banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

গল্প: ব্রাত্য

আইভি চট্টোপাধ্যায়

সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

Bengali short story Bratya Cover story
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

‘মিস্টার সার্কুলার ঢুকছেন। এই, কেউ ওঁকে আমার কাছে পাঠাবে না ।‘ প্রিয়া কাগজপত্র ছড়িয়ে বসল । 

‘আমার কাছেও না, আমি রেকর্ডরুম থেকে ঘুরে আসছি ।‘ সঞ্জয় উঠে পড়ল । 

‘আমার কাছে আসবেন না, গতবার আমার নামেই তো কমপ্লেন করেছিলেন। বেঁচে গেছি।‘ চৌধুরীদা গলা নামিয়ে বললেন । 

মৃন্ময় কানে ফোন নিয়ে কাল্পনিক কারও সঙ্গে কথায় ব্যস্ত রইল। বাকিরাও ব্যস্ততার আড়ালে লুকোনো শ্রেয় মনে করছে। এই ভরা কাজের সময় এমন একজন কাস্টমারকে ডিল করা সত্যিই সমস্যা। অফিসসুদ্ধ সবাইকে তটস্থ করে তুলতে ভালোবাসেন ইনি। আর প্রতিবারই একটা কমপ্লেন লিখে দিয়েও যাবেন। এখানে লিখিত দেবেন, তার কপি ইমেইল করে নানা জায়গায় দেবেন। কোনও কাস্টমারসার্ভিসই ওঁর যথেষ্ট মনে হয় না, খুশি বা সন্তুষ্ট হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। 

সবাই কাজ বা অকাজের অজুহাত দিলেও অনিন্দিতার এড়িয়ে থাকার উপায় নেই। হাসিমুখেই সামনের বসার জায়গার দিকে ইশারা করল, ’বলুন।‘

‘আপনাদের অফিসে সবসময় এত ভিড় থাকে কেন? সবাই ব্যস্ত… একটা কাজের কথা শোনার সময় নেই কারও।‘

‘ওই যে আপনি বললেন… ভিড়। সবাই তো কিছু না কিছু কাজ নিয়ে এসেছেন। আপনি বলুন, কী কাজ?’

‘তো? ভিড় হচ্ছে যখন, স্টাফ বাড়ান। আরও দুটো অন্তত কাউন্টার বাড়ান।‘ ভদ্রলোকের গলায় ঝাঁঝ, ‘আমাদের সময়ের তো দাম আছে। কাজের কথা বলার জন্য দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করব নাকি?’

আপনি এসেছেন দু’মিনিটও হয়নি, কথাটা অবশ্য বলল না অনিন্দিতা, ’বলুন।‘

‘বলছি। বলার জন্যেই তো এসেছি। তার আগে আমার কথাটার জবাব দিন। কাউন্টার বাড়াচ্ছেন না কেন?’

পেছনে লম্বা লাইন কাস্টমারদের, একটা দুটো গলা ভেসে এল, ’সেই তো। দুটো কাউন্টার, আর এত ভিড়। হয় নাকি?’

ভদ্রলোক এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। গলার আওয়াজ বেড়ে গেল, ‘বলুন তো, আপনারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেনই বা কেন? এইভাবে হ্যারাস করার কোনও অধিকার আছে এঁদের?’

Image 1

এই ওঁর অভ্যাস। কিংবা স্বভাব। হল্লা করে, চিত্‍কার করে, ছন্দপতন ঘটিয়ে সবাইকে তটস্থ করা। একটু শক্ত গলায় বলল অনিন্দিতা এবার, ’স্টাফ বাড়ানো বা কাউন্টার বাড়ানো আমাদের হাতে নেই।‘

‘কেন নেই? আরবিআই সার্কুলার বলছে…’ নাতিদীর্ঘ ভাষণ এবার জনতাকে লক্ষ করে, ‘আমি দীর্ঘকাল অডিট বিভাগে কাজ করেছি, অমুক অফিসে। ডিজিএম হয়ে রিটায়ার করেছি। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের উচ্চপদস্থ একজন, তাকে যা-খুশি তাই বোঝাতে পারবে না।‘ চেয়ারটা ঘুরিয়ে নিয়েছেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়ের দিকে। 

অনিন্দিতা প্রতিক্রিয়াহীন অপেক্ষায়। এই আপাত উদাসীন নিস্ক্রিয়তা ভিড়ের প্রতিক্রিয়ায় রাশ টানে। দীর্ঘ কাজের জগতের অভিজ্ঞতা শিখিয়েছে। সামনের কম্পিউটার স্ক্রিনে মনোযোগী দৃষ্টি দিয়ে রাখল সে। 

তিন থেকে চার মিনিট। জ্ঞান বিতরণ অসমাপ্ত রেখেই ভদ্রলোক ঘুরে বসেছেন, ‘আচ্ছা, এই যে লকার নিয়ে এগ্রিমেন্ট করার নোটিস পাঠিয়েছেন আপনারা, স্ট্যাম্পপেপার আনতে বলেছেন… কীসের ভিত্তিতে?’

