(Short Story)
– ও শোন, তোর জিনিসপত্র এনেছি, রাতে নিয়ে যাব।
– ওকে ওকে– তাড়াতাড়ি আয়, ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি মাইরি।
অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ময়ূখ। প্রেসিডেন্সিতে পড়বার সময় আলাপ হয়েছিল ওর সঙ্গে। খুব ভাল গানের গলা– সব গানেই সহজ গতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে খুব Sensitive। বিভিন্ন আড্ডায় অরূপের দাবি মেনে সে নানা রকম গান গাইত– আলোচনা চলত সুরের চলন, বাঁধন নিয়ে। মাঝে মাঝে চরমে পৌঁছত তর্কাতর্কি। (Short Story)
বিদেশে যাওয়ার পর ময়ূখের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। যত দিন গেছে, বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে।
বিদেশে যাওয়ার পর ময়ূখের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। যত দিন গেছে, বন্ধুত্ব গাঢ় হয়েছে। পারমিতা আর অমিতকে ওর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল একবার বসন্ত উৎসবে। সেবার ময়ূখও এসেছিল অরূপের সঙ্গে– নীলিমার সঙ্গে দেখা হতেই বলে বসল “আপনি কি সেন?” (Short Story)
নীলিমা অপ্রস্তুত হয়ে হেসে ফেলেছিল সেদিন।
না সেন নই– তবে একটু আধটু সুর আছে গলায়।
বাঃ বাঃ– তাতেই হবে। অরূপ, বাপু তুই আবার রাগ করিসনি যেন আমরা duet গাইলে।
দাদাবাবু শক্তিগড়ে দাঁড়াবেন, না টেনে বেড়িয়ে যাব? মহাদেবের প্রশ্নে অরূপের চিন্তা বিঘ্নিত হয়।
তোমার অসুবিধে না হলে– আর দাঁড়াতে হবে না। দেখে নাও। আসলে অরূপ চাইছে যত তাড়াতাড়ি শান্তিনিকেতনে পৌঁছনো যায়। (Short Story)
অবশেষে পূর্বপল্লীর রাস্তার ভিড় ঠেলে গাড়ি ক্রমে পৌঁছল অভীকদার বাড়ির সামনে। মেলার জন্য চারদিকে সাজো সাজো রব।
কতদিন পরে এইসময় শান্তিনিকেতন এল অরূপ। একরাশ হাসি মুখে নিয়ে অভীকদা বেড়িয়ে এসে জড়িয়ে ধরল অরূপকে।
“আয় অরূপ– মহাদেব দাদাবাবুর জিনিসপত্রগুলো ঐ পিছনের ঘরে রেখে এস”।
অভীকদার বাগানটার দিকে একবার তাকাল অরূপ। পেছনের পাঁচিলের ওপারে “বাঁশরী”- তার বাল্য কৈশোর জীবনের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে এখনও। বাগানে নানা ফুলের মেলা– মাঝখানে মোরাম বিছানো পথ। (Short Story)

আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল দুজনে বাড়ির ভিতরে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অভীকদা এসে বসল বারান্দায় রাখা বেতের চেয়ারে। অরূপ বসেছে, নিচু দেওয়ালটার ওপরে। ছাত্রাবস্থায় এভাবেই পড়াশুনো চলত তাদের। অভ্যাসটা যায়নি।
“তা ওদেশের কী খবর বল অরূপ? শুনছি ওবামা নাকি এবার একটু বেকায়দায়?”
“বাদ দাও ওদেশের কথা। তোমাদের এখানের খবর শোনাও। এখন নাকি মান্ডলিক আচার বিচার চলছে।”
“বলতে পারিস– রঙ বদলিয়েছে– চরিত্র বদলায়নি।” (Short Story)
এরকম দু’চার কথার পরই হঠাৎ খুব চুপচাপ হয়ে গেল দুজনে। মেলার মাঠের ওদিক থেকে ক্ষণে ক্ষণে মাইকে ঘোষণা ভেসে আসছে। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নামছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুরু হয়েছে থেকে থেকে।
– নীলিমা এসেছিল? স্তব্ধতা ভাঙে অরূপ।
– এসেছিল– শাম্বকে হস্টেল থেকে নিয়ে। ও চাইছে শাম্বকে কলকাতা নিয়ে যেতে।
– আমাকে তো কিছু জানায়নি। শাম্বর ব্যাপারে কোনওরকম Decision নেওয়ার আগে তো আমায় জানানোর কথা নীলিমার।
– সেটা আমি কিছু বলতে পারি না– তবে হ্যাঁ, ও ছেলে অন্য ধাতের বুঝলি।
কথাটা আর এগোতে পারল না, কারণ ময়ূখের ফোন। “এই হতভাগা– তুই কি আসবি, না আমায় যেতে হবে? নিশ্চয়ই অভীকদার সঙ্গে ভাটাচ্ছিস বসে বসে– শিগগির আয়”। (Short Story)
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের অনুভবে অশরীরী
– হ্যাঁ রে আসছি। তোরা কোনখানে রে?
– শোন তুই ঢুকে সোজা চলে আসবি কলাভবনের স্টলের কাছে দেখবি একটা বড়সড় তেলেভাজা আর রোলের দোকান– ওখানেই পাবি আমাদের।
– আচ্ছা আসছি। (Short Story)
পারমিতা আর অমিতের ছোট ছিমছাম বাড়িটা খুব ভাল লাগে অরূপের। প্রান্তিক থেকে গোয়ালপাড়া যাওয়ার পথে একটা বিশাল পুকুর আছে। তার চারপাশে বাঁশ গাছের জঙ্গল রয়েছে এখনও।
পারমিতা আর অমিতের ছোট ছিমছাম বাড়িটা খুব ভাল লাগে অরূপের। প্রান্তিক থেকে গোয়ালপাড়া যাওয়ার পথে একটা বিশাল পুকুর আছে। তার চারপাশে বাঁশ গাছের জঙ্গল রয়েছে এখনও। উত্তুরে হাওয়া এসে খেলা করে গাছের পাতায় পাতায়। অদ্ভুত একটা শিরশির শব্দ। এই পুকুরটাকে বাঁয়ে রেখে খানিক এগোলেই উত্তরপল্লী সেখানেই সাঁওতালদের গ্রাম ঘেঁষে বাড়িটা– “মিতা”। (Short Story)
পৌষমেলার মাঠে খানিকক্ষণ এদিক ওদিক করে মন খারাপ হয়ে গেল অরূপের। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পুরনো দিনের মেলা। বইয়ের স্টল হাতে গোনা– হাতের কাজ নিয়ে যারা এসেছে তারা প্রান্তিক– বাউলের গান ছাপিয়ে– মোবাইলর Special Offer এর ঘোষণা। ভাল লাগল না। (Short Story)
আরও পড়ুন: কাটরা মসজিদ: তিনশ বছরেও নবীন
– অরূপদা, আমাদের এখানে কিন্তু তেলেভাজা একটা শিল্প। বলল পারমিতা। চারজনে মিলে একটা টোটো ভাড়া করে ফিরে এল ওদের বাড়িতে।
তারপর সন্ধ্যে পেরিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলল আড্ডা, গান, তর্কাতর্কি। ভাল স্কচ এনেছিল অরূপ। অমিত রান্না করেছিল অনেক কিছু। হিমঝরা শীতের রাতে পূর্ণিমার আলোয় ভরে আছে “মিতা”র উঠোন। (Short Story)
তখন অনেক রাত। পারমিতা জিজ্ঞাসা করল, “নীলিমা কেমন আছে অরূপদা”?
এর উত্তর জানা নেই অরূপের। শাম্বর জন্য মনটা আনচান করছিল। প্রশ্নের উত্তর দিল না সে। বলল – “শাম্বকে অনেকদিন দেখিনি”।
– গতকাল এসেছিল মেলায়, অভীকদার সঙ্গে, বলল পারমিতা।
– কীরকম বদলে গেল সবকিছু পুট্ করে। দিনে দিনে হয়তো একটু একটু করে নদীর পাড় ভাঙছিল। টের পাইনি। আর সুযোগও ছিল না– কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ততা, টানাপোড়েন– কিন্তু do I deserve this?” (Short Story)
রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া হতে অনেক দেরি হয়েছিল। খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল অরূপের। দূরে কোথায় বাঁশী বাজাচ্ছে কেউ। চারিদিক কুয়াশা মোড়া। হলদেটে চাঁদ এখনও জেগে।
– তুমি নাকি বাড়িটা বিক্রি করে দিচ্ছ? অভীকদা বলছিল।
– হ্যাঁ, সেরকমই ভেবেছি। ঐ বাড়িটার অনেক স্মৃতি– পুরনো বাড়িটার পরতে পরতে ছায়ার মতো সেগুলো লেগে আছে। ও রেখে আর কী হবে! (Short Story)
রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া হতে অনেক দেরি হয়েছিল। খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল অরূপের। দূরে কোথায় বাঁশী বাজাচ্ছে কেউ। চারিদিক কুয়াশা মোড়া। হলদেটে চাঁদ এখনও জেগে। অমিতের কাছ থেকে একটা মোটা চাদর ধার করেছিল কাল। সেটা গায়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এল সে। এসে দাঁড়াল সেই পুকুর পাড়ে। বেশ ঠান্ডা হাওয়া। বাঁশবনের পাতায় পাতায় ঘষা লেগে অদ্ভুত একটা শব্দ হচ্ছে। ওদেশে এখন রাত আটটা বাজে। (Short Story)

নীলিমার কফি খাওয়ার সময় ছিল এটা। সারাদিনের জমে থাকা গল্প হত ওদের। শাম্বকে রবীন্দ্রনাথের ছড়া, কবিতা, গান শোনাও। আয়তাকার গভীর চোখ দুটোতে তার অপার বিস্ময় আর একটা খুশি খুশি ভাব।
যখন বুঝতে শিখল, জানতে চাইত শান্তিনিকেতন ব্যাপারটা কী! কী আছে সেখানে? ওটা কি রূপকথার দেশ? নীলিমার শেখানো পদ্য আওড়াত নরম গলায়–
“কাঁধে মই, বলে ভুঁইচাপার গাছ
দই ভাঁড়ে ছিপ ছাড়ে, খোঁজে কইমাছ,
ঘুটে ছাই মেখে লাউ রাঁধে ঝাউপাতা–
কী খেতাব দেবতায় ঘুরে যায় মাথা”
অরূপ বলত– ঐ যে ভুঁইচাপা গাছ যেখানে আছে সেই হ’ল আমাদের দেশ– সেই হ’ল শান্তিনিকেতন শাম্ব। তোর বাড়ি।
খানিক দূরে ধুয়ো উঠছে। অরূপের মনে পড়ল এরকম একটা জায়গায় রাস্তার ধারে মুক্তিদা কাঠ আর শুকনো পাতায় আগুন জ্বালিয়ে মাটির উনুনে খেজুরের রস জ্বাল দিত। দু’এক পা এগোতেই দেখতে পেল বয়স্ক এক ব্যক্তিকে। উবু হয়ে বসে আছে সদ্য আগুন দেওয়া উনুনের পাশে। এক বিশাল কড়ায় খেজুরের রস। মিষ্টি গন্ধ।
অরূপ এসে দাঁড়াল। মুক্তিদাকে চেনা যায় না। (Short Story)
দু’এক পা এগোতেই দেখতে পেল বয়স্ক এক ব্যক্তিকে। উবু হয়ে বসে আছে সদ্য আগুন দেওয়া উনুনের পাশে। এক বিশাল কড়ায় খেজুরের রস। মিষ্টি গন্ধ।
– কেমন আছ মুক্তিদা– চিনতে পারছ?
– কে বটে? চিনাচিনা লাগে– চোখে দেখি না…
– আমি অরূপ– পূর্বপল্লীর অরূপ
– উ– সে পরাণকর্তার নাতি– চিনতে পারি নাই রে দাদা। কুবে এসেছ বটে? বিদেশে থাকো নাকি?
– হ্যাঁ, এই এসেছি কিছুদিনের জন্য। মেলাটা কাটিয়ে ফিরে যাব। (Short Story)
শাম্বর বয়সী একটা রোগা ছেলে গুঁড়িমুড়ি মেরে বসে আছে মুক্তিদার গা ঘেঁষে।
– আমার নাতি– সুখরামের বিটা।
– কী নাম রে তোর?
– মুর নাম তীর্থনাথ– জবাব আসে। এক নিঃশ্বাসে বলে, ডাক নাম হ’ল মুংরি।
মুক্তিদা খেজুরের রস খাওয়াল। পয়সা নিল না কিছুতেই। (Short Story)
খানিক বেলায় অরূপ ফিরে এল অভীকদার বাড়িতে। “কী রে কেমন হ’ল তোদের আড্ডা”?
– ভালই– আসলে এতদিন পরে দেখা, বুঝলে না…
– সবই তো বুঝলাম রে– কিন্তু আসল লোকের সঙ্গে তো এখনও দেখা হওয়া বাকি।
– শাম্ব?
– হু– সে আসবে বলেছে আজ। (Short Story)
“বাঁশরী”র মরচে পড়া গেটটা একটু ঠেলতেই খুলে গেল, একটা বিজাতীয় আওয়াজ করে। আগাছায় ভরে রয়েছে পায়ে চলা পথটা। বড় জাম গাছটা আরও ঝাঁকড়া হয়ে ডাল মেলেছে। ঠাকুরদার বড় সখের একটা সিমেন্টের বেদি ছিল– তার উপরে লোহার খাঁচায় ছিল আকাশমণি লতা। বালটিমোরের বাড়ির সামনের বাগানে আকাশমণির কমলা ফুল দেখে মনে পড়ে এই জায়গাটার কথাই বারে বারে। পায়ে পায়ে এগোতে থাকে অরূপ বাড়িটার দিকে। শুকনো পাতারা চাপা পড়ে তার পায়ের নীচে। (Short Story)
অমলতাস ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। ঐ তো, “রোমিও-জুলিয়েট ব্যালকনি”। কত কত স্বপ্ন দেখা ঐ ছোট্ট বারান্দায়।
সদর দরজার চাবিটা অভীকদার কাছ থেকে চেয়ে এনেছিল অরূপ। তালায় হালকা মরচে পড়েছে।
অমলতাস ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে। ঐ তো, “রোমিও-জুলিয়েট ব্যালকনি”। কত কত স্বপ্ন দেখা ঐ ছোট্ট বারান্দায়।
সদর দরজার চাবিটা অভীকদার কাছ থেকে চেয়ে এনেছিল অরূপ। তালায় হালকা মরচে পড়েছে। দরজা খুলে দাঁড়াল একতলার বৈঠকখানায়। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে পুরনো আসবাব। মেহগনি কাঠের তৈরি সেই বুকসেলফ। আরও কত কী। (Short Story)
সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে উঠে খোলা ছাদে এসে দাঁড়ায় অরূপ। সারা শরীরে তার কৈশোরের গন্ধ; অমলতাস এর হলুদ ফুলের গালিচা তৈরি হয়েছে ছাদের কোণ ঘিরে। ঘরের দেওয়ালে অমিতের আঁকা “পৌষমেলা” ক্যানভাসটা এখনও রয়েছে। বিবর্ণ, কিন্তু অক্ষত। শান্তিনিকেতন ছেড়ে যাওয়ার আগে অনেকবার ভেবেছে ওটাকে নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। হয়ে ওঠেনি। এবার অমিতকেই ফেরত দিয়ে যাবে মনস্থ করল সে। (Short Story)
ওপর থেকে একবার কুয়োতলার দিকে নজর গেল অরূপের। জুঁই, টগর আর বেলফুলের গাছ ছিল ওখানে অনেক। বাগালের মা সুমিতা দিদির বিশ্বাস ছিল ফুলের গন্ধে নাকি কুয়োর জল পবিত্র হয়ে যায়। হবেও বা। এই বয়সে এসে বিশ্বাস– অবিশ্বাসের গণ্ডি বড় ঝাপসা।
কুমুদের বাড়িটা নজরে পড়ল। (Short Story)
পৌষমেলায় বাউলরা এসে ঐ বাড়িতে গান শুনিয়ে যেত। কে থাকে ঐ বাড়িতে কে জানে! কুমু, রোশনি ওরা কি কলকাতায় সব?
আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসে অরূপ।
পৌষমেলায় বাউলরা এসে ঐ বাড়িতে গান শুনিয়ে যেত। কে থাকে ঐ বাড়িতে কে জানে! কুমু, রোশনি ওরা কি কলকাতায় সব?
আস্তে আস্তে নীচে নেমে আসে অরূপ।
শান বাঁধানো লাল রঙের বেদিটা ভেঙে গেছে জায়গায় জায়গায়। কালো লাল পিঁপড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক। (Short Story)
নীলিমা কি সত্যিই নিয়ে যাবে ছেলেটাকে এখান থেকে। হাজার মাইল দূরে থাকে সে– সে তো যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল ওদেরকে নিজের কাছে ধরে রাখতে। অর্থকষ্ট ছিল না– ছিল না সামাজিক নিরাপত্তার অভাব– তবে কেন এরকম একটা পথ বেছে নিল?
কতক্ষণ বসেছিল ওখানে অরূপ জানে না।
চমক ভাঙল খুব নিচু গলায় একটা আদুরে ডাকে, বাবা– তুমি এখানে কেন বসে আছ?
শাম্ব দাঁড়িয়ে। একমাথা ভর্তি কোঁকড়া কালো চুল। সাদা কুর্তা আর হালকা নীল রঙের জিন্স– সঙ্গে কালো জ্যাকেট। হাত বাড়িয়ে দিল অরূপ। (Short Story)

শাম্ব এসে জড়িয়ে ধরল।
– মা এসেছিল?
– Yes, she was here for a short time. She wanted me to come over to Calcutta with her.
– তুই যেতে চাস? Go and continue with your studies– no harm পরে তুই USA-তে আসতে পারিস। আমার কাছে থাকবি।
– বাবা, I want to be here with অভীকজ্যেঠু। আমি এখানে তো ঠিক আছি– ভাল আছি। আমার বন্ধুরা রয়েছে– perhaps, I won’t be happy there!
অরূপের হৃদয় তোলপাড় হয়। এ গাছের শিকড় তো অনেক গভীরে। মা বাবার থেকে দূরে থেকে শাম্ব অনেক স্বাবলম্বী।
– শাম্ব, এই বাড়িটা তোর ভাল লাগে? আগে এসেছিস কখনও?
– অনেকবার– অভীকজ্যেঠু আমায় বলেছে– এটা আমার great great grand pa-র বাড়ি ছিল। I like that balcony over there – ।
শাম্বর হাতটা কোলে নিয়ে অরূপ বসে রইল আকাশমণি গাছের নীচে। উত্তুরে হাওয়ায় শুকনো পাতারা উড়ে গেল এদিক ওদিক। সময় এসে থমকে দাঁড়াল।
– আরে তোরা বাপ-ব্যাটা এখানে বসে আছিস? সেই ডাক্তার ভদ্রলোক ফোন করেছিলেন– বাড়ি দেখতে আসতে চান…।
– অভীকদা ছেড়ে দাও– “বাঁশরী” বিক্রি করব না। ওটা থাক। শাম্বর বড় পছন্দ এবাড়ি।
অভীকদার মুখে একচিলতে হাসি। (Short Story)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধানের নেশায় মশগুল। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিন- "রূপকথার মতো- স্মৃতিকথায় প্রণতি রায়", "খেয়ালের খেরোখাতা" এবং "চব্য চোষ্য লেহ্য পেয়"।