Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রহস্যকাহিনি

অনির্বাণ বসু

অক্টোবর ১০, ২০২৪

Anirban Basu
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

কৌতূহল

বন্ধুর দেশের বাড়িতে, পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গ করমর্দন করে যেখানে, কালীপুজোর নিমন্ত্রণ ছিল। সেখান থেকে ফিরছিলাম। ট্রেনে। কোন-এক জংশন স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে নেমে যায় জনা তিনেকের ছোট পরিবার—সুখী কিনা জানি না; খানিক দ্রুততার সঙ্গেই উঠে আসেন এক অল্পবয়স্কা। কম্পার্টমেন্ট মোটের উপর ফাঁকা তখন; জানলার ধারের সিট দখল করবেন বলেই অমন হুড়োতাড়া, বুঝি; অতঃপর আমি আর আমার সহযাত্রী দু’জনে দুটো জানলার ধারে, মুখোমুখি। (Short Story)

কয়েকটা স্টেশন চলে গেল এরপর। হঠাৎ একজন, কপালে সিঁদুরের টিকা, গেটের পাশে ঠেস দিয়ে হিমেল হাওয়ায় দিব্যি চোখ বুজে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এসে তরুণীর সামনে দাঁড়ালেন, জল চাইলেন। হাতের ব্যাগ থেকে ছোট একটা জলের বোতল বের করে আনলেন উনি, এগিয়ে দিলেন যুবকের দিকে। আমার উলটোদিকের সিটে বসে ওঁরা দু’জন; যুবকটি জল খাচ্ছেন, দেখি, যুবতীটি রুমাল দিয়ে ঘষে-ঘষে সিঁথিতে লেগে-থাকা সিঁদুরের দাগ তুলছেন।
হয়তো ওঁদের ঝগড়া হয়েছিল ফেরার পথে।
হয়তো ওঁরা একে অপরের স্বামী-স্ত্রী নন।
হয়তো ওঁদের ধর্ম আলাদা; অন্যজনের ভাললাগাকে সম্মান জানিয়েছিল মাত্র—হয়তো।
হয়তো এসব কিছুই নয়। হয়তো অন্য কিছু। তবু, কিন্তু, হয়তো—এইভাবেই তো গল্প শুরু হয়।

যুবকটি জল খাচ্ছেন, দেখি, যুবতীটি রুমাল দিয়ে ঘষে-ঘষে সিঁথিতে লেগে-থাকা সিঁদুরের দাগ তুলছেন।
হয়তো ওঁদের ঝগড়া হয়েছিল ফেরার পথে।

সম্ভাবনা : এক

প্রথম-প্রথম আড়চোখে। আলতো চাহনি অপাঙ্গে। ঝটিতি নামিয়ে নেওয়া চোখ। সকলের অলক্ষ্যে। লুকোচুরি খেলা। ক্রমে কথা টুকটাক। অবান্তর। গায়ে-পড়া অকারণ। কপট রাগ। ভাললাগা ভিতর-ভিতর।
শুরুটা হয়েছিল এইভাবেই; আরও অনেকেরই যেমন হয়।

মাধ্যমিকের বছরে ঠিক এইভাবেই নিজের মনের ভিতর প্রেম চিনেছিল ফিরোজা। সায়েন্স সাবজেক্টের কোচিং সেরে, সদ্যজাগা বুকের উপর বিনুনির দোলন, ক্লাসের বাকি মেয়েরা অন্য রাস্তায় চলে গেলে ক্রমে হাঁটার গতি কমে আসত তার, গজগমনে যখন বাড়ির পথ ধরত সে, ফুরফুরে হাওয়ায় শ্যাম্পু-করা-চুল উড়িয়ে প্রায় গা ঘেঁষে বেরিয়ে যেত রূপমের মফস্‌সলি সাইকেল। ফিরোজাকে পেরিয়ে কিছুটা গিয়েই হ্যান্ডেল থেকে দু’হাত ছেড়ে দিত রূপম, পায়ের চাপে প্যাডেল ঘুরত, পাল্লা দিয়ে চাকাও; আপন খেয়ালে সামনের দিকে এগিয়ে যেত সাইকেল আর যেহেতু সিধে রাস্তার কারণেই দৃষ্টির সম্পূর্ণ আড়ালে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন ছিল না, বিজয়ীর অভিবাদন কুড়োনোর ভঙ্গিতে শূন্যে রূপমের মুহুর্মুহু হাতনাড়া দেখতে পেত ফিরোজা।

আরও পড়ুন: সরমার সঙ্গে একদিন

সাইকেলের ঘণ্টির ক্রিং-ক্রিং ধ্বনির সঙ্গেই প্রেম এসেছিল। সশব্দে। যদিও আশেপাশের কেউ জানতে পারেনি মোটে; যেহেতু মফস্‌সলের স্টেশন রোড জুড়ে রিকশার প্যাঁ-পোঁ, রেশনদোকান লাগোয়া গমকলের অননুকরণীয় আওয়াজ, দোকানি আর খরিদ্দারের মধ্যেকার রোজকার ঝামেলা, পথ চলতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় সামনের লোকের চটিতে পিছনের লোকের পা পড়ে যাওয়ার ফলে চিল-চিৎকার, চায়ের দোকানের প্রাত্যহিক গুলতানি—এতসব শব্দের ভিড়ে মাঝারি মাপের রংচটা এক সাধারণ সাইকেলের সামান্য ঘণ্টির আওয়াজ বিশেষ একজন বাদে আর কারও কানে যাওয়ার কথা ছিল না, যায়নিও। ফিরোজা আর রূপমের প্রেমের সবটাই, অতএব, শুরু হয়েছিল এইভাবে—সকলের অলক্ষ্যে এবং বছরের পর বছর পেরিয়েও থেকে গিয়েছিল আগের মতোই, নিঃসাড়ে।
ফিরোজা অপেক্ষা করছিল রূপমের একটা চাকরির জন্য; আর বয়সে ওর থেকে মাস কয়েকের ছোট রূপম তক্কে-তক্কে ছিল ওর যত-না, তার চেয়েও বেশি ফিরোজার আঠারো বছর হওয়ার জন্য।

সাইকেলের ঘণ্টির ক্রিং-ক্রিং ধ্বনির সঙ্গেই প্রেম এসেছিল। সশব্দে। যদিও আশেপাশের কেউ জানতে পারেনি মোটে

চলতি বছরের শুরুতে আঠারো পূর্ণ হয়েছে ফিরোজার। মাস খানেক আগে ওদের উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে, তারপর একে-একে ডাক্তারি-এঞ্জিনিয়ারিং-আইনে ভর্তির তালিকাও বেরিয়ে গেছে। পড়াশোনায় রূপম বরাবরের ভাল; শুধু ক্লাস নাইনের অ্যানুয়াল পরীক্ষা বাদ দিলে বাকি আর কখনও কোনও অসম্মানের সামনে পড়তে হয়নি তাকে। ক্লাস নাইনে সে প্রথম দেখেছিল ফিরোজাকে, উড়ু-উড়ু ভাব তখন, ডানাও গজায় অল্পবিস্তর, যৎসামান্য-যা পা হড়কেছিল সেই সময়ই। রূপম আসলে অপেক্ষায় ছিল আইআইটি এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বেরোনোর। ফলপ্রকাশ হতে দেখা গেল, একটু পিছনের দিকে হলেও নাম উঠেছে তার। সেইমতো ভর্তি এবং তৎপরবর্তীতে রূপমের হস্টেলে চলে যাওয়ার দিন এগিয়ে এলে, নদীপারে হিজলগাছের নিচে, মুখে বিষণ্ণ আঁধার মেখে এসে দাঁড়িয়েছিল ফিরোজা—টলটলে চোখে তখন জোয়ার এসেছে। বিবিধ উপরোধ-আশ্বাস পার করে দু’হাতে ফিরোজার মুখ তুলে ধরেছিল রূপম; বুড়ো আঙুলের আলতো ছোঁয়ায়, ওই অবস্থাতেই, মুছিয়ে দিয়েছিল চোখের কোল আর তারপর নামিয়ে এনেছিল নিজের মুখ, ফিরোজার ঠোঁটের উপর। ফিরোজার হাতের আঙুল, সেই মুহূর্তে, টেনে ধরেছিল রূপমের চুল; যেতে দেবে না—বুঝি-বা।

ক্লাস নাইনে সে প্রথম দেখেছিল ফিরোজাকে, উড়ু-উড়ু ভাব তখন, ডানাও গজায় অল্পবিস্তর, যৎসামান্য-যা পা হড়কেছিল সেই সময়ই।

এই ঘটনার মাস দেড়-দুই পর পুজোর ছুটিতে বাড়ি এলে রূপমের মধ্যে কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব দেখেছিল ফিরোজা; যত-না দেখেছিল, অনুভব করেছিল বেশি। কথায়-কথায় জানতে চেয়েছিল সে, হস্টেলে কী এমন হয়েছে যাতে আজকাল এমন বিব্রত লাগে তাকে; জবাবে প্রতিবারই পড়াশোনার দোহাই দিয়ে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেছে রূপম। ছুটির দিনগুলোয় ফিরোজা দেখছিল, ক্রমে কমে আসছে তাদের পারস্পরিক দেখাসাক্ষাৎ থেকে শুরু করে একান্ত আলাপের সময়; তখন নদীর পারে দেখা হলেই, যে-কোনও ছুতো-নাতায়, তার শরীর ছুঁতে চায় রূপম। কীসের খোঁজে এত উতলা রূপম, বোঝে না ফিরোজা; প্রকাশ্যে এমনতর আদরে মন সায় দেয় না তার, ভাল লাগে না মোটে, তবু বারণ করতে পারে না।

আরও পড়ুন: তোমার পাশে বসত করে কয়জনা

বাধ্য হয়ে সে নিজেই প্রস্তাব রেখেছিল রূপমের কাছে : ‘দুনিয়ায় কোনও ভাল কিছুই চোখের সামনে হয় না। গোলাপকে কখনও চোখের সামনে পাপড়ি মেলতে দেখো? তার চেয়ে বরং—।’
ফিরোজার মুখের কথা পড়তে পারেনি সেদিন, লুফে নিয়েছিল রূপম এবং সেইমতো, আজ সকালে তারা দু’জনে, যে-যার মতো, বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে। যাতে কেউ বুঝতে না-পারে, বুঝলেও ধরতে না-পারে, তাই স্থির হয়েছিল এমন : সকালে, যাওয়ার সময়, বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরবে, তাতে যদিও সময় খানিক বেশিই লাগবে, তবু অসুবিধা তেমন নেই কারণ যেহেতু ফেরার তাড়া থাকবে না; আর সন্ধেয়, ফেরার সময়, যেহেতু ওই পথে ভুলেও যাবে না—সময়ের কথা ভেবে যত-না, তার চেয়েও বেশি ওই চত্বরের লোকজনের নজর এড়ানোর জন্য—অতএব, ট্রেন ধরে এসে নামবে স্টেশনে, তারপর যে-যার বাড়ির পথে।

সোয়া-ঘণ্টা মতো বাস চলার পর কালীতলা এলে নেমে গিয়েছিল ওরা, তারপর রূপমের হাত ধরে ফিরোজা অথবা ফিরোজার হাত ধরে রূপম, পাশাপাশি হেঁটে, এসে দাঁড়িয়েছিল মন্দিরের চাতালে। জনশ্রুতিতে জাগ্রত সেই দেবীর দুয়ারে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেট থেকে মোড়ানো একটা কাগজের ডেলা বের করে এনেছিল রূপম, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়েছিল ফিরোজা আর মোড়ক খুলতেই দেখা গিয়েছিল—সিঁদুর : ঠাকুরের সিংহাসনের এককোণে সিঁদুরের যে-কৌটো রাখা থাকে, তার থেকেই কিছুটা সরিয়ে এনেছে রূপম; গতবছর পিসতুতো দিদির বিয়ের সময় সে জেনেছিল, বিয়ের সময় নতুন সিঁদুর পরানোই দস্তুর, দোকানে গিয়ে সিঁদুর কেনা এই গ্রামঘেঁষা মফস্‌সলে যারপরনাই অসম্ভব, এদিকে মায়ের আলমারিতেও সিঁদুরের নতুন কোনও কৌটো চোখে পড়েনি তার, ফলে—অগত্যা—বন্দোবস্ত এমনই।

রূপমের হাত ধরে ফিরোজা অথবা ফিরোজার হাত ধরে রূপম, পাশাপাশি হেঁটে, এসে দাঁড়িয়েছিল মন্দিরের চাতালে।

মন্দিরের চাতালে, দেবীমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে, রূপম যখন তাকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছিল, তখন মুহূর্তের জন্যও ফিরোজা ভাবেনি কিছু সময় পরে তুলে ফেলতে হবে বিবাহের সেই অভিজ্ঞান, একবারের জন্যও ভাবেনি নারীশরীর বিষয়ে রূপমের আকস্মিক প্রগল্‌ভলতার কারণ; রূপমের এই আচমকা বদলে যাওয়ার পিছনে যে তার কলেজের বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে সেখানকার শহুরে জীবন থাকতে পারে, থাকতে পারে নতুন হওয়া কোনও মেয়েবন্ধু—কোনও দুঃস্বপ্নেই সেসব ভাবতে চায়নি সে। স্বভাবতই, বাইরে শান্ত অথচ ভিতরে উত্তেজিত ফিরোজা, সিঁদুরচর্চিত, রূপমের হাত ধরে এরপর এসে উঠেছিল স্থানীয় একটি সস্তার গেস্টহাউজে। কালীমন্দিরে পুজো দিতে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তের দল আসে, আতুর আসে; হাতে-গোনা কয়েকটি ছোটোখাটো হোটেল-গেস্টহাউজও তাই দিব্য গজিয়ে উঠেছে এদিকটায়, কোনও-কোনওটার নামের সঙ্গে আবার জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘বিশ্রামস্থল’ বা ‘শ্রান্তিনিবাস’-এর মতো শব্দ। এসব হোটেলের একটা সুবিধা এই যে, বড়-একটা জিজ্ঞাসাবাদের সামনে পড়তে হয় না লোকজনকে; যে-কোনও একজনের পরিচয়পত্র দেখালে রিসেপশন থেকেই ফটোকপি করে জমা নিয়ে নেয়, অন্যজনের আইডেন্টিটি কার্ড না-থাকলেও অসুবিধা হয় না আর, পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়েও এমন-কি মুখ ফুটে জানতে চায় না কিছু।

নিজের আইডেন্টিটি কার্ডে রিসেপশনের কাজ মিটে গেলে সেটিকে যথাস্থানে রেখে, কাউন্টারের ছেলেটির থেকে চাবি নিয়ে, একটা জলের বোতল এবং কোল্ড ড্রিঙ্ক অর্ডার দিয়ে, ওদের দেখিয়ে দেওয়া সরু সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এসেছিল ওরা; হোটেলের আরেকটি ছেলে ওদের জন্য নির্দিষ্ট, কোণের ঘরটা খুলে, আলো জ্বালিয়ে ‘ওয়েলকাম, স্যার’ আর ‘ওয়েলকাম, ম্যাডাম’ বলে ফের চলে গিয়েছিল একতলায়। ওই সময় রূপমের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল ফিরোজা। কোণের ওই ঘরে ঢুকে ওরা বুঝেছিল, ওয়ারড্রোব আর আয়নার মাঝের দেওয়ালের জানলা বোধহয় কখনও খোলা হয়নি; শুধু তাই নয়, ঘরের ভ্যাপসা গুমোট আবহাওয়া ওদের মধ্যে এই প্রতীতি জাগিয়ে তুলেছিল যে, জানলায়—ঘরের ভিতরের দিকে—টাঙানো লম্বা ঝুলের পর্দাখানা, কেনার পর থেকেই হয়তো, কখনও কাচা হয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিমের ওই জানলার সামনে থেকে পর্দা যদি কখনও সরানোও হত, মাত্র কয়েক বছর আগে তৈরি এই হোটেল, তবে কোনও ঘর এইটুকু সময়ে এত স্যাঁতসেঁতে হয়ে উঠত না। ঘরের আলোও অনুজ্জ্বল, ঘোলাটে। ডবল বেডের উপর পাতা সাদা চাদর, নিভাঁজ, ফলত ভক্তি আসে না দেখে—বমি উঠে এসেছিল ফিরোজার।

অন্যজনের আইডেন্টিটি কার্ড না-থাকলেও অসুবিধা হয় না আর, পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়েও এমন-কি মুখ ফুটে জানতে চায় না কিছু।

তবু ফিরোজার সকল বিরক্তি, যাবতীয় দ্বিধা মুহূর্তে সরে গিয়েছিল, কালবিলম্ব না-করে রূপম যখন—ওই বিছানায় আধশোয়া হয়ে—হাত ধরে টেনে নিয়েছিল তাকে। প্রিয় পুরুষকে নিজের শরীরে ডুবতে দেখে—আনন্দে—আশ্লেষে—চোখ বুজে ফেলেছিল সে; চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে নেমেছিল গালে, চামড়ার স্বাভাবিক রং হারিয়ে সেই সময় যা ঈষৎ লালচে বর্ণ ধারণ করেছিল।

দিনের আলো মরে আসছিল যখন, সন্ধ্যা নামছিল ক্রমে, শরীরে হেমন্তকালীন শিশির মেখে নিয়ে ফেরার পথে, ছেলেটি আশ্চর্যরকম নীরব, ফলে ভিতরে-ভিতরে কুঁকড়ে গিয়েছিল মেয়েটি। মরে এসেছিল কিছু আগের, শেষদুপুরের, ক্ষণিক উচ্ছ্বাস। ক্ষরণশেষে নেতিয়ে-পড়া শরীর, তৃপ্ত মন, সুতরাং নিজের মধ্যে গুম মেরে গিয়েছিল ছেলেটি—আরও অনেকেরই হয় যেমন। যৌনতা সম্পর্কে তখনও পর্যন্ত সহজপাঠ না-পেরোনো মেয়েটির পক্ষে, অতএব, নৈঃশব্দ্যর নেপথ্য কারণ বুঝে ওঠা সম্ভব ছিল না; বুঝতেও পারেনি সে।
ফিরতিপথে, ট্রেনযাত্রায়, উভয়ে তাই একে অন্যের থেকে সম্ভ্রান্ত দূরত্ব বজায় রেখেছিল; কিন্তু মেয়েটি যেহেতু ভালোবাসে ছেলেটিকে, ছেলেটিও ভালোবাসে মেয়েটিকে, তাই কিছু সময় পর এসে বসেছিল পাশাপাশি, যখন নিজের সিঁথি থেকে দ্বিপ্রাহরিক সিঁদুরের দাগ তোলার চেষ্টা করছিল মেয়েটি।

দিনের আলো মরে আসছিল যখন, সন্ধ্যা নামছিল ক্রমে, শরীরে হেমন্তকালীন শিশির মেখে নিয়ে ফেরার পথে, ছেলেটি আশ্চর্যরকম নীরব, ফলে ভিতরে-ভিতরে কুঁকড়ে গিয়েছিল মেয়েটি।

সম্ভাবনা : দুই

ক্রমে ফিকে হচ্ছিল দিনের আলো, পশ্চিমের আকাশ ঘোষণা করছিল দিবাবসান, দিন ধীরে-ধীরে ছোট হচ্ছিল আর বড় হয়ে উঠছিল রাত, সূর্যাস্ত হলে সন্ধে নামতেও তত সময় লাগছিল না, রূপমের পাশাপাশি ফিরোজা—অথবা ফিরোজার পাশাপাশি রূপম—হাঁটছিল রেলস্টেশনের দিকে; পাশাপাশি হাঁটছিল দু’জনে, যদিও কেউ কারও হাত ধরে ছিল না, কেউ কোনও কথা বলছিল না, নিস্তব্ধ সেই চরাচরে ঝিঁঝিপোকার ডেকে উঠতে তখনও দেরি ছিল। দুপুরের আগমন আর গোধূলিসন্ধ্যার নির্গমনের সেই সরণি বেয়ে, ওই মুহূর্তে, ফিরোজা আড়চোখে চেয়ে রূপমকে দেখছিল থেকে-থেকেই; রূপম, রেলস্টেশন পর্যন্ত পুরো পথটাই হেঁটে গিয়েছিল খানিক আনমনে—অগোছালো : কখনও সদ্য বানানো সড়কের কংক্রিটের দিকে চেয়ে, কখনও পথের ধারে অযত্নে বেড়ে-ওঠা জারুল গাছের দিকে তাকিয়ে, কখনও-বা দ্রুত রং বদলাতে-থাকা আকাশের দিকে সে ভাসিয়ে দিয়েছিল উদাসীন দৃষ্টি।

প্রথমে নিজের উপর বিরক্তি জন্মেছিল ফিরোজার; সে মনে করেছিল, তার আজকের ভালোবাসায়—সোহাগে—আদরে—তারই অজান্তে হয়তো ফাঁক থেকে গেছে কোনও। বেশ কিছুক্ষণ এই ভাবনা তার মাথায় চেপে বসেছিল, নিজের পছন্দের মানুষটাকে খুশি করতে না-পেরে নিজের ভিতরে কুঁকড়ে যাচ্ছিল স্বভাবতই। যদিও ফিরে মনে হয়েছিল, শরীরী ভালোবাসার তুঙ্গ মুহূর্ত—পুরুষের কাছে, বিশেষত—মুহূর্তমাত্রই : খাড়াই পাহাড়ের চূড়ায় গোল কোনও পাথর রেখে অবলম্বন সরিয়ে নিলে অসম্ভব দ্রুতিতে যেমন সেটি গড়িয়ে নেমে আসে নিচের দিকে, অনেকটা তেমনই; কেন-না স্খলনের পর, আহ্লাদ মেখে অর্ধনিমীলিত আঁখিপল্লব ফিরোজা, দেখেছিল, নেতিয়ে পড়ছে রূপমের পুরুষাঙ্গ। নিজের নরম পিচ্ছিল শরীর খোলের ভিতর ভরে যেভাবে আত্মগোপন করে শামুক, ক্ষণমাত্র আগের সব হিংস্রতা ভুলে গুটিয়ে কেমন যেন দরকচা মেরে নুইয়ে পড়েছিল পুরুষের যাবতীয় পৌরুষ এবং জীবনে প্রথমবার বিষয়টি নজর করে যারপরনাই ঘাবড়ে গিয়েছিল সে।

ক্লাসরুমে টেবিলের অন্য পারে, দুধসাদা বোর্ডের সামনে এসে সে দাঁড়ালে দীপকে দোলা লাগে, শ্মশান পুড়ে যায়।

যেই মুহূর্তে ঘটনাটি মনে পড়েছিল ফিরোজার, ভেবেছিল সে, হয়তো স্খলন পরবর্তী ওই কারণে, নিজের পুরুষাঙ্গের মতোই, মানসিকভাবে অন্তত, নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল রূপম।
অপর পক্ষে, রেলস্টেশন অবধি পাশাপাশি এই হেঁটে যাওয়ায় শুধু নয়, হোটেলের ঘরে ফিরোজাকে প্রথম চুমু খাওয়ার মুহূর্ত থেকেই, রূপমের দৃষ্টিতে প্রবল হয়ে উঠছিল অন্য এক মেয়ের মুখ—ফিরোজার মুখে ক্রমে স্পষ্ট, অনিবার্য হয়ে উঠেছিল আর-এক মেয়ের মুখের আদল; সে-মুখ তারই কলেজের এক তরুণীর—ক্লাসরুমে টেবিলের অন্য পারে, দুধসাদা বোর্ডের সামনে এসে সে দাঁড়ালে দীপকে দোলা লাগে, শ্মশান পুড়ে যায়।

সম্ভাবনা : তিন

জীবনে পড়াশোনা শুরু হওয়ার আগে থেকে এবং তারপরও, লুকোচুরি ছোঁয়াছুঁয়ি কিতকিত গোল্লাছুট লক্‌-অ্যান্ড-কি কুমিরডাঙা কিংবা এমনই আরও, হরেক খেলায় ওরা মেতে উঠত রোজ। স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলে পর কেবল ছুটির দিনগুলোয় সকাল-বিকেল—দু’বেলা মাঠে অথবা মাঠ-লাগোয়া জীর্ণ পরিত্যক্ত দালানবাড়ির চৌহদ্দিতে দেখা যেত ওদের, স্কুলের দিনে বিকেলবেলাই শুধু; সমবয়সি আর পাঁচজন ছেলে-মেয়ের সঙ্গে দাপিয়ে খেলত ফিরোজা আর রূপম।

বয়স বাড়লে ছোটবেলার খেলারা হারিয়ে যায়, খেলোয়াড়ি দশা ঘুচে যায় বহু মেয়ের, বহু ছেলে পড়ার কারণে সেঁধিয়ে যায় ঘরের চার দেওয়ালের ভিতর।
পড়াশোনা নিয়ে মায়ের উপর্যুপরি বকুনির কারণে, ক্লাস সেভেন কিংবা এইট হবে, স্কুলছুটির পর এত বছর ধরে বিকেলের যে-খেলাধুলো, সেসব থেকে নিজেকে চুপিসাড়ে সরিয়ে নেয় রূপম। বিকেলের নরম আলোয় বিষণ্ণ মাঠে যবে থেকে আর দেখা পাওয়া যেত না রূপমের, তারও কয়েক মাস আগে ফিরোজা খেলতে এসেছিল শেষবারের মতো। সেদিন খেলাশেষে, আসন্ন সন্ধ্যার আচ্ছন্ন আঁধারে, মাঠে উপস্থিত প্রত্যেকের মাথার উপর পাক খেয়ে-খেয়ে যখন উড়ছিল বাচাল মশার ঝাঁক, যখন নিজেদের মধ্যে অবান্তর কথার তোড়, ফিরোজা অনুভব করেছিল তলপেটের কাছে মোচড় দিয়ে উঠছে এক বোবা ব্যথা আর তখনই তার ফ্রকের নিচে দৃশ্যমান হাঁটুর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে চিৎকার করে উঠেছিল রূপম : ‘রক্ত—!’

বয়স বাড়লে ছোটবেলার খেলারা হারিয়ে যায়, খেলোয়াড়ি দশা ঘুচে যায় বহু মেয়ের, বহু ছেলে পড়ার কারণে সেঁধিয়ে যায় ঘরের চার দেওয়ালের ভিতর।

সেই রুধিরধারা, বহু বছর পর, আজকের দিনে, আবারও ভাসিয়ে দিয়েছিল ফিরোজাকে; রূপমের বদলে অন্য কেউ থাকলেও ন্যূনতম ভাবত না সে, দ্বিরুক্তি না-করে আঁকড়ে ধরত তাকে—যেমন করে খড়কুটো ধরতে চায় কোনও বানভাসি। তার কিছু আগে, পুরোপুরি সন্ধে নেমে গিয়েছিল যখন, হাওয়ায় মিশেছিল পোড়া গন্ধ, দাউদাউ জ্বলে উঠেছিল ওদের একতলা বাড়ির একাংশ। তারও আগে, সকালের কাচা জামাকাপড় রোজের মতো শুকোচ্ছিল ছাদে, সেসব আনতে বিকেলবেলায় ছাদে উঠেছিল ফিরোজা, একটার পর একটা শুকনো কাপড় দড়ি থেকে তুলে কাঁধে আর অন্য হাতে রাখছিল, আচমকা একটা বেয়াড়া হাওয়ার দমকে ওরই একটা ওড়না উড়ে গিয়ে পড়েছিল বাড়ির পিছনদিকে—একফালি বাগানে, জবাগাছের উপর। ছাদ থেকে নেমে সব গোছাতে-গোছাতে ওড়নাটার কথা মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল, সন্ধের দিকে মনে পড়তে বাগানে গিয়েছিল আর তখনই চারপাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, আকাশ ভরে উঠেছিল আলোয়, জ্বলে উঠেছিল আগুন—দাউদাউ; গাছপালার জন্য বাগানে তখনও ঈষৎ অন্ধকার, ফিরোজা দেখেছিল, প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছে ওর বাবা-মা-বোন এবং মুহূর্তে মাটি নেয়; তলোয়ার বা চপার অথবা ছুরি—দূরত্বের কারণে ঠিক বোঝেনি সে, নিজের স্বাভাবিক কাজ সেরে ফেলেছে ওইটুকু সময়ে আর রক্তাক্ত সেইসব ধারালো অস্ত্র ধরে আছে যে-হাতগুলো, তার প্রতিটির কবজিতেই বিপত্তারিণীর সুতোর ঘের—রক্তলাল। অধুনা রক্তে লাল।

দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ফিরোজা, অতঃপর, দৌড়তে শুরু করেছিল উদ্‌ভ্রান্তের মতো। প্রথমে পিছনে তাকানোর মতো সাহস হয়নি, বেশ খানিকটা ছোটার পর, মাত্র একবারের জন্যই, ঘাড় ঘুরিয়েছিল, দেখেছিল, পিছু ধাওয়া করে ছুটে আসছে উন্মাদের দল। এরপর আর কোনওদিকে না-তাকিয়ে, আরও জোরে, প্রাণপণে, ছুট লাগিয়েছিল সে; ভাঙা দালানবাড়ির পাশ দিয়ে যখন দৌড়ে যাচ্ছিল ফিরোজা, তখনই অন্ধকার থেকে কে যেন তাকে টেনে নেয় ইট-খোবলানো ওই অতলের গভীরে : ‘ফিরোজা! ফিরোজা! আমি রূপম!’
হাঁপ-ধরা গলায় কাঁপুনি তীব্র তখন : ‘মা-বাবা, রূপম! বোন! সবাইকে মেরে ফেলেছে! কেউ বেঁচে নেই আর। আমাকেও মেরে ফেলবে।’

কোনওরকমে ফিরোজাকে ধাতস্থ, প্রকৃতিস্থ করেছিল রূপম; তারপর দালানবাড়ির অন্ধকার কোণে, ছোটবেলার খেলার মাফিক, ওকে লুকিয়ে রেখে একছুটে পৌঁছে গিয়েছিল বাড়িতে—ঠাকুরঘরে, তারপর প্যান্টের পকেটে পাচার করে দিয়েছিল সিঁদুরের কৌটো এবং ওই একই দ্রুততায় ফিরে এসেছিল ফের।

প্রথমে পিছনে তাকানোর মতো সাহস হয়নি, বেশ খানিকটা ছোটার পর, মাত্র একবারের জন্যই, ঘাড় ঘুরিয়েছিল, দেখেছিল, পিছু ধাওয়া করে ছুটে আসছে উন্মাদের দল।

নিরসন অথবা যবনিকা

পাঠক, এরপর আপনি দেখবেন, নরমেধ যজ্ঞের বেদি থেকে উঠে আসছে সীমন্তিনী এক নারী—যজ্ঞের আগুন থেকে যেভাবে বেরিয়ে এসে ধৃষ্টদ্যুম্নর পাশে দাঁড়িয়েছিল যাজ্ঞসেনী, তেমনই।
কিংবা, হয়তো এমন হয়নি আদৌ—কে জানে! অপ্রত্যক্ষ সকল সম্ভাবনাই, প্রকৃত প্রস্তাবে, শূন্যগর্ভ—অলীক। আকাশকুসুম বলে, অবারিত কল্পনা বলে প্রতিটিই আদতে গল্প; বাস্তব নয়, ইতিহাস নয়। এমন হয়তো সত্যিই হয়নি, কিন্তু হতে পারে কখনও—ভবিষ্যতের এই আশঙ্কা, এই ইশারাও গল্পেই থাকে; হয়তো সরাসরি বলা হয় না, তবু থাকে, একটা ধরতাই, একটা আদল। সেই গল্পে যেহেতু মানুষ থাকে, মৃত্যু ছাড়া যেহেতু মানুষের জীবনের উপর মেলে দেওয়া হয় না কোনও কাপড়, তেমনই মানুষের কিস্‌সা-কাহিনি; সর্বদা পর্দা নামে না গল্পের শেষে, অভ্যস্ত রীতির অনিবার্যতা ও সমাপ্তিকালীন উপসংহারে পৌঁছানোর বাধ্যবাধকতা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সেখানে হাজির থাকে না কোনও ছিদ্রান্বেষীর রক্তচক্ষু।

অলংকরণ – আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Anirban Basu
অনির্বাণ বসু

জন্ম : ১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১২ আষাঢ়। আপাতত তিনটি উপন্যাস ও চারটি গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদিত গ্রন্থ দু’টি। ‘এখানে যত্নসহকারে চক্ষু পরীক্ষা করা হয়’ গল্পগ্রন্থের জন্য ২০১৮ সালে রবিশংকর বল স্মারক সম্মান। ২০২৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার।

Picture of অনির্বাণ বসু

অনির্বাণ বসু

জন্ম : ১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১২ আষাঢ়। আপাতত তিনটি উপন্যাস ও চারটি গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদিত গ্রন্থ দু’টি। ‘এখানে যত্নসহকারে চক্ষু পরীক্ষা করা হয়’ গল্পগ্রন্থের জন্য ২০১৮ সালে রবিশংকর বল স্মারক সম্মান। ২০২৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার।
Picture of অনির্বাণ বসু

অনির্বাণ বসু

জন্ম : ১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১২ আষাঢ়। আপাতত তিনটি উপন্যাস ও চারটি গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদিত গ্রন্থ দু’টি। ‘এখানে যত্নসহকারে চক্ষু পরীক্ষা করা হয়’ গল্পগ্রন্থের জন্য ২০১৮ সালে রবিশংকর বল স্মারক সম্মান। ২০২৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com