Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

একলা সোশ্যাল

ঋতুপর্ণা রায়

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজই হল, আগের দিন ইনস্ট্যাগ্র্যামে যে ছবি দিয়েছিলেন, তা কতজনের ভাল লাগল তা দেখা। রাস্তায় যেতে যেতেও চোখ ফেসবুকে। অফিসে কাজের ফাঁকে টুইটার। বাড়ি ফিরেও কারও সঙ্গে কোনও কথাবার্তা নেই, চোখ সেই মোবাইল স্ক্রিনেই। এমনকী রাতে খেতে বসার আগেও ডিনারের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করে শান্তি নেই। তার উপর সেলফির ঘনঘটা তো আছেই।

রেস্তরাঁয় খেতে গেলেই আজকাল একটা দৃশ্য খুব চোখে পড়ে। প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী হয়তো মুখোমুখি বসে আছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও কথা নেই। দুজনেই ব্যস্ত নিজের নিজের ফোনে। অথচ ফেসবুকে ছবি সহ ক্যাপশন—‘বেস্ট টাইম উইথ বে।’ বেড়াতে গিয়েও চোখের ক্যামেরায় কিচ্ছু ধরা পড়ার আগে তা মোবাইলের রাস্তায় হাজির হয়ে যায় ফেসবুকের পাতায়। লাইক কম পড়লেই হতাশ লাগে, অবসাদ ঘিরে ধরে। চারপাশে ভাললাগার উপাদানগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার আকর্ষণের তুলনায় নেহাতই তুচ্ছ মনে হয়। ব্যক্তিগত পরিসরের সম্পর্কগুলো যেন কেমন ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। চেতলার গৃহবধূর খুন কিংবা আগরায় তরুণের ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করা সবই তো এই বাস্তব জগত থেকে সরে আসার নমুনা। ভাবলেও অবাক লাগে সেদিনের ওই লাইভ সেশন দেখেছিলেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে ছেলেটির অবসাদের মুহূর্তে হয়তো পাওয়া যায়নি একজনকেও। এতটাই কি অসামাজিক হয়ে গেছি আমরা? হয়তো তাই, নয়তো রক্তাক্ত মানুষকে রাস্তায় দেখে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করতে পারি কী করে আমরা? ফলাও করে জানাতে পারি কী করে যে কত ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষ্মী হলাম? সোশ্যাল মিডিয়ার দাসত্ব করা ছাড়া এখন আর আমাদের বোধহয় কিছুই করার নেই।

সত্যি কথা বলতে মানুন বা না মানুন, সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে আছেন সকলেই। মানছি যে জরুরি তথ্য পাওয়ার জন্য, মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া আজকের দিনে জরুরি। কিন্তু তার সঙ্গে এটা মানতেও বাধ্য হচ্ছি যে মানুষের মানসিক স্থিতি কিন্তু ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে আর তার প্রধান কারণ এই সোশ্যাল মিডিয়াই।

সম্প্রতি একটি সায়কায়াট্রিক জার্নালে পড়ছিলাম যে টিনএজাররা যাঁরা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান, তাঁদের মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যাঁরা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় দেন সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রতি দিন, তাঁদের মানসিক অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি অন্যদের চেয়ে! এই সংখ্যাটা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। ন্যাশনাল ইস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স-এর প্রফেসরদের মতে সোশ্যাল মিডিয়া শুধুই বয়ঃসন্ধিদের নয়, বড়দের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সোশ্যাল বন্ধুদের ছবি, সাজানো জীবন দেখে অনেক সময় আমাদের হতাশ লাগে, নিজেদের উপর অসন্তোষ জন্মায়। মনের মধ্যে হীনমন্যতা বোধ তৈরি হয়। এর ফল অসামাজিকতা, একাকীত্ব, মাদকাশক্তি, কর্মক্ষেত্রে খারাপ পারফরমেন্স। ছোটদের মধ্যে নাকি অ্যাটেনশন ডেফিসিটি হাইপারঅ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডারও দেখা যেতে পারে।

সামাজিক মাধ্যম আগে কিন্তু জীবনের অঙ্গ হিসেবে ধরা হত না। বাস্তবের বাইরের একটা জগৎ, সাময়িক বিচরণক্ষেত্রই ছিল মাত্র। কিন্তু ক্রমে সেই সীমারেখাটা যেন অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানছি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া হয়তো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু যখন বাস্তব আর ভার্চুয়ালের গণ্ডি এক হয়ে যাচ্ছে, তখনই দেখা দিচ্ছে হাজার রকমের সমস্যা। মনে হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে যা ঘটছে তাই আসলে বাস্তব। আবার অনেকে বাস্তবকে অস্বীকার করে তাকে ঝাঁ চকচকে মোড়কে মুড়ে পরিবেশন করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফলে তার আকর্ষণ তো অপার। ভাবনাচিন্তা সমস্ত জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা কেমন যেন এর মোহজালে জড়িয়ে পড়ছি। অন্যের সাজানো জীবন দেখে নিজের জীবনের ক্রটি খুঁজছি। আর তাই নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছি, অবসাদে ভুগছি। হিংসাও করছি। ক্রমশ কারওর ভালটাই যেন আর ভাল লাগছে না। শুধুই নিজের জীবন কত সুন্দর তা সকলকে বোঝানোর জন্যে উঠে পড়ে লাগছি। ভরিয়ে দিচ্ছি ফেসবুকের দেওয়াল! কিন্তু বুঝতে পারছি না, যে ক্রমশ আমরা নিজেদের বাস্তবের সমস্ত সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছি। অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি। এ তো সত্যি সামাজিক ক্ষয়, তাই না?

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারিক প্রয়োগটা আসলে আমাদের জানা উচিত। কথায় আছে না নৃত্যরত নটরাজের এক পায়ে সৃষ্টি আর এক পায়ে ধ্বংস। ঠিক সেটাই খাটে সামাজিক মাধ্যমের প্রসঙ্গেও। আর যদি সেটা আমরা না বুঝতে পারি, তা হলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন। তাই ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের সীমাটা বুঝে নিন। কতটা বলবেন আর কতটা শুনবেন তা কিন্তু আপনার হাতে। মানসিক স্থিতি, শান্তির জন্য নিজের সঙ্গে নিজের এই লড়াইটা কিন্তু আপনাকেই করতে হবে!

Picture of ঋতুপর্ণা রায়

ঋতুপর্ণা রায়

Picture of ঋতুপর্ণা রায়

ঋতুপর্ণা রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস