শরীরী সম্পর্কের পাহাড়, বুনো জানোয়ারের খুর।
একজন যুবক প্রাচীনকালে ব্যবহৃত গিটারের মতো বাদ্যযন্ত্র হাতে নেমে গেল গম খেতের আল ধরে এলোমেলো হাওয়ার মতো। এভাবে চিরকাল গান গাওয়া সম্ভব হবে না। এখনও সে লক্ষ করেনি, তার পোশাকের অর্ধেকটা এর মধ্যেই গম খেতের সঙ্গে মিশে গেছে। যা গাইছে তাও গম খেতের হাওয়ার মতোই শোনায়। একটু পরে খুঁজে পাওয়াই শক্ত হবে ছেলেটাকে।
পাকা গম মাটিতে ঝরে পড়লে শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলো দেখে তাকে স্মৃতিকাতরতাতেও ভুগতে হবে। পেছনে হেঁটে আসা মেয়েটা তার সাক্ষী রইল। একই দূরত্ব রক্ষা করে হাঁটছিল দু-জনে। মিলনের জন্য গম পাকা পর্যন্ত ওরা অপেক্ষা করবে।
এতকাল আমিও এক-ডানা অভিশপ্ত পাখির মতো মেয়েটার সঙ্গে ঠেলে নিয়ে যেতাম কয়লার গাড়ি। সবার আগে সঙ্গিন হয়ে আসত আমার চোখ। নুন পড়ত, কয়লার গুঁড়ো পড়ে খচখচ করত। অর্ধেক রাস্তা দেখে পার হতাম, অর্ধেক পার হতাম না-দেখে। না-জানি কীসের ওপর দিয়ে ঘড়ঘড় শব্দ করে চারচাকার হাতলওলা সেই গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে এসেছি নিজের অজান্তে এতকাল। যে-অর্ধেকটা দেখতে পেতাম, সেই অর্ধেকটাই বিষণ্ণ ছিল আশ্চর্যরকম।
ঈশ্বর আমাকে বিশ্বাস করেন না, কোনোকিছু বিশ্বাসের ঊর্ধ্বেও নয়।
রাত্রি অ্যাম্বুলেন্সের হুটারের, হাসপাতালের। ফুলের শ্রমিকদের সঙ্গে নদীর চরে সারারাত কাটল। কয়েকবার ফুলের কাছে এলাম। নদীটাকে দেখতে পেলাম না। আমার সঙ্গে যে ছিল, আকাশ মেঘে ভরতি থাকায় তার মুখ দেখতে পেলাম না। সারারাত হাঁটাহাঁটি করলাম নদীর চরে তরমুজের রক্তের ওপরে। কবিরা আংটির লাল পাথরের কথা লিখেছেন অনেক বার। সেই কারিগরদের কথা লেখেননি, যারা হাত উঁচুতে রেখে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে পাথরটা বসান। ওঁরা ওই অন্ধকারে বাস করেন।
আমি টিভি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম শেষরাতে। ওরা এসেছিল অন্ধ কবির দেশ থেকে, অন্ধের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল মাঠময়, উত্তাল, এলোমেলো ঢেউয়ের মতো। রঙিন পোশাক পরা অন্ধ দর্শকেরা উন্মাদের মতো আছড়ে পড়ছিল। যেন কেউ একটা বিরাট রঙিন মাছ সমুদ্রের পারে তুলে রেখেছে, মাছের মৃত চোখের ওপর অভিনীত হচ্ছে উত্তাল এই নাটক। অভিনয় করছে অন্ধেরা, পরস্পরের সঙ্গে চোখের ভাষা ব্যবহার না করে, উন্মাদ উত্তেজনায়।
আমাকে নিয়ে এখনও কোনো মাথাব্যথা নেই কারও।
আবার নতুন একটা দিনের সূচনা। তারিখটা দেখে চমকে উঠলাম। দিনগুলো অবহেলায় গেল।
শেষের দিনটার দেখা নেই।
রাতের ঝুড়ি থেকে কোনো শব্দ নিয়ে ঘুম ভাঙেনি আজ, কোনো শব্দ নেই, জেগে নেই। ঘুম ভাঙল সম্পূর্ণ মূক, বধির এক জগতে। আমার সারা শরীরে ঘুম, আবিষ্কারের চোখ খোলা। দিন বাড়ছে, ফাঁকফোকর স্পষ্ট হচ্ছে। একতলার বাইরে নিঃশব্দে এসে দাঁড়ানো পুলিশের জিপ আরও নৈঃশব্দ্যে নিয়ে গেল।
ওর বিবেচনাবোধ ওর হাতের উলটো পিঠের মতো।
বারান্দা দিয়ে অনবরত লোকজন যাতায়াত করছে।
একটা ঘরে বাস করলেই হয় না। ক্রমাগত এটা ওটা জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলতে হয় বিভিন্ন দূরত্বে। হাতে কাজ না থাকলে দেয়ালের পেরেকগুলো ঠিকঠাক করে নিলেও কাজ দেয়। যেটা একেবারেই কাজে আসে না, বিছানায় শুয়ে কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি। বাড়িটার চারটে দেয়াল নিরর্থকভাবেই আমাকে ঘিরে রাখার ভান করে আছে।
