banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রোল-অ্যাকশন-কাট্: চতুর্থ দৃশ্য (২)

Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

gateway of India Mumbai

গঙ্গাধর: (হাসেন) হাঃ। হাঃ। হাঃ। যাবে তোমরা? এস। আমিও উঠব একটু বাদে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ভিকি বেটা কী বলতে চাইছে একবার শুনে নিই।

[জাফর এবং কোকনদ আবার প্রণাম করে বিদায় নেয়। ওরা বেরিয়ে রাস্তায় আসে। আবহ আসে। জনগণের হইচই। পুনম আর মহেশ ওদের ধরে। জাফর আর কোকনদ হাঁটতে হাঁটতেই বাইট দিতে দিতে এবং অপেক্ষারত জনগণের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে উইং দিয়ে বেরিয়ে যায়। ভেতরের ঘরের আলো কমে এসেছিল। জাফররা বেরিয়ে যেতে তা আবার উজ্জ্বল হয়]

গঙ্গাধর: বোলো বেটা বোলো।

সুরেশ: ভাউ আমরা কি বাইরে যাব?

ভিকি: তা ইয়ে মানে

গঙ্গাধর: না না না, ভিকি বেটা। সুরেশ, বিনায়ক এরা আমার নিজের দু’টি হাতের মতো। আর শান্তা তো বাচ্চা একটা মেয়ে। তোমার যদি আমায় কিছু বলার থাকে তো ওদের সামনেই বলো।

নবনীত: তুই স্যারকে কী বলবি ভিকি?

ভিকি: নামানে

হিমাংশু: লজ্জা কী ভিকি? স্যার আমাদের সবার। বলো তুমি।

ভিকি: আমি

নবনীত: বলে ফেল তুই– বল্

ভিকি: আমি মানে

সুরেশ: আরে লজ্জা কিসের, বল্‌ ভিকি

বিনায়ক: বলো, বলো। চুপ করে থাকা দায়, মন করে হায় হায়।

ভিকি: আমি

নবনীত: বল না তুই।

ভিকি: (ক্ষেপে যায়) এত জ্ঞান বাঁটলে হবে না। তুই বল্

নবনীত: (হিমাংশুকে) তাহলে তুমি বল।

গঙ্গাধর: না, না তোমরাই বলো না

(অরুণা আসেন)

অরুণা: (প্রমোদকে বলেন) ঠাকরেজি আপনি বরং স্যারকে বলুন।

বিনায়ক: এ কী! আপনি আড়ি পাতছিলেন নাকি?

গঙ্গাধর: আঃ বিনায়ক। আড়ি পাতা আবার কি? শোকের দিন কেউ এসব কথা তোলে?

প্রমোদ: আপনাদের ফ্যামিলির ব্যাপার, আমার বলা কি শোভা পাবে ম্যাডাম? আপনিই বরং স্যারকে বলুন।

নবনীত: তাহলে ভিকি তুই বল্।

ভিকি: তুই বললে ভাল হয়।

হিমাংশু: তাহলে তুমিই বলবে নাকি গো?

নবনীত: না না প্রমোদজি বলুন।

বিনায়ক: নাকি ম্যাডাম বলবেন?

(আরও কিছুক্ষণ কে বলবে এই নিয়ে মতদ্বৈধ চলে। গঙ্গাধর থামায়)

গঙ্গাধর: আঃ থামো তোমরা (অরুণার দিকে তাকিয়ে আবার সেই স্মিত হাসি হাসেন) বুঝলেন ম্যাডাম, সিনেমা তো একদম দেখা হয় না। তবে রাতে বাড়ি ফিরে মাঝেমাঝে আমার গিন্নির পাল্লায় পড়ে সিরিয়াল দেখি। সেদিন রাতে দেখছিলাম, কী যেন খুব হিট করেছে। হ্যাঁ ‘শাস্ হোনে কে বাদ, বহু কা স্বমূর্তিধারণ’। এত টাচি। আর এত সেন্টিমেন্ট। চোখে জল  এসে যায়। কী ভালো অভিনয় করছেন আপনি ম্যাডামজি

বিনায়ক: ভাউ জানো তো, বিঠঠলভায়ের গণেশপুজো এবার ম্যাডামজিই  ইনগারেট করেছেন।

গঙ্গাধর: তাই নাকি? বিঠঠল আপনাকে ঠিকমতো রেমুনারেশন দিয়েছিল তো?

অরুণা: বিঠঠলভায়ের পুজো মানে কোনটা যেন?

বিনায়ক: ওই যে তিনবাত্তির বড় পুজোটা।

অরুণা: ও হ্যাঁ হ্যাঁ। ওইসময় দিনে পাঁচ ছ’টা ইনগারেশন থাকে তো! সব গুলিয়ে যায়। না, না তিনবাত্তির ওরা খুব ভাল পেমেন্ট করেছিল। বেশিক্ষণ আটকায়ওনি।

গঙ্গাধর: বাঃ বাঃ

বিনায়ক: জানো তো ভাউ, বিঠঠলের এবারের পুজোর থিম সংটা আমারই করা। শুনবে ভাউ? (টেবিল বাজিয়ে গায়) ‘কে দেবে আমাদের যশ ও রোখড়া। ওপর থেকে গুজিয়ার মতো ছড়িয়া ছড়িয়া। বাপ্পা, বাপ্পা, বাপ্পা রে ভাই গণপতি মোরিয়া’। (থামে) কেমন ভাউ?

গঙ্গাধর: জঘন্য।

(বিনায়ক চুপসে যায়। গঙ্গাধর আবার সেই স্মিত হেসে অরুণাকে বলে)

খুব ভাল লাগে আপনার সিরিয়াল। রাতে বেশ সময়টা কেটে যায়।

সুরেশ: (নড়েচড়ে বসে) না, ভাউ এটা কী বলছেন? সিরিয়ালে সারাক্ষণ এ ওর পেছনে লাগছে। কুঁদুলেপনা করছে, খুন করছে, দশ বারোটা করে বিয়ে করছে সোসাইটিতে কী বার্তা যাচ্ছে? সেদিন ব্লগে একজনের লেখা পড়ছিলাম। সে ছোকরা লিখেছে, ‘সিরিয়াল হচ্ছে সেই কালচারাল চিটফান্ড, যাতে মানুষ ড্রাগের মতো সময় লগ্নি করে মানসিকভাবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে’।

গঙ্গাধর: ছাড় তো। সিনেমা-থিয়েটারের আঁতলামো কোরও না বেশি সুরেশ। ক’টা লোক দেখে তোমার ওই সিনেমা থিয়েটার? কত? তার একহাজার গুণ বেশি লোক সিরিয়াল দেখে। তারা সবাই মূর্খ? সবাই চিটফান্ডে সময় লাগাচ্ছে? আমার হাতে দেশের ক্ষমতা এলে ওই ছোট ছোট বাজেটের সিনেমা আর ওই থিয়েটার আমি ব্যান করে দিতাম। দশ কোটির নীচে সিনেমা বানানো যাবে না, ব্যাস। আর থিয়েটার? ফুঃ। সস্তা বুকনি আর ওঁচা চিন্তাভাবনা। বাজেটই থাকে না ওদের, ব্যবসাই হয় না।

শান্তা: কিন্তু আঙ্কল, ওই ছোট বাজেটের সিনেমায় আজকাল বেশ কিছু ভাল অভিনেতা দেখা যাচ্ছে, যারা ওই জাফরভাই বা ভিকিভাইদের মতো অতটা স্মার্ট না হলেও বেশ ভাল অভিনয় করে।

গঙ্গাধর: আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে আমি ওদেরও ব্যান করে দিতাম। এই অভিনেতাগুলো সবকটা হচ্ছে জানবে টুকরে টুকরে গ্যাং। দের চোখমুখ দেখলেই বোঝা যায়। এদের চিন্তাভাবনার মধ্যেই সারাক্ষণ নিজের পাবলিসিটির ধান্দা ঢুকে রয়েছে। আরে ভাই মিডিয়া যদি ছবি তোলে, বাইট নেয়, শুধু আমাদের নিক্। ওদের কথা এত দেখানোর কী আছে? আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে না, আমি মিডিয়াকে-ও ব্যান করে ছেড়ে দিতাম।

সুরেশ: কিন্তু ভাউ আমাদের দেশে কত ভালো ভালো সিনেমা ডিরেকটর এসেছে।

গঙ্গাধর: যেমন কে শুনি?

সুরেশ: ওই যেমন ধরুন সত্যজিত

গঙ্গাধর: সত্যজিত, কে সত্যজিত?

বিনায়ক: সত্যজিত গাইতোন্ডে। ওই যে ‘মেরা পতি সির্ফ মেরা হ্যায়’ বানিয়েছে।

সুরেশ: আরে না না ও নয়।

গঙ্গাধর: তবে কে? সত্যজিত পারেখ? সেই যে আমাদের কমবয়সে দেখা ‘ইনসানিয়াত কা দুশমন’-এর ডিরেকটর?

সুরেশ: না ভাউ, ওই সত্যজিত নয়।

ভিকি: তবে কি আমাদের এই নতুন ডিরেকটার সত্যজিত শাহনাওয়াজ? আমি ওর সঙ্গে ‘লাভ কা নতিজা, পেয়ার কি ফেট’ সিনেমায় কাজ করেছি। আমার গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স ছিল। ভাল ডিরেকটর।

সুরেশ: আরে না। ওই সত্যজিত নয়। সত্যজিত


(ভিকির মোবাইল বাজে। ও ধরে)

 

ভিকি: হ্যালো। ও আচ্ছা আচ্ছা। ঠিক আছে, ঠিক আছে। (গঙ্গাধরকে) স্যার, জয়দেব দেশমুখ আসছে। পিতাজির মরদেহে মালা দিতে চায়।

গঙ্গাধর: মানে আমাদের ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন জয়দেব? বাঃ। খুব ভাল।

(ওঠেন)
আজ তাহলে উঠি ভিকিবেটা। তোমরা যা বলতে চাও, তা তো আজ শোনা হল না।

ভিকি: (গাঁইগুঁই করে) ঠিক আছে স্যার। তাই হবে। আজকে তো আপনার সময় নেই।

গঙ্গাধর: না, আজ আর হবে না। (শান্তাকে) চলো বেটা অফিস চলো। রাস্তা বাকি ইন্টারভিউ দিয়ে দেব।

(শান্তার কাঁধে হাত দেন। বিনায়ককে বলেন)

তোমার গাড়ি আছে তো? আমি শান্তাকে গাড়িতে যেতে যেতে ইন্টারভিউটা দেব। তুমি তোমার গাড়িতে চলে যাও। সুরেশ তুমি কী করবে?

সুরেশ: আমি ভাউ আপনাকে এগিয়ে দিই। তারপর ভিকির সঙ্গে একবার দেখা করে চলে যাব। আমার থিয়েটারের রিহার্সাল আছে। সামনের সপ্তাহে বেঙ্গালুরুতে শো। অনেকদিন বাদে হবে। একটা অন্তত রিহার্সাল করে নিতে হবে।

হিমাংশু: কিসের শো সুরেশভাই? আমার খুব ভাল লাগে আপনার থিয়েটার।

সুরেশ: ওই, ওইটাই। ‘যীশু ভার্সাস বিশু’। ওই একটি থিয়েটারই সম্বল আমার।

গঙ্গাধর: হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে। যত বেকার বওয়াস, থিয়েটার। হুঃ।

(যেতে যেতে ঘোরেন। ভিকিদের বলেন)

ভিকি বেটা, নবনীত বেটা, তোমাদের মধ্যে খান্নাজির প্রপার্টি নিয়ে যদি কোনও ডিসপিউট হয়, তবে আমার বাংলোয় এস। সেক্রেটারিয়েটে বসে এসব চাটনি কাজিয়া আমি আবার শুনতে পারি না।

(অরুণাকে বলেন)

আপনি এলে আলাদা আসবেন ম্যাডাম। দু’পক্ষের কথা আলাদা শোনাই ভাল।

(প্রমোদের দিকে তাকিয়ে তারপর অরুণার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসেন)

উকিল সঙ্গে না আনলেও চলবে ম্যাডাম। ঠিক আছে? খুব ভাল লাগে আপনার সিরিয়াল(থামেন) মানে, আপনাকেও।

(অরুণা হাসিমুখে মাথা নাড়ে। আলো নেভে। রাস্তায় আলো জ্বলে। ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন ক্রিকেটার জয়দেব দেশমুখ, পুনম আর মহেশকে বাইট দিচ্ছে)

জয়দেব: আমাকে শিবকুমারজি খুব ভালবাসতেন। লাস্ট টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে আমি যখন সাউথ আফ্রিকার এগেনস্টে সেঞ্চুরি করেছিলাম, উনি আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে এস.এম.এস করেছিলেন। আমি হয়তো ওঁর সিনেমা সেভাবে দেখিনি, কিন্তু অ্যাজ় আ পলিটিশিয়ান, অ্যাজ় আ হিউম্যান বিইং আমি ওঁকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। আজকে ওনার মৃত্যুর দিনে তাই…

[এইসময় উল্টোদিক থেকে গঙ্গাধর, সুরেশ, বিনায়ক আর শান্তা বেরিয়ে আসে। গঙ্গাধরের পেছনে নিরাপত্তারক্ষী। জয়দেব বাইট শেষ না করেই এসে গঙ্গাধরকে প্রণাম করে। গঙ্গাধর জয়দেবকে দু’হাতে তোলেন, তারপর কথা বলতে বলতে ওরা বেরোন। পুনমরা পেছন পেছন ধাওয়া করে।]

পুনম: জয়দেব, জয়দেব, বাইটটা কমপ্লিট হল না জয়দেব।

মহেশ: (গঙ্গাধরকে) স্যার, স্যার একটা বাইট। প্লিজ।

[হট্টগোলের মধ্যে সবাই বেরিয়ে যায়। ভেতরের ঘরে আলো জ্বলে। ভিকি, দিব্যা, অরুণা, প্রমোদ, নবনীত ও হিমাংশু]

নবনীত: পিতাজির প্রপার্টির তাহলে হিসেবটা কী দাঁড়াল? বেডরুমে ভল্টের চাবি কি অরুণা তোমার কাছে?

অরুণা: আমি ওসব চাবি-ফাবি জানি না। প্রমোদজি আপনি এদের সঙ্গে কথা বলুন।

প্রমোদ: (মাথা নাড়ে। নবনীতকে বলে) ম্যাডাম, আপনি বিষয়টা বুঝুন ম্যাডাম। আপনার গোঁয়ার ভাই কিছুতেই বুঝতে চাইছেন না।

ভিকি: কী, কী বোঝাবেন আমাকে আপনি?

প্রমোদ: মি: খান্নার ব্যাঙ্কের লকারে উইল আছে। সেই উইলের কপি আমার অফিসেও আছে। তাতে পরিষ্কার লেখা আছে যে, এই কোহিনূর বাংলো আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের টাকার অর্ধেক ওঁর স্ত্রী অরুণা অরোরা পাবেন। এছাড়া দিল্লির বসন্তবিহারের বাংলোর ভাড়াও অরুণা ম্যাডাম পাবেন। বাকি টাকা উনি আপনাদের দু’ভাই-বোনকে অর্ধেক-অর্ধেক দিয়ে গেছেন। (নবনীতের দিকে তাকিয়ে বলেন) আর বলেছেন অরুণাজির অবর্তমানে কোহিনূরের মালিকানা আপনার আর দিল্লির বাংলো ভিকিজির।

অরুণা: কিন্তু আমি তো গভীরভাবে বর্তমান বেটা।

ভিকি: ওই উইল আমি মানি না। বুড়োর মাথা খারাপ হয়ে গেছিল শেষদিকে। ডিমেনসিয়া হয়েছিল। (প্রমোদকে) সেই তালে আপনারা দু’জন মিলে শলা করে এসব জাল্লিকাট্টু বুড়োকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন।

দিব্যা: এ্যাকজ্যাক্টলি।

নবনীত: হুমম, ওই উইলের তলায় পিতাজির সই আছে?

