(Shashi Kapoor) ‘আজ মেরে পাস বিল্ডিং হ্যায়, প্রপার্টি হ্যায়, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স হ্যায়, বাংলা হ্যায়, গাড়ি হ্যায়— ক্যায়া হ্যায় তুমহারে পাস?’ বিজয়রূপী অমিতাভ বচ্চনের এই সংলাপকে টেক্কা দিয়ে অমর হয়ে আছে তাঁর দেওয়া সেই অমোঘ উত্তর– ‘মেরে পাস মা হ্যায়’! শোনা যায় ‘আনন্দ’ ছবিতে রাজেশ খান্নার চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল তাঁরই। অসাধারণ সুপুরুষ, তিনিই ছিলেন হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পছন্দ– শশী কাপুর! শশী মানেই ‘দিওয়ার’ ছবির সেই স্মরণীয় মুহূর্ত, যা গত চল্লিশ বছর ধরে কাঁদিয়েছে আপামর ভারতবাসীকে, ভাসিয়েছে আবেগে। তারুণ্যে ভরপুর কনরাড রুকস-এর ‘সিদ্ধার্থ’ বা ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’-এর রাজীব। ভারতীয় চলচ্চিত্রে চকলেট বয় হিরোর প্রথম ইমেজটা স্থির করে দিয়েছিলেন তিনিই। আবার কখনও আর্মি অফিসার, কখনও পুলিশ ইন্সপেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করে প্রমাণ করেছেন তাঁর দাপট। (Shashi Kapoor)
শশী কাপুর ওরফে বলবীর রাজ পৃথ্বীরাজ কাপুরের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৮ মার্চ এই কলকাতা শহরেই। কাপুর পরিবারের কিংবদন্তি তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ শশী কাপুর চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিজগুণেই তাঁর আসন পাকা করে নিয়েছেন। বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুর ছিলেন ভারতীয় সিনেমা ও থিয়েটারের প্রথিতযশা শিল্পী। সেই ঐতিহ্যকেই বয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। ক্যামেরার সামনে শশীর প্রথম কাজ শিশুশিল্পী হিসাবে। ‘আগ’ এবং ‘আওয়ারা’ ছবিতে তিনি রাজ কাপুরের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। নায়ক হিসাবে তাঁর প্রথম আবির্ভাব ‘ধরমপুত্র’ ছবিতে ১৯৬১ সালে। এই ছবির সাফল্যর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে, অভিনয় করেন ‘যব যব ফুল খিলে’ ছবিতে। (Shashi Kapoor)
ভিডিও: জিনা ইসিকা নাম হ্যায় – জন্মদিনে রাজ কাপুর
রোম্যান্টিক নায়ক হিসাবে তিনি তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। পাশাপাশি পা রাখলেন আন্তর্জাতিক সিনেমা মানচিত্রেও। মার্চেন্ট-আইভরির সঙ্গে করে ফেললেন ‘হাউসহোল্ডার’ বা ‘শেক্সপিয়রওয়ালা’র মতো আন্তর্জাতিক ছবি। ভারতীয় অভিনেতা হিসাবে তিনিই প্রথম হলিউড থেকে ডাক পান। অর্জন করেন চূড়ান্ত সাফল্য। (Shashi Kapoor)
‘কভি কভি’, ‘দিওয়ার’, ‘ত্রিশূল’, ‘শান’, ‘দো অউর দো পাঁচ’ কিংবা ‘সিলসিলা’ বা ‘নমক হালাল’ সব ছবিতেই উজ্জ্বল উপস্থিতি তাঁর। অমিতাভ বচ্চনের মতো সুপারস্টারের মুখোমুখি অভিনয় করেও তাঁর অভিনয়সত্তা কোথাও টলেনি এতটুকুও। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রবেশ করেন প্রযোজনার জগতেও। রাসকিন বন্ডের লেখা ‘এ ফ্লাইট অফ পিজিয়ন’ অবলম্বনে প্রযোজনা করেন ‘জুনুন’। উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পাশাপাশি সে ছবি পায় জাতীয় পুরস্কার-সহ আরও নানা সম্মান। উল্লেখ্য ‘জুনুন’ ছবিতে নিজের অভিনয় নিয়ে সন্তুষ্ট না-থাকায় সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শশী। ১৯৮৫ সালে শশী কাপুর সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান ‘নিউ দিল্লি টাইমস’-এর জন্য। তাঁর প্রযোজিত ‘থার্টি সিক্স চৌরঙ্গী লেন’, ‘উৎসব’, ‘কলযুগ’-এর মতো ছবি সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বাণিজ্যিক সাফল্য তেমন পায়নি। (Shashi Kapoor)
প্রথাগত বাণিজ্যিক ছবির বাইরেও সিনেমার যে সমান্তরাল ধারা, সেখানেও তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। চল্লিশ বছরের কেরিয়ারে প্রায় ১৭৫-টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আজীবন কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একাধিক ফিল্মফেয়ার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পদ্মভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। থিয়েটারের ঘরানাকে ধারণ করেই ভারতীয় সিনেমার অভিনয়কে নয়া রূপ দিয়েছিলেন শশী। আজকের অভিনয় আগ্রহীদের কাছে তাই তিনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। আটানব্বইয়ের পর সিনেমার জগতকে বিদায় জানান। কিন্তু অভিনয় নিয়ে আগ্রহ শেষ দিন পর্যন্ত কমেনি এতটুকুও। ভারতীয় সিনেমার প্রথম আন্তর্জাতিক অভিনেতা শশী কাপুরের জন্মদিনে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম! (Shashi Kapoor)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।