী ও শকুন্তলা সমেত। জীবনে এত মোলাকাত হয়েছে অথচ ওইদিনের মতো এর কোনওটাই নয়; ইস্কুল যেন ভর করেছিল আমাদের ওপর। দেখা হলো ষোলোজনের। ৪৩ বছর বাদে আবার কাছাকাছি; চেনা শ্বাস, চেনা ভালবাসা। কী না করলাম! ওর বাড়ির বাগানে জমজমাট ঘিরে দাঁড়িয়ে, একটা হাসনুহানা গাছ পুঁতে, স্থায়ী করলাম আমাদের মনের বসত। সাদা ঝুরো ফুল, সবাই মিলে আঁজলায় নিয়ে, সেই গাছের ওপর থেকে ঝরিয়ে দেওয়া হল; সুন্দর একটা ঘটিতে করে জলও দিলাম সকলে। আর কী আশ্চর্য! কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি নিয়ে ঘিরে এল শ্রাবণ মেঘ, তার আধেক দুয়ার খুলে আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখতে; ঘরে এসে কেক কেটে, ক্রিম মাখামাখি করে, আবার মাতামাতি। তারপরে আলো নিভিয়ে,  মোমের আলো হাতে ধরে সকলে মিলে গান। বাকিরা যখন  একের পর এক গান গাইছিল, আমি আর শ্রাবন্তী মনে করে করে ঝর্ণাদির শেখানো সব নাচ। তারই মধ্যেই চলতে থাকল শরীর স্বাস্থ্যের বিচার, শাড়ির ধরন, চুল কমে যাওয়া,  ব্লাউজের মুড়ি খুলে বাড়িয়ে নেওয়া, কোমরে বেল্ট এবং নি-ক্যাপ। খাওয়া, আড্ডা আর হাসিতে হুস করে শেষ হয়ে গেল এই প্রাণবন্ত উপস্থিতি। ঠিক যেন ছুটির পর ইস্কুল গেট। পিলপিল করছে সেই এক ঝাঁক হুলুহুলু কুলুকুলু। বাড়ির পথ না ভায়া ফুচকা! বাসের পর বাস ছেড়ে ঠায় গপ্পো। “আসলে কেউ বড় হয়না …….”। সকলেই ভাবল, সদ্য লাগানো হাসনুহানায় ফুল এলেই, আবার জড়ো হব আমরা। আর একটু বয়স বাড়িয়ে, আর যোগাযোগে আরও কিছু বন্ধু জুটিয়ে রৈ রঙ্গে হুজ্জুতি ।

meeting old friends
মোমের আলো হাতে ধরে সকলে মিলে গান।

আসলে প্রাণের টান থাকলে, তা যে ঝট করে ফুরোয় না, সেটা বোঝা গেল জমায়েতে আমাদের ধারাবাহিকতা দেখে। লক ডাউনের আগে অবধি, প্রতিমাসে দল বেঁধে দেখা করেছি আমরা, কারও না কারও বাড়ি; শুধু যে জম্পেশ খাওয়া, গান, আড্ডা আর মাতামাতি তাই নয়, সুখ  দুঃখে কত  ভাবেই না পাশে পেয়েছি পরস্পরকে; বাড়ি, ঘর, সংসার, ছেলে, বউ, মেয়ে, জামাই, ভাই, বোন, বাবা, মা, নাতি, নাতনি এমনকি চেনা পাড়া প্রতিবেশীরাও আদরে টেনে নিয়েছেন আমাদের। একেক জনের বাড়িতে গিয়ে, দেওয়ালে টাঙানো ছবি হয়ে যাওয়া বাবা মায়েদের দেখে, নতুন করে মনে পড়েছে ‘মাসিমা’ ‘মেসোমশাইদের’ কথা; আমাদের ঘিরে, উদ্বেগের অন্ত ছিল না যাঁদের। তাদের সেই পূর্ণ যৌবন নিয়ে আবার তাঁরাও ফিরে এসেছেন, একরাশ গল্পের আবেশ জমিয়ে। এই সব জমায়েতের টুকরো ছবি ফেসবুকে দিতেই, আরও কত সংযোগে ঘিরে এসেছে সিনিয়র, জুনিয়র ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রীরাও; এসেছে তাদের ছেলেমেয়েরা; এমনকি অন্য রকম বন্ধু বৃত্ত এবং সহকর্মীদের মনেও সাড়া জাগিয়েছে, আনন্দে বেঁচে থাকার এই কলরব। আমার ড্রাইভার তো সব সময় জানতে চাইতো, তার কেজো মাসিমার পরের জমায়েত কবে এবং কোথায়! বিভাজিত হতে হতে জীবনের শর্তগুলো যখন একটা বিন্দুতে এসে ঠেকে, তখন বোঝা যায় যে মনের সংযুক্তি যে কত জরুরি। আর এই ইস্কুল ইউনিফর্ম আমাদের এমন এক সমতা দেয়, যে জীবনের কিছুটা সময় যেন পরস্পরে সম হয়ে সজীব থাকি আমরা। এই জমায়েত তাই, তেমনই এক আরাম এনে দিল, যে ষাট পেরনো আমাদের মনে হল – কেন  যে এত দেরি হয়ে গেল! তেতাল্লিশ বছর – সে কি অল্প সময়!   

ক্রমে আরও ঘনিষ্ঠ হলাম আমরা; নতুন সঙ্কট বা নতুন অবস্থানে যে সব ছিল সঙ্কোচের বিষয়, সে সবও কেমন মুছে যেতে লাগল, ধীরে ধীরে। এক তুড়িতে উড়ে গেল, কে একটু বেশি আর কে যে কোথায় কম। ইস্কুলে ভাল খারাপের গ্রেড হয়, কিন্তু বন্ধুদের কাছে সবটাই রেনি ডে…… জল ছপ ছপ হেঁটে, ভিজে গায়ে বাড়ি ফেরা। আর আমাদের দ্বিধা হয়নি, খোঁপার বেড়ে জুঁই ফুলের মালা লাগাতে; বাতিল হওয়া লাল নীল সবুজ বেগুনি শাড়ি টেনে টুনে পরে আয়নার সামনে দাঁড়াতে; অপরাধী মনে হয়নি। 

reunion with school friends
এই হাসনুহানা গাছে ফুল এলেই, আবার জড়ো হব আমরা।

সংসারের দায় থেকে কয়েক ঘন্টার ছুটি নিয়ে, আড্ডায় যোগ দিতে; কার বিয়ে ভেঙে গেছে, কার বিয়ে হয়নি, কে কে বিধবা হয়েছে, কার কার আরও কী কী ক্ষত– সে সবেও প্রলেপ পড়েছে এই বন্ধু দলে এসে। কঠিন অসুখের চিকিৎসা বা সার্জারির পরেও যে যার সুবিধে মতো দেখতে গিয়েছি বন্ধুদের; বাড়ির লোকের কাছে, সম্মানিত হয়েছি এই ডাক খোঁজ করায়। এখন আর একা নই, বন্ধুদলে আছি, এই বোধ বয়ে এনেছে দারুণ আস্থা। স্বেচ্ছায় নতুন কাজেও লেগেছে কেউ কেউ। অদিতি আর ইরা ভোর রাতে, নিয়ম করে ‘শুভ সকাল’ পাঠিয়ে রাখে; অথচ এই অদিতিরই তো স্মার্ট ফোন কেনায় কী দারুণ অনীহাই না ছিল; কিন্তু আমাদের আব্দারে হার মানতেই হল।বআর জয়শ্রী? সকলের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানায়; নিজস্ব রেজিস্টারে রাখা জন্মদিন দেখে, তার  হাতে আঁকা অপুর্ব সব কার্ডে। এই বয়সে এসে এবং এইরকম এক নিঃসঙ্গ সময়ে, এ যে কত বড় প্রাপ্তি আমাদের! এক এক সন্ধে, এক একটা ছুটির দিন কেটে গেছে হাসি ঠাট্টা মশকরায়; সব মনে ছিল; আমাদের সব মনে আছে; স্মৃতি তো কম পড়েই নি; এমনকী কালকের দেখা হওয়ার আরাম ও আবেশে আজই আবার নতুন করে বাঁচা। কতজন গান শিখতে শুরু করল; কারও মনে পড়ল, শাড়ির বাকি নক্সাটা এবার আবার ফোঁড় তুলে শেষ করবে; কেউ ভাবল কত কিছু নতুন করে শুরু করা যায়।

