(Osip Mandelstam)
ওসিপ মান্দেলস্তাম (জানুয়ারি ১৫, ১৮৯১-ডিসেম্বর ২৭, ১৯৩৮) রাশিয়ার ওয়ারসো শহরে জন্মেছিলেন। তিনি রাশিয়ার একজন বিশিষ্ট কবি। তিনি ‘অ্যাকমিস্ট স্কুল অফ্ রাশিয়ান পোয়েট্রি’-র একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিশিষ্ট মতে তিনি বিংশ শতাব্দীর রাশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। কবিতায় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের জন্য তৎকালীন স্তালিন সরকারের দ্বারা অত্যাচারিত এবং শোষিত হয়েছিলেন। শেষজীবন ভোরোনেঝে নির্বাসনে কেটেছিল। আজীবন পাশে পেয়েছিলেন স্ত্রী নাদিয়া মান্দেলস্তামকে। সাইবেরিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। (Osip Mandelstam)
এক চলন্ত কঙ্কালের পথনামচা: আলোকময় দত্ত
তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতার বই হল: ‘স্টোন’, ‘ত্রিস্তিয়া’, ‘ভোরোনেঝ নোটবুক্স’ ও অন্যান্য। উল্লেখযোগ্য গদ্যের বই: ‘নয়েজ অফ্ টাইম’, ‘জার্নি টু আর্মেনিয়া’ ও অন্যান্য। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত শেষ বাইশটা কবিতার পর আরও দুটো কবিতা প্রকাশিত হয়। মান্দেলস্তাম-এর এই কবিতাদুটো সেই সময়ের, যখন তাঁর কাব্যপ্রতিভা মধ্যগগনে। প্রথম ২২টি কবিতা তিনি নিজেই বাতিল করেছিলেন। সেখান থেকে পরিষ্কার হওয়া গেল যে, এই দুটো কবিতা তিনি বাতিল করেননি। এই দুটো কবিতাই ভীষণ উল্লেখযোগ্য। প্রথম কবিতাটি মস্কোতে থাকাকালীন লেখা এবং সম্ভবত সে-সময় স্বেতায়েভা-র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, সেই সঙ্গে জানা প্রয়োজন যে, তিনি সুখরেভকা সম্পর্কে একটা বড় লেখা লিখেছিলেন যেটা ‘ওগোনেক’-এর ১৮ নম্বর সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল (২৯ জুলাই ১৯২৩)। আর দ্বিতীয়টি লেখা ক্রিমিয়ার কোকটেবেল-এ লেখা, সে-সময় মান্দেলস্তাম তৎকালীন পরিস্থিতির তাৎপর্যহীনতা সম্পর্কে চিন্তিত ছিলেন। তখন গৃহযুদ্ধ চলছিল, এবং এ.ব্লক-এর লেখা ‘দ্য টুয়েলভ’ কবিতাটিকে বলা হয়েছিল বিপ্লবের কবিতা।

১
সবই ভিনদেশি, আমাদের ক্ষেত্রে, এই বিশ্রী শহরে
তার শুকনো, খটখটে মাটি,
সুখারেভকা, তার প্রলাপমত্ত আনাজের বাজারে,
আর দস্যু ক্রেমলিনের ভয়ংকর রূপ।
ঘন, গাঢ়, সে রাজত্ব করে বিশ্বে।
লক্ষ লক্ষ গোরুগাড়ি ঘড়ঘড় করে এগোয়,
আর সে হড়মড়িয়ে নেমে যায় রাস্তা দিয়ে— অর্ধেক মহাবিশ্ব
গুঁড়িয়ে যায় তার চাষি আর গণিকায় ঠাসা পথে।
তার সুগন্ধী গির্জাঘর, মৌমাছির বাসা থেকে
যেন অপরিশুদ্ধ মধু গড়িয়ে পড়ছে বনের মধ্যে—
আর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল দেশান্তরে যায়,
অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে ঢেউ খেলায়।
একটা চতুর শেয়াল, কাজ করে চলে,
কিন্তু জমি-মালিকের মুখোমুখি— এক গরিব চাষি।
শুকনো নালার মধ্যে দিয়ে সবসময় বইতে বইতে
এই মহান শহরের জল ঘোলাটে হয়ে যায়।
(১৯১৬/১৯১৭) (Osip Mandelstam)

২
রাত্রি যেখানে নোঙর ফ্যালে
নিঃসঙ্গ, ফাঁপা নক্ষত্রমণ্ডলীর অতলে,
শুকনো অক্টোবরের পাতা,
অন্ধকারের নিঃসঙ্গ অনুগামীরা,
কোথায় উড়ে বেড়াচ্ছ তোমরা?
কেন ঝরে পড়ছ
জীবনবৃক্ষ থেকে?
বেথলেহেম আজব, তোমার কাছে অদ্ভুত,
তুমি কোনোদিনই দেখোনি সেই ভোজনপাত্র।
তোমার কোনো বংশধর নেই— কেউ না!
যৌনআবেগহীন ক্রোধ তাড়িত করে তোমাকে,
তুমি তলিয়ে যাবে তোমার সাজানো, ফাঁপা
কবরে, সন্তানহীন,
নৈঃশব্দ্যের অন্তিম সীমায়,
চারপাশের প্রকৃতির এই উন্মত্ততা সঙ্গে নিয়ে,
আর শাশ্বত দেশগুলির নিয়তি
নক্ষত্ররাশির দিকে, তবে এসব
তোমার জন্য নয়, তোমার জন্য নয়।
(কোকটেবেল, ১৯২০) (Osip Mandelstam)
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
শতানীক রায়ের জন্ম মালদা জেলায়। বসবাসও মালদাতে। মূলত কবি। প্রবন্ধ লেখেন ও অনুবাদও করেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ দুটো, একটি গদ্যগ্রন্থ এবং দুটো সম্পাদিত গ্রন্থ। এবং সম্পাদনা করেন তিনটি পত্রিকা: 'জলটুঙ্গি', 'অরণি' এবং 'সে'। জলটুঙ্গি পত্রিকা মূলত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা। অরণি শুধুমাত্র অনুবাদের পত্রিকা। আর সে হল শুধুমাত্র বই ও পত্রিকা আলোচনার কাগজ।