পৃথিবী এত দিন টিকে আছে কীসের জোরে? সূর্যের আকর্ষণ? আহ্নিক গতি? বার্ষিক গতি? দুই মেরুতে তীব্র চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের বিস্তারে? আজ্ঞে না। এ সব শিশু-সরল সমীকরণ, বৈজ্ঞানিকরা বলে থাকেন। আসলে পৃথিবী লক্ষ লক্ষ যুগ, হাজার হাজার বছর বেঁচেবর্তে আছে, টিকে আছে দিব্য একটাই জিনিসের ওপর ভর করে, তা হল আশাবাদ। তা না হলে, যে হুলুস্থুলু সেই সৃষ্টির আদি থেকে চলছে, তাতে কি সত্যিই পৃথিবীর টিকে যাওয়ার কথা? নয় তো! কিন্তু বহাল তবিয়তে রয়েছে।
এই যে এখন ভয়ঙ্কর তাণ্ডব চলছে বিশ্ব জুড়ে, তাতেও কিন্তু পৃথিবী বুক চিতিয়ে ফাইট দিয়ে যাচ্ছে। এক দিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন, অন্য দিকে দাবানল, ভূমিকম্প, বন্যা, সুনামি, হিমবাহ গলে যাওয়া, কার্বন নিঃসরণ, তার সঙ্গে অরাজকতা, পরমাণু অস্ত্র, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাস, অন্য দিকে পৃথিবী জুড়ে ট্রাম্প, পুতিন, কিং জং উন, বরিস জনসন, বোলসোনারো। ভুলে গেলে চলবে না, মেয়ে পাচার, শরণার্থী, মাইগ্রেশন, ড্রাগ, অসুখ, সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত, নোটবন্দি, এ সব পেরিয়ে পৃথিবী আছে এখনও। সেটাই তো পদে পদে বিস্ময় জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট। তা হলে পৃথিবী আছে কী করে আর তার বাসিন্দারাই এত কিছু সামলে জীবনযাপন করছে কী করে?
করতে পারছে কারণ, ধন্য আশা কুহকিনী। হ্যাঁ, আশাবাদ, যাকে বলে অপটিমিজম। মানে মনের কোণে একটা ধারণা জিইয়ে থাকা যে এক দিন ভাল কিছু ঘটবে। বহু বছর গবেষণা করার পর আমেরিকার বস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন, ন্যাশনাল সেন্টার পিটিএসডি (বস্টন) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষকরা বলছেন, যাঁরা আশাবাদী, তাঁদের পরমায়ু বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ মনে আশা থাকলে অন্তত ৮৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ জীবন লাভ করা সম্ভব।
এই গবেষণাটি করা হয়েছে ৬৯,৭৪৪ জন মহিলা এবং ১৪২৯ জন পুরুষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে। (একটা জিনিস ভাবতে অবাক লাগছে, মেয়েরা কী করে এত আশাবাদী হয়! না কি জবরদস্তি আশাবাদী না হলে দুঃসহ জীবন কাটানো যায় না?) প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর আশাবাদ মাপা হয়েছে, সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য, তাদের স্বভাব, ধূমপানের অভ্যেস, অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যেস, সব কিছুকেই পরিমাপ করা হয়েছে বহু বছর ধরে। মেয়েদের মনিটর করা হয়েছে গত দশ বছর আর পুরুষদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে গত ত্রিশ বছর ধরে। যখন প্রত্যেককে তাঁদের প্রাথমিক আশাবাদিতার মাপকাঠিতে বিচার করা হয়েছে, তখন দেখা গিয়েছে যে মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে যাঁরা খুব আশাবাদী, তাঁদের পরমায়ু বৃদ্ধির প্রবণতা ১১ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি। এবং ৮৫ বছর বয়স অবধি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ। এই ফলাফলে পৌঁছনোর সময় কতকগুলি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছিল। যেমন, অংশগ্রহণকারীদের বয়স, তাঁরা কেমন পরিবেশে থাকেন, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, কোনও দীর্ঘকালব্যাপী কোনও রোগ আছে কি না, মানসিক অবসাদে ভোগেন কি না, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম করেন কি না, ইত্যাদি।
গবেষকরা বলছেন, দুরারোগ্য অসুখ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, সেই অসুখের নিরাময়ের ব্যবস্থা হয়েছে, কোন কোন বিষয় এই সব অসুখকে প্রভাবিত বা ত্বরান্বিত করতে পারে, সে সব নিয়েও বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আশাবাদী থাকলে, পজি়টিভ থাকলে অসুখ থেকে কতটা দূরে থাকা যায় বা কারও আশাবাদী মন তার শরীরকে ভাল রাখতে পারে কি না, সে নিয়ে বিশেষ গবেষণা, আলোচনা, বিশ্লেষণ তেমন ভাবে হয়নি। গবেষকরা এ-ও বলছেন, এই স্টাডি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি জরুরি অবদান রাখবে, কারণ এই স্টাডি অনুযায়ী আশাবাদ হল এমন এক সম্পদ যা মানুষের পরমায়ু বাড়িয়ে তুলতে পারে। এবং আপনি যদি তেমন আশাবাদী না হন তা হলেও চিন্তা নেই, কারণ চিকিৎসা ও সাহচর্যে আপনার আশাবাদিতার মাত্রা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, ঠিক কী কারণে আশাবাদ মানুষের স্বাস্থ্য ও পরমায়ুকে এতটা প্রভাবিত করতে পারছে, সে গবেষণা ও বিশ্লেষণ এখনও বাকি। তবে দু’একটা ব্যাপার সহজেই বোঝা যায়। যেমন, যে সব মানুষ আশাবাদী, তাঁদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যেসও খুব স্বাস্থ্যসম্মত। এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়াদাওয়ার ফলে তাঁদের শরীরও খারাপ কম নয়। অন্য দিকে যাঁরা নিরাশাবাদী তাঁরা অ্যালকোহল, মাদকের প্রতি বেশি আসক্ত এবং খাওয়াদাওয়াও নিয়মমাফিক করেন না। পরমায়ুর ওপর তার একটা সুপ্রভাব তো পড়বেই। আবার, অন্য একটি গবেষণা বলছে, আশাবাদী মানুষের মানসিক স্থিতিশীলতা বেশি, মনের বিভিন্ন অনুভূতিকে তাঁরা বেশি ভাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এবং কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লেও, তা থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাঁদের বেশি সময় লাগে না।
আশাবাদের পুরিয়া যদি মানুষের পরমায়ু বাড়াতে পারে, তা হলে রাজনৈতিক আশাবাদ দিন বদল করবে— এ আশা করাটা নিশ্চয়ই দুরাশা নয়।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।