মুর্শিদাবাদের ‘বোল্ডার বাবা’ কিংবা হুগলির ‘বাবা বেকারেশ্বর’। চন্দ্রযান সফল হোক বা ব্যর্থ, বাংলার মাটিতে ধারাবাহিক ভাবেই নানা বিচিত্র দেবতার জন্ম হয়ে চলেছে। সেই ‘দেবতার জন্ম’, যেখানে বড়ো নুড়ি কীভাবে পুঁতলে তাকে শিবলিঙ্গ বলে সন্দেহ হতে পারে, সেই প্রয়োগনৈপুণ্যকে বাহাদুরি দিয়েছিল শিবরাম চক্রবর্তীর গল্পের চরিত্রটি। ক-দিন আগে হোঁচট খাওয়া পাথরের চারদিকে ক-দিন পরেই ফুল বেলপাতা আতপ চালের ছড়াছড়ি দেখে সে বলেছিল – ‘এঁর সমুজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কারু দুশ্চিন্তার আর কোনো কারণ নেই।’ কিন্তু শেষমেশ ছোটোগল্পের ক্রাফ্ট মেনেই দোলাচলে থেকে, আলো-ছায়ার খেলার মধ্যেই গল্পটি খতম করতে হয়েছিল শিবরামকে। কারণ তিনি বিলক্ষণ জানতেন, এহেন লোকদেবতাকে অবিশ্বাস হয়তো করা যায়, অস্বীকার করা যায় না মোটে।
কলকাতায় আবার দেবতার জন্ম। আজ নয়, স্থানীয় লোকজনের মতে, বছর চল্লিশ আগেই জন্ম হয় এই মন্দিরের। তা বেশ পরিচিতি পেয়েছে বটে ইদানীং। অনেকেই আজ জানেন শিয়ালদা স্টেশনের খানিক আগে লাইনের পার্শ্বস্থিত এই মন্দিরের কথা, পুজো দিতেও আসেন কেউ কেউ।
কাঁকুড়গাছির রেল লাইনের ধারে অবস্থিত এই ছোটোখাটো মন্দিরটি। নামটি জবরদস্ত – শ্রী শ্রী লাইনেশ্বর বাবা। নামেই পরিচয়! এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এখন যেখানে মন্দির, ঠিক এই জায়গাতেই অতীতে ছিল রেলের একটি প্যান্টোগ্রাফ। সেটি স্থানান্তরিত করার সময়ই নাকি মাটি খুঁড়তে গিয়ে বেরোয় একটি গোল পাথর। আর তাকে কেন্দ্র করেই প্রবল সমারোহে এলাকার লোকজন পুজো-আচ্চা শুরু করেন। সেই থেকেই কলকাতার এই নয়া ‘দেবতার জন্ম’।
রেল লাইনের ধারে মন্দির, স্বভাবিক ভাবে বাবার নামও গড়ে ওঠে লাইনের সূত্র ধরেই। লোকমুখে নাম হয়ে যায় ‘লাইন বাবা’! ক্রমে তা থেকেই আজকের এই ‘লাইনেশ্বর’।
শুধু মন্দির নয়, কেবল তার গড়ে ওঠার ইতিহাসটুকুও নয়; ইতোমধ্যেই শোনা যাচ্ছে কিংবদন্তীও! এক বার নাকি মন্দিরের প্রণামীর বাক্স হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কী আশ্চর্য, দিনকতক পর তাঁরই দ্বিখণ্ডিত দেহ পাওয়া যায় একটু দূরে! কাঁকুড়গাছি রেল কেবিনের ধারে। সাম্প্রতিক নয়, বেশ কয়েক বছর আগের এই বিস্ময়কর কাহিনি আজও ঘুরে-ফিরে আসে এই মন্দির চত্বরে।
গড়ে ওঠার পর থেকে দীর্ঘদিন মন্দিরটি সংস্কারের কাজ বিশেষ কিছু হয়নি। বছর কয়েক হল মন্দির নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এখন প্রতিদিন সকাল-সন্ধে বাবার পুজো হয়। পুজো করেন এলাকার লোকজনই। এ ছাড়া শিবরাত্রি, রথযাত্রা ইত্যাদি তিথিতে থাকে বিশেষ পুজোর আয়োজন। এখন বাইরের কিছু লোকজনও আসেন এইসব বিশেষ তিথিতে পুজো দিতে।
আর নিত্য দর্শনার্থীরা তো আছেনই। তাঁরা অবশ্য স্থির নন, চলমান। শিয়ালদহ যাতায়াতের পথে বহু রেলযাত্রী আজকাল প্রণাম ঠোকেন ছোট্ট এই মন্দিরটি দেখে। কেউ সোচ্চারে বলে ওঠেন, ‘জয় বাবা লাইনেশ্বরের জয়!’ এটুকুতেই বেশ সন্তুষ্ট মন্দিরের দেখভালকারী এলাকার মানুষেরা। বাবা লাইনেশ্বরের কাছ থেকে খুব বেশি পার্থিব চাহিদা তাঁদের নেই।
মৌলিক‚ ভিন্নধর্মী ও সময়োপযোগী - এমনই নানা স্বাদের নিবন্ধ পরিবেশনের চেষ্টায় আমরা। প্রতিবেদন বিষয়ে আপনাদের মতামত জানান 'কমেন্ট' বক্সে | নিয়মিত আপডেট পেতে ফলো করুন - https://www.facebook.com/banglaliveofficial