দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে ভারত মহাসাগরের ব্যাপ্তি পার করে রাবণের লঙ্কাপুরীতে প্রবেশ করতে আর বেশি দেরি নেই। জানালার ধারের সিটটায় বসে জার্মান তরুণটি অনেকক্ষণ ধরে ঊঁকিঝুঁকি মেরে নীচের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছে। তার মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছে একের পর এক ল্যান্ডস্কেপ। পাশে মাঝের সিটটা আমার। একটু ঝিমুনি এসেছিল। এখন ঘাড় বাড়িয়ে আমিও দেখতে পেলাম সেই মনোরম শোভা। এদিক ওদিক ছড়িয়ে থাকা আমাদের দলের বাকি পাঁচ সদস্যের দিকে তাকালাম। সকলেই জানালায় প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। সাগরের নীলিমার বেষ্টনীতে আবদ্ধ এক টুকরো সবুজ, শ্রীলঙ্কা।
ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার যোগাযোগ বহু প্রাচীন। একসময় দাক্ষিণাত্যের অংশ এই দ্বীপটিতে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে বাংলার বিজয়সিংহের পদার্পণ ও তার বিজয় বাঙালির কাছে রীতিমতো গর্বের বিষয়। সিংহ থেকে সিংহল নামকরণ, এমনই মনে করা হয়। আবার খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র আর কন্যা সঙ্ঘমিত্রা সিংহলে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে মহাকাব্যে স্বর্ণলঙ্কার উপস্থিতি তো ভারতীয় মননে গেঁথেই আছে।
বন্দরনায়েক এয়ারপোর্টে বিমানের দ্রুত অবতরণ। চেন্নাই থেকে এক ঘণ্টার ছোট্ট সফর। বেলা একটা নাগাদ আমাদের বিমান শ্রীলঙ্কার মাটি ছুঁল। ভারতীয় সময়ের সঙ্গে এদেশের সময়ের কোনও পার্থক্য নেই। তাই ঘড়ির কাঁটা আগুপিছু করারও প্রয়োজন নেই। ভারতীয়দের জন্য ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’-এর সুবিধা থাকলেও, লম্বা লাইন আর ভিড় এড়াতে আগেভাগে ঝুটঝামেলাহীন অনলাইন ভিসা করাই ছিল।

নিয়মকানুনের পাট চুকিয়ে, মালপত্তর নিয়ে এবার বহির্গমনের পথে। বিমানবন্দর চত্বরের মধ্যেই পরপর অনেকগুলো ‘মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার’। ২০১৯ সালের মার্চ মাস। সে সময়ে এক ‘শ্রীলঙ্কান রুপি’ (এল.কে.আর. নামে পরিচিত) সমান ভারতীয় মুদ্রায় উনচল্লিশ পয়সা। সঙ্গে থাকা বেশিরভাগ ডলার শ্রীলঙ্কান রুপিতে ভাঙিয়ে নিলাম। এক কোণে চেয়ার টেবিল পেতে বসে আছেন এক ভদ্রমহিলা। তার পিছনে একটা সুন্দর ছবিওয়ালা ফ্লেক্স। তাতে লেখা আছে ‘শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম’। সেখান থেকে কিছু বেড়ানোর টুকিটাকি কাগজপত্র আর ম্যাপ সংগ্রহ করে এয়ারপোর্ট চত্বর থেকে বেরিয়ে এলাম।
এবার গাড়ি খোঁজার পালা। এ দেশে আসার ঠিক দুদিন আগে গুগল ঘেঁটে একটা গাড়ির বন্দোবস্ত হয়েছে, কোনও অগ্রিম ছাড়াই। সাহান মাদুশাঙ্কা, শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে আমাদের সারথি কাম গাইড। এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি নিয়ে তার অপেক্ষা করার কথা। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ছবি দেখে জনসমুদ্রের মাঝে তাকে খোঁজার চেষ্টা করে চলেছি। ফোন নম্বর থাকলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।। মুঠোফোন পরিষেবা আপাতত বন্ধ। লোকাল সিম জোগাড় না করা পর্যন্ত সেটা নিষ্ক্রিয়।
আরও পড়ুন: সৌমেন চট্টোপাধ্যায়ের কলমে: হিমালয়ের অন্দর বিহারে
কোথায় খুঁজব তাকে? তবে কি সে এলো না? স্থানীয় কারোর থেকে ফোন চেয়ে তাকে ফোন করব? এইসব আগ্ডুম-বাগ্ডুম ভাবছি যখন, স্বয়ং সে হাজির। আলাপ-পরিচয়ের পর জিজ্ঞেস করলাম, “আমাদের চিনলে কি করে?” হাসতে হাসতে সে উত্তর দিল, “বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, ভারতীয় মুখ খুঁজে নিতে বিশেষ একটা অসুবিধা হয় না।” বন্দরনায়েক এয়ারপোর্টের খুব কাছাকাছি পশ্চিম উপকূলরেখার ছোট্ট বিন্দু, নেগোম্বো শহর। ওখানেই প্রথম রাতের বিশ্রাম। উন্নত রাস্তাঘাট, পরিচ্ছন্ন ছিমছাম। কেরালার কোচি শহরের সঙ্গে বেশ মিল। গাড়ি চালাতে চালাতে সাহান শহরের এটা-ওটা চিনিয়ে দিচ্ছে। ঝরঝরে হিন্দি বলে সে। কোথা থেকে শিখলে জানতে চাওয়ায় বলল, “এ হল বছর দুই মুম্বই আর বছর পাঁচেক দুবাইয়ে কাজ করার সুফল।”
আমাদের দেশের মতোই রাস্তার দুপাশে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের বড় বড় হোর্ডিং। পড়ে বোঝার উপায় নেই, সিংহলি ভাষায় লেখা। বাড়িঘর, দোকানপাটের ফাঁক দিয়ে যে নীল জলরাশি মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে, তা এ শহরের বিখ্যাত লেগুন। ছোট ছোট নদী আর ডাচ আমলের খালের জলে পুষ্ট। মৎস্যজীবী অধ্যুষিত অঞ্চল। হ্যামিলটন ক্যানেল পার হওয়ার সময় দেখতে পেলাম লাইন দিয়ে ভেসে আছে মাছ ধরার ছোট ছোট বোট।
শহর জুড়েই ঔপনিবেশিক দখলদারির ছাপ সুস্পষ্ট। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে জাফনার তামিল রাজাদের কাছ থেকে পর্তুগিজরা এই অঞ্চলটির শাসনভার ছিনিয়ে নেয়। এর প্রধান কারণ দারুচিনি উৎপাদন ও রপ্তানি। ১৬৪০ সালে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে ওলন্দাজেরা দখল নেয় এই শহরের। এরপর ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশের দখলে আসে এই শহর। ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পর্যন্ত তারাই ছিল শাসক। সুতরাং, এদেশের বেশিরভাগ মানুষ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও নেগোম্বোতে ৭০% মানুষই খ্রিস্টান। ওলন্দাজদের তৈরি বেশ কিছু চার্চও আছে।

এয়ারপোর্ট থেকে ১২ কিলোমিটার আসতে মোটে আধঘণ্টা সময় লাগল। রোসারি রোডটা বড় রাস্তায় এসে মিশেছে। এ পাড়ায় কয়েকঘর লোকের বাস। আর আছে কিছু অমুক হোটেল, তমুক রেস্তোরাঁ। রাস্তা থেকে সরুপানা গলি বেলাভূমিতে এসে বিলীন হয়েছে। সেই কোণায়, ডান হাতে, ঘুপচি এক হোমস্টে। রংচটা সাইনবোর্ডে গা এলিয়ে থাকা মৎস্যকন্যার ছবির পাশে লেখা আছে ‘ক্রিসেন্ট বিচ হাউস’, এ শহরে আজ রাতে আমাদের মাথা গোঁজার আস্তানা। বাঁদিকে জাঁদরেল সাতমহল্লা হোটেল আর ডানদিকে সয়াসসের গন্ধে ভরপুর চিনা রেস্তোরাঁ। তারই মাঝে, অল্প একটু জায়গা নিয়ে কোনওমতে নিজের অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রেখেছে এই হোমস্টে। জীর্ণতার অহংকারকে বাঁচিয়ে রেখে, সোনালি বেলাভূমিতে নীল সাগরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকাই যেন তার আভিজাত্য।
ঘুপচি বলে যতই খাটো করি না কেন, ঘরদোর কিন্তু পরিপাটি করে গোছানো। উঠোনের দরজাটা খুলে ঝুরো বালিতে পা চুবিয়ে মেরেকেটে পঞ্চাশ ফুট হাঁটলেই তো পায়ের পাতা ভিজিয়ে দেবে সফেদ ঢেউ। হাঁটতে ইচ্ছা না করলে, জানালার পাশে বসলেই মন ভিজিয়ে দেবে নীল জলরাশির আস্ফালনের দৃশ্য।

অতিথিদের দেখভালের দায়িত্বে আছে কুমারী। বাড়ির বড় মেয়ে। বছর পঁচিশ বয়স…দশাননের দেশে দশভূজা। শ্যামলা, গোলগাল চেহারা। পরনে সাদা টপ আর হাঁটুর নীচ পর্যন্ত লম্বা ঝুলের সাদা স্কার্ট। সর্বক্ষণ মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগেই আছে। ইংরেজিটা ভালো বোঝে না। হোঁচট খেলেই দোভাষীর ভুমিকা পালন করতে ভাইকে ডেকে আনে। বড্ড ব্যস্ত… ঘরদোর পরিষ্কার করছে। অতিথিদের পায়ে পায়ে আসা বালি বারান্দায় ছড়ালেই, পরমুহুর্তে সাফ করতে নেমে পড়ছে। অবেলায় পৌঁছে দুপুর তিনটের সময় তাকে খাবার বানাতে বলাটা বেশ অত্যাচার করা হয়ে যাবে। তাই আশপাশের রেস্তোরাঁর খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম।
রাস্তা পেরিয়ে কয়েক পা হেঁটেই পেয়েও গেলাম। নামেই রেস্তোরাঁ… লম্বা এক ফালি বারান্দায় চারটে টেবিল পেতে ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা। রাস্তার দিকে পর্দা টেনে আব্রু রক্ষার প্রচেষ্টা। শ্রীলঙ্কান ফিশ থালি অর্ডার করে বসে আছি। প্রায় আধঘণ্টা কেটে গেছে। রান্নাঘর থেকে কারিপাতা, শুকনোলঙ্কা ফোড়নের ঝাঁঝ ভেসে আসছে। বড়ই ক্ষুধার্ত, আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। অবশেষে পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বড় বড় বাটিতে এক এক করে এসে হাজির হল ডাল, পাঁপড়ভাজা, স্যালাড, আলুর সবজি, চিংড়ি–টুনার মিক্সড কারি আর লেটুস পাতায় সাজানো প্লেটভর্তি ভাত। ডাল-ভাত আর মাছের নাম শুনে মোটেও উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই যে, বেশ একটা দেশি দেশি ব্যাপার আছে। ডাল, তরকারি, মাছের ঝোল এক্কেবারে চেনা স্বাদের বাইরে। লঙ্কাপুরীর হেঁসেলের ফ্লেভার। তবু ওই মাছের ঝোলের সঙ্গে আমাদের দক্ষিণ ভারতের মালাবার ফিশ কারির কিছুটা হলেও সাদৃশ্য আছে।

অপরিচিত রান্নাগুলির সঙ্গে প্রথম পরিচয়েই বেশ একটা নতুন কিছু পাওয়ার স্বাদ, যার মধ্যে ভালোলাগা–মন্দলাগা দুইই আছে । আরও কিছু বাকি ছিল। মিনিট পাঁচেক পর যে আইটেমটি পরিবেশন করা হলো, সেটি নারকেল কোরা দিয়ে তৈরি টক-ঝাল একপ্রকার চাট জাতীয় খাদ্য। নাম জিজ্ঞেস করতে বললো, ‘পোল সম্বল’। শ্রীলঙ্কার ম্যাপের বাইরে যারা থাকেন, তাদের কাছে সে আবার কোকোনাট সম্বল নামে পরিচিত। রঙ দেখে ঝাল আগেই আন্দাজ করতে পেরেছি। তারই তীব্র উপস্থিতিতে দু’চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম সদ্য পরিচিত এই সুখাদ্যটি। যে দেশের নামেই লঙ্কার উপস্থিতি, আহারে তো ঝালের বাহার থাকবেই।
প্রণালিটা পরে জেনেছিলাম কুমারীর কাছে, ওর রান্নাঘরে। প্রথমে গোটা জিরে, গোটা শুকনোলঙ্কা, কারিপাতা, কয়েক কোয়া রসুন গরম চাটুতে সেঁকে নিয়ে লোহার হামানদিস্তায় পিষে নিল। তারপর নারকেল কোরার সঙ্গে সেই থেঁতো মশলা, কাঁচা পেঁয়াজকুচি, লাল লঙ্কাগুঁড়ো, নুন, চিনি, আর পাতিলেবুর রস মিশিয়ে হাত দিয়ে মাখতে থাকল। ব্যাস্! পোলসম্বল তৈরি। ননভেজ পোল সম্বলে আবার একটা বিশেষ উপকরণ লাগে… মালদিভ ফিশ অর্থাৎ টুনা মাছের শুঁটকি। সেও বাকি মশলার সঙ্গে পিষ্ট হয়ে নারকেলের সঙ্গে মিশে যায়। আসলে পোলসম্বলের ভূমিকা অনেকটা তবলার মতো। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার… সবার সঙ্গেই সঙ্গত করে চলেছে। ভাত–তরকারির ছায়াসঙ্গীও বলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের কলমে: শ্রীলঙ্কার খাওয়াদাওয়া
অবেলায় খাওয়া। ঘরে না ফিরে সমুদ্রের ধার ঘেঁসে অলস পদচারণা। অনেকক্ষণ ধরেই ছেলের দল একটা জটলা পাকিয়েছে। পাবলিক জটলা, না ঢুকলে চলে? বালিতে একটা বড় গর্তও খুঁড়ে ফেলেছে ওরা। চড়ায় আটকে আছে কোনও মৃত সামুদ্রিক প্রাণী, ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে এসেছে। ওদের ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বুঝলাম যে, ওটা নীল তিমির শাবক। ছেলেগুলো ওটাকে বালি চাপা দিয়ে কবর দিয়ে দিল। তারপর সেখানে একখানা লাঠি পুঁতে দিল। ভাগ্যিস নীল তিমির জাত-ধম্মো নেই, নাহলে শ্মশান না কবরস্থান তা নিয়ে হয়তো একচোট মারামারি হয়ে যেত।
ওদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে এগিয়ে চললাম। এদিকটা বাড়িঘর বিশেষ নেই। বেশ ফাঁকা ফাঁকা। হাতে গোনা কিছু পর্যটক। বাতাসে আঁশটে গন্ধ। কয়েকটা মাছ ধরার নৌকো বালির বুকে গেঁথে আছে। অনেকটা এলাকা জুড়ে বালির ওপর প্লাস্টিক বিছিয়ে বেশ কয়েকটা বড় গোলাকার সামুদ্রিক মাছ শুকোচ্ছে। এগুলো শুঁটকি! দেখে তো মনে হচ্ছে গাছের ছাল!

সূর্য আজকের মতো বিদায় জানানোর তোড়জোড় শুরু করেছে।পশ্চিম আকাশে রঙের খেলা। স্থানীয় এক ব্যাক্তি হাঁটু জলে নেমে ছিপি আটকানো ফাঁকা কোল্ড ড্রিংকের বোতলের গায়ে সুতো পেঁচিয়ে বেঁধে অদ্ভুত কায়দায় মাছ ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতোটাকে আঙুলে পেঁচিয়ে ধরে অগ্রভাগকে ছুঁড়ে দিচ্ছে জলে। ঢেউয়ের মাথায় উঠে বোতলটা নাচছে। যদিও ঢেউয়ের দাপট এখন বেশ কমজোরি। তবুও ফিরতি পথে বোতলটাকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফাতনার জায়গায় প্লাস্টিকের বোতল! বেশ ইন্টারেস্টিং! সমুদ্রতট ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা দূর চলে এসেছি। দিনের আলোও ফুরিয়েছে। মাছ ধরার ডিঙিগুলো এক এক করে পাড়ে ভিড়ছে। নতুন দেশের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা আগেই সবেমাত্র পরিচয়। তাই সাঁঝবেলায় এই নির্জনতা কতটা নিরাপদ, জানি না। পা চালিয়ে ফিরে চললাম ঘরে।
কুমারীর যত্ন-আত্তির কোনও ত্রুটি নেই। উঠোনে কয়েকটা ডেকচেয়ার পেতে দিয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের খবরদারিতে বসন্ত ম্লান হয়ে গিয়েছিল। মার্চের শুরুতে যে এমন গরম হতে পারে, কোনও ধারণা ছিল না। সারাদিন প্যাচপ্যাচে ঘাম। এখন ফাগুন হাওয়ার পরশে শরীর-মন জুড়িয়ে গেল। তারাভরা আকাশের নীচে জমাটবাঁধা সন্ধ্যা। সাগরপারে কুচকুচে কালো অন্ধকার থেকে ভেসে আসছে ঢেউয়ের তর্জন গর্জন। রাত বেশি নয়, সবেমাত্র সাড়ে আটটা। রাস্তাঘাট শুনশান। নতুন দেশে প্রথম দিনের অবসান। রাত পোহালেই নেগোম্বোকে বিদায় জানিয়ে দ্বিতীয় দিনের যাত্রা শুরু হবে এক নির্জন সৈকত কালপিটিয়ার পথে। (চলবে)
*সব ছবি লেখকের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালিখির সঙ্গে যুক্ত। ভ্রমণ, আনন্দবাজার ই-পেপার, ভ্রমী পত্রিকার নিয়মিত লেখক। এছাড়া যারা-যাযাবর, তথ্যকেন্দ্র, লেটস্-গো, আজকাল, প্রতিদিন, গণশক্তি প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত। ট্র্যাভেল রাইটার্স ফোরাম ইন্ডিয়ার সদস্য। প্রধান শখ ও নেশা বেড়ানো আর ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফি।
5 Responses
খুব ভালো লাগলো। আমরাও যেন শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসৈকতে পৌঁছে গিয়েছি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Daarun lekha, ektu porle r o porte ichchha ko re. Porer porber opekkhay roilam.
Awesome description. Ak kathai onobaddya. Khub valo laglo.
শ্রেয়সীর এই লেখাটা বেশ সুন্দর গতিতে মসৃন ভাবে গল্প বলছে। আমরাও ঘুরছি, অনুভব করছি, আসা রাখছি রসনায় তৃপ্ত হবে তখন পরবর্তী কালে দেখা হবে।
আশা পড়তে হবে।