Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

শোণিতমন্ত্র (পর্ব ২১)

সুপ্রিয় চৌধুরী

সেপ্টেম্বর ১, ২০২০

illustration by Chiranjit Samanta
ছবি চিরঞ্জিত সামন্ত
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

মনে উদোম ফুর্তি হলে কান নাচে মেগাইয়ের। মামা পাঁচকড়ি সর্দার মাঝে মাঝে মস্করা করে বলত- “তুই কি বেড়াল নাকি?” ঘোলাগাছি গ্রামে বদন বাউরির বাড়ির চৌকাঠে বসে এই মুহূর্তে কান নাচছে মেগাইয়ের। কারণ পাশে গায়ে লেপ্টে বসে থাকা মোক্ষদা। কথায় যাকে বলে শরীর একদম পাকা কলাগাছের মত। সরু হিলহিলে মেদহীন কোমর। শাড়ির নিচে কাঁচুলি বা সেমিজের বাঁধন ছাড়াও পীনোন্নত বৃহৎ একজোড়া স্তন। আপাতত সে দু’টো থেকে থেকে খোঁচা মারছে মেগাইয়ের হাতে পিঠে। সঙ্গে সঙ্গে কান দু’টো আরও জোরে জোরে নেচে উঠছে। তাই দেখে খিলখিল হাসিতে মেগাইয়ের ওপর ঢলে পড়ছে মোক্ষদা। চোখে কামুক সাপিনীর দৃষ্টি। সামনে রাখা বড় একটা তারির মটকা। তার পাশে শালপাতায় স্তুপ করে রাখা চুনোমাছ ভাজা, হাঁসের মাংসের রসা। মেগাই আর মোক্ষদা দু’জনের হাতেই ফেনাওঠা টাটকা তাড়ির ভাঁড়। থেকে থেকে চুমুক মারছে ভাঁড়ে।

খাটের এককোণে বসা মোক্ষদার স্বামী বদন বাউরি। চিমড়ে কোলকুঁজো চেহারা। কণ্ঠার হাড় দু’টো ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে চামড়া ফুঁড়ে। নির্লিপ্ত মুখে হুঁকোয় টান মারছে বদন। মাঝে মাঝে তাড়ির ভাঁড়টা তুলে নিচ্ছে হাতে। বদন বাউরি। ওর সঙ্গে মোক্ষদার বিয়ের ইতিহাসটা একটু ত্যাঁড়াব্যাঁকা গোছের। তার স্বামী যে বিছানায় একেবারেই কম্মের নয়, প্রথম রাতেই সেটা টের পেয়ে গিয়েছিল মোক্ষদা। তবু ভেবেছিল প্রথম প্রথম তো, তাই বোধহয় এ রকম হচ্ছে। দিনকয়েক কাটল। তবু অবস্থার কোনও উন্নতি হল না। ঠেলেঠুলে বদ্যিপাড়ার অস্টা কোবরেজের কাছে বদনকে পাঠিয়েছিল মোক্ষদা। অশ্বগন্ধার পাতা, মকরধ্বজ, এটা-সেটা নানা ধরনের জড়িবুটি দিয়ে মাসখানেক জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন কোবরেজ মশাই। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলে বলেছিলেন- “চাইলে বাঁশের খোটা দিয়ে লাউগাছকেও মাচায় তোলা  যায়, কিন্তু তোর কিছু হবার নয় বদনা।” এরপর কিছুদিনের মধ্যেই ঝোপেঝাড়ে, পাটক্ষেতের আড়ালে এর তার সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা যেতে লাগল মোক্ষদাকে।

[the_ad id=”270088″]

চিরকুঁড়ে বদন খুব সহজভাবেই নিয়েছিল ব্যাপারটাকে। একইসঙ্গে রোজগারের রাস্তা হিসেবেও।

— “এ রকম একখানা গতর তোর। ভগবানের দান। সেটাকে এমন মিনিমাগনা বিলোবি কেন? আমার কথা শোন। গতরটাকে কাজে লাগা। গ্যাঁটের কড়ি খসাতে বল সবাইকে। অবস্থা ফিরে যাবে আমাদের।” মোক্ষদাকে বলেছিল বদন।

হয়েছিলও তাই। ঝোপঝাড়, পাটক্ষেতের আড়াল আর রইল না। সরাসরি বাড়িতে এসে ঢুকতে লাগল লোকজন। কিছুদিনের মধ্যেই মোক্ষদার হাতে বালা, গলায় সীতাহার, আর কানে ঝুমকোদুল হল। ধচাপচা খড়ের চালার কুঁড়েঘরটা ভেঙে হল একতলা বাড়ি।