memories of school
কিছুটা সময় যেন পরস্পরে সম হয়ে সজীব থাকি আমরা।

লক ডাউনের বিভীষিকায় কেঁপে, সিনিয়র সিটিজেন আমরা যে মনে মনে সঠিক থাকতে পেরেছি, তার একটা বড় কারণ এই বন্ধু দল। একের পর এক মৃত্যু, চিকিৎসার সঙ্কট, কাজের লোক না পাওয়া, এবং দূরে থাকা ছেলে, মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের নিয়ে উদ্বেগ! কী দিনই না গেছে! সে সবও তো সামলেছি পরস্পরে। সামলেছি উৎফুল্ল তিন বন্ধু, গৌরী শকুন্তলা আর দেবযানীর একে একে হুট হাট করে নেই হয়ে যাওয়া; দেখা না হলে জানতেই তো পারতাম না যে, কতখানি অসুস্থ ছিল ওরা। শেষ নিঃশ্বাস অবধি গৌরীর হাতে ছিল মুঠোফোন, চোখ ছিল আমাদের মেসেজে; ভেন্টিলেশনে যাওয়ার আগেও শকুন্তলা মেসেজ করে জানিয়েছে, ‘তোরা গান আর কবিতা পাঠা’। দেবযানীও জমায়েতে এসেছে অসুস্থ শরীর নিয়েই। বেশ কয়েকজনের জুটি ভেঙে বরেরাও চলে গেছে; তাদের নিঃসঙ্গতা আর এক রকম ভাবে অসহনীয়; হঠাৎ করেই যেন উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে নিজেদের চেনা ঘর বাড়ি; সেখানেও বন্ধুরাই জানলা দিয়ে কথা বলে গেছে ক্রমাগত; আজ তাই আমরা যে শুধু জন্মদিন পালন করি তাই নয়, মনে রেখে স্মরণও করি, আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু এবং চলে যাওয়া মানুষগুলিকেও। এই যৌথতাটুকু বড় মুক্তি দিয়েছে আমাদের। সেই সঙ্গে, সেজেগুজে, দল বেঁধে বিয়ে বাড়ি, ইস্কুলের সরস্বতী পুজো, কিছু না হোক গঙ্গার ঘাটে বসে ঘটি গরম, নাটক দেখতে যাওয়া বা কোন বন্ধুর নতুন বইয়ের উদ্বোধন– আবার, আবার কেমন ফিরে এসেছে সব!

এ এক মজার দল; অনেকটা সেই যেন, মেইন ইভেন্টের পর, যেমন খুশি সাজো বা ‘সব কিছুতেই খেলনা’ হয়ের মতো; না কোনও মেম্বারশিপ, না কারওর রেকমেন্ডেশন, না কোনও সমাজসেবা, না কোনও ডোনেশন বা স্পন্সরশিপ। সব যেন সাজানোই ছিল, শুধু আমাদের জমিয়ে বসার অপেক্ষা! কিছুই আসলে লাগেনা, এই বন্ধু দলে থাকতে। মনের সঙ্গতে বেজে ওঠে মন কেমনের সুর, আর তখনই জানি, ফোন অন করলেই জেগে উঠবে গোটা ক্লাসরুম আর আমাদের সেই গুলঞ্চতলা– আর মাঝে মাঝেই চলবে আমাদের জমায়েত।।

ছবি সৌজন্য: Facebook

Author Mondar Mukherjee

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Picture of মন্দার মুখোপাধ্যায়

মন্দার মুখোপাধ্যায়

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে। লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
Picture of মন্দার মুখোপাধ্যায়

মন্দার মুখোপাধ্যায়

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে। লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com