banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

হিন্দি তো (প্রায় ) জাতীয় ভাষাই…

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯

anti hindi aggitation
কার্টুনিস্ট লক্ষ্মণ-এর সেই বিখ্যাত বিতর্কিত কার্টুন
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

বিশ্বাস করুন, আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, অমিত শাহ আহামরি কী এমন বলে ফেলেছেন যে বাঙালি হঠাৎ এমন কাঁইকান্না জুড়ে করে দিলো।

আরে, হিন্দি তো বাস্তবে, ব্যবহারিকে রাষ্ট্রভাষা এবং জাতীয় ভাষাই। সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে, মেনে তো নিয়েইছি, নাকি? নইলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হিন্দিতে করেন কেন? বাংলার প্রায় সমস্ত সাংসদ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোন ভাষায় বক্তৃতা করেন? কেন করেন? অধীর চৌধুরী? মহম্মদ সেলিম? শুনুন, আজকের এই অবিসংবাদী লার্জার-দ্যান-লাইফ নরেন্দ্র মোদীকেও, দক্ষিণ ভারতে নির্বাচনী সভা করতে গেলে, এমনকি ওঁদের ওই হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের স্পষ্ট সমর্থক ভিড়ের সামনেও, কন্নড় বলতে পারেন না বলে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিয়ে, দোভাষী দিয়ে, তবে বক্তৃতা রাখতে হয়। বাংলায় এমন করতে হয় না কেন? কোনও কালে কোনও দলের কোনও নেতাকেই কি করতে হয়েছে? মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দিয়ে শুরু করে কানহাইয়া কুমার অবধি কাউকে কি কখনও ভাবতে হয়েছে যে বাংলার বুকে বক্তৃতা করতে গেলে দোভাষী নিতে হবে? কেন হয়নি? কারণ, বাঙালির মননে, এখানকার জনগণের ধারণায়, বিশ্বাসেও হিন্দি আসলে সর্বভারতীয় ভাষাই। জাতীয় ভাষা বলতে আলাদা করে আর কী বোঝায়, বাঙালির জানা নেই। সেই জন্যেই, অমিত শাহের সেদিনকার বচন পাবলিকের পাতে পড়বার আগের মুহূর্ত অবধি, এমনকি তার পরেও, সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে এত দাপাদাপির পরেও, বাংলা ভাষায় সম্প্রচারিত এক টেলিভিশন চ্যানেলের উপস্থাপিকাকে তো রীতিমতো গলাবাজি পর্যন্ত করতে শোনা গ্যাছে, তিনি যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে তাঁর নিজের পড়াশোনা আর সাধারণ জ্ঞানের প্রকাশ্য পরাকাষ্ঠা হয়ে ফোন-ইনে থাকা ব্যক্তিকে দাবড়াচ্ছিলেন হিন্দি জাতীয় ভাষা বলে, আর, শুধু তো তিনি না, বাংলার অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে তথাকথিত শিক্ষিত অংশেরও অনেকে তো বটেই, এত কাল জানতই না ভারতের আসলে কোনও জাতীয় ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা-ই নেই। যেমন এখনও জানে না, হিন্দুস্তান বলে দুনিয়ায় কোনও সংবিধানস্বীকৃত দেশ নেই আর।

কথা হচ্ছে, বাঙালির শুধু বিশ্বাসে নয়, সংবিধানেও হিন্দি প্রায় তাই-ই। হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। আজ নয়, সত্তর বচ্ছর ধরে। খালি, তকমাটুকুন ছাড়া।

আপনি কি জানেন ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৩ধারা কী? কী লেখা আছে সেখানে? সোজা করে বললে যা দাঁড়ায়, আপাতত ইংরিজির পাশাপাশি, ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের সরকারি বা কেজো ভাষা হচ্ছে দেবনাগরী হরফে লেখা হিন্দি এবং পার্লামেন্ট যদি অন্য রকম কিছু সিদ্ধান্ত না-করে, তা হলে সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পনেরো বচ্ছরের মাথায়, মানে ২৬শে জানুয়ারি ১৯৬৫ থেকে, সরকারি কাজে ইংরিজির ব্যবহার আপনা হতেই বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, হিন্দি-ই একমাত্র কেজো ভাষা হয়ে থাকবে। এই হল আইন। ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ। এই আইন রচিত হচ্ছে কবে? ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯, তৎকালীন কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে। তো, ওই ১৪ই সেপ্টেম্বর-ই হল হিন্দি দিবস। উপমহাদেশের আর সমস্ত ভাষাকে বাদ দিয়ে, অলরেডি প্রতিষ্ঠিত কেজো ভাষা ইংরিজিকে কিছু দিনের জন্যে যেন ছাড় দেওয়ার মতো করে চলতে দিয়ে, আসলে একমাত্র হিন্দি-কেই ভারতীয় ইউনিয়নের সরকারি কাজকর্মের একমাত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার অঙ্গীকার ‘দিবস’। তারই উদযাপনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জনমানসে অলরেডি প্রতিষ্ঠিত, অমিত শাহ ওই বক্তব্যটি রেখেছিলেন। এবং, তার বিরোধিতা করতে গিয়ে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতৃভাষার মূল্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ঠিকই, তবে আগেই সক্কলকে ওই ‘হিন্দি দিবস’-এর শুভেচ্ছা জানিয়ে। মাননীয়া অবশ্য সব তাতেই শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। প্রকৃত লিবারাল। কী ব্যাপার না-ব্যাপার, সে সবের বিশেষ তোয়াক্কা করেন বলে মনে হয় না। আরে, একটা ‘দিবস’ তো রে ভাই, আবার কী!

আপনি কি জানেন সেই ১৯৮৬ থেকেই এই হিন্দি দিবসেই ‘ইন্দিরা গান্ধী রাজভাষা পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে? যাকে মোদী সরকার এসে নাম পাল্টে, মানে এনাদের তো যে করে হোক নেহরু-গান্ধী নাম মোছাটাই বিরাট একটা কাজ, আসল ব্যপারটা একই রেখে খালি ‘রাজভাষা কীর্তি পুরস্কার’ করে দিয়েছেন। আর, ‘রাজীব গান্ধী রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান মৌলিক পুস্তক লেখন পুরস্কার’ বলে আরও কী একটা ছিল, সেটাকেও ‘রাজভাষা গৌরব পুরস্কার’ করেছেন। তো, রাজভাষা হিসেবে হিন্দি তো তা হলে অনেক কাল ধরেই স্বীকৃত, তাই তো দেখা যাচ্ছে, নাকি? এত দিন ঘুমোচ্ছিলেন? সত্তর বচ্ছর আগে  যে দিন সংবিধান সভায় ৩৪৩ধারা রচিত হয়, সেই দিনও সেখানে উপস্থিত ক’জন বাঙালি নেতা এর বিরোধিতা করেছিলেন? ক’জন বাইরে এসে জনগণের দরবারে পেড়েছিলেন কথাটা? ক’টা বাঙালি নেমেছিল রাস্তায়? এমনও তো নয় যে, সে দিন ফেসবুক ছিল না বলে বাঙালির সমস্ত বিপ্লব তখন মুলতুবি রাখা ছিল। ভেবে দেখুন, ওইর’ম উত্তাল উদ্বাস্তু আন্দোলন হয়েছে। তেভাগা হয়েছে। “ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়” বলে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া পার্টির নেতাকর্মীরা এই বাংলাতেও গ্রেফতার হয়েছেন থরে-থরে। পাঁচের দশকে ওইর’ম খাদ্য আন্দোলন হয়েছে। কিউবার নামে কেঁপেছে কলকাতা। ছয়ের দশকে তো, হয়নি এমন কোনও আন্দোলনই নেই বোধহয়। কোথায় কোন সোভিয়েত-চিন আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্ক, তার প্রভাবে পার্টি ভাগ এবং তৎপরবর্তী মারামারি অবধি হয়ে গ্যাছে বাঙালির পাড়ায়-পাড়ায়, তার মদ্দিখানে চারুবাবু আবার আটখানা দলিলও লিখে ফেলেছেন, তাই নিয়ে আবার মারামারি, ভিয়েতনাম-ভিয়েতনাম করে-করে রগ ফুলিয়ে ফেলেছে বাঙালি, সব হয়েছে, খালি ভাষা আন্দোলনটা বাদ। এমনকি, একই সময়ে, ওপার বাংলার বাঙালি ভাষা আন্দোলন করে ফাটিয়ে দিলেও, অসমের বাঙালি শহীদ হয়ে গেলেও, আমাদের এই পেয়ারের পশ্চিমবঙ্গের ‘আন্তর্জাতিক’ ‘বিশ্বমানব’ বাঙালি কোনও দিনই সংবিধানের ৩৪৩ধারা বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নামেনি। নমো-নমো করে কোথাও কিছু কেউ করে থাকলে, জানি না। মোট কথা, দক্ষিণ যে আকারে যে তীব্রতায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, বিশেষ করে তামিলরা, তার কণামাত্র ফুলকিও এখানে দেখা যায়নি। বরং, ওদের ওই দুর্দমনীয় আন্দোলনের চোটেই খেলা খানিকটা পাল্টায়, ইউনিয়ন ঢোঁক গিলতে বাধ্য হয়, ৬৫সাল আসবার আগেই, নেহরু সরকার আগ বাড়িয়ে সরকারি ভাষা আইন ’১৯৬৩ নিয়ে আসে, সেখানে বলা হয়, ইংরিজিটা আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্যে রয়ে গেলো। তাপ্পি।

কিন্তু, কথা হচ্ছে, ইংরিজি-র থেকে-যাওয়াটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? দক্ষিণের হিন্দি-বিদ্বেষ? হিন্দি-কে যে কোনও ভাবে আটকাতে গিয়ে এমনকি বিদেশি একটা ভাষারও পক্ষ নেওয়া? না। কেন নয়, তা বুঝতে গেলে, এই উপমহাদেশের ইতিহাস-ভূগোল সম্পর্কে খানিকটা জ্ঞান থাকা দরকার। শুনুন, পঞ্চাশ সালের ২৬শে জানুয়ারির আগে টানা কয়েকটা শতাব্দীর দিকে যদি ফিরে তাকাই, মুঘল আর ইংরেজ আমলের কথাই যদি ধরি আপাতত, তাহলে দেখতে পাব, রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম, মোটামুটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, দুটো ভাষায় হয়েছে। প্রথমে ফারসি আর পরে ইংরিজি। শাসকরা নিজেদের সুবিধেমতো ভাষা ব্যবহার করেছেন শাসনকার্যে। হ্যাঁ, রাষ্ট্রকাঠামোয় অংশগ্রহণ করতে হলে বা বাইরে দিয়েও তার সঙ্গে কাজ করতে গেলে, নিশ্চয়ই শাসনকাল অনুযায়ী ভাষাগুলো শেখবার দরকারও এখানকার মানুষের পড়েছে। যেহেতু, ফারসি আর ইংরিজি, দুটো ভাষাই উপমহাদেশের বাইরের ভাষা, এগুলো শেখবার এবং কাজে ব্যবহার করবার জন্যে, এ দেশের সমস্ত দিশি ভাষাভাষী মানুষকেই সমান খাটনি করতে হয়েছে, কেউই অতিরিক্ত কোনও সুবিধে পায়নি, এখনকার ইউনিয়নের কোনও পরীক্ষায় হিন্দিভাষী মানুষ যেটা পেয়ে থাকেন। 

এবং, ওই দুটোই বিদেশি ভাষা হওয়ার কারণে, আরও এক অর্থে বোধহয়, শাপে বরই হয়েছিল। গোটা উপমহাদেশের লোকের পক্ষে, ওই দুটোর কোনওটাকেই কখনও, আহা আমার ভাষা বলে, জাতীয় ভাষা বলে, বুকে টেনে নেওয়ার উচাটন হয়নি, ওগুলো শুধুমাত্র কাজের ভাষা হয়েই ছিল। আর, রাষ্ট্রও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিনে তার কাজের ভাষা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেনি। কারণ, জাতিগঠনের দায় তার ছিল না। মুঘল বা বৃটিশ, দু’পক্ষই বাইরে দিয়ে এসছে। একজন এখানকার স্রোতে মিশে গ্যাছে, ফেলে আসা জন্মস্থানে সে কোনও রাজধানী রেখে আসেনি, এ দেশ লুঠ করে সেখানে পুষ্টি যোগানোর দায় তার ছিল না। আরেকজন ঠিক এর বিপরীত। মেকলে-দর্শন ভারতকে আত্মবিস্মৃত হয়ে পশ্চিমমুখী করে তুলবার মতলব করে থাকতে পারে, কিন্তু এক ও অখন্ড ভারতীয়ত্ব প্রতিষ্ঠার কোনও চেষ্টাই সে করেনি, করবার কোনও প্রয়োজনও নেই তার, কারণ তাতেই তার বাঁশ। এই উপমহাদেশ কোনও কালেই এক জাতির আবাসস্থল ছিল না। যেমন ইউরোপ বলে আছে, ঠিক তেমনি ভাবে না-হলেও ভারত বলেও একটা ধারণা একটা ছাতা নিশ্চয়ই ছিল, এক দেশ এক রাষ্ট্রের চেষ্টাও যে হয়নি, তাও না, কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদের জন্মের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এক দেশ এক জাতির গল্প, সলিড একখানাই ভারতীয়ত্বের কল্পনা, কোনও কালে কখনও ছিল বলে, কেউ তেমন চেষ্টা করেছিলেন বলেও শুনিনি। ভারতীয় জাতি বলে অনেক জাতি বোঝাত। ধরুন, তামিল একটি ভারতীয় জাতি। যেমন, মাসাই একটি আফ্রিকান জাতি। কিন্তু, আফ্রিকান বলে একটি জাতি কেউ তো কখনও শোনেনি, তেমনি ভারতীয় বলেও একটা অখন্ড কিছু ছিল না, যেটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা শুরু হলো সাতচল্লিশ থেকে, বা পঞ্চাশ থেকে। নতুন এই কাজটা করতে গিয়েই, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের একখানা জাতীয় ভাষারও প্রয়োজন হলো। এবং, স্বাভাবিক কারণেই এ ক্ষেত্রে একটি দিশি ভাষারই প্রয়োজন পড়লো। দেখবেন, নেশন, স্টেট, কান্ট্রি – জাতি, রাষ্ট্র, দেশ বলে আমাদের এখানে আলাদা আলাদা কোনও ধারণা আর নেই সাধারণ মানুষের মনে। নেই মানে, সেটা তৈরি হতে দেওয়া হয়নি। বা, গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের কাজের ভাষা, রাষ্ট্রভাষা, রাজভাষা, জাতীয় ভাষা। কাছাকাছি অনেকগুলো শব্দের খেলায়। ইচ্ছে করে। বুদ্ধি করে। আইনের নানা রকম কায়দা করেও বোধহয়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার পথ মোলায়েম করতে। সম্পূর্ণ অলীক, সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব কিছু বানাতে গেলে, বাস্তব ধারনাগুলোকে খানিক তো গুলিয়ে দিতেই হয়, না?

উপমহাদেশের সদ্যোজাত দুটো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই জাতি গঠনের খেলাতা আসলে একই ছিল। পাকিস্তান বড্ড চড়া দাগে করতে গেসলো, তাই কেস খেয়েছে, আর, ভারতের প্রথম দিককার রাষ্ট্রনেতারা সম্ভবত খানিক বেশি বুদ্ধিমান ছিলেন, তাঁদের ভূখন্ডটিও বৃহত্তর ও অখন্ডিত ছিল, এবং অনেক বেশি সংখ্যক জাতিসত্ত্বায় কিলবিল করছিল, ফলে তাঁরা খানিক নরম খানিক সূক্ষ তারে সুরটি বেঁধেছিলেন, এই যা। সন্তর্পণে, কেজো ভাষার রূপে হিন্দিকে প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা দেওয়ার চেষ্টা হলো। ওনাদের দিক দিয়ে দেখলে, কৌশল হিসেবে একদম ঠিকই ছিল। কেজো ভাষা করবার চেষ্টাতেই দক্ষিণ যা কাঁইকাঁই শুরু করেছিল, সরাসরি জাতীয় ভাষা করতে গেলে কী হতো, বোঝাই যায়।

এবং, ভারত রাষ্ট্র যে হিন্দিকে শুধুমাত্র ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের কাজের ভাষা করেই থেমে থাকতে চায়নি, তার প্রমাণ চান? ৩৫১ধারা পড়ুন। সেখানে, সংবিধান এই ইউনিয়নকে তার কর্তব্য বাতলে দিচ্ছে, হিন্দিকে ‘প্রোমোট’ করতে হবে। এমন ভাবে করতে হবে, যাতে ইন্ডিয়ার যৌগধর্মী (কম্পোজিট) সংস্কৃতির সমস্ত উপাদানের প্রকাশমাধ্যম হিসেবে হিন্দি কাজ করতে পারে। খেয়াল করুন, এইখানে এসে ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে বৈচিত্র্যপূর্ণ (ডাইভার্স) কথাটা ব্যবহার না-করে, সম্ভবত তাকে আসলে ডাইভার্স দশা থেকে কম্পোজিটে পরিবর্তিত করবার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে স্পষ্ট। হিন্দি তার বাহন। অনুঘটক। প্রতীক। ঝান্ডা। তার তলায় বাকি সক্কলকার সমাগম নিশ্চিত করাই ইউনিয়নের কর্তব্য। শুধু কেজো ভাষা করে রাখবার চেষ্টা মনে হচ্ছে কি?

এখন, কথা হচ্ছে, গত সাত দশক ধরে হিন্দিকে কী কী ভাবে ‘প্রোমোট’ করা হয়েছে, তা বুঝবার জন্যে ধরে-ধরে রাষ্ট্রের সব ক’টা উদ্যোগকে খুঁজে বের করে বিস্তারে আলোচনা করতে গেলে সত্তর পাতা লিখতে হবে। তার বিশেষ প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয় না। এমনকি, মতলব ধরে ফেলবার জন্যে, এত সংবিধান ঘাঁটবারও দরকার নেই। ফলাফল দেখুন। তাহলেই সহজ হয়ে যাবে খেলার স্ট্যাটেজি। জান্তে-অজান্তে নিজেদের ঘরে নিজেরা আমরা ঠিক কতটা পাল্টে গেছি, সেটুকু খেয়াল করলেই যথেষ্ট। আমরা কে কতখানি হিন্দিভাষী হয়ে গেছি, কতটা হিন্দুস্তানি হয়ে উঠেছি, আরে, বিশ বচ্ছর আগেকার প্রজন্ম অবধিও হিন্দিভাষী লোকেদের দিকে আঙুল তুলে বলতো, ওরা হিন্দুস্তানি, এখন আমরা নিজেদেরকেই হিন্দুস্তানি বলছি। মিলেমিশে গেছি। দুপক্ষের সমান মর্যাদায়, সমান গুরুত্বে না। ওদের শর্তে, ওদের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছি ক্রমশ। আরও হতে চাইছি। কারণ, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আমাকে অতি সন্তর্পণে ওদিকেই নিয়ে যেতে চেয়েছে আর আমিও সে খেলা ধরতে পারিনি, এত বচ্ছর ধরে।

অমিত শাহ-রা ভান করছেন না, নিজেদের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, প্রকাশ্যে কলার তুলে উদ্দেশ্য ও পন্থা ব্যক্ত করছেন। তকমাহীন ভাবে আসলে যা ছিলই, যা করবার প্রক্রিয়া চলছিল ধীরে, এনারা ‘বীর’-এর বংশ, এঁরা ঘ্যাচাং করে এক কোপে তা করে ফেলতে চাইছেন সরাসরি। কোনও ন্যাকামো নেই। নওটংকি নেই। নেই বলে কি, নেহরুভিয়ান কনসেনশাসের উদার ভদ্র মুখোশের ছুপা রুস্তমি খেলায় অভ্যস্ত বাঙালির, শুধু সেইটুকখানির জন্যেই,  হঠাৎ এত ধাক্কা লাগছে? নইলে, আহামরি নতুন তো কিছু না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com