অতিমারির অতি দুর্দিন যেদিন হইতে ঘনাইয়া আসিয়াছে, লেখাপড়া ত্বরিত গতিতে ‘গোল্লা’ নামক অকুস্থলের দিকে ধাবিত হইয়াছে। মাসকয়েক এইভাবে নিষ্ক্রান্ত হইলে শিক্ষা মন্ত্রকের বাঘা বাঘা মন্ত্রী আমলা কর্মকর্তাদের খেয়াল পড়িল, এর আশু সমাধান মিলিবে না। অতএব চালু হইল ‘অনলাইন ক্লাস’ নামক এক বিভীষিকাময় শিক্ষাদান পদ্ধতি। ইহাতে মোবাইল ফোন অথবা ট্য়াব অথবা ল্যাপটপ কমপিউটারের ছোট্ট পর্দার মাধ্যমে শিশু, কিশোর-কিশোরী,তরুণ-তরুণীদের শিক্ষা দেওয়া হইবে।
কিন্তু এমত শিক্ষা দিবেন কে? না, এতদিন যাঁহারা টেবিলচেয়ারে বসিয়া, পুস্তক বা নোটের খাতা করতলগত করিয়া, কালো বোর্ডে চক দিয়া আঁকিবুকি কাটিয়া ছাত্র ঠ্যাঙাইতেন, তাঁহারাই। এখন হইতে সে সকল কৌচ-কেদারা চক বোর্ড প্যানডেমিক জাদুবলে অদৃশ্য হইয়া বাকি রহিল কেবল এক বিঘৎখানিক এক জ্বলজ্বলে পর্দা এবং তাহাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চতুষ্কোণে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক শিক্ষিকার মুখব্যাদান।
কিন্তু এহেন অনলাইন শিক্ষাপ্রণালিতে লাটে উঠিল সমস্ত প্রকার সামাজিক শিক্ষার রীতি। কারণ ‘সামাজিক দূরত্ব’ই যে কালের একমাত্র অবশ্যপালনীয় রীতি ও নীতি, সেখানে সামাজিক শিক্ষার কাজ কী? আর সামাজিক মাধ্যম তো সদাজাগ্রত রহিয়াছেই মনুষ্যজাতিকে অসামাজিক করিবার নিমিত্ত। ফলে একই শ্রেণিতে পড়িয়াও ছাত্রছাত্রীরা পরস্পরকে কেবল হোয়াটস্যাপ ও ল্যাপটপের নামাঙ্কণ দেখিয়া জানিল।
আর প্র্যাকটিকাল ক্লাস ‘ভোগের বাড়ি’ নামক স্থানে প্রত্যয়ী ভঙ্গিতে রওনা দিল, পৌঁছাইয়াও গেল। ল্যাব খুলিবার কোনও উপায় অবশিষ্ট না থাকায় সমস্ত হাতেকলমে শিক্ষা চুপিসাড়ে বন্ধ হইয়া গেল। বন্ধ হইয়া গেল বোর্ডের পরীক্ষাও। ফলে বিলুপ্ত মূল্যায়ণ ব্যবস্থায় কেউ জানিতে পারিল না ছাত্রছাত্রীরা আদপেও কিছু শিখিতে পারিল কিনা! ব্যঙ্গচিত্রে সেই ঘটনারই প্রভাব পড়িয়াছে।
সৌতুমি অর্থনীতির ছাত্রী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল করেছেন। খুব ছোটবেলা থেকেই আঁকতে ভালবাসেন। খবরের কাগজে প্রকাশিত ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা করতেন। তাঁর খুব পছন্দের বিষয় কার্টুন ডুডল। সেই ভালবাসার টানেই তিনি কলকাতার কার্টুনদল-এ যোগ দেন ২০১৯ সালে।
One Response
তোমার লেখাটি খুব কঠিন বাস্তব গল্প।যা বতমান পরিস্থিতির লিখিতরূপ।ভারী সুন্দর লাগলো।