দিনে দিনে নামযশ বাড়ল মোক্ষদার। আশেপাশের ছুটকোছাটকা লোকজন টপকে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নজর পড়তে শুরু করল মোক্ষদার ওপর। ডাকাত সর্দার থেকে শুরু করে জমিদারবাবু হয়ে নীলকর আর কোম্পানির সাহেব, সবার অগাধ আনাগোনা মোক্ষদার ঘরে। রসিকদের ভিড় সামলাতে নাজেহাল বদন। ওদের পয়সায় বসে মদ গেলে, পান তামুক খায়। তারপর রসিকদের দরজা বন্ধ করার সময় হলে বাইরে বেরিয়ে এসে দাওয়ায় বসে কোমরের পুরনো দাদটা চুলকোয়। অনেক নামিদামি আর বেয়াড়া ধরনের লোকজনের আনাগোনা ওর ঘরে। ফলে ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটে থাকে পাড়াপড়শিরা। মাঝে মাঝে বাবুদের মহালে বা সায়েবসুবোদের কুঠিতেও ডাক পড়ে মোক্ষদার। পালকি পাঠিয়ে দেওয়া হয় দরজার সামনে। সঙ্গে যায় বদন। বাবুদের ফুত্তিফাত্তা শেষ হলে সেই পালকিতেই ফিরে আসে মোক্ষদাকে নিয়ে।

এইসময় মৃদু কয়েকটা ধুপধাপ আওয়াজ। কম্বলের ফাঁক থেকে চোখ খুলল বদন। বেড়ালের মত লাফ দিয়ে উঠোনে নামল পীতু হাড়ি আর সন্ন্যাসী মণ্ডল। সঙ্গে আরও কয়েকজন চ্যালাচামুন্ডা। সবার হাতে ল্যাজা, সড়কি, শুলুপি আর কাছিদড়ি। পা টিপে টিপে বদনের কাছে এগিয়ে গেল সন্ন্যাসী।

রসিক লোকেরা বলে মোক্ষদার ছলাকলার টান নাকি শেয়ালমারির জঙ্গলের ওই দানব ময়াল সাপটার মারণপ্যাঁচের মত। যে একবার এই প্যাঁচে পড়েছে সে আর বেরতে পারবে না কিছুতেই। বার বার ফিরে আসতে হবে মোক্ষদার কাছে। এই এখন যেমন মেগাই। নিশিতে পাওয়া মানুষের মত তাকিয়ে রয়েছে মোক্ষদার দিকে। ঢুলু ঢুলু লোভি চোখে চাটছে শরীরটাকে। আরও বেশি বেশি করে মেগাইয়ের গায়ে ঢলে পড়ছে মোক্ষদা। সাপখেলানো হিলহিলে হাসিতে ভেঙে পড়ছে বারবার।

— “ও বদনদা, এই শালা এক মটকা তাড়িতে কি হবে?” জড়ান গলায় বলে উঠল মেগাই।
— “আরও তাড়ি আনাও। আজ রামমোচ্ছব হবে।” বলতে বলতে ফতুয়ার ট্যাঁক থেকে গোটা পাঁচেক কাঁচা রুপোর টাকা বের করে ছুঁড়ে দিল মেগাই।
— “এক্ষুনি আনছি।” একগাল হেসে টাকা কুড়িয়ে নিল বদন। দরজাটা ভেজিয়ে বেরিয়ে এল ঘর থেকে।

[the_ad id=”270085″]

একটা ঘোড়েল হাসি খেলে যাচ্ছে ঠোঁটের কোণে। দু’তিন দিন আগে এসে নগদ একশ টাকা দিয়ে গেছে পীতু হাড়ি আর নলে ডোবা। বলেছে এটা অগ্রিম। মেগাইয়ের আসার খবরটা দিতে পারলে আরও কড়কড়ে একশ টাকা দেবে। খুব কম করে বিঘে ছয়েক ধানীজমি তো হয়েই যাবে ওই টাকায়। সঙ্গে একজোড়া পাটনাই বলদ। তাড়ি আনার ফাঁকে শুধু টুক করে একবার গিয়ে খবরটা পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে মকবুলের কাছে। বিশের দলের খাস মাছি। তারপর ফিরে এসে তাড়ি গিলিয়ে গিলিয়ে রাত পর্যন্ত আটকে রাখতে হবে মেগোটাকে। সবার ওপর মোক্ষদা তো আছেই। তার লক্ষীপানা বউ। জালা জালা তাড়ির চেয়েও ওর শরীরের টান অনেক বেশি। একটা রাত মেগাইকে মোক্ষদার জালে ফাঁসিয়ে রাখাটা কোনও ব্যাপারই না। দ্রুত পা চালাল বদন।