সারাদিন ভেসে ভেসে কাটালাম। কেউ ধরলো না, ছুঁলো না। সবাই দেখলাম অস্বস্তিতে, কাজের ভান করে আছে। ওদের প্রতিপক্ষ একজন, বাকিরা বন্ধু। প্রতিপক্ষকে অতিক্রম করে বন্ধুদের কাছে যেতে পারছে না। সন্ধ্যের মুখে বন্ধুদের একজনকে নির্বাচন করে ধীরে ধীরে রূপান্তর করবে প্রতিপক্ষে।
আমি নদীর কলধ্বনির কথা লিখলাম। তারপরে এল নীরবতার কথা। আমি কবিতায় সমুদ্রের কথা লিখলাম, তারপর গানের কথা এল। বিদ্যুতের মতো হাতছানিরা শব্দ। এই সব ধ্বনি কবিতায় হাস্যকর, মিথ্যে। মিথ্যে অন্য সব শব্দ, অন্য সব উচ্চারণ। কবিতা নারীর কণ্ঠস্বর।
আমার জীবন নির্বান্ধব, নিঃসঙ্গ নয়। সম্পাদকের সঙ্গে সম্পর্ক, পরস্পরের ভাষা না জানা দু-জন মানুষের।
বোতল ভাঙার শব্দ। মেয়েটা ঝাঁকুনি দিয়ে চুলের ফিতেগুলো পিছনে নিয়ে যেতে হাওয়ায় উড়ে নেমে এল পিঠের ওপরে। নীলরঙের ফিতে দিয়ে বেঁধে দিলাম। ও আর হাসল না। ব্লাউজে গোঁজা টাকা সম্বন্ধেও কেমন নির্বিকার, চোখে ছোটো হরফের কালো অক্ষরমালা, বাকিটায় মিনতি, অক্ষরগুলো কেউ বড়ো না করে।
বড়ো বড়ো হরফের মশারির জাল।
হাওয়ার কখনো জোর বাড়ে। হাওয়ায় অনেকক্ষণ উঠে থাকা পর্দা দিয়ে আলো এসে ঘর ভাসায়। আমরা তখন চুপ করে থাকি। পর্দা আবার নেমে এলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি দু-জনে। সামান্য ওইটুকু সময়ের ভেতরে ভয়ে ভয়ে দেখি ঘরটা ফাঁকা সুনসান। আলোয় দেখার মতো কিছু নেই। একটা কুয়ো, জানালা দিয়ে আসা আলোর দেয়ালের ভেতরে আমরা।
আজ আমার জন্মদিন, আগামীকাল কোর্টের হাজিরা, পরশুদিনের পরের দিন পাড়ার নেতাদের সমন পার্টি অফিসে। মাঝখানের একটা দিন এখনও ফাঁকা।
গর্ত বোজাতে লোকটা হাঁটছে মাটির ওপর।
একটা গর্ত স্থানান্তরে হাঁটছে।
তুমি আমার সঙ্গে এখন আর জড়িয়ে নেই। সঠিক কিছুই ঘটছে। তবুও আমি প্রতি মাসে খবরের কাগজ পালটাচ্ছি। এবারও বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দিলাম কাগজ। ভাঁজ না খোলা কাগজ বিক্রি করে দিতে পারতাম।
আঙুলের নখে নেলপালিশ পরিয়ে হাতটা কোলের ওপর নামিয়ে দিতে চোখ মেলে তাকাল।
একের পর এক উঠে আসছে ওরা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে, শেষ নেই। নেশা আমিই করেছি, আমারই ঘুম আসছিল। পায়ের শব্দ ক্রমাগত উঠে আসছে, কেউ পৌঁছোচ্ছে না, গোলমাল বাড়ছে, শব্দটা সিঁড়িতে আটকে। আমি ওর ডানদিক দিয়ে আমার পা দুটো ছড়িয়ে দেবার কসরত করলাম। একবার বাঁ পায়ের ওপর ডান পা ওঠাতে ভঙ্গিটা বয়স্ক মানুষের মতো দেখাল। আবার পা নামিয়ে মেলে দিলাম ওর পাশ দিয়ে। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়ছে।
ঘরের ভেতরে থেকে কেউ ঘরের জন্য অপেক্ষা করে না। ভীষণ নির্বিকার।
এখানকার মানুষ নয়, এখানকার আলোয় দেখা সব কিছু খাঁটি।
ও চোখ বুজতেই এই প্রথম দেখলাম মেয়েটা কী ভীষণ কালো। ডান পায়ের পাতার কাছে গোলাপি শায়ার লেস চোখে পড়তে দেশলাই দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেবার কথা মনে হল। খাটের নীচের অনেকটা দেখা যায় এখান থেকে। কেরোসিনের ফাঁকা বোতল গড়াগড়ি খেয়ে কোণের দিকে পড়ে আছে। অন্য কোণে ঠাকুরের আসন, দেশলাই, সর্ষের তেলের প্রদীপ। কেউ দরজায় কড়া নাড়ল।
আমার স্পর্শের পরে সে যে নিয়তির মতোই রাজত্ব করবে, এতে কোনো ভুল নেই। একটা জাহাজের খোঁজে কবে থেকে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার অনুসন্ধান পশুর খুরের মতো হাঁটছে যেখানে সমুদ্র শেষ, আকাশও নেই, সেই শূন্যের ওপর। খিড়কি দিয়ে আমি বেরিয়ে যাবার পর গেল এক জন, দু-জন, তিন জন…, পর পর বিভিন্ন আকারের মানুষ। প্রথম জন আমি, প্রত্যেকেই।
তিন জনের পরিবারের ত্রিভুজে একজনই মধ্যবয়সি মহিলা, সমকোণে রয়েছেন। বাকি দু-জনের একজনের কোণ বেশি। ওরা পিতাপুত্রও। ওদের কোণ সমান হওয়া আশ্চর্যের হবে, অনভিপ্রেতও। পুত্ররা বিশৃঙ্খলা ঘটায়। এই বিশৃঙ্খলার আবর্তে পাক খায় পরিবার। মধ্যবয়সি মহিলাকে ঘিরেও খায়। এর অর্থ এই নয় যে, একজন মহিলাকে আমি বিশৃঙ্খলার সমার্থক বললাম। মহিলারা শৃঙ্খলার উদ্দেশে জীবন নিয়োজিত করেন। ফল পাওয়া যায় হাতেনাতে।
কবিতার ছন্দের রং কচি বাদামি পাতার মতো হলে কবিতা মাছের আঁশের মতো নীল। কচি পাতার রং অস্থায়ী। সমুদ্র অস্থির। ব্যতিক্রম মাছের নীল। ছন্দে পোড়ার গন্ধ। আমি যে ফলটা তৈরি করেছিলাম, ভুল করে তোমার হাতের তালুর ওপর নামিয়েছি বলে ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করেননি। তুমি ফলটা এক বার স্পর্শের পর আঙুল সরিয়ে নিলে, যেভাবে চোখ থেকে ভিজে আঙুল সরাও। আবার হয়তো স্পর্শ করবে যখন একটা ফল পিছিয়ে গেছে কয়েক শতাব্দী, সূর্য বহুদূর শীতলতায়।
যতদিন নিজে মুখ খোলেননি সকলকে দল বেঁধে তাড়িয়ে ফিরতেন খোঁয়াড়ের পশুর মতো। মুখ দিয়ে গোঙানির মতো এক একটা কবিতার পর অন্ধকারে ডুবে যাওয়া পরিবেশে একা একটা আলোর মতো স্তব্ধ হয়ে থাকতেন উঁচুতে। কী একটা দরজা ফাঁক হয়ে বন্ধ হয়ে যেত, খুলত বিপরীতে। তিনি সাহস পেতেন না দেখে। এখন তিনি পালিয়ে বেড়ান। গোঙানির সঙ্গে প্রত্যেকবার তার শরীরে অন্য রোদ উঠত। সিঁড়ি বেয়ে নামার সময়ে তাকে পথ দেখাত শরীরের আলো। সিঁড়ির দ্বিতীয় উড়ালে আমি বসেছিলাম। উনি আমাকে প্রথম দেখতে পান ল্যান্ডিংয়ে নেমে। ওর শরীরের আগুন নিভে যায়। আমি উঠে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে এলাম নীচের বারান্দায়। তারপর দু-জনে পালিয়ে গেলাম দুটো ভিন্ন অন্ধকারে।
গোলাপের দু-দিকেই রাস্তা।
জল থেকে পৌঁছোনো শ্বেতপাথরের ডানদিকেও জল;
দিগন্তে পৃথিবী নেই, দিগন্তে আকাশও শেষ।
সব পরীক্ষাই বায়োপ্সি।
ছোটো ছোটো মৃত্যুগুলো কাল সন্ধ্যেবেলা এসেছিল, আর যখন ভোরের আলো ফোটেনি। মুখের কোনো আকার নেই। কাঁপা কাঁপা রেখাগুলো স্থির হল না; চিরকালের মতো আমার ভয় হয়ে লেগে রইল আমাকে সর্বস্বান্ত করার জন্য। ভোরবেলা বাথরুমে গিয়ে বেসিনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। লাল লাল পারদের টুকরোয় বেসিনটা লাল; ছিটকে ছিটকে উঠছে ফোঁটাগুলো। জলের ভেতর থেকে মুখ তুলে আবার ডুবে যাওয়া একঝাঁক মাছ বাইরে এসে বাতাস নিচ্ছে। আন্দোলনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে খাড়া দেয়ালে, আবার নেমে আসছে। টুকরোগুলোর বাইরের দিকে হলুদ আভা। আমার কুকীর্তি, ব্যর্থতারা আমার কাছে কী সহজে পৌঁছে গেল!
মৃত্যু বা ধ্বংসের কারণ অজ্ঞাতই রয়ে যায়।
ঘোড়ার বাদামি কম্বলে হাত দিলে যে স্পন্দন টের পাবেন, ঘোড়ার সেটাই নিয়তি। পৃথিবীর অন্তরটা টগবগ করে ফোটে।
রূপকথার ঘোড়ার দিকে তাক করা তির আঁকলাম বলে সমস্ত ছবিটাই বিপর্যস্ত হবার মুখে। হল না তার কারণ, রূপকথার ঘোড়ার কল্পনাতেও মৃত্যু নেই। এই ছবির সুখময়তার হানি ঘটিয়েছে তিরের তীক্ষ্ণ কোণ। কবিতা বিমূর্ততার ব্যবহারে এত ক্লান্ত, তিরের ছুঁচোলো শীর্ষ, ক্ষয়, রেফ সমন্বিত সকল শব্দ এড়িয়ে চলি। বিনয়ের দুধ ও দধির এই প্রসন্নতা অনিবার্য ছিল।
প্রসন্ন কাহিনির অংশ
“আমরা পালিয়ে আসছিলাম ফেরারি আসামির মতো। আসামিদের কাছে হাতিয়ার থাকে। যতক্ষণ গুলির লড়াই করে, লুটিয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত, মাথা নীচু করে না। আমাদের কাছে হাতিয়ার ছিল না, নিরস্ত্র ছিলাম আমরা। হাতিয়ার আনতেই যাচ্ছিলাম। আমার ডানপাশে ও, ওর হাতে পুঁটুলি। মূল্যবান সব স্মৃতিই সংগ্রহ করে এনেছিল খোলামেলাভাবে। সেসব বইবার সামর্থ্য ছিল ওর। হাঁটছিলাম আমরা ওর আজন্ম পরিচিত রাস্তা দিয়ে। তবু দেখলে মনে হবে রাস্তাঘাটের ও কিছুই চেনে না। স্মৃতির অলিগলি দিয়ে হেঁটে আসছিল জংলি হাঁসের মতো।
পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যে পার হয়ে গেল। যেন সাঁতরে এলাম। একটু দূরে কোথাও হুল্লোড় হচ্ছে, গাছের পাতায় আলো এসে পড়ছে ঘনঘন। আমরা জাহাজে পা দিতে শান্ত হয়ে গেল। বন্দর ছেড়ে যখন পাড়ি দিলাম, সমুদ্রে ঝুঁকে থাকা গাছপালা, অভিজাত কয়েকটা বাতাস জাহাজে উঠে এল একে একে”।
অনির্দিষ্ট কারণে আমন্ত্রিত পার্টিতে টাই। মুখগুলো কদর্য। গোড়ালি ঢাকা।
টাইয়ের গোড়াগুলো সারাক্ষণ একই উচ্চতায় রইল।
প্রায় বিনা কারণেই ওরা ফোন করে। সত্যিকারের কারণ উপস্থিত হলে তখনো করবে।
সবুজ ঘাসের বাগানে বসানো মর্মর মূর্তির মতো সমুদ্রের পরিরা তত সুন্দর নয়, বরং ভয় পাবার মতো। ওদের চারটে দিক হাওয়ায় খুলে গেছে। নাবিকেরা জাহাজের সুড়ঙ্গের মধ্যে সিঁধিয়ে যায় পরিদের ভয়ে। জাহাজের গরম মগজ ওদের রক্ষা করে। ওখানে দাঁড়িয়ে গ্রিসদেশে ওই রূপকথার আমলে ঠিক কী ঘটেছিল শুনতে পায়। মগজটা পাক খেয়ে যখন নীচে নামে তখনই তুলে আনে পাতাগুলো। ঠনঠন শব্দে জলদস্যুদের জীবন বাজি রেখে জিতে আনা মুদ্রাও খসে পড়ে পাতা থেকে। কেউ কেউ পাগল হয়ে যায়।
আমি অন্য একজনকে আমার একটা অংশ দিয়েছিলাম। ওর ছিল আমার সংশোধিত অংশ, নির্ণীত অংশ। আমাকে অনির্ণয়টুকুই বয়ে বেড়াতে দেখেছ। আর সেই অনির্ণয় থেকে আমি কয়েকটা খণ্ডে পর্যবসিত হয়েছি, জীবন পর্যবসিত হয়ে যাচ্ছে কথায়। সে কথার মধ্যে সময় নিহিত নেই। আমি একটা কারাগার থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিজের চারটে দিকেই পাঁচিল গড়ার চেষ্টায় আছি। এ-কাজে সফল হওয়া সম্ভব নয়, অসফল হওয়াটাও শক্ত। অন্যের স্ত্রীরা সারা দুপুর একা একাই ঘরে কাটান বন্দি হয়ে।
সমান আকৃতির তিনটে পয়সা কাচের টেবিলের ওপরে সাজিয়ে খেয়াল করে দেখি একটা সরলরেখার তিনটে টুকরো। আমি ওদের পরপর সাজিয়ে আবার রেখাটা বানালাম। ঠেলে ঠেলে এ-কোণ ও-কোণ ঘুরলাম কিছুক্ষণ। একবার কোণের দিকে যখন এনেছি, সামনের পয়সাটা মেঝেতে ছিটকে পড়ল, শব্দ করে গড়িয়ে গেল দূরে। টেবিলের কাচ তখন আরও ভঙ্গুর। ঘরের মেঝে টেবিলের কাচের মতো। দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়া আমার সাহসে কুলোয় না। আমার খেলা মাঝপথেই ভেঙে গেল একটা অক্ষত কাচের টেবিলের সামনে।
রহস্যময় শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস!
শান্তিনিকেতনের রত্নপল্লির ছোটো ছোটো বাড়ি ছড়িয়ে রয়েছে রতনপল্লিতে। সাদা নীচু ওই বাড়ি আমার ছেলেবেলার বন্ধু রতনের মতো। যারা দূর থেকে দেখেন, বাড়িটা তাদের জন্য। যারা ভেতরে বাস করেন তারা ধীরে ধীরে বাড়িটার মতো নিজেদের রূপান্তর করে নিয়েছেন। বাড়িটার সামনের বিশাল উঁচু গাছ জড়িয়ে বোগেনভেলিয়া লাল হয়ে ফুটে আছে থোকায় থোকায়। লাল থোকার মধ্যের ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ দেখা যায়। সারা শহর লাল আলোর আভায় ভাসছে। সন্ধ্যের মুখে পুলিশের জিপ গাছের নীচ দিয়ে থানায় ফিরে এল।
গাছে ছড়িয়ে থাকা মুখ কোনো ভিনদেশীয় মেয়ের, থোকায় থোকায় ফুল, মাঝখানে শূন্য আকাশ। জলপাইপাতার মতো কাজল দেখলাম উঁচু দিকটায়, আড়াআড়ি।
শুধু শুধু অপুষ্ট শস্যের দানার মতো কিছুক্ষণ ভেসে বেড়ালাম বাতাসে।
তিন, চার বা পাঁচজন অপরিচিত মহিলা তাদের অপুষ্ট শরীর নিয়ে আপনাকে অনুসরণ করছে। তাদের কাপড় বহু ব্যবহারে জীর্ণ, মলিন। একেবারে যে সামনে, তার বাঁ-পা বাড়ানো, মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে আছে। বাঁ-পায়ের হাঁটুর ওপরে সামান্য আলো। তার পেছনে যে, অপেক্ষাকৃত কমবয়সি, তার স্থির বাঁ-পায়ের সমান্তরাল ডান পা। দাঁড়িয়ে থাকা পা-কে অতিক্রম করবে। চুলের খোঁপা বড়ো, উঁচুতে বাঁধা। এই নিশ্চল ছবির ভেতরেও প্রথম নারী দ্বিতীয়জনের পিছনে গেলেন। এই ছবির সুখময়তা নারীর। আপনি অনুসরণ করছেন।
আপনার সামনের রাস্তা বটগাছের নীচে বাঁক নেবে। পৃথিবীটা সেখানে শেষ।
একটা জিনিস লক্ষ করে দেখবেন, আপনাকে আপনার অপূর্ণতাগুলো ঘিরে ধরে। প্রাণপণ চেষ্টা করেন, আপনার পূর্ণতা এসে ঢেকে দিক অপূর্ণতাকে, শক্তিশালী দিকটা উদ্ভাসিত হোক, আপনার দুর্বলতা নয়। আপনি ভুলই করেছেন, আপনি একেবারেই ভুলে গেছেন, এটাও আপনার দুর্বলতা। আপনি আপনার নিজস্বতাই ঢাকতে চাইছেন, জানতে দিতে চাইছেন না। আপনার এই গোপনীয়তার চেষ্টা, সবলতা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা, আপনার অন্য দুর্বলতা। এর থেকে মুক্তি পেলেন না; আপনি কোনো কিছু থেকেই মুক্তি পাবেন না। আপনি জানেন না আপনি একটা প্রমাণের দিকে এগোচ্ছেন; ওরা আপনাকে জানতে দেবে না। জানতে দেবে না সেটাও প্রমাণ করবে।
