শাম্বকে চেয়ারেই বসতে বলেছিল অমৃতা। কিন্তু ওর কথা না শুনে শাম্ব এসে বসে পড়ল খাটে আর নিজের নতুন নাটকটা থেকে চাপা গলায় পড়তে শুরু করল। নাটকে তো কোনও দৃশ্যের বর্ণনা থাকে না মাঝখানে, সংলাপ থেকে সংলাপে দৌড়ে বেড়ায় আখ্যান। আর এক-একটা সংলাপ এক-একরকম রঙ ছড়ায়। সেই রঙ দর্শকের চোখে একরকম, শ্রোতার চোখে অন্যরকম। আর শাম্বর কথামতো অমৃতা যেহেতু প্রথম শ্রোতা এই নাটকের, ওর সত্যিই মনে হচ্ছিল যে একেবারে নতুন একটা সূর্যোদয় দেখছে ও।
সেই সূর্যের আলোয় কখনও যাপনের অজস্র গ্লানি ধুয়ে যাচ্ছিল, কখনও বা নতুন আলোর ছটায় ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল চোখ। এবার চোখ ধাঁধিয়ে গেলে যা হয়, এক-দু ফোঁটা জলও গড়িয়ে পড়ে কখনও সখনও। অমৃতার চোখ থেকেও সেই জল গড়িয়ে পড়ল। কিন্তু গাল বেয়ে নামার সময়ই শাম্ব তা তুলে নিল নিজের তর্জনী দিয়ে। তারপর নিজের জিভে ঠেকাল সেই চোখের জল। অমৃতার কান্না।
চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ফ্রিজের বাইরে রাখলে আইসক্রিম যে রকম গলে যায়, সেভাবেই গলে যেতে শুরু করল অমৃতা। ঘটনাটা চোখের সামনে ঘটতে দেখেও, ও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওর চোখের জল বিছানা কিংবা মেঝেয় পড়তে দিল না কে? সেই ছেলেটা, যাকে ও অপমান করেছিল আরও চারজনের সামনে? যাকে এমনকী, ‘মুখে পাউডার মাখা ক্লাউন’ বলতেও দ্বিধা করেনি? আজ সেই কিনা…
– কাঁদবে না, আমার সামনে তুমি একদম কাঁদবে না।
শাম্ব পাণ্ডুলিপি থেকে চোখ তুলে তাকাল। অমৃতা সেই দৃষ্টির সামনে হারিয়ে ফেলল সমস্ত প্রতিরোধ। ওর ভিতরে একের পর এক ঘর ভেঙে পড়তে লাগল। খালি মনে হতে থাকল, কীভাবে প্রথম আলাপের সেই সময়টা ওকে আত্মহত্যা থেকে সরিয়ে এনেছিল শাম্ব।
তখন অবিনের সঙ্গে ব্রেক-আপ’টা মেনে নিতে না পেরে, দিন নেই, রাত নেই মরে যাওয়ার কথা ভাবছে অমৃতা। খাটের নীচে বেগন-স্প্রেটা দেখলে নিজের অজান্তেই এগিয়ে যাচ্ছে দু’পা, তারপর আবার পিছিয়ে আসছে দু’পা। মায়ের কথা, বাবার কথা ভেবে। সেই সময় একদিন, হোস্টেলে ওর রুমমেট শ্রীলেখার চাপে শাম্বদের দলের নাটক দেখতে যায় অমৃতা। কী যে ছাইভস্ম হচ্ছিল স্টেজের উপর একটুও মাথায় ঢোকেনি, সারাক্ষণ মাথায় ঘুরছিল অবিনের সেই কথা, “বাসবীকে আমি ছাড়তে পারব না, তারপরও যদি থাকতে পারিস, তাহলে থাক।”
মাথার ভিতরে অ্যাটম বোমার মতো ফেটে পড়েছিল কথাটা। কেন থাকবে অমৃতা? ও কি নিজের জীবনটা বাঁটোয়ারা করার জন্য জন্মেছে? সেই মুহূর্তেই অবিনকে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া যা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিঘাত তার থেকে আলাদা। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে একটা সম্পর্ক শুরুর সময়ে যারা ঘোর আপত্তি করে, সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেলে তারাই বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যে জ্যাঠতুতো দাদার স্কুটারের পিছনে ওকে একদিন দেখতে পেয়ে অবিন তুলকালাম করেছিল, দাদাকে প্রেমিক ঠাওরে, সেই দাদাও চিন্তিত হয়ে পড়ল, লোকে কী ভাববে ভেবে। যেন লোকের ভাবাভাবি অমৃতার জীবনের চাইতে বেশি মূল্যবান।
-পুরুষমানুষের দোষ থাকেই। সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে আনলে চলে না। জেঠিমা ওকে নিজের ঘরে ডেকে বলল একদিন।
মফসসলের একান্নবর্তী বাড়িতে মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে কথা বলার অধিকার সকলের। কাকা-জ্যাঠা-পিসি-মামা প্রত্যেকে যেন শেয়ারহোল্ডার আর অমৃতা একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। সহ্য করতে করতে মরে যেতে ইচ্ছে করত অমৃতার। আর মরে যেতে ইচ্ছে করত বলেই বাড়ি থেকে দূরে সরে থাকতে চাইত। সেই সুযোগটুকু পেত না, যদি মা নিজের হাতের বালাজোড়া লুকিয়ে বিক্রি করে ওকে বিএড-এ ভর্তি হবার ব্যবস্থা করে না-দিত। হোস্টেলের ওই নোনা ধরা ঘরটা আরও একটা মেয়ের সঙ্গে ভাগ করে নেবার সময় অমৃতার মনে হয়েছিল মুক্তি পেল ও। ভালবেসেও যার সঙ্গে থাকতে পারেনি, তার সঙ্গে কেন থাকতে পারেনি, অহরহ সেই কৈফিয়ত দেওয়া থেকে।
অমৃতা একটা যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো এগিয়ে যেত, সাড়া দিত আর নিজের অজান্তে পুতুল থেকে রক্তমাংসের ঈশ্বরী হয়ে উঠত। একবার। বারবার।
সিনেমা দেখার খরচ অনেক। সবসময় সেই খরচ যোগাড় করা সম্ভব হত না। তাই বিনেপয়সায় নাটক দেখতে যাবার অফার পেয়ে, না করেনি অমৃতা। শ্রীলেখার মাসতুতো দাদার গ্রুপ ওটা, টিকিট কাটার বালাই নেই। আসল কারণটা অবশ্যই ছিল সবকিছু ভুলে থাকা, কয়েকঘণ্টার জন্য। কিন্তু দগদগে স্মৃতি এমনই একটা জিনিস, যে ভুলতে চাইলে আরও বেশি করে চেপে ধরে। তার চেয়ে তাকে খালি মাঠ দেওয়াই ভাল।
গনগনে উনুনের আঁচ যেমন তাপ ছড়াবেই, মনের ভিতরকার যন্ত্রণা তেমনই মুখে ফুটে উঠবেই। নাটকের শেষে যখন শ্রীলেখার জোরাজুরিতে গ্রিনরুমে গেল অমৃতা, তখন ওর মুখ দেখেই হয়তো বা বোঝা যাচ্ছিল কিছু। নইলে শাম্ব কেন ওর আর শ্রীলেখার সামনে এসে ইশারায় জানতে চাইবে, নাটকটা খারাপ লেগেছে কি না?
– শাম্বদা হচ্ছে বিতানদার অ্যাসিস্ট্যান্ট। শ্রীলেখা বলল। কথাটা কানে যেতেই বিতান এগিয়ে এল।
– ওসব বলিস না। শাম্ব আমার পথের আলো। চাইলে, গুগল ম্যাপও বলতে পারিস। ও না লিখলে একটা নাটকও নামাতে পারতাম না আমরা।
শ্রীলেখা কথাটা শুনেই হো হো করে হেসে উঠে শাম্বর দিকে তাকিয়ে চোখ মারল। শাম্বর তাতে কোনও হেলদোল হল না। সে অমৃতার চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল, ‘সত্যি করে বলুন না, আপনার নাটকটা ভাল লাগেনি, তাই না?’
– ভাল লাগবে না কেন? চোখ সরিয়ে নিল অমৃতা।
– প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন চাইনি। উত্তর চেয়েছিলাম।
না, উত্তর দিতে পারেনি অমৃতা। তখনই পারেনি। মাসখানেক বাদে একটা সস্তার ক্যাফেতে বসে বলেছিল, যার জীবন জুড়ে উত্তরের হাওয়া, তার কাছে কি অত রেডিমেড উত্তর থাকে?
– কথা আপনিও তো ভালই বলেন। তা রেডিমেড না থাকুক, সময় দিলে তৈরি হবে না?
– সময় বলবে। মাথা নিচু করে কাপে চুমুক দিয়েছিল অমৃতা।
ততদিনে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে আর সময় মুখে কিছু না বললেও, ইশারায় অনেক রাস্তা দেখাতে শুরু করেছে। সেই রাস্তা ধরে দশ পা এগোলেই কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ফুলে ছয়লাপ গোটা পৃথিবী। অমৃতার আবারও ইচ্ছে করছে সেই ফুল হাত বাড়িয়ে ধরতে, নাকের কাছে এনে গন্ধ নিতে, মুখে-চোখে বোলাতে, কিন্তু ফুলের ভিতরে যদি সাপ থাকে? আবারও যদি সে ছোবল দেয়? উফফ মাগো!
শাম্ব পাণ্ডুলিপি থেকে চোখ তুলে তাকাল। অমৃতা সেই দৃষ্টির সামনে হারিয়ে ফেলল সমস্ত প্রতিরোধ। ওর ভিতরে একের পর এক ঘর ভেঙে পড়তে লাগল। খালি মনে হতে থাকল, কীভাবে প্রথম আলাপের সেই সময়টা ওকে আত্মহত্যা থেকে সরিয়ে এনেছিল শাম্ব।
– তোমার অপমান, তোমার চলে যাওয়া মনে রাখিনি, কাছে থাকার মুহুর্তগুলো আকঁড়েই বেঁচে আছি। অমৃতার আরও একটু কাছে এগিয়ে এল শাম্ব।
অমৃতার কান্নাটা গলা ফুঁড়ে বেরোতে চাইল কিন্তু নিজেকে প্রাণপণে সামলে নিয়ে বলল, ‘অত অত যন্ত্রণা পাওয়ার পরও আবার কীভাবে ভালবেসে ফেললাম তার কোনও জবাব আমার কাছে ছিল না। আর ছিল না বলেই তোমার ওই অবহেলা মানতে পারিনি আমি। মনে হচ্ছিল যে তুমি যেন ভাবছ, আমার কোনও ইচ্ছার কোনও দাম নেই। স্বাধীনভাবে কিচ্ছু করার অধিকার নেই। সব তুমি যেমন চাইবে, তেমন হবে। আমি যেন তোমার নাটকের একটা চরিত্র, যে কেবল সেই কথাগুলোই বলতে পারে, যা তুমি তার মুখে বসিয়ে দেবে।’
-আমি কি তোমার মুখে শুধু সংলাপই দিয়েছি?
-না তো, চকলেটও দিয়েছ। একবার সেই জার্মানি না বেলজিয়ামের কোন চকলেট খাইয়েছিলে, জিভে লেগে আছে এখনও।
– শুধু চকলেটের স্বাদই লেগে আছে? আর কিছুর নয়? শাম্ব নিজের ডানহাতটা অমৃতার খোঁপায় রেখে ওর মুখটা নিজের দিকে টানল।
মফসসলের একান্নবর্তী বাড়িতে মেয়ের জীবনযাপন নিয়ে কথা বলার অধিকার সকলের। কাকা-জ্যাঠা-পিসি-মামা প্রত্যেকে যেন শেয়ারহোল্ডার আর অমৃতা একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। সহ্য করতে করতে মরে যেতে ইচ্ছে করত অমৃতার।
ঠিক এভাবেই টানত। ভিকটোরিয়ায়, ময়দানে, সিনেমাহলে। আর অমৃতা একটা যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো এগিয়ে যেত, সাড়া দিত আর নিজের অজান্তে পুতুল থেকে রক্তমাংসের ঈশ্বরী হয়ে উঠত। একবার। বারবার।
আবারও সেই টানটায় কক্ষচ্যুত হল অমৃতা। ওর ঠোঁটদুটো খুলে গেল যেভাবে ঘোড়ায় চড়া রাজপুত্রের সামনে খুলে যায় রাজকুমারীর মহলের দরজা। শাম্বর দুটো ঠোঁট আস্তে আস্তে নিজের ভিতরে নিয়ে নিল অমৃতার দুটো ঠোঁট। তবলা আর ড্রামস যেভাবে মিশে যায় আওয়াজে, সবুজ আর হলুদ আবির মিশে যায় রঙে, মেঘ আর রোদ মিশে যায় আকাশে, সেভাবেই একটা চুম্বনে মিশে গেল দুটো নিশ্বাস।
ঠিক তখনই হাওয়ায় সামান্য ফাঁক হয়ে যাওয়া দরজার ওপাশে শাশুড়িকে দেখতে পেল অমৃতা। তাঁর বিস্ফারিত দুটো চোখে চোখ পড়তেই অমৃতার মনে হল, এখনই ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে। চিরতরে।
***
শাম্বকে ও বিয়েই করবে ভেবেছিল। কিন্তু বিয়ে করতে গেলে একটা ঘর চাই। স্থায়ী রোজগার চাই, প্রতিমাসে। হ্যাঁ, সেই সংসারে অমৃতাও কন্ট্রিবিউট করত। ও তো এম এ পাস করে এমনি এমনি বিএড করছিল না, একটা না একটা স্কুলে চাকরি পেতই। আগে কিংবা পরে। কিন্তু শাম্ব যে ভাবতে লাগল, যেভাবেই হোক অমৃতাই চালিয়ে দেবে সংসার, এটা ওর ভাল লাগছিল না একদম। পুরুষমানুষ যদি দায়িত্ব না নেয় তাহলে সে কেমনধারা পুরুষ?