‘এটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইন্সট্রাকশন স্যার।‘ প্রতিটি বাক্য বলার সময় ‘স্যার’ উচ্চারণ এইরকম মানুষদের জন্য জরুরি। 

‘আমাকে দেখান। আমি সেই ইন্সট্রাকশন সার্কুলার দেখতে চাই।‘

‘আপনি তো সবই জানেন স্যার। অমুক অফিসের অত বড় পদ নিয়ে রিটায়ার করেছেন বললেন… এইভাবে সার্কুলার দেখানো…’

‘দাঁড়ান,দাঁড়ান’, হাত তুলে থামিয়ে দিলেন ভদ্রলোক, ’রিটায়ার করে আমি আরবিআই-এর তমুক বিভাগে চিফকনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছি এখনও। আই অ্যাম নট আ রিটায়ার্ড পারসন।‘

‘ওকে স্যার। তাহলে তো আপনি ভালোই জানেন যে আমার অফিসের ইন্সট্রাকশন আপনাকে দেখাতে পারি না আমি।‘ স্থির উচ্চারণ করল অনিন্দিতাও, ‘এখন তো আর-টি-আই করলেই সব জানা যায়।‘

‘সে আমি জানি। আমি করব যা করার। আমি আপনাদের এম-ডি আর চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি। এইভাবে হঠাত্‍ করে আবার এগ্রিমেন্ট চাইতে পারেন না আপনারা।‘

‘ভালোই তো স্যার। এমডি কিংবা চেয়ারম্যান স্যার নিশ্চয়ই আপনার চিঠির উত্তরে সব জানিয়ে দেবেন।’

‘আমি আপনার জানার জন্য বলছি। এই চেয়ারে বসেছেন, আপনার জানা উচিত যে এই স্ট্যাম্প-পেপার আপনারা চাইতে পারেন না। আরবিআই বলছে, স্ট্যাম্প-পেপারের টাকা আপনারা দেবেন। আমরা লকার রেন্ট দিয়ে অলরেডি আপনাদের টাকা দিচ্ছি। দ্বিতীয়ত, এইভাবে এগ্রিমেন্টের তিনদিকে সই করানোর নিয়ম নেই। আরবিআই সেটা বলছে না। আর সমস্ত লকার-হোল্ডারকে এসে সই করতে হবে, এটাও কোথাও লেখা নেই।‘

‘এসে সই করতে হবে না স্যার। আপনি ফর্ম নিয়ে যান, সই করে কেউ একজন এসে জমা দিলেই হবে। বা কারও হাত দিয়ে পাঠালেও চলবে।‘

‘কেন? সেটাই জানতে চাইছি। সব ফর্ম সাইন করে ডকুমেন্ট জমা দিয়ে লকার নিইনি? সেটাই প্রডিউস করুন। নিজেরা খাটবেন না, আমাদের ঘাড় দিয়ে সব করিয়ে নেবেন।’

Image 2

নাহ, ভদ্রলোক এত তাড়াতাড়ি উঠবেন না আজ। এমনিও বাইরে প্রবল বৃষ্টি পড়ছে। মৃন্ময় ইতিমধ্যেই মেসেজ করেছে একটা, ’বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত বসে থাকবেন ইনি। আপনি বরং কাজ দেখিয়ে আমার টেবিলে চলে আসুন।’

খাতায় একটা সই নিতে আসার অছিলায় গুপ্তদাও বলে গেলেন, ‘উঠে ফোন হাতে নিয়ে দরজার দিকে যাও। আমি দোতলায় গিয়ে কল করছি।’

বললেই ওঠা যায়? একের পর এক কাজ নিয়ে কেউ না কেউ আসছেন, কাস্টমার কিংবা অফিস স্টাফ, কম্পিউটারে অ্যাপ্রুভাল কিংবা খাতা বা ভাউচারে সই— ভদ্রলোকের কথার মধ্যেই হাতের কাজ চলছে। উঠে গেলেও তো এসে বসতেই হবে। বিরক্ত লাগছে। কতক্ষণ আর এইসব কথামালা হজম করা যায়? ‘কাস্টমার ইজ কিং’ বলেই সব দায় ঝেড়ে ফেলেছে অফিস। রাজকীয় আদবকায়দা সামলাতে ফ্রন্ট-ডেস্কে বসে ক্রীতদাস-ভাব বজায় রাখতে হবে? ক্রীতদাসের অধিকার থাকতে নেই? 

নাহ, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আজ অন্তত এই লোকটিকে কমপ্লেন করার সুযোগ দেবে না অনিন্দিতা। 

আরও পড়ুন- গল্প: মাতৃত্বের স্বাদ

‘একটা পেন দেবেন?’ আরেকজন এসে দাঁড়িয়েছেন।

‘এই যে’, হাতের কলমটাই বাড়িয়ে দিল অনিন্দিতা, ‘বসুন না, বসে লিখুন।’ ইচ্ছে করেই খেজুরে আলাপ জুড়ল, ‘বাহ আপনার হাতের লেখাটা খুব সুন্দর তো! আজকাল এমন লেখা দেখাই যায় না।’

ভদ্রলোক হাসলেন, ‘হাতে লেখার চল তো উঠেই গেল। সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে।’

‘ডিজিটাল হলে খারাপ কী?’ কথার মাঝেই ফুট কেটেছেন তিনি, ‘কত সুবিধে সেটা বলুন!’

‘আমাদের এই হাতে লেখাই ভালো, ওসব ডিজিটাল ব্যাপার পোষায় না।’

‘কেন পোষায় না?’

অপ্রত্যাশিত আক্রমণে বিপর্যস্ত ভদ্রলোককে রক্ষা করার তাগিদে বলে উঠল অনিন্দিতা, ‘আসলে… বয়স হয়েছে তো! নতুন করে শিখতে একটু…’ বয়সের কথাটা অনেকে পছন্দ করেন না, সামলে নিয়ে বলল, ‘আমি নিজেই তো বুঝতে পারি, বয়স বাড়ছে যে কোনও কাজে একটু সময় লাগে।’

‘আমি তো জোর করেই তাই হাতে লিখি, মাথার কাজ বেশি করি… শরীরটাকে সচল রাখতে হবে তো।’ হেসে কাউন্টারমুখী হলেন ভদ্রলোক।

Image 3

লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন মুখ টিপে হাসছেন এবার। একটু কৌতুকের ইচ্ছে অনিন্দিতারও, ‘আপনার? আপনি রিটায়ার করেছেন জানি… তবে আপনাকে মোটেই সিনিয়রসিটিজেন মনে হয় না স্যার।’ 

‘তবে? জানেন, রীতিমতো প্ল্যান করে নিজেকে ফিট রেখেছি?’

যাক, আরবিআই আর সার্কুলার ছেড়ে একটু বেরোনো গেছে। 

‘শুনুন, এই যে সারাদিন চেয়ারে বসে থাকা… রিটায়ারমেন্টের পর কিন্তু বিপদে পড়বেন। একটা ডেইলি রেজিম দরকার।’

‘মানে ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ জাতীয় কিছু? রোজ হাঁটা…’

‘না না, ওতে কিস্যু হয় না। মাথাটা ব্যস্ত রাখবেন। এই যে আমি… এখনও এই একাত্তর বছর বয়সেও কাজ করছি…’ একটু থামলেন, ‘হ্যাঁ, এগারো বছর আগে রিটায়ার করেছি। দেখুন, মাথার চুলে কলপ লাগাই না। আমার স্কিন দেখুন, চোখ দেখুন, কপাল দেখুন… কোনও ভাঁজ আছে বয়সের?’

‘এগারো বছর আগে? নাহ,সত্যিই বোঝা যায় না।’ পেছনের লাইন থেকে বললেন কেউ।

একবার ঘাড় ঘুরিয়ে হাসলেন ভদ্রলোক, তারপর সামনের দিকে ঝুঁকে এলেন। অন্য কারও শ্রুতিগোচর না হয়, এমন গলা। 

‘আমার গিন্নীর সঙ্গে আমার বয়সের তফাত উনিশ বছর। অথচ উনি প্রায় শয্যাশায়ী। হাজারটা রোগ। লকারফর্ম সাইন করতে আনা অসম্ভব। আর আমাকে দেখুন। বাড়ির কাজ থেকে অফিস, ব্যাঙ্ক থেকে বাজার-দোকান, সব করছি। এতটাই ফিট।’

 

ও, সেইজন্যে ফর্মের সই ইত্যাদি নিয়ম নিয়ে এত তর্ক?

Old man in bank
ভদ্রলোক হাসলেন, ‘হাতে লেখার চল তো উঠেই গেল। সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে।’

সার্ভিস সেক্টরের কাজ, মানুষের ওয়েভলেন্থ ধরে ফেলার দক্ষতা এমনিই তৈরি হয়ে যায়। ভদ্রলোকের দুর্বলতা ওঁর বয়স এবং ফিটনেস। অনিন্দিতা হাসল, ‘সত্যিই, আপনার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।  আর বলুন স্যার, আপনার কাজটা কিন্তু বলেননি এখনও।’

‘একবার আমার লকারে যাব। লকার নম্বরটা…’

নম্বর ভুলে গেছেন, অথচ স্বীকার করতে চাইছেন না বুঝেই অনিন্দিতা বলল, ‘চাবির নম্বরটা বলুন স্যার, আমি বলে দিচ্ছি।’

‘আপনার সঙ্গে নানা কথা বলতে গিয়ে…’ হাসলেন এতক্ষণে, বিব্রত হাসি। ‘এসব আমিই মনে রাখি। গিন্নী তো…’

‘সে তো জানি। আপনি এখুনি লকার নম্বর বলে দেবেন। আমাকে তো অনলাইন অ্যাক্সেস দিতেই হত, তাই চাবির নম্বর চাইলাম।’

 

হঠাত্‍ শান্ত হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। একেবারে অন্যরকম শোনালো গলাটা, ‘আপনি চাইলেন, আমি অপ্রস্তুত না হই? তাই না?’

এই রে! আবার ভুল হয়ে গেল!

‘জানেন, আমি যখন রিটায়ার করি আমার ছেলে ক্লাস ফোর-এ উঠেছে সবে। যাতে ওকে বন্ধুদের কাছে কোনও কমপ্লেক্সে ভুগতে না হয়, আমি দৌড়তে শুরু করেছি। কাজ করেছি, জিম করেছি, নানা অ্যাক্টিভিটি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি। গিন্নীর যেন মনে আক্ষেপ না থাকে, ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স না তৈরি হয়, তাই একজন ইয়ং হাজব্যান্ড যা যা করে তাই করে গেছি।’

‘বুঝলাম না!’ আন্তরিকভাবেই বলল অনিন্দিতা, ‘আপনার রিটায়ারমেন্টের সঙ্গে স্ত্রী বা ছেলের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স তৈরি হবার কী সম্পর্ক?’

Image 5

‘আছে ম্যাডাম।’ বিষণ্ণ হাসলেন, ‘দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক, এই দুনিয়া ঘোরে বন বন, ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়… অবসর জীবন মানেই সমাজে এবং পরিবারে বাতিল মানুষ। বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের সবচেয়ে সম্মানের আসনটি বহাল থাকবে, সেই সামাজিক ঐতিহ্য এখন আর নেই।’

‘সেটা বুঝি। দেখি। বৃদ্ধবয়স মানে প্রায়ই উপেক্ষা আর অবহেলার কত ঘটনা! কিন্তু আপনি তো…’

হাত তুলে থামিয়ে দিলেন, ‘সামাজিক অবস্থান বা মর্যাদা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। অবসর নেবার পর প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই আমি বুঝতে পারি, আমার বাড়িতে ছেলে আর গিন্নীর মধ্যে অস্তিত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে। এমনিতে মানুষ সময় অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে ভাবে আমার সেটা নিয়ে সমস্যা ছিল না। এখনও নেই। টাকার জন্যে আমার কাজ করার দরকার নেই। চাকরি ছাড়াও পৈতৃক সম্পত্তি অনেক….যাক সে কথা।’

তা হলে? আপনার স্ত্রী-ছেলের মধ্যে অস্তিত্বের সংকট কীসের?’ এবার অনিন্দিতার সত্যিই কৌতূহল হচ্ছে একটু।

আমি একদিন খেয়াল করলাম, গিন্নী ছেলের এক বন্ধুর মাকে বলছেন শৌনকের বাবা তো ডিজিএম, তাই খুব ব্যস্ত। যদিও তার অন্তত তিন মাস আগে আমি অবসর নিয়েছি। ছেলে একদিন বলল, আমাকে খেলার মাঠ থেকে আনতে যেও না। অথচ আগে ওর সবচেয়ে বেশি আনন্দ ছিল যে বাবা ক্রিকেটমাঠে ওর খেলা দেখতে যাবে।’

একটু চুপ করে রইলেন, তারপর বললেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, তাই তো! আমিই বা কেন আগের দিনের খবর হিসেবে নিজেকে দেখব? আমি কেন এখনকার খবর হিসেবে থাকতে চাইব না? যখন আমার যোগ্যতা আছে, কনসালটেন্ট হিসেবে এত চাহিদা আছে?’

তা ঠিক। এমনিও অবসর গ্রহণ করলে অনেকের জীবনে বিষণ্ণতা ভর করে। রুটিনমাফিক জীবন থাকে না। থাকে না কোথাও যাওয়ার তাড়া। তাই কাজ আর রুটিনে থেকে জীবনকে উপভোগ করার সিদ্ধান্ত ভালোই। 

Image 4

‘ছেলে এই দু’দিন আগে কলেজে পড়তে গেল। এন্ট্রেন্স পরীক্ষা, কলেজে কলেজে কাউন্সেলিং— সব নির্বিঘ্নে করেছি। এখন শান্তি। এয়ারপোর্টে ছেড়ে এলাম…’

‘এয়ারপোর্ট? কোথায় পড়তে গেল ছেলে? বিদেশে?’

‘ব্যাঙ্গালোর। এখানেও চান্স পেয়েছিল, কিন্তু ওর বন্ধুরা প্রায় সবাই বাইরে যাচ্ছে। তাই…’ অনেকক্ষণ চুপ।

ছেলের জন্য মনখারাপ? যাক, আজ শান্তভাবেই সব মিটল। এবার উনি উঠে লকারে গেলেই উঠে পড়বে অনিন্দিতাও। 

‘এয়ারপোর্টে ঢোকার আগে ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আর বোধহয় তোমার সঙ্গে দেখা হবে না বাবা।’

‘মানে? ছুটিছাটায় বাড়ি এলেই তো দেখা হবে।’

‘আসলে আমার বয়সটার কথা ভেবে বলেছে। একাত্তর। কম তো নয়!’

‘তা কেন? আপনি এত ফিট রেখেছেন নিজেকে। এত অ্যাক্টিভ একজন মানুষ… এমন কথা ভাববে কেন?’ অনিন্দিতা আন্তরিকভাবেই বলল। 

‘মরাল অফ দ্য স্টোরি ইজ, ম্যাডাম’, হাসলেন ভদ্রলোক, ‘যতই নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তোলার জন্যে ছুটে বেড়াই, গলা তুলে নিজেকে জানান দিই, সমাজ আমাকে সেই মর্যাদা দেয় না। পরিবারের জন্যে সব করি, নিজেকে ব্যস্ত দেখানোর জন্য নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে থাকি, কিন্তু নিজের বাড়িতেই আমি একজন বাতিল মানুষ। তারা মনে মনে অ্যাক্সেপ্ট করে নিয়েছে যে এই লোকটা যে কোনোদিন চলে যাবে। এর বয়স হয়ে গেছে। সমাজও তাই জানে। এ লোকটা ব্রাত্য।’

যতই মনকে ভুলিয়ে রাখা হোক, নিজেকে প্রয়োজনীয় করে রাখা যে হয় না। সবাই মনে করিয়ে দেয় সত্যিটা। 

মুখে হাসি, অথচ চোখের কোণ চিকচিক করে উঠেছে। চোখ নামিয়ে লকার অ্যাক্সেস খাতাটায় নম্বর লিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বাইরের প্রবল ধারাপাত এতক্ষণে বৃষ্টি হয়ে নেমে এসেছে অনিন্দিতার বুকের মধ্যে। আহা, একটা ঘনঘোর বৃষ্টি আসুক সমাজের সব ব্রাত্যদের জীবনে।

 

 

 

অলংকরণ: মৃণাল শীল

ছবি সৌজন্য: Free Image source 

আইভি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৬৩ সালে ইস্পাতনগরী জামশেদপুরে। সে শহরের সঙ্গে তাঁর নাড়ির যোগ। পরিবেশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। ব্যাংকে চাকরি করেছেন। নেশা বই পড়া। সর্বভূক পাঠক। দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখির জগতে রয়েছেন। বিভিন্ন নামী পত্রপত্রিকা ও ওয়েবজিনে তাঁর গদ্য প্রকাশিত হয়। বইয়ের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত বারো।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com