প্রমোদ: আলবাৎ। দরকার পড়লে আপনি হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টকে এনে সই চেক করান।

ভিকি: জাল, জাল। সই জাল করেছে।

দিব্যা: একদম জাল করেছে। (নবনীতকে) দিদি, তুমি কিছু বলবে না এই বজ্জাত উকিলকে? ছেড়ে দেবে?

নবনীত: (প্রমোদকে) পিতাজির ঘরের ভল্টের চাবি কোথায়?

প্রমোদ: তা আমি বলতে পারব না।

অরুণা: আমিও বলতে পারব না।

নবনীত: ফাইন। তাহলে আমি আর ভিকি একসঙ্গে কোর্টে যাব। ওই উইলকে চ্যালেঞ্জ জানাব। (হিমাংশুকে) কী গো, তোমার সঙ্গে ভারুচা এন্ড ভারুচার ভিক্টর ভারুচার যোগাযোগ আছে তো এখনও?

হিমাংশু: নিশ্চয়ই। 

নবনীত: ওরাই এখন দেশে বেস্ট ল-ফার্ম। (প্রমোদকে)আপনার মতো চুনোপুঁটি নয়। দেখা যাক কোর্টে কে যেতে!

অরুণা: (অবাক হয়ে) মাগো, এই তো কিছুদিন আগে বলতিস তোদের ভাইবোনে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত নেই। এখন মওকা বুঝে তোরা এক হয়ে যাবি?

ভিকি: নিশ্চয়ই। আমরা এক মায়ের পেটের ভাই-বোন। মাঝে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল ঠিকই, এখন আবার আমরা এক হয়ে  গেছি। পিতৃশোক আমাদের এক করে দিয়েছে।

দিব্যা: আমার ননদের মতো মানুষ হয় না। কত ভাল লোক। কত বড় কাজ করে দিদি।

হিমাংশু: আমার শালার মতোও ছেলে হয় না। একটু গোঁয়ারগোবিন্দ ঠিকই, কিন্তু মনটা একেবারে শিশুর মতো সরল। আর কী ভালো অভিনেতা।

অরুণা: ও তাই নাকি? শোন নবু, শুধু যদি তোর হাতে বেডরুমের ওই ভল্টের চাবি দিই তাহলে?

প্রমোদ: (নবনীত-কে) মানে ধরুন শুধু আপনার হাতেই যদি হারিয়ে যাওয়া চাবিটা দেওয়া হয়।

নবনীত: (প্রমোদ-কে) হুমম। তাহলে মামলা-টামলায় আর আমি যাব না। আমি অরুণা আর আপনি মিলে নিজেদের মধ্যে পুরোটা সেটল করে নেব।

ভিকি: আর আমি কী করব? ল্যাবেঞ্চুস চুষব? দিদি, পাল্টি খাবি না কিন্তু বলে দিলাম।

দিব্যা: (হিমাংশুকে) জিজাজি, আপনি দিদিকে বোঝান না একবার, যেন দিদি এভাবে বারবার আমাদের সঙ্গে পাল্টি না খায়। ভিকির সঙ্গে আর যেন গদ্দারি না করে।

হিমাংশু: পারব না দিব্যা। তোমরা তো আমাকে জানো। ‘আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে/ হিমাংশু মেনে চলে তাই ভালো মনে’।

ভিকি: এ কী কথা জিজাজি? দিদি আপনার গুরুজন হল?

হিমাংশু: শুধু গুরুজন। শ্রদ্ধেয় গুরুজন। তোমরা জানো না, দশেরার দিন আজকাল তো আমি ওকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি!

দিব্যা: কী ভাল!(ভিকিকে) দেখ, দেখে শেখ।

ভিকি: ধুত্তোরি। তুমি এখন এসব শ্রদ্ধার বহর শুনে গলে যেও না। (নবনীতকে) শোন দিদি, উকিল কিন্তু আমারও চেনা আছে। (দিব্যাকে) কী গো তোমার বাবার সঙ্গে সন্ধ্যেবেলা ডেইলি ক্লাবে বসে মাল খায়– কী যেন নাম দেড়েল উকিলটার?

দিব্যা: অশ্বিন ধোতিওয়ালা।

ভিকি: ইয়েস ধোতিওয়ালা। (প্রমোদকে) ওকে দিয়ে আপনাদের সবার ধুতি খোলাব। বুঝবেন তখন কত ধানে কত চাল।

প্রমোদ: কচু! আপনার দিদি কোর্টে দাঁড়িয়ে বলবেন, শিবজির ওই উইলের সই জাল নয়। কী করবেন তখন?

ভিকি: কী করব? শুনবেন? টাডা মামলায় সঞ্জুভাই যখন কেস খেয়েছিল, গারদে যাওয়ার আগের দিন আমার জন্মদিন ছিল। সেদিন বাড়িতে এসে ভালোবেসে সঞ্জুভাই আমাকে একটা একে-ফর্টি-সেভেন দিয়ে গেছিল। ঠিক আছে? সে মালটা কিন্তু এখনও আমার বাড়িতে লোকানো আছে।

দিব্যা: রোজ সেটায় আমি ন্যাকড়া তুলো দিয়ে তেল ঘষি।

নবনীত: ওফ্। থামবে তোমরা? (অরুণাকে) কত টাকা আছে পিতাজির ভল্টে?

অরুণা: ও তেমন কিছু নয়।

ভিকি: বললে হবে তেমন কিছু নয়? পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে যে বীর শহীদেরা মরেছিল, তাদের ফ্যামিলি কোয়াটার্স বানানোর টাকার একটা বড় অঙ্ক ওই এলাকার এম.পি হিসেবে তখন আমাদের পূজনীয় পিতাজি ঘাপলা করেছিলেন। সেই টাকা ওই বেডরুমের ভল্টেই আছে। আমি নিশ্চিত।

অরুণা: সে আর কত! কত ঘটি থাকবে এতবছর বাদে তার?

ভিকি: পিতাজির বিরাট কুঁয়ো। হাজার ঘটি তুললেও ফুরোবে না। একদম জল মেশানোর চেষ্টা করবে না বলে দিলাম।

নবনীত: আঃ ভিকি (প্রমোদকে) আহা শুনি না সেখানে কত আছে।

(প্রমোদ নবনীতের কানে কানে কোনও একটা অঙ্ক বলে)

নবনীত: হুমম, তাহলে এক কাজ করি ওই ভল্টটা আমি নিচ্ছি। আর দিল্লির বাংলোর শেয়ার আমি ভিকিকে ছেড়ে দিচ্ছি।

অরুণা: মাইরি আর কী! ভল্ট উনি নেবেন। আমি যেন ওঁর মামি। মামিরবাড়ির আবদা। চল্ তো ভিকি, তাহলে তুই আর আমি এক টিম হয়ে যাই। ওই ধোতিওয়ালা আর ঠাকরে তাহলে একসঙ্গে মিলে এই (নবনীতকে দেখান) বজ্জাত মেয়েছেলেটার পেছনে হুড়কো দেবে।

ভিকি: একদম মা-জি। আমি আর তুমি তবে এখন একদিকে। (দিব্যাকে) কি গো, ওই টিমে যাবে তো?

দিব্যা: একশোবার। ওই এন.জি.ও করা হেরো এম.পি আর তার মেনিমুখো বর জিজাজিকে তোমরা দু’জনে মিলে বোল্ড আউট করে ছেড়ে দাও।

হিমাংশু: আউট করবে? অত সোজা? তোমরা সতেলা চায়নাম্যান দিলে আমরাও গুগলি দিতে জানি। নবু, বলো?

নবনীত: অরুণা, তুমি আর ভিকি যদি একজোট হও, আমি কিন্তু তবে সি.এম-এর কাছে যাব। দরকারে নিজের পার্টি বদলাব। দেখলে তো আমি সি.এম-এর কতটা ক্লোজ়।

অরুণা: ক্লোজ় কে বেশি, সেটা আমি সি.এম-এর সঙ্গে আলাদা করে ওঁর বাংলোয় একবার দেখা করলেই বোঝা যাবে! (নবনীতকে) মনে রাখিস সি.এম ওঁর বাড়িতে আমাকে একা যেতে বলেছে। তোকে সেটা বলেনি। দরকারে আমি একা গিয়ে ওঁর সঙ্গে ক্লোজ ডোর মিটিং করে ওঁর পার্টিতে জয়েন করব। (প্রমোদকে) দেখা করব তো উকিল সাহেব?

প্রমোদ: একশোবার। দরকারে সিলি পয়েন্টে বসবেন। বা ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে। (হিমাংশুকে) বুঝেছেন? বা সকালের দিকে গালিতে বসে রাতের দিকে স্কোয়ার লেগে বসবেন। (হিমাংশুকে) বুঝতে পারছেন? হুঁ, গুগলি দিচ্ছে। (অরুণাকে দেখিয়ে) শুনুন, উনি যদি মনে করেন তো বিপক্ষের বল দরকারে প্যাভিলিয়ন টপকে শিবাজী পার্ক পার করে আজাদে বা ক্রান্তি ময়দানে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেবে উনি সেটা পারেন। বুঝেছেন?

(জয়দেব দেশমুখ ও সুরেশ মোরে ঢোকে। জয়দেব শেষ কথাটা শুধু শুনেছে)

জয়দেব: বাবা, কে এই ব্যাটসম্যান? শিবাজী পার্কে বল মেরে আজাদ ময়দান বা ক্রান্তি ময়দানে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে? এতগুলো ম্যাচ জীবনে খেলেছি শিবাজীতে, আমিও তো কোনওদিন এটা পারিনি। কে ভিকিভাই? করা কথা হচ্ছে?

(নীরবতা)

ভিকি: ইয়ে, মানে নতুন এক ব্যাটসম্যান উঠেছে দাদারেশুনছিলাম। তার কথাই হচ্ছিল।

জয়দেব: কে এই ব্যাটসম্যান? আমি ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন, আমিও তো তার নাম জানি না।

অরুণা: তোমার ফিল্মস্টার বউ জানে। তাকে রাতে বাড়ি ফিরে জিজ্ঞেস কোরও।

(স্পোর্টসম্যান জয়দেব কিছু মনে করে না কথাটায়)

জয়দেব: কে হিনাল? না না ও আমি ছাড়া ক্রিকেটের আর কোনও খবর রাখে না। কোনও ক্রিকেটারকে চেনেও না।(প্রমোদকে) কার কথা বলছিলেন বলুন তো? কালটিভেট করতে হচ্ছে মশায়। ব্যাটসম্যানটি কে?

নবনীত: বোসো জয়দেব। বোসো এখানে। সুরেশজি আপনিও বসুন।

সুরেশ: হ্যাঁ  এই বসি। জয়দেব বোস।

জয়দেব: (চিন্তিত, বসতে বসতে বলে) বাবা, এতবড় খেলোয়াড় এসে গেছে আবার মুম্বইতে! এই তো তবে ভাবী ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। এ কোথাকার ক্রিকেটার? একি কানিতকার স্যারের কোচিং ক্যাম্পের নয়া আমদানি? অ্যাঁ, অরুণাজি?

(অরুণা মুখ ঘোরান। অন্ধকার)

পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ৫ মার্চ ২০২১। 

আগের পর্বের লিঙ্ক [] [] [] [] [] [] [] []

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com