Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গল্প : মাছঘর

ডঃ কৌশিক সেন

জুন ২৮, ২০২৪

Short STory
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সেই ছোটবেলা থেকেই আমাদের শৌনক গাঙ্গুলির মাছ পোষার শখ। শখটা আসলে ওর পৈত্রিক সম্পত্তি। বেহালার যে গলিতে আমাদের ছোটবেলা কেটেছে, সেই গলির মোড়েই, বাসস্টপের ঠিক উল্টোদিকে একটা রঙিন মাছের দোকান। মেসোমশাই, মানে শৌনকের বাবা, অফিসফেরত সেখান থেকে প্রতিদিন ওঁর সাধের মাছেদের প্রিয় খাদ্য অর্থাৎ লাল রঙের দলা পাকানো জ্যান্ত কেঁচোর বাচ্চা কিনতেন। সবুজ রঙের টিনের চাল আর ষাট পাওয়ারের বাল্ব লাগানো ক্ষুদে অ্যাকোরিয়ামটা ওদের বাড়িতে সবচেয়ে দ্রষ্টব্য জিনিস ছিল। সেখানে মাছ মারা গেলে পারিবারিক শোকসভা হত, তারপর নতুন মাছ আমদানি হলে বাড়ির সক্কলে তার স্বভাব, চরিত্র, গতিবিধি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা।(Short Story)

আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই সহপাঠী কেমন করে আমেরিকার একই শহরে, টেক কোম্পানির চাকরি নিয়ে হাজির হলাম, তার ইতিবৃত্তও এখানে অবান্তর। মোদ্দা কথা, গত কুড়ি বছরে আমরা দেশ বদলেছি, বিয়ে-থা করে নতুন দেশে সংসার পেতেছি, কিন্তু শৌনকের ওই মাছ পোষার শখ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে, সেখানে এক ফোঁটা পরিবর্তন নেই।

সেই সব দিন কবেই না সময়ের ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই সহপাঠী কেমন করে আমেরিকার একই শহরে, টেক কোম্পানির চাকরি নিয়ে হাজির হলাম, তার ইতিবৃত্তও এখানে অবান্তর। মোদ্দা কথা, গত কুড়ি বছরে আমরা দেশ বদলেছি, বিয়ে-থা করে নতুন দেশে সংসার পেতেছি, কিন্তু শৌনকের ওই মাছ পোষার শখ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে, সেখানে এক ফোঁটা পরিবর্তন নেই। ওর বিরাট বাড়িতে এখন দুটো দানবিক অ্যাকোয়ারিয়াম, একটা মিষ্টি জলের, অন্যটা নোনা, একটার মধ্যে জলজ ট্রপিক্যাল গাছপালার সবুজ বাগান, অন্যটার মধ্যে বহুবর্ণ জীবন্ত প্রবালের দল মাথা নাড়াচ্ছে। নানা রঙের, নানা আকারের অদ্ভুত সব মাছেরা সেই আলোকিত স্বর্গে ভেসে বেড়ায়। পার্টির সময় ছেলে বুড়ো সবাই যখন ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন শৌনকের মুখেও যেন আত্মতৃপ্তির এক স্বর্গীয় আভা ফুটে ওঠে। মাছঘর যেন ওর সাফল্যের প্রতীক, ওর দক্ষতার জলজ্যান্ত নিদর্শন।

আমি অবশ্য ওর বাড়ি গিয়ে অ্যাকোরিয়ামের দিকে তাকিয়েও দেখি না। আমি সোজা কিচেনের দিকে চলে যাই, যেখানে একজন নিঃশব্দে টুকটাক কাজ করে চলেছে। খাবারগুলো যেন কুসুম কুসুম গরম থাকে, পেঁয়াজ আর লঙ্কার কুচিরা হাজির থাকে ঠিক জায়গায়, খাবারের প্লেট আর ড্রিংকের গ্লাসগুলো ঝকঝক করে, ন্যাপকিনগুলো হারিয়ে না যায়।

“কেমন আছিস তমালী?”

“ভালো আছি রুষাদি, একটা মাছাভাজা খাও না, গরম গরম বানিয়েছি”

এই হচ্ছে তমালী, শৌনকের বউ এবং এই বাড়ির সবচেয়ে চুপচাপ মানুষ। বাকি তিনজন অর্থাৎ ওদের দশ বছরের ছেলে অভি, শৌনক নিজে এবং পাঁচ বছরের কুকুরছানা এমি, সকলেই ঘোরতর সরব। গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই সেটা পরিষ্কার টের পাওয়া যায়। শৌনকের বড় ছেলে সিদ্ধার্থ আর আমাদের একমাত্র মেয়ে নূপুর এই বছর একই সঙ্গে হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট করেছে।

“তমালী, তুই কাজ করা বন্ধ করতো। চল আমাদের সঙ্গে এসে বসবি চল”

“না, গো। তুমি যাও, আমি ফ্রাইগুলো ভেজে নিয়ে এক্ষুনি আসছি,” অদ্ভুত বিষণ্ণ একটা হাসি হেসে ও বলল। এরকম সুন্দর অথচ ব্যথাবিদ্ধ হাসি শুধু ওইই হাসতে পারে। ওর ডাকনাম তুলি, আর ঠিক তুলির মতোই ও সূক্ষ্ম অথচ জঙ্গম, জীবনের সাদা ক্যানভাসে ও যেন নিঃশব্দে এক বিরাট ছবি এঁকে চলেছে। সেই ছবি মাত্র কয়েকটি লোক দেখতে পায়, ভাগ্যক্রমে তার মধ্যে একজন আমি, প্রত্যুষা ওরফে রুষা রয়।

লিভিংরুমে এখন অকৃত্রিম আড্ডার পরিবেশ। একদিকে ভিড় জমিয়েছে ছেলেরা, সেখানে হুইস্কি সহযোগে আদিরসাত্মক চুটকি চালাচালি হচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের দঙ্গলে জমজমাট পরচর্চা, ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা বিভিন্ন চেনা-অচেনা লোকজনের খোলামেলা ছবি কিংবা ব্যক্তিগত কেলেঙ্কারি নিয়ে দুর্দান্ত আলোচনা। অনেকে আবার তৃতীয় রসের রসিক। ওই তো আমার বর, ডক্টর শুভেন্দু রয়, ওরফে শুভ, ঘরের এককোণায় সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে নিবিষ্ট মনে তাস খেলতে বসে গেছে। ওর কাছে এখন ত্রিভুবন তাসময়, তাসই সত্য, জগৎ মিথ্যা। একটু বাদেই তমালী যখন গরমাগরম ফিশফ্রাই নিয়ে হাজির হবে, তখন মেরেকেটে পাঁচ মিনিটের জন্য ওর রান্নার প্রশংসা শোনা যাবে নানাকণ্ঠে। তারপর আবার যে কে সেই, তমালী রান্নাঘরে ডিনার গরম করতে ব্যস্ত, এদিকে পার্টি চলছে পার্টির নিয়মে। এমনিতেই আমার স্নব বলে বদনাম আছে, তাই খেজুরে আলাপে আমার যতই না অনীহা থাকুক, বন্ধুদের কাছে সেটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি যথাসম্ভব। একেক সময়ে অবশ্য, আমার নিজের ওপরেই খুব রাগ হয়, তখন ঠিক আমার পুরনো মাইগ্রেনের মতন পুরনো কবিতার লাইনগুলো মাথার মধ্যে হাতুড়ি পিটতে থাকে-

সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে।

কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে

সহজ লোকের মতো; তাদের মতন ভাষা কথা

কে বলিতে পারে আর; কোনো নিশ্চয়তা

কে জানিতে পারে আর? শরীরের স্বাদ

কে বুঝিতে চায় আর? প্রাণের আহ্লাদ

সকল লোকের মতো কে পাবে আবার।

“রুষাদি কনগ্রাজুলেশনস! মেয়ে এমন ফাটাফাটি রেজাল্ট করেছে। পুরো স্কলারশিপ নিয়ে হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়া কি চাট্টিখানি কথা”

“রুষা, তোমার সিক্রেটটা একটু শেয়ার করো না, আমাদের ছেলেমেয়েগুলোও কিছু তো শিখুক।”

“সিক্রেট কিছু নেই গো, আমরা দুজনেই তো যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, সত্যি বলছি খুব একটা সময় দিতে পারিনি। ও যা করেছে নিজের চেষ্টাতেই করেছে, আমাদের খুব একটা কিছু কনট্রিবিউশন নেই। আচ্ছা শোনো, পরের উইকেন্ডে চঞ্চল আর সৃজনীর অ্যানিভার্সারি না? পার্টি কোথায় হবে কিছু ঠিক হয়েছে?” আমি প্রাণপণে কথা ঘোরাবার চেষ্টা করি।

“সে তুমি যাই বলো রুষাদি, তোমার নূপুরের মতন মেয়ে হয় না। যাকে বলে বিউটি উইথ ব্রেইন, উই আর সো প্রাউড অফ হার”

কথা চলছে, কথার আড়ালে অন্য কথা, প্রশংসার আড়ালে প্রশ্ন আর কৌতূহল, তার ওপরে আলগা হিংসের গোলমরিচ ছড়ানো। আমি জানি, এইটাই আমাদের জীবন আর সমাজ, তাও মাঝে মাঝে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি বিরাট মাছঘরের মধ্যে উজ্জ্বল কমলা রঙের একটা মাছ কাচের দেওয়ালের ওপর সমানে ঠোক্কর মেরে চলেছে।

কথা চলছে, কথার আড়ালে অন্য কথা, প্রশংসার আড়ালে প্রশ্ন আর কৌতূহল, তার ওপরে আলগা হিংসের গোলমরিচ ছড়ানো। আমি জানি, এইটাই আমাদের জীবন আর সমাজ, তাও মাঝে মাঝে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি বিরাট মাছঘরের মধ্যে উজ্জ্বল কমলা রঙের একটা মাছ কাচের দেওয়ালের ওপর সমানে ঠোক্কর মেরে চলেছে। কাচের দেওয়াল অদৃশ্য অথচ কঠিন, মাথা ফেটে যাবে কিন্তু দেওয়াল সরবে না। অথচ ওই দেওয়ালটাই ওদের ফিশ ফ্রাই হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করছে।

“রুষাদি, তোমার ফোন বাজছে” নিঃশব্দে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তমালী, ওর হাতে আমার ফোন।

হ্যালো?

“আমি কি মিস রয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারি?” ওদিকের গলাটা অচেনা এবং গম্ভীর।

“হ্যাঁ বলুন, আমি মিস রয়”

“আমি অফিসার টিম অলসন। নূপুর রয় আপনার মেয়ে?”

তারপর কথাগুলো ঠিক যে কী হয়েছিল আমার ভালো করে মনে নেই। অনেক দিন আগে আলাস্কায় বেড়াতে গিয়ে একটা জমে যাওয়া হ্রদ দেখেছিলাম। হাড় হিম করা হাওয়া বইছিল, সেই হাওয়ায় ভেসে আসছিল এস্কিমোদের ড্রামের শব্দ- দ্রিম-দ্রাম, দ্রিম-দ্রাম, দ্রিম-দ্রাম। অবশ্য সেসব ছিল সাজিয়ে তোলা ট্যুরিস্ট অভিজ্ঞতা, কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের বাস্তব।

“শুনছো! এদিকে শুনে যাও একটু প্লিজ” আমি শুভকে ডাকছি, কিন্তু ওর খেয়াল নেই। তাস আর হুইস্কির নেশায় বুঁদ হয়ে আছে ও এখন, মন ভরে কাসুন্দি মাখানো ফিশফ্রাই চিবোচ্ছে। রাগে চেঁচিয়ে উঠতে গিয়েও কোনোরকমে থেমে গেলাম আমি। আমাকে মাথা ঠান্ডা রাখতেই হবে নাহলে ভরা পার্টিতে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে একটা। একজন ইতিমধ্যে সাউন্ড সিস্টেম চালু করে ট্র্যাকের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান ধরেছে, সেই তালে মাথা নাড়ছে সবাই।

“কী হয়েছে রুষাদি। বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো” কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলছে তমালী। আমি ইতিমধ্যে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছি, হয়তো আমার নখ বসে গেছে ওর কব্জিতে।

“নূপুর হাসপাতালে। ওর গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে!” ভৌতিক গলায় বলে উঠলাম আমি।

তমালীর মুখটা হাঁ হয়ে গেছে কিন্তু চিৎকারটা বেরোনোর আগেই আমি প্রায় ওর মুখটা চেপে ধরেছি। গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট এদেশে হয়েই থাকে কিন্তু আজকের ঘটনার আগে পিছে আরও অনেক গল্প আছে যা আমি কিছুতেই পাঁচকান হতে দিতে পারি না। এই টেনশনের মধ্যেও হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।

“তমালী, আমার একটা উপকার কর। আমি যাচ্ছি, কিন্তু শুভকে এক্ষুনি কিছু বলিস না। একটু খালি হয়ে গেলে আলাদা করে ডেকে ব্যপারটা বুঝিয়ে বলিস। অন্য কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে দিস যে আমার মাইগ্রেন হয়েছে তাই বাড়ি চলে গেছি”

“আমরা যত তাড়াতাড়ি পারব শুভদাকে নিয়ে এমার্জেন্সিতে চলে যাব” ধরা গলায় বলল তমালী, ওর গলা কাঁপছে, চোখের দৃষ্টি বর্ষায় ভরা দীঘির মতন। ভাগ্যিস আমার মাইগ্রেনের কথা সবাই জানে তাই অজুহাতটা নেহাৎ খারাপ হবে না। আমি পায়ে পায়ে গ্যারেজের দরজার দিকে এগোলাম। 

এখন হাসপাতালে, ওয়েটিংরুমের ফ্যাটফ্যাটে সাদা আলোয় অচেনা লোকজনের মধ্যে নির্বাক অপেক্ষায় বসে থাকা। পুলিশ অফিসারটি শ্বেতাঙ্গ এবং নিতান্তই ছোকরা। খুব গম্ভীর মুখে পরিস্থিতির গুরুত্বটা আমাকে বুঝিয়ে বলল, কিন্তু বোঝাই যায় যে আইনরক্ষকের শীতল কঠোরতা ওর এখনও ঠিকঠাক রপ্ত হয়নি।

ড্রাইভার আর প্যাসেঞ্জার, দুজনের ইউরিন টেস্টে মারিহুয়ানা আর মেথঅ্যাম্ফিটামিন পাওয়া গেছে, ব্লাডে অ্যালকোহল লেভেল দুজনেরই মাত্রাছাড়া। আমার কিন্তু ধারণা যে গাড়িটা আপনাদের হলেও ড্রাইভ করছিল ওর বান্ধবী, মানে ওই রুকস্যানা নামে মেয়েটি।

“ম্যাডাম এটা খুবই সিরিয়াস কেস। ড্রাইভার পুরোপুরি ড্রাঙ্ক অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল, কপাল ভাল যে কাউকে চাপা দেয়নি, শুধু প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে। ড্রাইভার আর প্যাসেঞ্জার, দুজনের ইউরিন টেস্টে মারিহুয়ানা আর মেথঅ্যাম্ফিটামিন পাওয়া গেছে, ব্লাডে অ্যালকোহল লেভেল দুজনেরই মাত্রাছাড়া। আমার কিন্তু ধারণা যে গাড়িটা আপনাদের হলেও ড্রাইভ করছিল ওর বান্ধবী, মানে ওই রুকস্যানা নামে মেয়েটি। কিন্তু আপনার মেয়ে আবার ওকে গার্ড করতে চাইছে। আপনি ওকে একটু বুঝিয়ে বলুন। এই বয়েসে ড্রাগ রিলেটেড প্রসিকিউশন হলে ওর স্কলারশিপ থেকে শুরু করে এডুকেশন আর কেরিয়ার, সব গোল্লায় যাবে” 

“ধন্যবাদ অফিসার, আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে পারি?”

“সেটা ডাক্তার বলবেন। গাড়িটা যেমন বেপরোয়াভাবে লাইটপোস্টে ধাক্কা মেরেছিল, তাতে মনে হয় ড্রাইভার পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত ছিল কিংবা সুইসাইডাল। কপাল ভাল যে আপনার মেয়ের সীটবেল্ট বাঁধা ছিল, তাই খুব একটা মারাত্মক চোট লাগেনি”

আরো অনেক চাপান-উতোর আর সইসাবুদ করার পরে শেষ অবধি আমি ওর ঘরে ঢোকার অনুমতি পেলাম। ইতিমধ্যে শুভ এসে গেছে, পার্টির বন্ধুরা ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পায়নি। মনে মনে তমালীকে ধন্যবাদ দিলাম কিন্তু আপাতত শুভর যা উদ্‌ভ্রান্ত অবস্থা, ওকেই না এক্ষুনি ডাক্তার দেখাতে হয়।

“আমি জানতাম ঠিক এটাই হবে! কলেজে গিয়েই মেয়ে উড়তে শিখেছে, কু’সঙ্গে মিশছে, নেশাভাঙ করছে, আর বাবা-মা হয়ে আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি। আমাদের উচিৎ ওকে কলেজ থেকে ছাড়িয়ে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা, যতক্ষণ না মতি ফেরে” শুভ হাঁপাচ্ছে, ওর চোখ লাল, ঠোঁটের কোণে জমে উঠছে ফেনা বেচারা সারা হপ্তা কাজে ব্যস্ত থাকে, উইকেন্ডের এইটুকু শান্তির রাজত্বে হামলা ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। কেউ কেউ নিজের অসুবিধাটা এতই বড়ো করে দেখে যে অন্যদের যন্ত্রণাগুলো সহজেই তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আয়নার দিকে তারা তাকাতেই চায় না তাই সহানুভূতির বদলে সমালোচনাই তাদের কাছে সহজ।

“শুভ, কাউকে যদি ঘরে বন্ধ করতেই হয়, তাহলে সেটা ওকে নয়, তোমাকেই করা হবে। ওই যে ইউনিফর্ম পরা ছোকরাকে দেখছো, ওর কাছে মেয়ে কি বয়ান দিয়েছে জানো? বেশি ঝামেলা করলে ওরা তোমাকে সোজা জেলে নিয়ে যাবে”

“না জানি না, জানতেও চাই না! তাছাড়া আমি ডক্টর শুভেন্দু রয়, আমাকে জেলে নিয়ে যাওয়া অত সোজা নয়। সব ওর ওই বন্ধুটা, কী যেন নাম? হ্যাঁ রকস্যান, ওর বদমায়েশি। একটা নোংরা, মর্বিড, অশিক্ষিত ট্র্যাশ, ছেলে না মেয়ে তার ঠিক নেই! হাতের কাছে পেলে আমি ওকে খুন করতাম! বলে নাকি ওকে নাকি হি কিংবা শি বলা যাবে না, দে বলতে হবে, কেন না সে ছেলেও না মেয়েও না। বেকার, অসামাজিক গুড ফর নাথিং জানোয়ারটা নাকি আমার মেয়ের-” কথাটা শেষ না করতে পেরে শুভ হাহাকার করে উঠল, ওর গলা শুনে ওয়েটিংরুমের দু-একজন এদিকে ফিরে তাকিয়েছে। আমি সাবধান হয়ে গেলাম, এই সময় হইচই বাঁধানো একেবারেই ঠিক নয়।

শুভ, প্লিজ চুপ, আস্তে কথা বলো, আর বাংলায় বলো, যতটা সম্ভব। রকস্যান নিজেকে ছেলে বা মেয়ে বলে চিহ্নিত করতে চায় না, ও ভাষার লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের বিরুদ্ধে। তোমার মেয়েও তাই বিশ্বাস করে। যতক্ষণ না ঠিকঠাক শব্দ পাওয়া যায়, ততক্ষণ ওরা নিজেদের হি অথবা শি বলতে রাজি নয়।

“শুভ, প্লিজ চুপ, আস্তে কথা বলো, আর বাংলায় বলো, যতটা সম্ভব। রকস্যান নিজেকে ছেলে বা মেয়ে বলে চিহ্নিত করতে চায় না, ও ভাষার লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনের বিরুদ্ধে। তোমার মেয়েও তাই বিশ্বাস করে। যতক্ষণ না ঠিকঠাক শব্দ পাওয়া যায়, ততক্ষণ ওরা নিজেদের হি অথবা শি বলতে রাজি নয়। এই আইডিয়াটা আমাদের কাছে অস্বাভাবিক কিন্তু এই জেনারেশনের কাছে নয়। বোঝার চেষ্টা করো একটু! তোমার মেয়ের আঠেরো বছর বয়স হয়েছে, এই দেশে তুমি ওকে জোর করে কিছু করতে পারো না”

“আমার কপালেই এই যন্ত্রণা! বন্ধুদের ছেলেমেয়েরা কেমন নর্ম্যাল, কলেজ শেষ করে চাকরি করছে, বিয়ে করছে, বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে, কোথাও কোনও গণ্ডগোল নেই। আসলে মা যদি বাড়ি না থাকে তাহলে ছেলেমেয়েরা এইরকমই বিগড়ে যায়। আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল”

কথাগুলো আমার মুখের ওপরে চাবুকের মতন আছড়ে পড়ল, কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি অন্ধকার দেখলাম। কিন্তু আমাকে তো দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে। মেয়েটার যে আমি ছাড়া কেউ নেই। ছোটবেলায় যে সমাজ আর যেসব মানুষদের উপরে ও ভরসা করত, এখন তারাই হয়ে উঠবে ইনকুইজিটর। নির্মম বিচারকের আসনে তারাই বসে থাকবে, তাদের হাতে অত্যাচারের যন্ত্রপাতি, জিভে কু’কথার বিষ। সেই বিচারসভায় ওর পাশে না দাঁড়িয়ে আমরা কেবল ধামাচাপা দেওয়ার মতলবে রয়েছি, যাতে অন্ততঃ আমাদের মুখরক্ষা হয়। 

“শুভ, আমি ওর ঘরে যাচ্ছি, তুমি এখানেই অপেক্ষা করো। প্লিজ মাথা গরম কোরো না”

মেয়ের ঘরে ঢুকে আমি আরও একবার একবার চমকে গেলাম। ও একলা বিছানায় শুয়ে আছে, অদ্ভুত ফ্যাকাসে ওর মুখের রং, চুলগুলো দেখে মনে হয়, বহুকাল হল ওদের সঙ্গে তেল জলের সম্পর্ক নেই। বিছানার পাশে একটা টুলের ওপর ওর আঙুলে আঙুল জড়িয়ে তমালী বসে আছে চুপচাপ।

মেয়ের ঘরে ঢুকে আমি আরও একবার একবার চমকে গেলাম। ও একলা বিছানায় শুয়ে আছে, অদ্ভুত ফ্যাকাসে ওর মুখের রং, চুলগুলো দেখে মনে হয়, বহুকাল হল ওদের সঙ্গে তেল জলের সম্পর্ক নেই। বিছানার পাশে একটা টুলের ওপর ওর আঙুলে আঙুল জড়িয়ে তমালী বসে আছে চুপচাপ।

“কেমন আছিস মামণি?” ধরা গলায় এই তিনটে কথা কোনোমতে আমার মুখ থেকে বেরোল।

“ভালো আছি মা। তোমাদের অনেক কষ্ট দিলাম, সরি”

আমার বুক ভরে কান্না আসছে। কেঁদেই ফেলতাম কিন্তু ঠিক তখনই তমালী উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

“রুষাদি, ও ভালো আছে, কোনও ইনজুরি নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখো”

“শৌনক জানে?”

“একটু একটু, মানে একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট, এইটুকুই। ও লবিতে, শুভদার সঙ্গে থাকবে। তুমি একটুও চিন্তা করো না, কাল ওকে ছেড়ে দেবে, দেয়ার ইজ নো পুলিশ কেস।”

আমি অনুভব করতে পারলাম যে ওর শরীর আমার শরীরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, ওর নিঃশ্বাস আর হৃৎস্পন্দনের অনুরণন উঠছে আমার বুকের ভেতর। কোনখানে লুকিয়ে রাখা একটা শুকনো পুকুর যেন ভরে উঠছে বৃষ্টির অসহ্য আরামে।

“মামণি তুই অফিসার অলসনের সঙ্গে কথা বলেছিস?” আমি কোনোরকমে বললাম।

“চিন্তা করো না মা, রুকস্যান পরিষ্কার স্টেটমেন্ট দিয়েছে যে ও ড্রাইভ করছিল। সিকিওরিটি ক্যামেরাও নাকি তাই বলছে এবং ওর গায়ের রং কালো, তাই এবারকার মতন তোমাদের সোশ্যাল রেপুটেশন এক্কেবারে সেফ অ্যান্ড সাউন্ড। আশা করি ওকে জেলে যেতে হবে না” মেয়ের মুখে একটা তিক্ত হাসি, চোখের কোণায় কালি আর জল।

“ও কেমন আছে? আমরা কিছু করতে পারি?” নিজের কথা নিজের কানেই বোকা বোকা শোনাল আমার। শুভর রাগী মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল।

“ডোন্ট বদার, মা। তোমার এলিটিস্ট সমাজের বাইরে অনেক মানুষ নিজেদের মতন করে বেঁচে আছে, রুকস্যানাও থাকবে। জেলে গেলেও আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব। উই আর আ কাপল, ইউ হ্যাভ টু অ্যাকসেপ্ট দেম। অফ কোর্স, ইফ ইউ লাভ মি” মেয়ে চোখ বুজে ওপাশ ফিরল, যেন এ নিয়ে আর কথা বলতে চায় না। এই হচ্ছে আমাদের সফল সন্তানদের আসল চেহারা, তাদের সিক্রেট লাইফ, যার খবর রাখার দরকার আমরা বুঝিনি। ধরেই নিয়েছি আমাদের কাছ থেকে ওরা যা পেয়েছে তাই যথেষ্ট। এখন আমার চোখের সামনে দিয়ে একটা ছবির মিছিল ভেসে চলেছে। সেই ছোট্ট নূপুর, যে কী না জন্ম থেকে বাঙালি কাকু আর মেসোদের কাঁধে চড়ে বড় হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রজয়ন্তী আর দুর্গাপুজোর সময়ে পুরনো বাংলা গানের তালে তালে পা ফেলেছে অনভ্যস্ত ছন্দে, স্টেজের ওপর ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলেছে আর প্রবল হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে সবাই। ওর মুখে এই সব উদ্ভট, বিজাতীয় কথাবার্তা এক্কেবারে মানায় না! কিন্তু সে তো আমাদের বিচারে। আর আমরা? আমরাও কি সাহস করে যে যার ব্যক্তিগত যৌনতার সন্ধানে বেরিয়েছি এ জীবনে?

ডাক্তার আর পুলিশের সাথে কথা বলে শেষ অবধি একটু হালকা লাগল, ওয়েটিংরুমে ফিরে এলাম দুজনে। দেখা গেল শৌনক আর শুভ, দুজনেই একই রকম বিক্ষুব্ধ। বাচ্চাদের হাতে গাড়ির চাবি দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার লাগামহীন বাঁদরামি, ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে ডর্মে পাঠানো, এঁচোড়ে পাকা স্বাধীনতার এই সব আজব উৎপাত

ডাক্তার আর পুলিশের সাথে কথা বলে শেষ অবধি একটু হালকা লাগল, ওয়েটিংরুমে ফিরে এলাম দুজনে। দেখা গেল শৌনক আর শুভ, দুজনেই একই রকম বিক্ষুব্ধ। বাচ্চাদের হাতে গাড়ির চাবি দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার লাগামহীন বাঁদরামি, ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে ডর্মে পাঠানো, এঁচোড়ে পাকা স্বাধীনতার এই সব আজব উৎপাত, এই সমস্ত নিয়ে দুজনের আপত্তির পরে আপত্তি, নালিশের পরে নালিশ।

“অনেক হয়েছে এবারে বাড়ি চলো। মেয়ে ভাল আছে, কাল বাড়ি ফিরবে” আমি বললাম।

“ভাল আছে মানে। এত শখ করে নতুন গাড়িটা কিনে দিলাম, বছর ঘুরতে না ঘুরতে পুরো বারোটা বাজিয়ে দিল। ইন্সিওরেন্সের খরচা কীরকম বেড়ে যাবে জানো? শুভ এখনও গজগজ করছে।

“মেয়েটা বেঁচে আছে শুভ, আমার কাছে সেটাই বড় কথা। বাকি রইল বঙ্গসংস্কৃতি, সেটা নিয়ে অতখানি মাথাব্যথা থাকলে দেশ ছাড়ার আগেই ভাবা উচিৎ ছিল, তাই না। তাছাড়া দেশও এখন আগাগোড়া বদলে গেছে, ভরসা শুধু শৌনকের ওই মাছঘর। ভেবে দেখো বাচ্চাদের ওইখানেই বড় করতে চাও কিনা”

কথাটা ঠিক বুঝতে না পেরে বোকার মতন তাকিয়ে রইল দুজনে।

আমরা যে যার গাড়িতে উঠছি। তমালীর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখলাম। ও হাসল। ব্যথাবিদ্ধ হাসি, কিন্তু তার অর্থ পরিষ্কার। জোড়াতাড়া দিয়ে কাল থেকে আবার জীবন চলবে, যেমনটা চলা উচিৎ।

Dr Kaushik Sen

কৌশিক সেন পেশায় ডাক্তার, নেশায় লেখক। তিনি সেই প্রজন্মের লোক যাঁরা টাইপরাইটার এবং আকাশবাণী থেকে শুরু করে, ইন্টারনেটের শৈশব, যৌবন দেখে ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম-বি-বি-এস, তৎকালীন পি জি হাসপাতাল থেকে এম-ডি, তারপর অনেক মুসাফিরি, অনেক বিনিদ্র রাতের গল্প শেষ করে অবশেষে থিতু হয়েছেন আমেরিকার র‍্যালে শহরে। এই সফরের বিচিত্র সব আনন্দ-বেদনার অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথমে ছোটোগল্প ও কবিতা, তারপর একে একে সাতটি উপন্যাস। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দেশ, সানন্দা এবং আনন্দ পাবলশার্সের নানান পূজাবার্ষিকীতে, তার সঙ্গে রয়েছে প্রতিভাস প্রকাশনীর পত্রিকা নতুন কৃত্তিবাস এবং পরবাস আন্তর্জাল পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি। কৌশিক সেনের লেখায় প্রধানতঃ এক প্রবাসী চিকিৎসক জীবনের প্রেক্ষিত এবং অনুপুঙ্খ ফুটে ওঠে। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র দশ কিন্তু লেখা শেষ হয়নি, এই যুগের অনেক গল্প এখনও তাঁর ঝুলিতে।

Picture of ডঃ কৌশিক সেন

ডঃ কৌশিক সেন

কৌশিক সেন পেশায় ডাক্তার, নেশায় লেখক। তিনি সেই প্রজন্মের লোক যাঁরা টাইপরাইটার এবং আকাশবাণী থেকে শুরু করে, ইন্টারনেটের শৈশব, যৌবন দেখে ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম-বি-বি-এস, তৎকালীন পি জি হাসপাতাল থেকে এম-ডি, তারপর অনেক মুসাফিরি, অনেক বিনিদ্র রাতের গল্প শেষ করে অবশেষে থিতু হয়েছেন আমেরিকার র‍্যালে শহরে। এই সফরের বিচিত্র সব আনন্দ-বেদনার অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথমে ছোটোগল্প ও কবিতা, তারপর একে একে সাতটি উপন্যাস। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দেশ, সানন্দা এবং আনন্দ পাবলশার্সের নানান পূজাবার্ষিকীতে, তার সঙ্গে রয়েছে প্রতিভাস প্রকাশনীর পত্রিকা নতুন কৃত্তিবাস এবং পরবাস আন্তর্জাল পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি। কৌশিক সেনের লেখায় প্রধানতঃ এক প্রবাসী চিকিৎসক জীবনের প্রেক্ষিত এবং অনুপুঙ্খ ফুটে ওঠে। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র দশ কিন্তু লেখা শেষ হয়নি, এই যুগের অনেক গল্প এখনও তাঁর ঝুলিতে।
Picture of ডঃ কৌশিক সেন

ডঃ কৌশিক সেন

কৌশিক সেন পেশায় ডাক্তার, নেশায় লেখক। তিনি সেই প্রজন্মের লোক যাঁরা টাইপরাইটার এবং আকাশবাণী থেকে শুরু করে, ইন্টারনেটের শৈশব, যৌবন দেখে ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম-বি-বি-এস, তৎকালীন পি জি হাসপাতাল থেকে এম-ডি, তারপর অনেক মুসাফিরি, অনেক বিনিদ্র রাতের গল্প শেষ করে অবশেষে থিতু হয়েছেন আমেরিকার র‍্যালে শহরে। এই সফরের বিচিত্র সব আনন্দ-বেদনার অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথমে ছোটোগল্প ও কবিতা, তারপর একে একে সাতটি উপন্যাস। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দেশ, সানন্দা এবং আনন্দ পাবলশার্সের নানান পূজাবার্ষিকীতে, তার সঙ্গে রয়েছে প্রতিভাস প্রকাশনীর পত্রিকা নতুন কৃত্তিবাস এবং পরবাস আন্তর্জাল পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি। কৌশিক সেনের লেখায় প্রধানতঃ এক প্রবাসী চিকিৎসক জীবনের প্রেক্ষিত এবং অনুপুঙ্খ ফুটে ওঠে। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র দশ কিন্তু লেখা শেষ হয়নি, এই যুগের অনেক গল্প এখনও তাঁর ঝুলিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com