(Short Story)
ঘুম আসছে না। বারান্দায় এসে দাঁড়াল রজনী। দূরে রাস্তাটা নিঝুম, স্ট্রিট-লাইটের আলো পড়ে নকশাকাটা জলের পুকুরের মতো দেখাচ্ছে। বিশ্রাম নিচ্ছে একলা রাস্তা। বিশ্রাম নিচ্ছে রাতের পৃথিবী। ঘুমন্ত পৃথিবীর বুকে মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছে আকাশ। শুধু রজনীর বিশ্রাম নেই। একা একা চলা। ছোটবেলা থেকে। মা অফিসে যেত, ছোট্ট রজনী একাই স্কুলে যেত-আসত। কিছুদিনের জন্যে ক্রেশ। ক্রেশ ছাড়িয়ে আবার বাড়িতে। কাজের লোকের ভরসা। কচি কচি হাতে জড়িয়ে ধরেছিল মাকে, ‘চিন্তা করো না মা। আমি ভাল হয়ে থাকব। ঘুম না এলে ছবি আঁকব। হোম-ওয়ার্ক করে রাখব। ভাল মেয়ে হয়ে থাকব। একটুও ভাবনা করো না তুমি।’ (Short Story)
ভাল মেয়ে। বাধ্য, শান্ত, সুন্দর। ছোট্ট থেকে মায়ের কষ্ট বোঝে মেয়েটা। বুঝতে চায়। নিজের মনে থাকে, নিজের লেখাপড়া আঁকা নাচ নিয়ে তৈরি নিজের জগতে আনন্দে থাকে। (Short Story)
মাঝেমাঝে তাল কাটে অবশ্য।
স্কুলে, পার্কে, পাড়ায় বন্ধুরা, বন্ধুদের মায়েরা জিজ্ঞেস করে, ‘তোর নাম কী?’ (Short Story)
‘রজনীগন্ধা।’ হাসিমুখে উত্তর দেয় মেয়ে। নিজের নামটা খুব পছন্দ রজনীর। ফুলদানিতে একগোছা রজনীগন্ধা, অমনি সারা ঘর সৌন্দর্যে আলো আলো। সুবাস।
‘রজনীগন্ধা কী? পুরো নাম কী?’
‘রজনীগন্ধা। এটাই পুরো নাম।’
বন্ধুরা খিলখিলিয়ে হাসে। বন্ধুদের মায়েরা মুখ টিপে হাসেন। ‘সারনেম কী? বাবার নাম কী?’
মেয়েটা চুপ করে যায়। বাড়ি ফিরে প্রশ্ন করে, ‘আমার বাবার নাম কী? আমার বাবা কই, মা?’
মা বলেন, ‘আমিই তোর বাবা, আমিই তোর মা’
‘আমার সারনেম নেই কেন মা?’ (Short Story)

‘এখন রজনীগন্ধা-প্রথম-নতুন-
একটি নক্ষত্র শুধু বিকেলের সমস্ত আকাশে;
অন্ধকার ভালো বলে শান্ত পৃথিবীর
আলো নিভে আসে। (Short Story)
অনেক কাজের পরে এইখানে থেমে থাকা ভালো;
রজনীগন্ধার ফুলে মৌমাছির কাছে
কেউ নেই, কিছু নেই, তবু মুখোমুখি
এক আশাতীত ফুল আছে…’ (Short Story)
“দিদা বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই রেগে যেত, ‘জঞ্জাল ফেলে দিয়ে পগারপার হয়েছে। আমার হয়েছে যত জ্বালা। না পারি ফেলতে, না পারি ঘরে তুলতে।”
জীবনানন্দের কবিতা, বুঝলি রজনী? মা আদর করে চুমো দেয় গালে, ‘রজনীগন্ধা একাই একশো। রজনীগন্ধা থাকলে আর কিচ্ছু লাগে না।’
একটু বড় হওয়ার পর মা বলত, ‘চাইলে তোকে আমার সারনেমটা দিতেই পারি। কিন্তু কী দরকার? তুই রজনীগন্ধা হয়ে ওঠ, তোর সৌন্দর্য আর সুগন্ধ তোর পরিচয় হোক।’
‘কিন্তু আমার বাবা নেই কেন? আমার বাবা কী মরে গেছে? সবাই যে জিজ্ঞেস করে। আমি কোথা থেকে এলাম?’ (Short Story)

মা বলেছে, সব মায়েদের মতোই, ‘ইচ্ছে হয়ে ছিলি আমার মনের মাঝে। তারপর এই তো…’ রজনীর হাত নিজের পেটের ওপর রেখেছে, ‘এইখানে ছিলি তুই। হাসপাতালে গেলাম… এই পেটের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলি…’ (Short Story)
নিশ্চিন্ত হয়েছে মেয়েটা। হাসপাতালে থেকেই তো সব বাচ্চারা আসে।
দিদাকে আর মাসিকেও জিজ্ঞেস করেছে, ‘আমার সারনেম নেই কেন? আমার বাবা নেই কেন?’
