শ্রাবণের (Rainy season) আকাশ, ওর সমস্ত শরীর দিয়ে মেঘ উঠতে চাইছে প্রতিদিন। জলভারনত মেঘ। সেই যে, যেমন মেঘে মাঠে ঘাটে জল ছোটে, নদীর একূল ওকূল ভেসে যায়, তেমন। মাঠের একেবারে শেষে, ওই যেখানে ঢোল কলমির জঙ্গলে মেঘের ছায়া পড়ে আলো হয়ে ওঠে একেকদিন! সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে বুঝি শ্রাবণের। আকাশে মাটিতে মিলেমিশে যাওয়ার কী আকুলতা ওর! বর্ষা (Rainy season) কি কেবল অবিরত বৃষ্টির ছবি আঁকে? মেঘ আর মাটির ইচ্ছের গানে ভরে ওঠে ওর যাপিত দিন।

চাষনালা পেরিয়ে ধানের খেতে জলের শব্দ শোনা যায় একেকদিন। সেই শব্দ মানুষকে দিয়ে রাত দুপুরে সওয়া মাইল পথ হাঁটিয়ে নিতে পারে। নদীর ধারে ধারে মাছ ধরার ঘুনি পেতে রেখে আসে ছেলে-বুড়োর দল। জলে ঘাসে বৃষ্টির ফোঁটা তখন যেন মৎসগন্ধা। আসলে অনেক ভেবে দেখতে গেলে বর্ষা (Rainy season) কিন্তু কেবলই আল মাহমুদের কবিতার মতো ঘোর লাগিয়ে দেওয়ার ছন্দে আমাদের জীবনকে ছুঁয়ে যায় না! ইন্দ্রিয়ের জানলা খুলে শার্সি তুলে দিতে জানে। এসব শার্সি হয়তো খোলা হয়নি কতকাল! ভেজা দিনের গন্ধ নিয়ে মনের ভিতরে ভিতরে কোথায় যে সে ঘুনি পেতে যায়! ফেলে আসা শৈশব কৈশোর আর রূপকথার দিন তখন ঘুনির ভিতরে এসে ধরা দেয়। আঁশফলের ডালে নরম মেদুর পাতারা জল মাখছে ওই। ওদেরও কি ঘুনি পেতে শৈশব ধরতে ইচ্ছে করে? হবেও বা।
আরও পড়ুন: বনজ কুসুম: পর্ব – [১] [২]
উঠোনের এক ধারে বঁটি পেতে মাছ কুটে নিচ্ছে মেয়ে। ওর ফ্রকের প্রান্তখানা জলের সাহচর্য পাচ্ছে অনর্গল। ছাই মাখা হাতে মন দিয়ে কাজ সারছে, মেঘ দেখার অবসর ওর কই বলো! রান্নাঘর থেকে মেয়ের মা হাঁক পাড়ছে বুঝি বা। মেয়ে আরও ব্যস্ত হাতে বঁটিতে মন দিচ্ছে। ওর মাথার উপর বিলাতি আমড়ার ডাল, তারও উপরে মেঘের চাদর। এমন মেঘ যে দেখেনি সে কি আর বর্ষা (Rainy season) চেনে!
একেকদিন মাঝ রাতে ঘুম ভাঙলে দেখি শ্রাবণের চাঁদ মেঘ মাখছে অকাতরে। মাটির পৃথিবী জেগে উঠছে বনজ গুল্মের আশ্বাসে। ভুঁই আমলার পাতারা কী স্পষ্ট, কী সুন্দর! কলপাড়ে বসে বসে ও মেয়ে, ফ্রকের প্রান্তখানা ভিজিয়ে তুমি কেবল মাছ কুটো না। নুন হলুদের সংসার পেরিয়ে ওই মাঠে গিয়ে দাঁড়াও। মেঘ দেখবে না বুঝি তুমি!
উঠোনের জল পাড়িয়ে মেয়ে চলে যাবে আর কিছুক্ষণে। রান্না খাওয়া মিটলে মেয়ে-মায়ে পাটি পেতে বারান্দায় বসবে। মেয়ে তখন উঠোনের এদিক সেদিকে আম কাঁঠালের চারাদের খুঁজে বেড়াবে। মাটি আর জলের শুশ্রুষায় এই যে প্রাণ জেগে উঠেছে নীরবতার স্ফূর্তিতে সে কি অপূর্ব নয়! কুমড়োর লতা দুলছে হাওয়ায়, বিকেল বিকেল ঝিঙে ফুলের কী রঙ! বৃষ্টির ফোঁটা ওর পাপড়ি গুলো ভিজিয়ে দেয় একেকদিন। হলুদের পাতার এইসব দেখে।

দেখে দেখে ওরও ইচ্ছে করে ফুলের সজ্জায় বৃষ্টি মাখতে। পেয়ারাতলায় পাকা ফলের গন্ধ। কাঠের আঁচে ওর লাল টুকটুকে জেলি রান্না করতেন রাঙা পিসিমা। বর্ষার ছবিতে কিছু রঙ না হয় ওরও রইলো। পেয়ারার জেলি বলে কি ওর গুমোর থাকতে নেই! মেঘের ওপারে সূর্য ডোবার মুহূর্তে আকাশ একেকদিন স্বচ্ছ লাল গুলাল মাখে। মেঘের রূপোলি পাড়ে তখন সন্ধ্যার আলো পিছলে যেতে চায় যেন। পেয়ার জেলি দেখে দেখে একেকদিন অমন বিকেলের কথা মনে পড়ে।
শ্রাবণের (Rainy season) গন্ধ নিয়ে ও-ও কি ধরা দেয়নি ঘুনিতে? মানুষের এই এক দোষ সে নিজেই ধরা দিতে চায় কেমন। মাছেদের মতো কেবল চলে বেড়াবার তাড়া নেই যেন। মেঘের ছায়ায় ডুবে গিয়ে মাটির পৃথিবী যখন বনজ গুল্মের বাগান হয়ে ওঠে, মানুষের তখন ইচ্ছে করে দু’পলক দাঁড়িয়ে গুটি বেগুনের ফুল দেখে, লাল শালুকের নাল তুলে এনে মালা গাঁথে।

ওই দুধর কচু গা খানা কী মসৃণ সবুজ! বুনো ওলের পাতা দিয়ে কে যেন জাফরি বুনেছে ওই। ফুল ফল আর পাতার আলপনায় ডুবে যাচ্ছে শ্রাবণ দিন, শ্রাবণ রাত (Rainy season)। একখানা শুক্ল পক্ষ ফুরিয়ে চাঁদের আলো মেঘের মধ্যে মিলিয়ে যাবে ক্রমে। একেকদিন মাঝ রাতে ঘুম ভাঙলে দেখি শ্রাবণের চাঁদ মেঘ মাখছে অকাতরে। মাটির পৃথিবী জেগে উঠছে বনজ গুল্মের আশ্বাসে। ভুঁই আমলার পাতারা কী স্পষ্ট, কী সুন্দর! কলপাড়ে বসে বসে ও মেয়ে, ফ্রকের প্রান্তখানা ভিজিয়ে তুমি কেবল মাছ কুটো না। নুন হলুদের সংসার পেরিয়ে ওই মাঠে গিয়ে দাঁড়াও। মেঘ দেখবে না বুঝি তুমি!
গুটি বেগুন বাটা
উপকরণ: গুটি বেগুন এক মুঠো, খোসা ছাড়ানো, ল্যাজা মাথা বাদ দেওয়া চিংড়ি পাঁচ-ছয়টি, রসুনের কোয়া এক-দুটি, কাঁচালঙ্কার পরিমাণ নিজের স্বাদমতো, নুন, হলুদ,খুব সামান্য চিনি, সর্ষের তেল অল্প।

রান্নার পদ্ধতি: গুটি বেগুন গুলি ভালো করে ধুয়ে মাঝখান বরাবর ফালি করে নিন। রসুনের খোসা ছাড়িয়ে নিন। কড়াইয়ে অল্প সর্ষের তেল দিন। তেল গরম হলে কুচি করা রসুনের কোয়া, বেগুন আর লঙ্কা দিন। অল্প নুন দিয়ে সাঁতলে নিন। কাঁচা ভাব চলে গেলে তুলে নিন।

আরেকটু তেল দিয়ে নুন আর অল্প হলুদ মাখানো চিংড়িও নরম করে ভেজে নিন। বেগুন আর চিংড়ি দুটিতেই নুন আন্দাজ করে দেবেন। সবটাই একটু ঠাণ্ডা হলে এক সঙ্গে শিলে বেটে নেবেন। চাইলে বাটার সময় আরেকটু কাঁচা লঙ্কা দেবেন, সামান্য চিনি দিতে পারেন স্বাদ বুঝে। এই বাটা খুব মসৃণ হবে না। খাওয়ার আগে সামান্য কাঁচা তেল মেখে(গন্ধের জন্য) গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। এই বেগুন পাহাড়ি বেগুন, কাল্টি বেগুন, গুটি বেগুন অনেক নামেই পরিচিত।
কচুর শাক পোড়া

উপকরণ: কচুর শাক, নুন, কালো সর্ষে, কাঁচা লঙ্কা আর সর্ষের তেল।
রান্নার পদ্ধতি: কচুর শাক একটু মোটা দেখেই নেবেন। পানি কচুর শাক বা মানকচুর পাতার মোটা গোড়াও নিতে পারেন। রান্না বসানোর আগে কচুর শাক(মানে, কচুর শাকের গা) খুব ভালো করে ধুয়ে মুছে নেবেন। উনোন থাকলে ভালো, নয়তো সাধারণ গ্যাস আভেনেই করতে পারবেন। কচুর শাক আপনার সুবিধা মতো বড় বড় খণ্ড করে নিন। একটি জাল পেতে বা না পেতে (যেমন আপনার সুবিধা) কচুর শাক গুলি ভালো করে পুড়িয়ে নিন।

সময় নিয়ে ভালো করে পোড়াবেন, ছুরি বা কাঁটা চামচ গেঁথে দেখে নেবেন শাকের ভিতরের শাঁস নরম হয়েছে কিনা। হয়ে গেল আগুন থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন। ঠাণ্ডা হলে উপরের পোড়া অংশ ছাড়িয়ে নিন। আলাদা করে এই শাকে জল দেবেন না। পরিমাণ মতো নুন আর লঙ্কা দিয়ে কালো সর্ষে মসৃণ করে বেটে নিন। বাটা হয়ে গেলে ওর সঙ্গে কচু পোড়াও বেটে মিশিয়ে নিন। সামান্য সর্ষের তেল ছড়িয়ে গরম ভাতে পরিবেশন করুন কচুর শাক পোড়া।
ছবি সৌজন্য: লেখক, Bing.com
অমৃতা ভট্টাচার্য (জ.১৯৮৪-) শান্তিনিকেতনের জল হাওয়ায় বড়ো হয়েছেন। পাঠভবনে তাঁর পড়াশোনা। পরে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা উপন্যাসে বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে গবেষণা করেছেন। পড়িয়েছেন জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে এবং পরে চারুচন্দ্র কলেজে। বর্তমানে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশজ রান্না নিয়ে কাজ করছেন। স্বপ্ন দেখেন পুঁজির প্রতাপের বাইরে অন্যরকম জীবনের, খানিকটা যাপনও করেন তা। যে হাতে শব্দ বোনেন সেই হাতেই বোনেন ধান, ফলান সব্জি। দেশ-বিদেশের নানা-মানুষের অন্যরকম জীবন দেখতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ ’ এবং 'রেখেছি পত্রপুটে' পাঠকের সুসমাদর পেয়েছে।
2 Responses
Your exemplary work demonstrates remarkable potential. With strategic enhancements, this foundation can be transformed into a pioneering contribution that advances the field and solidifies your position as an industry authority.
Greate pieces. Keep writing such kind of info on your blog.
Im really impressed by it.
Hey there, You’ve perfored an incredible job. I’ll certainly
digg it andd individuually recommend to myy friends. I’m sure they will be benefited from this
website. https://bandur-art.Blogspot.com/2024/08/the-ultimate-guide-to-no-mans-sky-mods.html