আমি এই শহরতলিতে বাস করি বলে এই জায়গার নাম আমার কাছে পরম বিরক্তির। কোথাও না কোথাও বাস করতেই হবে একথাও বিশ্বাসের কোনো কারণ ঘটেনি এখনও।
দ্রুত অন্ধকার নেমে আসছিল বাইরে বাগানের গাছগুলো বেয়ে। আমার মুখ আর তার দেখতে পাবার কথা নয়, আমিও দেখতে পাচ্ছিলাম না ওর মুখ, আর ওর মুখে ফুটে ওঠা আমাকে দেখতে পাবার অভিব্যক্তিগুলো। মেয়েটি আমার সম্পূর্ণ পরিচিত তাও নয়। তার পক্ষে আমার কিছুই দেখা সম্ভব নয়, আমার বাইরেটাও না। মেয়েটিকে কোনোকিছুই কখনো হাসায়নি বলে সে হয়তো সামান্য কোনো কারণ কিছু পেলেই হাসতে পারত। আমাকে কিছু একটা বলল। বলার সময় সামান্য হাসি এনে বলায় তার মুখের শেষ কথাটা ফুটে উঠল ঠোঁটের ওপর। কার কোথাকার হাসি কোথায় এসে ভাঙে দেখে আমি আতঙ্কে কালো হয়ে গেলাম। আমার সেই কালো মুখ দেখে সে তখন তার কথা থামিয়ে আমার মুখের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। তার ঠোঁটের হাসি তখন ফুটে উঠেছে উজ্জ্বল দুটো চোখের তারায়। আর কোনো আশা নেই দেখে আমি হাল ছেড়ে দিতে আমার মুখেও ফুটে উঠল রক্তমাখা হাসি। আমি হাসছি দেখে এবার ওর মুখ থেকে নিমেষে উধাও হয়ে গেল ওর একটু আগের উজ্জ্বলতা। ওর ঠোঁটের হাসি তখন আমার চোখে জ্বলতে শুরু করেছে।
একজন ব্যস্ত মানুষের কিছুই সফল হচ্ছে না। তার আত্মহত্যার প্রতিজ্ঞাও সফল হওয়া মুশকিল। আত্মহননের ইচ্ছা জাগলেই আমার নিজের সামাজিক সত্তা টের পাই। আমি একজন দুর্ধর্ষ নাবিক।
আমার রোগের শরীর, পোকার শরীর। আমার একার শরীর । পোড়া শুরু হয়েছিল কানের লতি থেকে। ভোর হবার পর পরই শুরু হয়ে দিনের সঙ্গে তেজ বাড়ছিল আগুনের। বেলা হলে শরীরের স্থায়ী ব্যথার সঙ্গে যখন সমান হয়, তখন দীর্ঘদিন বয়ে বেড়ানো শরীরের ব্যথাগুলো আমি কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে থাকি। আগুনের নেকড়েরা ধীরে ধীরে আমার রক্ত পান করে, উষ্ণ আধফোটা, জীবাণুময়। আমি চিত হয়ে শুয়েছিলাম। আমার কণ্ঠা উঁচুতে, উঁচু অংশ শীতল।
পীড়াদায়ক শব্দও সজীব হয়ে উঠতে পারে কোনো সম্ভাব্য মুক্তির উপায়ে। ব্যর্থ লেখার ভিড়ে চিরকালের মতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
সেদিন দিঘির জলে নামার সময় আবার আমার শ্বেতপাথরের কথা মনে পড়ল; পাথরগুলো কিছুতেই ছেড়ে যাচ্ছে না। বিশ্বের অনেকটা অংশ কয়েকটা পাথরে নিবিড় হয়ে আটকে আছে। জলও। জল পাথরের সংশয়। জলের ওপর গাছের ছায়া পড়ে থাকতে দেখে আমার বেমানান একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল।
“যোগী ধান কেটে ঘরে তুলবে বলে যতটা পারছে দ্রুত হাত চালাচ্ছে। তার কাস্তে চলছে নিমেষে, কাস্তের ধাতব ফলার ওপর ছোটো ছোটো সূর্য চমকে উঠছে বার বার। যেন সূর্যকেই প্রবল গতিতে কেটে চলেছে। বাঁ-হাত দিয়ে সাপটে আনছে ধানের ভঙ্গুর শীষ। কিছু ধান মাটিতে খসে পড়ে রাঙা করে দিচ্ছে মাটি, আর যোগীর উত্তেজনাও বাড়ছে গরম পারদের মতো। সে কেটে রাখা ধানের পাঁজাকে কেন্দ্র করে কেটে চলেছে একটা ব্যাসার্ধের মধ্যে। দূরে যেতে সাহসে কুলোচ্ছে না। তবু অনিবার্যভাবে বেড়েই চলে দূরত্ব, ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠে যোগী। বার বার ঘাড় ঘুরিয়ে সে কঠিন লক্ষ রাখে সোনার পাহাড়ের ওপর। কয়েকবার আঙুল কাটতে কাটতেও রক্ষা পায়। শেষরক্ষা যদিও সে করতে পারে না। আকাশ কালো করে এসে পঙ্গপালেরা ছেয়ে এসে শেষ করে যায় একটা টুকটুকে লাল সোনার পাহাড়। গভীর অন্ধকারে ডুবে যায় পৃথিবী।
ধানজমির গা থেকে রক্তের গন্ধ মোছে না”।
দুটো একটা আবছা মুখ, বেদনার মুখ। মানুষের মুখ আগে এত অস্পষ্ট ছিল না।
বেদনাই কবিতার একমাত্র বিষয়। জিজিকে চুড়ি জিনিসটা কী বোঝাতে হিমশিম খেলাম। শেষে শুধু একটা রেখা দিয়ে গাড়ির চাকার মতো বৃত্ত এঁকে দেখিয়েছি। আর একটু স্পষ্ট করতে গিয়ে শেষে হাতের কবজি নিষ্ক্রান্ত হল শূন্যের পথে, আঙুলগুলোও আঁকলাম।
আমি যেসব কাহিনি এতদিন ধরে লিখে এসেছি, সেগুলো সংগ্রহ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম নিবিড়ভাবে। কিছু একটা আমার হারিয়েছে লেখাগুলোর ভেতরে। হাটভাঙা একদল লোকের ভেতরে ফেরারি আসামি খুঁজছি। ছোট্টো শিশির ভেতর পুরে রেখেছিলাম, আজ খুললাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম ভেতরের ঘনত্ব যেন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমার একবারও সন্দেহ হল না ভেতরের ঘনত্ব বাইরের থেকে কম। বাইরের চরিত্ররা, যাদের আমি সৃষ্টি করেছি, এমনকী আমি নিজেও, ধীরে ধীরে কাহিনির ভেতরে অনুপ্রবেশ করব, আমার সন্দেহ হল না একবারও। আমি নিজেও পিঁপড়ের বাসার মতো ডাল থেকে খসে যাইনি। অবশ্য কিছুক্ষণ আপেক্ষার পর কাহিনিরা সত্যিই যেন বাইরে এল একটা হালকা গন্ধের মতো। বাইরে এসে মিশে গেল সংলগ্ন বাতাসে।
একবার অনুভব করলাম থুতুর বদলে সামান্য রক্ত, রক্তের বদলে সামান্য ঢেউ ভেসে এল। বাংলোটা সারাদিনের সব কাজ বন্ধ রেখে হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে নিঃসঙ্গ নারকেল গাছটার মতো। বাহির আর ভিতর, ভিতর আর বাহির। বাংলোটা আকণ্ঠ ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারে, প্রাণপণ চেষ্টা করছে আরও কিছু দিন টিঁকে থাকার। আমি যে হালকা গন্ধটা এখন পাচ্ছি, সেটা যেন কোনো গন্ধ নয়, গন্ধের জন্যই যেন সে অন্ধ। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আমি আমার কাহিনির ভেতরে সম্পূর্ণ বন্দি।
বাইরে এসে দেখি একা নই, আমরা তিন জন। আমরা তিন জন একে অন্যের দিকে এগিয়ে আসছি, যেভাবে এগিয়ে আসে ঢেউয়েরা, একে অন্যের ওপরে আছড়ে পড়ে।
ঢেউ শুধু নদীর জল।
এখন মনে হয়, শব্দেরা জলের ভেতর থেকে আমার কাছে আসে।
পাশের লোকটা ঘড়ির স্প্রিং আবার জুড়লো। আমার দেখাদেখি স্প্রিংটা খুলেছিল একটু আগে, আমার দেখাদেখি বন্ধ করল।
ভিজে একজোড়া হাত সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করল আমার সঙ্গে, তারপর দু-জনেই ডুবে গেলাম নাকখোঁটা অন্ধকারে। এই লোকটাই আমাকে অনুসরণ করে।
পোলাওয়ের গন্ধ আসছিল, আর ঘোড়াগুলোকে একের পর এক লাফিয়ে নদী পার হয়ে যেতে দেখলাম অন্যপারের অন্ধকারের ভেতরে। ধনুকের মতো ক্রমাগত পার হচ্ছিল একের পর এক। হঠাৎ দেখলে মনে হবে বিপরীত গতিতে আবার ফিরে আসছে গোলাপের ডাল, তার কাঁটা। ওদের খুরের সঙ্গে দ্বীপটাও উঠে গেল অন্য পারে। তবু সন্দেহ গেল না বলে সন্দেহের ওপর মাটি চাপা দিলাম। সন্দেহ একটা প্রাণী, একটু পরেই সে আবার বেরোয় মাটির আবরণ ফুঁড়ে, আমাকে খুঁজে বের করে নেয় যেখানেই থাকি, অন্ধকারে বা আলোয়।
সমস্ত অলৌকিক ঘটনাবলীর ভেতর স্পর্শগ্রাহ্য বস্তু। বৃষ্টির অন্ধকারে ভাসমান চুল, করিডরে গোলাপ, কুয়োর অন্ধকারে তালা, দিগন্তে গবাদি পশু। শেষেরটা ভুল। দিগন্তে পশুর খুর দিগন্তই— মাটিও না, আকাশও না। শুধু শেষ। দিগন্তে বাঁশির শব্দই একমাত্র বস্তু। অলৌকিক ছবির কথায় মনে এল
আমার পুরুষের চোখ নারীর চোখ থেকে রূপান্তরিত,
আমার পুরুষের চোখ রূপান্তরিত গবাদি সব পশুতে।
দিগন্তে বাঁশির কোনো শব্দ নেই।
যা করেননি এমন বহু পাপের ভারে ঈশ্বর এখনই দীর্ণ। এই পাপ বা পুণ্য কখনোই সর্বসমক্ষে ঘটে না। পাপ পাপকেই টেনে এনে অসীম শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে।
আমি দীর্ঘক্ষণ একটা কোণে দাঁড়িয়েছিলাম বলে মাটিতে আমার পায়ের ছাপ পড়ল গভীর হয়ে। আমি বুড়িয়ে যাওয়া একটা সবুজ পাতার মতো আঙুল দিয়ে ওষুধের পাতা ছিঁড়ছিলাম। আমি কাঠের পুতুলগুলো সন্ধান করে আসছি, সন্ধান করে আসছি ধারাবাহিকভাবে।
একধরনের নিঃসঙ্গ লড়াই; ব্যক্তিগত বিষয়ে পর্যবসিত। যে কাঠের পুতুলগুলোর কথা লিখলাম, সেগুলোর বিষয়ে আমার সম্যক ধারণা নেই যে এঁকে বোঝাতে পারি। একটা আঁচড়ের গভীর গর্তের দিকে দু-জনে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। গর্তের ভেতর হাজার হাজার পুতুল, একে অন্যের থেকে বিভিন্ন দূরত্বে। একেবারে ছোটোগুলোর চোখের মণি ফোটেনি।
সে আমাকে বলল, তোমার আঁকা ছবি পুতুলগুলো থেকে খুলে যাওয়া রূপ, পুতুল নয়।
ও আমার সঙ্গে কথা বলছিল নদীর চরে বসে পাথরভাঙা মেয়েদের মতো। দু-দিকেই বিস্তীর্ণ চর, আকাশ থেকে ঘড়ি ঝুলিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর জল আর সময় পাহারা দিত ওরা। সেই উৎকর্ণতা নিয়ে বলল, খানিকটা অনুগ্রহ করেই, তুমি যা নেই তাদের কথা বলছ। পুতুলেরা কোথাও নেই, শ্বেতপাথরও না, এমনকী গোলাপও। ওদের দুটো দিকই ঢালু, অন্ধকারের দিকে।
পার হয়ে আসা ল্যাম্পপোস্টের দিকে ঘুরে দাঁড়ালে যেখানে দাঁড়াব, এখন সেখানে ছায়া, আমি সূর্যের দিকে হাঁটছিলাম।
মানসিক যুদ্ধের ভেতরই কোনো একটা সত্য সহসা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, সত্য বিরুদ্ধেও যায়।
জুন-ডিসেম্বর ২০২০
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।