(Santosh Dutta) মহা মুশকিলের কথা! এ দিকে মানিকদার ফোন, জটায়ু চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব! শ্যুটিং প্লেস রাজস্থান! আর যেদিন যাওয়ার দিনক্ষণ, সেই দিনই মামলার শুনানি! আদালতের শুনানির দিনক্ষণ মুলতুবি রাখা তো মোটেই সহজ কথা নয়! এরপর সোজাসুজি ফোন বিরোধীপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটারকে। ফোনে ভেসে এল স্বস্তির কণ্ঠস্বর, “অত ঘাবড়াবার কী আছে? শুনানি যাতে না হয় তার সব বন্দোবস্ত আমি করব। তুমি শুধু একটা পিটিশন করে নিয়ে এসো।” জজ সাহেব আর কেউ নন, খোদ শচীন সান্যাল। পাবলিক প্রসিকিউটার জানালেন, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ, তাও আবার ‘জটায়ু’ চরিত্রে; মামলা যদি এক মাস পিছিয়েও যায়, তাহলেও আপত্তি নেই। রাজি হন শচীন সান্যাল, আর তাতেই মেলে ‘জটায়ু’-র ভূমিকায় অভিনয়ের ছাড়পত্র! (Santosh Dutta)
জটায়ু, বিখ্যাত রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক এবং গোয়েন্দা প্রখর রুদ্রের স্রষ্টা; যাঁর সাহারায় শিহরণ দিয়ে ফেলুদা ও তোপসের সঙ্গে আলাপ! কেবল জটায়ু চরিত্রটিই ফেলুদা সিরিজকে নিয়ে গেছে এক অন্য মাত্রায়। আর সিনেমার দর্শক জটায়ুকে ভুলতে পারবেন না যাঁর জন্য, তিনি অবশ্যই সন্তোষ দত্ত! বাঙালির নস্ট্যালজিয়ার নানান উপকরণের একজন অবশ্যই জটায়ু। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ এবং ‘সোনার কেল্লা’, ফেলুদার এই দুটি সিনেমা দেখেননি এমন দর্শক পাওয়া বিরল। ‘সোনার কেল্লা’-য় জটায়ুরূপী সন্তোষ দত্তের আত্মপ্রকাশ। গোটা চলচ্চিত্র জুড়ে দর্শককে রীতিমতো নিজের অভিনয় ক্ষমতায় বুঁদ করে রাখেন তিনি। (Santosh Dutta)
১৯২৫-এর ২রা ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সন্তোষ দত্ত। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছেলে। বাকি চার বোনের কেউ কেউ ছিলেন বাল্যবিধবা। ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক অর্থাৎ বর্তমানের স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় কর্মজীবন শুরু করে ওড়িশায় বদলি হয়ে যাওয়ার পর শুরু করেন ওকালতি। পেশায় ফৌজদারি উকিল হলেও অভিনেতা হিসেবেই তিনি পরিচিত হয়েছেন দর্শকমহলে। ‘পরশপাথর’, ‘হেডমাস্টার’, ‘তিন কন্যা’, ‘মহাপুরুষ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘চারমূ্র্তি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গণদেবতা’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, ‘হারমোনিয়াম’-এর মতন অসংখ্য বিখ্যাত সিনেমায় নিজের অভিনয়গুণে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন দর্শকের মনে। (Santosh Dutta)
ভিডিও: রবির আলোয় – জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য
‘গোপাল ভাঁড়’-এ মুখ্য ভূমিকায় তাঁর অভিনয় অবিস্মরণীয়। থিয়েটারের প্রতি অসম্ভব টানই তাঁকে নিয়ে যায় বড় পর্দার দুনিয়ায়! রূপকার দলের হয়ে ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। দর্শকাসনে ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়! জহুরির মতোই অভিনেতা সন্তোষকে চিনে নিতে ভুল হয়নি সত্যজিতের! সন্তোষ দত্ত যে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার একজন ‘জুয়েল’ হয়ে উঠতে পারেন, সেই ভবিষ্যৎ হয়তো দেখতে পেয়েছিলেন এই দূরদ্রষ্টা! শুরু হল সিনেমা জগতের জার্নি; ছায়াছবির নাম ‘পরশপাথর’। (Santosh Dutta)
১৯৯০-এর শুরুর দিকের কথা। সব্যসাচী চক্রবর্তী উপস্থিত হয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে। ইচ্ছে, ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করার। অদ্ভুত এক হতাশা ছিল সত্যজিতের কণ্ঠে! সন্তোষ ছাড়া যে আর কেউই ‘জটায়ু’ চরিত্রে অভিনয় করতে পারবে না! এমনটাই মনে করতেন সত্যজিৎ। সন্তোষ দত্তের জীবনাবসানের পর তাই আর ফেলুদা নির্মাণের কথা ভাবেননি সত্যজিৎ রায়। “সামালকে, ইম্পোর্টেড হ্যয় জাপানি সুটকেস…” থেকে “আপনাকে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই!”; কাল্টিভেটের খুব বেশি সুযোগ না দিয়ে ১৯৮৮-র ৮ই ফেব্রুয়ারি চলে গেলেন বাংলা সিনেমার জটায়ু।
সিনেমার জটায়ু কিন্ত বাস্তব জীবনে অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন! ভক্ত ছিলেন হলিউডের কমিডিয়ান গ্রাউচো মাক্সের! নিয়মানুবর্তিতা ছিল জীবনের অংশ। সবুজ অ্যাম্বাসেডারে চেপে, আফ্রিকায় সিংহ নেই জানতে জানতে জীবনকে ‘হাইলি সাসপিসাস’ বলার কারিগর নশ্বর জীবনে থাকলে ১০০-তে পা দিতেন। তবে আজ কেবল কালির কলম চুঁইয়ে কিছু অবিচ্যুয়ারির মতন জটায়ুর স্মৃতি রোমন্থন করেন বাঙালি। ভাগ্যিস তিনি ছিলেন, নাহলে কবেই জীবন জং বাহাদুর রানার ওই জং ধরা ভোজালির মতন হয়ে যেত! আজ তাঁর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।