– আমি যতটা পুরুষ, ততখানিই নারী। কারণ শিল্পী সাহিত্যিক মাত্রেই অর্ধনারীশ্বর। নারীসত্তা আর পুরুষসত্তা সমানভাবে কাজ করে তার মধ্যে।
– কিন্তু বিয়ে করলে তো অনেকটা ভার ঘাড়ে কাঁধে নিতে হয় মশাই। হাওয়ায় ভর দিয়ে আর যাই হোক সংসার হয় না।
– আমি উড়ব। আর আমাকে ওড়াবে তুমি। তুমিই হবে আমার ডানার নীচে হাওয়া, আমার মাথার নীচে বালিশ। আমি উড়তে উড়তে তোমারই কথা ভাবব, ঘুমোতে ঘুমোতে তোমারই স্বপ্ন দেখব।
সেদিনই অমৃতাকে বিদেশি চকলেট খাইয়েছিল শাম্ব। ওর কোন অনুরাগী নাকি দিয়ে গেছে। মাঝেমাঝে এদিক-ওদিক থেকে আশ্চর্য সব আমদানি হত ওর। যারা দিত তারা সব শাম্বর প্রতিভায় মোহিত, এমনটাই বলত ও।
– তা তোমার এত অনুরাগী, এত এত ভক্তর ভিতরে এমন কেউ নেই যে তোমাকে একটা চাকরি দিতে পারে? অমৃতার মুখের ভিতর চকলেট ততক্ষণে তেতো হতে শুরু করেছে।
– তারা কেউ চায় না আমি দশটা-পাঁচটার চাকরি করি, খাঁচায় বন্দি হয়ে থাকি।
– তাহলে কী চায়, তুমি রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াও?
– চায় যে আমি সৃষ্টি করি। এমন সব সৃষ্টি যা বৃষ্টির ভিতরেও আগুন ধরিয়ে দেবে, ক্যাকটাসেও গোলাপ ফোটাবে…
– কেবল আমার জীবনটা গুছিয়ে মরুভূমি করে দেবে।
– তুমি কেন যে এরকম ভাব, আমি সত্যিই বুঝতে পারি না। এই দ্যাখো, তোমার জন্য পরশুর সেই খবরের কাগজটা নিয়ে এসেছি।
– কী আছে ওতে?
– ভুলে গেছ? তোমাকে বলেছিলাম না, আমার নাটকের রিভিউ বেরিয়েছে? দশ নম্বর পেজটা খুলে দ্যাখো, কত প্রশংসা করেছে আমার। আর শুধু আমার সংলাপ কিংবা বিষয়ের নয়, আমার অভিনয়ের ব্যাপারে কত এনকারেজিং কথা লিখেছে, পড় একবার।
অমৃতা কাগজটা হাতে নিয়ে প্রথম পাতাটা দেখে জিজ্ঞেস করল, কোত্থেকে বেরোয় এটা?
– বেরয় মফসসল থেকে, কিন্তু কলকাতার কিছু পকেটেও ভাল রিচ কাগজটার। তাছাড়া এখন ফেসবুকের দৌলতে ছোট-বড় সব খবরই সবার কাছে পৌঁছে যায়। একজন আপলোড করেছে, কত লাইক পড়েছে জানো? একশো তিয়াত্তর অলরেডি।
– আচ্ছা এই একশো তিয়াত্তরটা লাইক যারা দিয়েছে তাদের কাছে গিয়ে যদি দাঁড়াও তুমি, প্রত্যেকে দু’টাকা করে দেবে তোমায়? একশো তিয়াত্তর ইন্টু দুই, তিনশো ছেচল্লিশ টাকা উঠবে?
– কী সব আবোল তাবোল বকছ তুমি? আমি কারও সামনে দাঁড়িয়ে টাকা চাইতেই বা যাব কেন? এরকম খেলো কথা আশা করিনি তোমার থেকে।
– তাহলে কী বলি তোমায় বল তো? হে প্রিয়তম, তুমি যদি আমায় গাছতলায় নিয়ে গিয়ে রাখ, সেখানেই থাকব আমি; যদি ভাত না জোটে তাহলে পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকব। কিন্তু কখনও বলব না, তুমি শিল্পসৃষ্টি বাদ দিয়ে এক কিলো চাল নিয়ে এস।
-তুমি ভুলে যাচ্ছ অমৃতা, আমি কেন্দ্রীয় সরকারের একটা স্কলারশিপ পাই।
-হ্যাঁ জানি। মাসে আটহাজার টাকা। কী হয় তাতে?
– তাতে যদি না হয় তো কী করব, রিকশা চালাব না স্টেশনে গিয়ে কুলিগিরি করব?
– দুটোর একটাও করতে বলিনি। যদি আমার মতো সাধারণ মানুষ হতে তাহলে বলতাম, ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোয় জব ভ্যাকেন্সি দেখে অ্যাপ্লাই করবে, ইস্ত্রি করা শার্ট-প্যান্ট পরে ইন্টারভিউ দিতে যাবে। কিন্তু তুমি অসাধারণ সেটা মেনে নিয়েই বলছি, স্টুডিওতে যাও, ফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখ, সিরিয়ালে অভিনয় কর, যে কাজগুলো তোমায় দিয়ে হয় সেগুলো করার চেষ্টা কর।
– ওতে ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হয়ে যায়। ওইসব ছাইপাঁশ কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়ালে একটাও কালজয়ী নাটক লিখতে পারব না আমি। আমি পিন্টার হতে চাই, টেনেসি উইলিয়ামস হতে চাই, বাদল সরকার হতে চাই সোনা। তুমি কেন বোঝ না?
কথাগুলো বলতে বলতে অমৃতা আর নিজের মধ্যে দূরত্বটা কমিয়ে নিত শাম্ব। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে খানিকটা জোর থাকত। কিন্তু সেই জোরটাকে জোর বলে মনে হত না, মনে হত সম্মোহন। মনে হত সেই বাঁশি, যা শুনে শহরের সব ইঁদুরগুলো একদিন বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়, আর ফিরতে পারেনি।
মাসে দু’লাখ যার ইনকাম তার মান খারাপ বলবে কে? এবার অমৃতাকে যদি তার পছন্দ হয় তাহলে মুম্বই চলে যেতে হবে। বেশ তো, যাবে। কলকাতা কোন স্বর্গসুখ দিয়েছে ওকে যে এখানেই পচে মরতে হবে?
কিন্তু অমৃতাকে ফিরতে হত। হোস্টেলে। সপ্তাহান্তে না হলেও, পনেরোদিনে বাড়ি যেতে হত একবার। সেখানে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর টুকটাক ব্যবসা করে সংসারটাকে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করা বাবাকে দেখে, চোখের অসুবিধে সত্ত্বেও রাতে পাঁচ-সাতটা বাচ্চাকে টিউশন পড়ানো মাকে দেখে, অমৃতা বুঝতে পারত যে-কোনও ভালবাসার মানেই আসলে যাকে ভালবাসছি তার জন্য কষ্ট স্বীকার করা। পাশের মানুষটার মুখে একচিলতে হাসি দেখার একটা দুর্মর বাসনায় অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা।
শাম্বর সেই ভালবাসা অমৃতার জন্য নেই। আছে নাটকের জন্য, মঞ্চের সেই আলোটার জন্য, যা মুখে পড়লে মানুষ অন্যরকম হয়ে ওঠে। চারপাশের হ্যারিকেনের ভিতর হ্যালোজেন হয়ে ওঠে কিংবা অনেক অনেক কুঁড়েঘরের ভিতরে একটা পাকাবাড়ি। কিন্তু কী লাভ বাড়িতে, যদি না তার ঘরে আশ্রয় মেলে?
মেয়েদের হোস্টেলের ওই ড্যাম্প ঘরটা থেকে শ্রীলেখা যেদিন চলে গেল, বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বলে, সেদিন রাতটা প্রায় ঘুমোতেই পারল না অমৃতা। এপাশ ওপাশ করতে করতে অবশেষে যখন চোখটা জড়িয়ে এল, একটা ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্ন নেমে এল চোখে। সেই স্বপ্নে, ‘রোল ক্যামেরা, অ্যাকশন’ বলছিল একটা অস্পষ্ট লোক। কিন্তু আওয়াজটা হওয়ামাত্র যে লোকটা ডায়ালগ বলে উঠছিল, সে, আর কেউ নয়, শাম্ব।
পরদিন সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভেঙেছিল অমৃতার। আর ভাঙতেই দেখেছিল যে ওর নাইটি ভিজে জবজবে হয়ে আছে ঘামে। চা খেয়ে, তাড়াতাড়ি স্নান করে বেরিয়ে পড়েছিল। জীবনে কখনও যেখানে যায়নি, টালিগঞ্জের সেই ইন্দ্রপুরী স্টুডিও আর সেখান থেকে একটা রিকশা করে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে গিয়ে শ্যুটিং চলতে থাকা সিরিয়ালের সেটের বাইরে বসে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞেস করে দু’জায়গায় জমা করে এসছিল শাম্বর ছবি। শাম্ব যে কত ভাল একজন অভিনেতা সে কথা সংক্ষেপে জানিয়ে অনুরোধ করে এসেছিল, যুতসই রোল থাকলে ডাক দেওয়ার।
অমৃতার টাকাতেই নিজের এই প্রোফাইল বানিয়েছিল শাম্ব। কিন্তু এমনই আলস্য ওর, সেটা আনতেও যায়নি। যে ক্যামেরাম্যান কাজটা করেছিল, অমৃতাই তার সঙ্গে দেখা করে, ছবিগুলো নিয়ে আসে। শাম্বকে দিতে গেলে বলেছিল যে ওর আপাতত দরকার নেই, যখন দরকার হবে, চেয়ে নেবে তখন। সেই দরকার যে কোনওদিনই হবে না, বেশ বুঝতে পারছিল অমৃতা। আর পারছিল বলেই সেদিন ও নিজেই একটা হেস্তনেস্ত করবে বলে স্টুডিওপাড়ায় চলে গিয়েছিল। যাওয়া এবং আসার সময় ভাবছিল যে যখন বিনা চেষ্টায় একটা-দুটো রোল উড়ে আসবে শাম্বর দিকে, তখন লোকটা প্রথমে অবাক, আর পরে প্রেমে পাগল হয়ে উঠবে।
কিন্তু প্রেম-ফ্রেম দূরস্থান, শাম্ব রীতিমতো চোটপাট করতে শুরু করল অমৃতার উপর, পরদিন দেখা হতেই।
-আরে আমি অন্যায়টা কী করেছি, সেটা একবার বলবে তো।
-কী অন্যায় করেছ, সেটা তুমি বুঝতে পারছ না? তুফানদা আমায় ফোন করেছিল। ও আমার অভিনয়ের একজন ফ্যান। লেখারও।
-তাহলে চান্স দিক তোমাকে।
– চান্স, চান্স। এটা কি ক্যাবারে নাচের আসর নাকি, যে গেলাম আর চান্স পেয়ে গেলাম?
-ঠিক আছে, দিতেই হবে, এমন কিছু তো আমি বলিনি। যদি দরকার হয়, তাহলে ডাকবে। আমরা ফোর্সড অ্যাপ্লিকেশন দিই না স্কুলে?
-সেটা তুমি নিজে গিয়ে দাও।
-মোটেই না। আমার বাবা, বেশ কয়েকবার আমার হয়ে…
-চুপ কর তো। স্কুল আর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এক নয়। তুমি ওখানে যাওয়ার ফলে সবাই ভাববে যে আমি নিজের জোরে কিছু করতে পারছি না বলে, তোমায় পাঠিয়েছি।
– জাস্ট একটা ছবি দিয়ে এসেছি বলে, ওরকম ভাবতে পারে না কেউ।
-অলরেডি ভাবছে। তুফানদা আমায় বলল। ছি,ছি, তুমি এত উন্মত্ত হয়ে গেছ যে আমার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলে?
রাগে অভিমানে মাথা খারাপ হয়ে গেল অমৃতার। ও হাত বাড়িয়ে শাম্বর কলারটা ধরে বলল, আমি কার জন্য উন্মত্ত হয়েছি শাম্ব? কার জন্য?
শাম্ব শার্ট থেকে ওর হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল আর দিতে গিয়ে শার্টের একটা বোতাম ছিটকে পড়ে গেল কোথায়। মসৃণ ঘাসের মতো ওর বুকের দু’পাশে দুটো রাস্তা উন্মোচিত হল। কিন্তু সেই দুটো রাস্তার একটাও অমৃতার জন্য নয়। ওর হৃদয়ে যদি সত্যি প্রেম থাকত অমৃতার জন্য, তাহলে এত খারাপ কথা বলতে পারত না। মানুষ তো মাকড়সা নয় যে জালের ভিতরেই বন্দি থাকবে আজীবন। তাকে তো চেয়ে দেখতে হবে, মুহূর্ত কী চাইছে।
-নিজের সেটলমেন্টের জন্য উন্মত্ত হয়েছ। তাতে আমার সর্বনাশ হল কিনা, তাই নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই তোমার। এত স্বার্থপর তুমি?
-আমি স্বার্থপর? তুমি বলতে পারলে কথাটা?
-একশোবার পারলাম। ইন্ডাস্ট্রির লোক তো শুধু ওইটুকু বলেই থেমে যাবে না। গসিপ শুরু হবে যে আমি ইনফ্লুয়েনশিয়াল কারও কাছে ভেট পাঠিয়েছি তোমায়, বিনিময়ে কিছু পাব বলে।
-যদি হয়ও, তাতে বদনাম কার হবে? আমারই তো? লোকে তো আমাকে দেখিয়েই বলবে যে এই মেয়েটা শুতে এসেছিল। বলুক, কিচ্ছু আসে যায় না আমার তাতে। আমার নামে রটনা হয়ে যদি তুমি কাজ পাও, আমি তাতেই খুশি শাম্ব। অমৃতার গলাটা ধরে এল।
-তোমার বদনাম হবে কেন? কে চেনে তোমায়? ক্ষতি যা হবার আমার হবে। কেন গেলে অমৃতা, আমাকে কিছু না জানিয়ে আগ বাড়িয়ে কেন গেলে?
-ভুল হয়ে গেছে। আর কখনও যাব না কোথাও। তোমার কাছেও আসব না।
-এস না। তোমার দিকে তাকালেই মাথায় আগুন জ্বলছে আমার।
-আগুন নিভিয়ে ফেল। আমি সরে যাচ্ছি তোমার সামনে থেকে।
অমৃতা যখন শাম্বর পাশ থেকে সরে গিয়ে মেট্রো স্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনও ওর মন বলছিল যে পিছন পিছন হেঁটে আসবে শাম্ব। নিদেনপক্ষে একটা ডাক দেবে। কিন্তু মেট্রোর সিঁড়িতে পা রাখার আগে যখন ঘুরে তাকাল, তখন শাম্ব কথা বলছে মোবাইলে।
ওর ঠোঁটে সিগারেট জ্বলছে, স্মৃতি নয়।
***
সেদিন রাতে হোস্টেলে রাঁধুনি ছিল না বলে মিল পাওয়া যাবে না জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হোস্টেলের ফাইফরমাশ খাটত দারোয়ানের মেয়ে বিউটি। তাকে পয়সা দিয়ে বাইরে থেকে রুটি আর তড়কা আনিয়ে নিয়েছিল অমৃতা। বুক ভেঙে দেওয়া বেদনার ভিতরেও খিদে পায় বলে, খাবারে না করেনি। পুরো মাথাটা কেমন দুপুরের ময়দানের মতো শূন্য লাগছিল। একেবারে ফাঁকা। তার ভিতরে রুটি মোড়ানো কাগজটা খুলে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হাসি পেল হঠাৎ।
পাত্র-পাত্রী বিজ্ঞাপনের একটা পাতা। কে জানে কতদিন আগের। কিন্তু যে পাতাটা সামনে, সেখানে স্যুট পরা একটা লোকের ছবি বেশ উজ্জ্বল। মুখটা ভোঁতা হলেও চেহারা বলিষ্ঠ, সেটা হাফ-বাস্ট ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। বাবা, মাসে প্রায় দু’লাখ টাকা মাইনে পায় লোকটা। মুম্বইতে পোস্টেড। আবার লিখেছে যে কোনও দাবি নেই। কিন্তু সত্যিকারের দাবিটা একদম শেষ লাইনে। ‘অপূর্ব সুন্দরী ছাড়া যোগাযোগ নিষ্প্রয়োজন।’ আচ্ছা অমৃতাকে তো যে দেখে সেই বলে, ‘কী সুন্দর, কী মিষ্টি!’ কিন্তু ও কি অপূর্ব সুন্দরী? আদর করতে করতে অবিন এক-আধদিন বলত বটে, কিন্তু শাম্ব তো আঁতেল। সে আদরের ফাঁকে ফাঁকে কবিতা বা নাটকের সংলাপ বলা পছন্দ করত। ভাবখানা এমন যেন ওইসব বুকনি শুনেই অমৃতা ছুটে এসেছে ওর কাছে, আর থেকেও যাবে সারাজীবন।
শাম্ব শার্ট থেকে ওর হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল আর দিতে গিয়ে শার্টের একটা বোতাম ছিটকে পড়ে গেল কোথায়। মসৃণ ঘাসের মতো ওর বুকের দু’পাশে দুটো রাস্তা উন্মোচিত হল। কিন্তু সেই দুটো রাস্তার একটাও অমৃতার জন্য নয়।
ইশ! কেন গিয়েছিল অমৃতা সম্পর্কটায়! সময় নষ্ট, জীবন নষ্ট। যে যার মূল্য বোঝে না, তাকে তার মূল্য বোঝানোর হাজারও চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। হয়েওছে। তার চেয়ে লোকে যেভাবে চাকরির পরীক্ষা দেয়, সেইভাবে এই ‘অপূর্ব সৌন্দর্য’-এর পরীক্ষা দিয়েই দেখা যাক না একবার। মেয়েমানুষ যখন সামগ্রিই, সে একটা কাজে কোথাও ছুটে গেলেও যখন শুয়ে কিছু পেতে বা পাইয়ে দিতে এসেছে বলে ধরে নেয় সমাজ, তখন সত্যি সত্যি ‘মাল’ হিসেবে নিজের কত দাম একবার পরখ করে নিতে চায় অমৃতা।
বিজ্ঞাপনে দুটো ফোন নম্বর দেওয়া। একটা এতই অস্পষ্ট যে বোঝার উপায় নেই। দ্বিতীয়টা মোটামুটি বোঝা গেলেও একটা সংখ্যা একটু আবছা। কেমন যেন জেদ চেপে গিয়েছিল অমৃতার। কত কত সম্বন্ধ এসেছে ক্লাস ইলেভেন থেকে, সব ফিরিয়ে দিয়েছে কান্নাকাটি করে। অবিনের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর মা বলেছিল, “আমাদেরও দেখতে দিলি না, নিজেও ভুলভাল বাছলি।” শাম্বর কথা তাই বাড়িতে বলেইনি অমৃতা। ভেবেছিল পরিণতি পাওয়ার জায়গায় যাক, একেবারে রেজিস্ট্রি করে কিংবা অন্তত নোটিস দিয়ে তারপর জানাবে। নইলে পাত্র কোনও চাকরি করে না বলে বাড়ির লোক যদি আপত্তি করে? কিন্তু এখন যখন পাত্রেরই এত অসুবিধে ওকে নিয়ে, তখন চুলোয় যাক সব প্রেম, অমৃতা দাঁড়িপাল্লায় উঠতে চায়, নিজের ওজন বোঝার জন্য। আর দাঁড়িপাল্লাতেই যখন উঠবে তখন বাটখারার কোয়ালিটি একটু বুঝে নেবে না?
মাসে দু’লাখ যার ইনকাম তার মান খারাপ বলবে কে? এবার অমৃতাকে যদি তার পছন্দ হয় তাহলে মুম্বই চলে যেতে হবে। বেশ তো, যাবে। কলকাতা কোন স্বর্গসুখ দিয়েছে ওকে যে এখানেই পচে মরতে হবে? যা থাকে কপালে ভেবে, অমৃতা ডায়াল করল নম্বরটা। এনগেজড এল। মিনিট পাঁচেক পরে দ্বিতীয়বার ডায়াল করতেই বাজতে শুরু করল মোবাইলটা।
আট-ন’টা রিংয়ের পর ওপাশ থেকে নরম গলার কোনও মহিলাকণ্ঠ বলে উঠল, ‘হ্যালো, নমস্কার। কে বলছেন?’
-কাগজে আপনাদের বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করছিলাম। আপনারা কি অপূর্ব সুন্দরী পেয়ে গেছেন?
-ওটা বলার জন্য বলা। ভদ্রমহিলা মৃদু গলায় বললেন।
– ‘বলার জন্য বলা’ মানে? সুন্দরী না হলেও বিয়ে দেবেন?
– আপনি মেয়ের কে বলছেন?
– আমি মেয়ে নিজেই বলছি।
– মেয়ে নিজে? তোমার বাবা-মা?
– ওরা ধান ভানতে শিবের গীত গাইবে, তাই আমিই ফোন করেছি।
ফোনের ওপাশে ভদ্রমহিলা হেসে ফেললেন।
অমৃতার মনের মধ্যে তখন হাজার ঢেউ ভাঙছে আর গড়ছে। ভদ্রমহিলার হাসির মধ্যেই ও বলে উঠল, ‘পছন্দ-অপছন্দ আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু একবার অন্তত আমায় দেখে তো যান।’
আগামী পর্বে সমাপ্য
পেশায় শিক্ষক | মূলত কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণা | পেয়েছেন কৃত্তিবাস ও বাংলা আকাদেমি শক্তি চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার | ‘নেহাত গরিব নেহাত ছোটো’, ‘দাঁড়াচ্ছি দরজার বাইরে’, ‘যতটুকু মেনে নিতে পারো’, ‘পতাকা নয় দিগন্ত’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি |