চারকোনা
ভাঙা বাড়ি শুয়ে আছে। একদিন এখানেই যুদ্ধ হত, ভালোবাসা ছিল। আর ছিল ভয়। সব কিছু মনে পড়ে না। এই বিস্মরণ আর কতোদিন বলো? প্রাচীন গ্রন্থগুলি নিরুত্তর। এই লেখার খাতা, ওই ইউজঅ্যান্ডথ্রো কলমগুলি, ছাতে কিছু ফুলের টব ছিল। কোনো অশরীরী কি ছিল না গৃহকোণে? স্তব্ধ, মলিন? কেউ কোনোদিন কথা বলেনি তার সাথে। দেওয়ালে ঝুলন্ত ফোটোগ্রাফগুলিও চেনা যায় না। কয়েকটি টিকটিকি ওইখানে নির্ভয়ে বাসা বেঁধেছে। কিন্ত তারা জানে না এই কুটির আর পূর্বের মতো নিরাপদ নয়।
থাকা
যাঁরা জগতের খুঁত বা সীমাবদ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন তাঁদের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়া বেঁচে নেই আজ। শুধু পাখি উড়ে গেছে মূর্ত নির্জন হারমোনিয়ামে। আমার বাড়িতে কোনো ফুলগাছ নেই। এই অভাবের দিকেই ঝুঁকে আছে গান ও মাধবীলতার কশাহত ডাল। বিশ্বাস করো, কিছুই চাইনি আমি। কেবল নিরন্তর হেঁটে চলা। কোথাও পৌঁছানোর কোনো আয়োজন নেই। কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার সখী। কেবল অন্ধকার পথে আরও ঘনীভূত কালো ভূতুড়ে গাছ, তার শান্ত লৌকিক ফুল, প্রভাতের বাতাসে তিরতির কাঁপে। এই উচ্চারণ আমাকে নিস্তব্ধ করে, যত্রতত্র একা করে প্রিয়! লুণ্ঠিত হয়ে যাই এই তরুণ কুয়াশার ভোরবেলা!
পর্ণকুটির
মাঝে মাঝে উঁচুতে উঠি, ভাবি ওইখানে নিথরতা, উপদ্রবহীন জমি আছে, কিন্তু ওখান থেকেই তো রক্ত গড়িয়ে আসছে, সুতরাং বুঝতেই পারছ, হুজ্জুতি দাঙ্গা আছে! অন্তর্দাহের বিপুল আগুনে পুড়ছে ঊর্ধ্বলোক। সমতলে নেমে এসো সখী! কী দেখতে চাও অমন উচ্চতায়? কেবল লঘুভার ছাই উড়ছে! যদিও কাছাকাছি প্রাচীন শান্ত ডোবার সন্ধান আছে। চলো, ওখানেই দেহত্বক ভিজিয়ে নিই। জলের আহ্লাদ আছে কচুরিপানার নীচে। কেউ যায় না ওই অদেখা তরলের সান্নিধ্যে। নৌকা নেই, ভিড় নেই, মাছ নেই, পশুরাও আসে না তেষ্টায়। এমন নির্জন সুঠাম সম্ভাবনা হেলায় হারাবে নাকি?
প্রশ্ন
হে মহাভুজ, দেখো সবকিছুই ভেঙেছে আজ, আঙুলের কৌশলে ঝড় চলে গেছে মাঠের ওপারে। গাছের নীচে ফল, তুলে নাও, বহুবিভক্ত করো। আজ সর্বত্র কাঙাল ঘুরছে, ওইসব প্রতিটি ধাতব ভিক্ষাপাত্র মনুষ্যনির্মিত।
দু-হাত থেকে খসে যাচ্ছে চাল, প্রতিটি দানা দুঃখের গান ভালোবাসে। নাও, উনুন জ্বালাও, ভাত হোক। কুকুর, বাঁদর, পাখিদের জন্য কিছুটা বাঁচানো যায় কি না ভেবে দেখো। চিন্তায় ভেঙে যায় কপালের রেখা। আজ ঝকঝকে নীলাকাশে হঠাৎ বৃষ্টি কেন?
বাহুবদ্ধ
সান্নাটা মাঠের দিকে তাকিয়ে কতটুকু ভাবতে পারি আমি শুধু ঠ-এর পূর্বে গভীরতম বাঁকা এ-কার-টুকু ছাড়া! যে গোরুটি ডেকে উঠল ঘাস ফেলে মেঘের দিকে চেয়ে সেও জানতে চায় ডাক-এর মানে! এখানে শুকনো খড়, বিচালি-কাটা মেশিন, অসাবধানে কাটা আঙুল, প্রযুক্তির শান দেওয়া কিনার ঘেঁষে রক্ত নামছে প্রবল! যেন সন্ধ্যার কোলে মায়ের স্তন নিয়ে খেলছে জোড়া পিশাচ! ধোঁয়াশা আর প্রহেলিকা! রোজ ফুটবল খেলত, তারা কোথায়?
অতীতচারিতা
রিভাইটাল ক্যাপসুলের ত্বক ভেঙে যে বাঘ বাজারে এসেছে সে আজ রাতে কী খাবে? মাটির গভীরে মদ রাখা আছে স্থির মাংসখণ্ডের মুখোমুখি। এই দর্শন আচমকাই, তুমি যেভাবে স্বপ্নে দেখেছিলে গোক্ষুর সাপ। ভয়ভীতি আর ঘাম তোমার দেহে কিছুক্ষণ তীর্থ করে গেছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত হে নাচ-অপরূপ, তোমার পরবর্তী স্টেপ ভোলার অপেক্ষায় আছি। অচেনা গানে কখনো লাফ দিয়েছ কি? এখানে গান বা লাফ, কোনোটাই গণনার যোগ্য নয়; ডিমের খোলের অভ্যন্তরীণ হলুদমাখা ফুল, গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্রাইং প্যান, গরম তেল। ভোরবেলা সর্বত্র কেমন ওমলেটের ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে শোনো!
দরবেশ দর্শন
ধরা যাক শ্যামআলো।
এই জোড়া শব্দের যদি রহস্য বিদীর্ণ করতে
ইচ্ছা হয়, তবে ভোররাতে উঠে
পড়তে হবে একদিন। গলা শুকিয়ে কাঠ।
আগুন জ্বলছে। তরল অগ্নিতে
এই কিছুটা কূট আভাস!
এরপর তুমি স্বপ্ন দেখছো…
তোমার নাকের ভিতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে
যাত্রীসমেত নৌকো।
ছাগলও আছে কতগুলো সেখানে।
তাদের তরঙ্গলাঞ্ছিত মুত গড়িয়ে নামছে
তোমার কণ্ঠ দিয়ে।
সোনালি রৌদ্রের মতো রং ওই তরলের।
শুধু ব্যা-ব্যা একটা নিনাদ শোনা যাচ্ছে…
বৃহদায়তন সহস্রাধিক কান ভেসে এসেছে কোথা থেকে।
একী! নৌকার ভিতরে এত জল কেন?
সহসা ঘুম ভেঙে গেল তোমার।
গোটা বিছানা, জাজিম সব ঝাঁঝালো গন্ধে ভিজে আছে!
তুমি ধুপছায়া শব্দটি নিয়েও একই পদ্ধতিতে
ভাবতে পারো…
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।