গভীর রাত। কম্বল মুড়ি দিয়ে দাওয়ায় শুয়েছিল বদন।। এইসময় মৃদু কয়েকটা ধুপধাপ আওয়াজ। কম্বলের ফাঁক থেকে চোখ খুলল বদন। বেড়ালের মত লাফ দিয়ে উঠোনে নামল পীতু হাড়ি আর সন্ন্যাসী মণ্ডল। সঙ্গে আরও কয়েকজন চ্যালাচামুন্ডা। সবার হাতে ল্যাজা, সড়কি, শুলুপি আর কাছিদড়ি। পা টিপে টিপে বদনের কাছে এগিয়ে গেল সন্ন্যাসী।

— “কোন ঘরে?” ঝুঁকে পড়ে একখামচা কাঁচা টাকার নোট ট্যাঁকে গুঁজে দিয়ে জিজ্ঞেস করল ফিশফিশ করে।

আঙুল তুলে বাঁ দিকের ঘরটা দেখিয়ে দিল বদন। হাতের ইশারায় চ্যালাদের ডাকল সন্ন্যাসী।

— “হাতমুখ বেঁধে ফ্যাল। হালকা করে বাঁধবি। দেখিস যেন দম আটকে মরে-টরে না যায়।”

ঘাপটি মেরে পড়ে রইল বদন। নড়াচড়া করল না একটুও। ও জানে এটা একটা ছক। যাতে ওর ওপর সন্দেহটা না এসে পড়ে। ওকে ডিঙিয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল দলটা।

মোক্ষদার বুকে একখানা হাত রেখে ভোঁসভসিয়ে ঘুমোচ্ছিল মেগাই। দু’জনের কারওর গায়ে কুটো সুতোটুকুও পর্যন্ত নেই। মুহূর্তের মধ্যে পাটিসাপটা করে আগাপাশতালা মেগাইকে বেঁধে ফেলল তিন চারজন মিলে। ততক্ষণে ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসেছে মোক্ষদা। “ও বাবাগো!” বলে চেঁচিয়ে ওঠার আগেই রক্তচোখে ওর দিকে তাকিয়ে হুমকে উঠল পীতাম্বর-

— “চোপ মাগি! মুখ দিয়ে টুঁ শব্দটি কাড়লে সড়কির এক পোঁচে গলা দু’ফাঁক করে দেব।” বলে বিছানার কোণ থেকে শাড়িটা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে দিল মোক্ষদার দিকে।

[the_ad id=”270084″]

বিছানায় বাঁধা মেগাই। মুখে ঠেসে ন্যাকড়া গোঁজা। বিস্ফারিত চোখজোড়া ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে বাইরে। হালকা একটা গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই বেরচ্ছে না মুখ দিয়ে। দরজার সামনে দাঁড়ান পালকি। ধরাধরি করে তুলে নিয়ে গিয়ে পালকির মধ্যে ছুঁড়ে ফেলা হল মেগাইকে। ঘর ছেড়ে বেরনোর মুখে মোক্ষদার দিকে ঘুরে তাকাল সন্ন্যাসী।

— “আমরা যাওয়ার পর যদি শ্যালের হুক্কাহুয়া তুলেছিস তাহলে ফিরে এসে এমন নিদেন দেব যে গতর ভাঙ্গিয়ে আর খেতে হবে না জীবনে। কথাটা মনে থাকে যেন।” দু’হাতে বুকের ওপর চেপে ধরা শাড়ি। কাঁপতে কাঁপতেই ঘাড় নেড়ে সায় দিল মোক্ষদা। ঘর থেকে বেরিয়ে এল সন্ন্যাসী।

গাছের গায়ে মশালের আগুনে আলোয় লাল হয়ে রয়েছে পুরো কালীমন্দির চত্বর। বেদীর সামনে সিঁদুর মাখান হাড়িকাঠ। একুশ জন ঢাকি। ঢাকে কাঠি ঠেকিয়ে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আদেশের অপেক্ষায়। দড়িতে বাঁধা মেগাইকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে টেনে এনে চাতালের মাঝখানে ফেলল প্রেমচাঁদ ডোম। তারপর এক ঝটকায় খুলে দিল মুখের বাঁধনটা। দেউলের সামনে দাঁড়ান বিশ্বনাথ। হিম চোখে তাকাল মেগাইয়ের দিকে।

— “যেদিন তুই ধরা পড়বি সেদিনই তোকে হাড়িকাঠে চড়াব। কসম খেয়েছিলাম জলিলের কাছে। মায়ের কাছে মানত করেছিলাম তোকে ধরতে  যতদিন লাগবে প্রত্যেকদিন একজন করে ঢাকি বাড়বে। একুশ দিনের মাথায় ধরা পড়লি তুই। শেষ ইচ্ছে কিছু থাকলে বল আমাকে।”

— “থুঃ”

জবাবে ঘৃণায় মুখ বিকৃত করে একদলা থুথু ফেলল মেগাই। সামনে এগিয়ে এল পীতাম্বর।

— “বিশে আমরা জেতে হাড়ি। বলি দেওয়াই আমাদের পূর্বপুরুষের পেশা। আমি মেগাইকে কাটব। তুই আদেশ দে আমাকে।” —— “আর্জি মঞ্জুর!” হেঁকে উঠল বিশ্বনাথ।

হাড়িকাঠে মাথা গলানোর আগে ঘাড় ঘুরিয়ে পীতাম্বরের দিকে তাকাল মেগাই।

— “মরদ হোস তো আমাকে চিৎ করে কাট শুয়োরের বাচ্চা! দুশমনের চোখে চোখ রেখে মরতে চাই আমি।” পীতাম্বরের দিকে তাকাল বিশ্বনাথ।
— “তাই কর পীতু। ওর শেষ ইচ্ছেটা পূরণ হোক।”

বলেই কপালে বাঁধা লাল ফেট্টিটা ফেলে দিল মাটিতে। সগর্জনে বেজে ওঠে একুশখানা ঢাক। গলা লক্ষ্য করে নেমে আসে রামখাঁড়া। মেগাইয়ের শেষ আর্তনাদ ঢেকে গেল ঢাকের শব্দে।

যেদিন তুই ধরা পড়বি সেদিনই তোকে হাড়িকাঠে চড়াব। কসম খেয়েছিলাম জলিলের কাছে। মায়ের কাছে মানত করেছিলাম তোকে ধরতে  যতদিন লাগবে প্রত্যেকদিন একজন করে ঢাকি বাড়বে। একুশ দিনের মাথায় ধরা পড়লি তুই। শেষ ইচ্ছে কিছু থাকলে বল আমাকে।

পরদিন মাঝরাতে আটঘড়ার জমিদার বাড়ি ঘিরে ফেলল এক-দেড়শো জনের বিশাল ডাকাতদল। সদর দরজায় বসে ঝিমোতে থাকা কোম্পানির দুই তেলেগু সেপাই, কাঁধ থেকে বন্দুক নামানোর আগেই গুলি খেয়ে লটকে পড়ল মাটিতে। প্রাসাদের মধ্যে থাকা বিশ তিরিশজন পাইক লেঠেল বাহিনী ঝড়ের মুখে খড়কুটোর মত উড়ে গেল বিশ্বনাথের দলের সামনে। সমস্ত ধনসম্পত্তি লুঠ করে এনে জমা করা হল বাড়ির সামনে। বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করে খেদিয়ে দেওয়া হল মহিলা, বাচ্চা-কাচ্চা আর নোকর-চাকরদের।

[the_ad id=”266919″]

বাগানের মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা দুই জমিদারভ্রাতা। অনঙ্গ সরকার এবং অনন্ত সরকার। হাত দু’টো পিছুমোড়া করে বাঁধা। চোখে মৃত্যুভয়। থরথর করে কাঁপছেন তীব্র আতঙ্কে। হাতে দোনলা বন্দুক ঝুলিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল বিশু। হিমঠাণ্ডা গলায় আওয়াজ।

— “মানসুরেরা কিছু লাঠি সড়কি নিয়েই লড়তে এসেছিল। তাদের মারতে গোলাবন্দুক নিয়ে দু’শ জনের ফৌজ নামিয়ে দিলেন একেবারে। মানসুরেদের চিঠিতে বিশ্বনাথবাবুর দস্তখত থাকে। সেটা দেখার পরও আমার আদেশ অমান্য করলেন।” হাতের বন্দুকটা উঁচিয়ে ধরল বিশ্বনাথ।
— “আপনাদের মত বাবুদের বাড়ি থেকে লুঠ করা গোটা কুড়ি বন্দুক কিন্তু আমাদেরও আছে। চাঁদমারি মকশো করা ছাড়া সেগুলো আমরা ব্যবহার করিনি কোনওদিন। কারণ আমরা মনে করি দূর থেকে গুলি চালিয়ে কাউকে মারাটা না-মরদের কাজ। আপনারা লড়াইয়ের সেই নিয়মটা ভেঙে দিলেন। তাই আপনাদের মত সাপের সঙ্গে লড়তে গিয়ে শেষমেশ সাপই হতে হল আমাদের। তাই এবার আর আগাম খবর দিয়ে আসিনি।”

বলতে বলতে দু’ ভাইয়ের কপালে তাক করে নিশানা স্থির করল বিশ্বনাথ। ‘গুড়ুম, গুড়ুম’ রাতের অন্ধকার চিরে ছুটে যাওয়া বারুদের ঝলকানি। পরপর দু’ বার। সামনে পড়ে থাকা দু’টো নিথর দেহ। সামনে এগিয়ে গিয়ে লাশ দু’টোর গায়ে পা দিয়ে ঠোক্কর মারল বিশ্বনাথ। তারপর ঘুরে তাকাল সঙ্গীদের দিকে-

— “প্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দে।”

শেষ রাতের সরু একফালি চাঁদ একটু একটু করে হেলে পড়তে শুরু করেছে পুব আকাশে। ব্যাঙ্গালচির জঙ্গলে সার সার গোটা তিরিশেক কবর। ইস্কান্দারের কবরের সামনে দাঁড়ানো বিশ্বনাথ। হাতের আঁজলায় একমুঠো জমিদারবাড়ির পোড়া ছাই। সেই ভস্ম কবরের ওপর ছড়িয়ে দিল বিশ্বনাথ। তারপর স্বগতোক্তি করল নিচু গলায়,

— “মেগাই আর জমিদারদের তোর কাছে পাঠিয়ে দিলাম দোস্ত। চিন্তা করিস না। বোদে, পাঁচু সর্দার ওরাও যাবে। জবান দিলাম তোকে।”

শোণিতমন্ত্র পর্ব ২০

Author Supriyo Chowdhury

জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ায়। বহু অকাজের কাজী কিন্তু কলম ধরতে পারেন এটা নিজেরই জানা ছিল না বহুদিন। ফলে লেখালেখি শুরু করার আগেই ছাপ্পান্নটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। ১৪২১ সালে জীবনে প্রথম লেখা উপন্যাস 'দ্রোহজ' প্রকাশিত হয় শারদীয় 'দেশ' পত্রিকায় এবং পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে আরও দুটি উপন্যাস 'জলভৈরব' (১৪২২) এবং 'বৃশ্চিককাল' (১৪২৩) প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার এবং পত্রিকায়। এছাড়া বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং দু চারটি ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর লিটিল ম্যাগাজিনে। তার আংশিক একটি সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে 'ব্যবসা যখন নারীপাচার' শিরোনামে। ২০১৭ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।

Picture of সুপ্রিয় চৌধুরী

সুপ্রিয় চৌধুরী

জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ায়। বহু অকাজের কাজী কিন্তু কলম ধরতে পারেন এটা নিজেরই জানা ছিল না বহুদিন। ফলে লেখালেখি শুরু করার আগেই ছাপ্পান্নটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। ১৪২১ সালে জীবনে প্রথম লেখা উপন্যাস 'দ্রোহজ' প্রকাশিত হয় শারদীয় 'দেশ' পত্রিকায় এবং পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে আরও দুটি উপন্যাস 'জলভৈরব' (১৪২২) এবং 'বৃশ্চিককাল' (১৪২৩) প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার এবং পত্রিকায়। এছাড়া বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং দু চারটি ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর লিটিল ম্যাগাজিনে। তার আংশিক একটি সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে 'ব্যবসা যখন নারীপাচার' শিরোনামে। ২০১৭ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।
Picture of সুপ্রিয় চৌধুরী

সুপ্রিয় চৌধুরী

জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতার পুরোনো পাড়ায়। বহু অকাজের কাজী কিন্তু কলম ধরতে পারেন এটা নিজেরই জানা ছিল না বহুদিন। ফলে লেখালেখি শুরু করার আগেই ছাপ্পান্নটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে। ১৪২১ সালে জীবনে প্রথম লেখা উপন্যাস 'দ্রোহজ' প্রকাশিত হয় শারদীয় 'দেশ' পত্রিকায় এবং পাঠকমহলে বিপুল সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে আরও দুটি উপন্যাস 'জলভৈরব' (১৪২২) এবং 'বৃশ্চিককাল' (১৪২৩) প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে পুজোসংখ্যা আনন্দবাজার এবং পত্রিকায়। এছাড়া বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং দু চারটি ছোটগল্প লিখেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর লিটিল ম্যাগাজিনে। তার আংশিক একটি সংকলন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে 'ব্যবসা যখন নারীপাচার' শিরোনামে। ২০১৭ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস