ক্যারিন্থিয়ায় জন্ম ইঙ্গবর্গ বাকম্যানের (Ingeborg Bachmann)। ১৯২৬ সালে। ইন্সব্রুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, মনস্তত্ত্ব এবং জার্মান ভাষা নিয়ে পড়াশুনো করেন এবং ১৯৫০ সালে ডক্টরেট উপাধি পান। অস্ট্রিয়ান রেডিও স্টেশনে তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ৫৩ সাল থেকে ৬৩ পর্যন্ত কাটান ভিয়েন, জুরিখ এবং রোমে। যুদ্ধ-পরবর্তী সমাজ সম্পর্কে তাঁর প্রচুর ভাবনাচিন্তা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রায় সতেরটি কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা এই কবির প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালে। বদ্ধ ঘরে ধূমপান করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ার ফলে তিনি মারা যান ৭৩ সালে। তাঁর কবিতায় আধুনিক মানুষের অস্তিত্ববাদী কণ্ঠস্বর শুনতে পাওয়া যায়।

শীত, বার্লিন
না, আমরা তেমন কোনও দৌড়ে আসা আলোয়
মুখ লুকিয়ে থাকিনি
বলিনি, তেমন কোনও কথা
যার জন্য এই বরফেও তুমি আগুন জ্বালাতে পারো
নিজেদের টানতে টানতে
আমাদের শহর মৃত্যু পর্যন্ত লম্বা হয়ে যাচ্ছে
আর বিদেশি ভাষায়
কথা বলছি আমরাই
আমরা তেমন কোনও ইতিহাস বই খুলে বসিনি
যে নিজেদের ডাকে সাড়া দিতে পারব না
ভাঙা ক্যানেস্তারা বাজিয়ে চলেছে কেউ
এই শীতে
আমাদের আগুনের মধ্যে ফেলে
পুড়িয়ে দিতে চাইছে কেউ কেউ
আর বলছে
বরফ থেকে বাঁচার এটাই রাস্তা।
স্মৃতি
ভাঙা চেয়ারের পাশে বসে আছি
চিমনি দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে প্রাণ, আমার ভাষা
শীতার্ত সরীসৃপের মতো
আমি তোমার কাছে বসে আছি
ঠিক যেমন
সময় এগিয়ে আসে

সেতু
ঝুলে আছি দেওয়াল থেকে চোখ মুখ বেরিয়ে পড়া ঘড়ি যেমন
সব নৌকোগুলি পেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের নদী
দূর থেকে উড়তে উড়তে আমাদের বারান্দায় এসে পড়েছে পূর্বদেশের পাখি
এ দেশে ঘনঘন মানুষের মৃত্যু হয়
মানুষের মনের ভিতর গুঁড়ি মেরে বসে থাকে সাদা একটা ভাল্লুক
হু হু করে আমাদের বুকের ভিতর হামলে পড়ে হাওয়া
এত কী কান্নার আছে বন্ধু
এডওয়ার্ড জানে, আমি তাকে কোনওদিন
ভালোবাসিনি
তাও তার লাশ
পড়ে আছে বারান্দায়
আমি, তাকে ঢেকে রেখেছি আমার বাসনায়
জলছবি
বহুদিন বাদে আমি বৃষ্টিতে ভিজলাম
যেন সোনাটা বেজে উঠল
উইচক্র্যাফট
ইস্পাতের ফলার মতো
শীত
আমি তাকে ভয় পাই ফ্রলিন
মাথার ভিতরে
যে চুরমার হয়ে যাচ্ছে
তাকে আমি বলতে চাই যেও না
শুধু ভালোবাসি বলে
ওরা আমাকে
পরিত্যাগ করেছে
ছেড়ে দিয়েছে
খোলা বাজারে
আর
আমার কোনও ঠিকানাই আর
আস্ত নেই
তোমরা আমাকে ভয় পেয়ে
ভেবেছ
নতুন করে আগুন লাগিয়ে দেবে গায়ে
আমি তো শুধুই ছাই
ক্রুশবিদ্ধ
যার পুনর্জন্ম হবে না কখনও

মা
শব্দ যেমন, নীরবে আসে
আমি তেমনই
তোমার ভিতর
জন্ম নিচ্ছি
মৃত্যুর গান
পাখির ডানার মতো আমি জানি, সকাল আসে
যা তোমার কাছ থেকে আমায়
দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়
নিঃশব্দে তুমি উঠে পড় আগামীর দিকে
আমি দেখি মেঘ করে আসছে
আর আমাদের শহরে বৃষ্টি হবে না কখনও
ইতালিয়ন সনেটের মতো
আমি কবিতা লিখতে চেষ্টা করে যাব
আর ঘুমিয়ে পড়ব
যতদিন না তুমি
তুমি
শুধু তুমি এসে আবার আমার বাগানে ফুল
হয়ে ফুটে উঠবে
শান্তির কবিতা
দূরে ধোঁয়া উঠছে কোন চিমনি থেকে, আমার অজানা
আমি এ দৃশ্য দেখি প্রতিদিন
আর কাছেই কোথাও করাত চলে
আকাশে উড়ে যাওয়া পাখিদের মতো
আমার দুঃখ
আমি কোনোদিন তোমায় বলিনি
দূরে কোথাও রান্নাঘরে
ব্যস্ত হচ্ছে মানুষের জীবন
দূরে কোথাও শীত পড়ছে…
হিন্দোল ভট্টাচার্যের কবিতা লেখার শুরু নয়ের দশকে। কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দুইই পেয়েছেন বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে। মোংপো লামার গল্প, সব গল্প কাল্পনিক, রুদ্রবীণা বাজো, বিপন্ন বিস্ময়গুলি, এসো ছুঁয়ে থাকি এই লেখকের কিছু পূর্বপ্রকাশিত বই।