মাসি বলেছিল, ‘তোর মা জানে।’ (Short Story)
দিদা বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই রেগে যেত, ‘জঞ্জাল ফেলে দিয়ে পগারপার হয়েছে। আমার হয়েছে যত জ্বালা। না পারি ফেলতে, না পারি ঘরে তুলতে।
আরও পড়ুন: গল্প-স্বল্প: স্ট্যাটাস
জঞ্জাল। কাকে জঞ্জাল বলে দিদা? ফেলতে পারে না, ঘরে তুলতেও পারে না… কার কথা বলছে? মায়ের কথা? ওবাড়িতে কোনও বিয়ে, অন্নপ্রাশন, সামাজিক অনুষ্ঠানে যায় না মা। খুব ছোটবেলায় মাসি বা মামা এসে নিয়ে যেত রজনীকে। বড় হওয়ার পর রজনীই যায় না আর। জঞ্জাল বলতে যে রজনীকেই বুঝিয়েছে দিদা, তা বোঝার বয়স হয়ে গিয়েছে। আর মাকে জিজ্ঞেস করত না কিছু।
বন্ধু ছিল না, আত্মীয়স্বজন ছিল না। বইকে বন্ধু করে নিয়েছিল মেয়েটা। মন দিয়ে লেখাপড়া, ভাল রেজাল্ট… উচ্চশিক্ষা… চাকরি। প্রোফেশনাল জীবনে কৃতী হয়েছে নির্বিঘ্নে। মা নিশ্চিন্ত। মেয়েটা সাব্যস্ত হয়েছে, মানুষ হয়েছে। মাকে নিশ্চিন্ত করতে পেরে রজনীও খুশি। (Short Story)
তবে আজকাল মায়ের শরীর নিয়ে একটু ভাবনা হয়। বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মা। প্রায়ই ভুগছে। একলা লড়াই করতে করতে সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ঠিকই করে রেখেছে রজনী, আগামী বছর মায়ের রিটায়ারমেণ্টের পর মাকে নিজের কাছে এনে রাখবে। (Short Story)
“খুব খুশি হয়েছে মা। ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে নির্ঝর, ভিডিও-কলে নির্ঝরকে দেখেছে মা। খুব শিগগির আসবে, নির্ঝরের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিয়েটা দিতে চায় মা।”
একলা চলার কথাই ভেবে রেখেছিল। চাকরি নিয়ে নতুন শহরে এসে ভাল লাগছিল। এখানে কেউ জিজ্ঞেস করে না, ‘তোমার পুরো নাম কী? বাবার নাম কী?’
ধীর শান্ত নদীর মতো বয়ে চলছিল জীবন। কত পথ পেরিয়ে একা একা, পথ চলা নদীর। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, মানুষের ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। রুক্ষ বালিয়াড়ি পেরিয়ে, স্নিগ্ধ শ্যামল বনানীর পথে। চলার পথের বাঁকে এসে পড়ল একটা ঝরনা। উদ্দাম জলপ্রপাত নয়, শান্ত ঝিরিঝিরি জলের ধারা। আপন ছন্দে নেমে এল নদীর কাছে, সমস্ত নীরবতা ভেঙে। চমৎকার তার ধ্বনিমাধুর্য, বর্ণবৈচিত্র্য। (Short Story)
নির্ঝর। সহকর্মী হিসেবে প্রথম আলাপ। প্রথম আলাপেই ভালো-লাগা। ক্রমে সে আলাপন এসে পড়ল ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার গল্পে। নির্ঝর একবারও জিজ্ঞেস করেনি, ‘তোমার সারনেম কী? তোমার পুরো নাম কী?’
উথালপাথাল ভালবাসায় ডুবেছে রজনীর মনও। একসঙ্গে সারাজীবন পথ চলার অঙ্গীকার করেছে। (Short Story)

খুব খুশি হয়েছে মা। ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে নির্ঝর, ভিডিও-কলে নির্ঝরকে দেখেছে মা। খুব শিগগির আসবে, নির্ঝরের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিয়েটা দিতে চায় মা।
নির্ঝরের বাবা-মাও পছন্দ করেছেন রজনীকে। একই শহরে থাকার সুবাদে ওবাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে আলাপ করেছেন ওঁরা। ওবাড়ির মা বলেছেন, ‘এতদিনে একটা কাজের মতো কাজ করেছে আমার ছেলেটা। এইরকমই শান্ত, মিষ্টি একটা মেয়ে চেয়েছিলাম আমি।’
বাবা বলেছেন, ‘ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ।’ (Short Story)
আজ সন্ধ্যেবেলা ওবাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল। খাওয়া-দাওয়া গল্প-আড্ডার মাঝেই নির্ঝরের বাবা বললেন, ‘রজনী, তোমাকে তো আমাদের সকলেরই খুব পছন্দ হয়েছে। এবার তোমার বাবা-মায়ের সম্পর্কেও জানতে চাই। একবার ওঁদের সঙ্গে আমাদের দেখা করাও।’ (Short Story)
“রাতজাগা একটা পাখি ডেকে উঠল। একটু চমকেই উঠেছে রজনী। তারপর মনস্থির করে ফেলল। এবার মায়ের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি কথা বলতে হবে।”
হঠাত্ এ প্রসঙ্গ উঠবে, তৈরি ছিল না রজনী। অল্প হেসে ঘাড় নেড়ে দিয়েছে। তারপর তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে এসেছে। সারা রাস্তা ভাবতে ভাবতে এসেছে, কীভাবে এই প্রশ্নগুলোর হাত থেকে সারা জীবনের জন্য মুক্তি পাওয়া যায়। সেই থেকে ভেবেই চলেছে। নির্ঘুম রাতের আকাশে তারার দিকে তাকিয়ে উত্তর খুঁজে চলেছে। (Short Story)
এখন আর ছোটবেলার মতো এই প্রশ্নগুলোর কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচা যাবে না। নতুন জীবনের বুনিয়াদ কোনও লুকোচাপা, কোনও মিথ্যের ওপর তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। সারা জীবনের জন্যে এই প্রশ্নগুলোর হাত থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। (Short Story)
রাতজাগা একটা পাখি ডেকে উঠল। একটু চমকেই উঠেছে রজনী। তারপর মনস্থির করে ফেলল। এবার মায়ের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি কথা বলতে হবে।
অনেকদিন পর বাড়ি এল এবার। কিন্তু মাকে এমনটা দেখবে আশাই করেনি। এ কী চেহারা হয়েছে মায়ের? হাতের ব্যাগ-বাক্স ফেলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল, ‘কী হয়েছে তোমার? এত শরীর খারাপ, আমাকে জানাওনি কেন?’ (Short Story)
তিন চার মাস ধরে ওজন কমছিল। খিদে নেই। কোনও রোগব্যাধি নেই বলে ডাক্তারের কাছে যেতে চায়নি মা। তারপর শরীরটা দুর্বল হতে লাগল। হাসপাতাল। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। দেখা গেল, কঠিন অসুখ। টাটা মেডিকেলে ট্রিটমেন্ট চলছে। (Short Story)
‘সবকিছু বড্ড তাড়াতাড়িই হয়ে গেল রে। বুঝতেই পারিনি শরীরটা এইভাবে ভেঙে যাবে। তাই তো তাড়াহুড়ো করছি। তোর একটা বিয়ে দিয়ে যেতে পারি যদি…’
অসম্ভব দুর্বল, শীর্ণ ফ্যাকাসে হাত, চোখের চারদিকে কাল গাঢ় ছাপ… কত বছরের ক্লান্তি। আহা মা!
‘তুই হঠাত্ এলি? ওখানে সব ঠিক আছে তো?’
রজনী মায়ের ব্যাকুল চোখের দিকে তাকাল, ‘সব যাতে ঠিক থাকে, তাই এসেছি তোমার কাছে।’ (Short Story)

স্থির স্পষ্ট গলায় তারপর উচ্চারণ করল সেই অমোঘ প্রশ্ন, যা ছোটবেলা থেকে তাড়া করে বেরিয়েছে, ‘জীবনের এই সময় এসেও কী তুমি আমার বাবাকে একবার দেখতে চাও না? আমাকে নাম-ঠিকানা দাও। হয়তো তোমার শরীরের কথা শুনে একবার তোমাকে দেখতে আসবে।’ (Short Story)
মায়ের শ্রান্ত রুগ্ন মুখে হাসি ফুটে উঠল, ‘রজনী, তোর শিকড় আমার শরীরের মধ্যে। তুই আমার শরীর থেকে জন্ম নিয়েছিস। মা আমার, কোনও মিথ্যে ভাবনা অলীক আশার ছলনায় ভুলিস না। জীবনের সত্য হল, সৃষ্টির আনন্দ। কেন কীভাবে এই সৃষ্টি, সেসব প্রশ্ন নিরর্থক। তুই আমার সন্তান, আমার অংশ।’ (Short Story)
‘আমি জানি না। তোর পিতৃপরিচয় জানি না আমি। আমি ধর্ষিতা। চারজন শয়তান আমাকে ধর্ষণ করেছিল। ঘৃণ্য সেই নরকের কীটদের কথা, আমার সেই যন্ত্রণা, অপমানের কথা তোকে জানাতে চাইনি রজনী।’
কাঁপা কাঁপা হাত বুলিয়ে দিলেন মেয়ের মুখে, ‘তুই যে রজনীগন্ধা। বীজ না থাকলেও চলে, গাছের গোড়ার কন্দ, বাল্ব থেকেই জন্ম নেয় যে গাছ। অপরূপ পবিত্র ফুল।’
রজনী অস্থির হয়ে উঠল, ছোটবেলা থেকে এইভাবেই মা এড়িয়ে থেকেছে এ প্রসঙ্গ। উত্তেজিত হয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বলল, ‘না মা। এই ছেলেভোলানো কথা আর বল না। বল আমাকে, কে আমার বাবা? আমি কী অবৈধ সন্তান? বেজন্মা? আমার বাবা আমাকে স্বীকারই করেনি? আমি তোমার বিবাহ-বহির্ভূত সন্তান? নাকি বাবার সঙ্গে তোমার সমস্যা ছিল, যে কারণে বাবা ছেড়ে গেছে তোমায়?’ (Short Story)
তীব্রস্বরে বলতে লাগল, ‘পাসপোর্টে জন্মদাতার নাম উল্লেখ করা জরুরি নয়। বাবার নাম নেই। আধার-কার্ডে বাবার নামের পরিবর্তে “কেয়ার অফ” মা। ভোটার-আইডি কার্ডে বাবার নামের বদলে মায়ের নাম। এমনকি আমার বার্থ সার্টিফিকেটেও বাবার নাম নেই। আমি জেনেছি, বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য একটি হলফনামা দাখিল করেছিলে। কেন মা? কেন?’ (Short Story)
হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল রজনী। মা শুকনো চোখে চেয়ে রইলেন। তারপর খোলা জানলার দিয়ে বাইরে তাকালেন ।
মনে মনে মাতৃশক্তিকে প্রণাম জানাল রজনী। আজ মায়ের জন্যই নিজের আত্মসম্মানের পথ খুঁজে পেয়েছে। রজনীগন্ধা… ‘কেউ নেই, কিছু নেই, তবু মুখোমুখি… এক আশাতীত ফুল আছে…’
‘আমি জানি না। তোর পিতৃপরিচয় জানি না আমি। আমি ধর্ষিতা। চারজন শয়তান আমাকে ধর্ষণ করেছিল। ঘৃণ্য সেই নরকের কীটদের কথা, আমার সেই যন্ত্রণা, অপমানের কথা তোকে জানাতে চাইনি রজনী।’
মা আর বসে থাকতে পারছে না। এত উত্তেজনার ধকল নিতে পারে না মায়ের শরীর। (Short Story)
‘পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হোমে রেখেছিল। আমার মা-বাবা আমাকে মেয়ে বলে পরিচয় দিত না। অনেক বছর পরে, ভাইবোনেরা বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে। হোমের সবাই বলেছিল ভ্রূণ নষ্ট করে দিতে। তোর জন্মের পরও সবাই বলেছিল, তোকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিতে। আমি পারিনি। তোকে পেয়ে, তোকে ধারণ করে, তোকে জন্ম দিয়ে স্বর্গীয় সুবাসে ভরে উঠেছিলাম। তুই যে আমার রজনীগন্ধা। দেবশিশু, আকাশের পরী… আমার বেঁচে থাকার কারণ।’ (Short Story)
প্রশ্নগুলো হাওয়ায় ভেসে ভেসে বেরিয়ে পড়ল ঘর ছেড়ে বারান্দায়। বারান্দা ছেড়ে খোলা আকাশে। কোলের ওপর মায়ের দুর্বল মাথাটা তুলে নিল রজনী।

মা যদি চাইত, রজনীর জন্মের আগেই সব প্রশ্নের মালা মুছে ফেলতে পারত। মা, পৃথিবীর একজন অত্যন্ত সাহসী মানুষ, অবাঞ্ছিত ভ্রূণকে নিয়ে আগামী সব প্রশ্নের মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একাকী এক নারীর লড়াই। (Short Story)
কতখানি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মা সন্তানের জন্ম দিয়েছে, একা একা তাকে পালন করেছে, এমন ভাবে লালন করেছে যে আজ রজনীর নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছে। (Short Story)
‘আমি তোমার মেয়ে। শুধু তোমার মেয়ে।’ দু’হাতে মাকে জড়িয়ে ধরল রজনী। বুকের মধ্যে টলটলে আলো। আত্মদীপো ভব। মন একেবারে শান্ত, স্থির। আর ভাবনা নেই। নির্ঝরের বাবার প্রশ্নের উত্তরে মাথা উঁচু করে বলবে, ‘বাবার পরিচয় জানা নেই। আমার মা আছেন। মা-ই আমার সব।’ (Short Story)
সব জেনে যদি ওঁরা রাজি থাকেন, বিয়ে হবে।
মনে মনে মাতৃশক্তিকে প্রণাম জানাল রজনী। আজ মায়ের জন্যই নিজের আত্মসম্মানের পথ খুঁজে পেয়েছে। রজনীগন্ধা… ‘কেউ নেই, কিছু নেই, তবু মুখোমুখি… এক আশাতীত ফুল আছে…’ (Short Story)
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
আইভি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬৩ সালে ইস্পাতনগরী জামশেদপুরে। সে শহরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ। পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। ব্যাংকে চাকরি করেছেন। নেশা বই পড়া। সর্বভূক পাঠক। দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখির জগতে রয়েছেন। বিভিন্ন নামী পত্রপত্রিকা ও ওয়েবজিনে তাঁর গদ্য প্রকাশিত হয়। বইয়ের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত বারো।
